30/11/2025
নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারের শর্ত পার্বত্য চুক্তিকে অসাংবিধানিক আর শান্তির পথে অন্তরায় করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে অসংখ্য অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক ধারা যুক্ত হয়েছে। এই চুক্তিতে সরকার পক্ষে স্বাক্ষর করেন, তৎকালীন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত মুহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য জন সংহতি সমিতির পক্ষে সংগঠনের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। এ চুক্তির অসাংবিধানিক ধারা যুক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় এক কালো অধ্যায় সূচিত হয়। এই নিয়ে নানান তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কারণ রাষ্ট্রের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙ্গালী এই চুক্তিতে সাংবিধানিক অধিকার হারিয়েছে।
একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তখনই অর্থবহ হয় যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। স্বাধীনতার পর দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা জটিল হয়ে দেখা দিয়েছিল। প্রায় তিন দশক ধরে আত্মঘাতী তৎপরতায় লিপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি (জেএসএস) কথিত শান্তিবাহিনীর সাথে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামক এক ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অনেক ধারা-উপধারা সাংঘর্ষিক। তাই এই চুক্তির সংবিধান বিরোধী ধারা-উপধারা গুলো সংশোধনের দাবি তীব্র হয়েছে। এই দাবিতে রাষ্ট্রের স্বপক্ষের শক্তি বরাবরই আন্দোলন করে আসছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সম্পাদিত চুক্তির অন্যতম বিতর্কিত অংশ হলো নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারের শর্ত, যা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার মৌলিক দায়িত্বের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। একটি রাষ্ট্র তার স্বীকৃত ভূখণ্ডের কোনো অংশে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করবে কিনা এ সিদ্ধান্ত সে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতার অন্তর্গত এবং সংবিধান তাকে সেই ক্ষমতা অর্পণ করেছে। সুতরাং, পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারের যে প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা মূলত রাষ্ট্রের কাঠামো, নিরাপত্তা নীতি ও সংবিধানসম্মত অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ শর্ত শুধু প্রশাসনিক দুর্বলতা সৃষ্টি করেছে না; বরং চুক্তির নৈতিক ভিত্তিকেও অস্থির করে তুলেছে।
নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারের মাধ্যমে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তা অপরাধী গোষ্ঠী, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি এবং অস্ত্রধারী সাম্প্রদায়িক উপাদানগুলোর জন্য সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জটিল জাতিগত কাঠামো, সীমান্তবর্তী দুর্বলতা এবং বহুস্তরীয় সশস্ত্র রাজনীতির বাস্তবতায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বৈরী নয়; বরং স্থায়ীত্ব, আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক সুরক্ষার পূর্বশর্ত। কিন্তু চুক্তির শর্তানুযায়ী বাহিনী প্রত্যাহারের মাধ্যমে সেখানে আইনশৃঙ্খলার স্থানান্তর ঘটে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তহীনতা ও ক্ষমতার দ্বৈততায়, যা শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে অস্থিতিশীলতাকে আরও গভীর করেছে। যে স্থানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামো দুর্বল হয়, সেখানেই সংঘাত, দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি বিকশিত হওয়ার পরিবেশ তৈরি হয় এটি পার্বত্য অঞ্চলে বারবার প্রমাণিত বাস্তবতা।
চুক্তিতে এই শর্ত সংযোজনের ফলে একদিকে সংবিধান যে বৈষম্যহীন নাগরিক অধিকার সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়, তা কাঠামোগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; অন্যদিকে প্রশাসনিক বিচ্ছিন্নতা ও বিশেষাধিকার নির্ভর শাসনব্যবস্থার সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী অথবা আঞ্চলিক শক্তিকে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হলে, তা সংবিধানের আলোকে এক ধরনের অসম মর্যাদার বৃত্ত তৈরি করে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের একক ক্ষমতার বিপরীতে দ্বৈত কর্তৃত্বের উদ্ভব ঘটায়, যা জাতীয় ঐক্য, শাসনব্যবস্থা ও আইনের শাসনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলস্বরূপ চুক্তির কাঠামো শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে অসাংবিধানিক বিশেষাধিকার-নির্ভর অরাজকতার জন্ম দেয়।
এতদসত্ত্বেও কিছু পক্ষ নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি তুলে চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নকে শান্তির একমাত্র পথ বলে প্রচার করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো নিরাপত্তাহীন একটি অঞ্চলে শান্তি শুধু কাগজে লেখা শব্দ; তার কোনো বাস্তব ভিত্তি থাকে না। যেখানে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব সঠিকভাবে কার্যকর নয়, সেখানে অস্ত্রধারী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্যই বৃদ্ধি পায়। পার্বত্য অঞ্চলে গত দুই দশক ধরে যে হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অপহরণ, গোষ্ঠীভিত্তিক সংঘর্ষ ও সশস্ত্র অবস্থান অব্যাহত রয়েছে, তার অন্যতম কারণ হলো নিরাপত্তা কাঠামোকে দুর্বল করার এই চুক্তিগত শর্ত। রাষ্ট্র যখন তার সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকে সরে আসে, তখন তার শূন্যস্থান পূরণ করে অবৈধ শক্তি।
সুতরাং বলা যায় নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারের শর্ত শুধু চুক্তিকে অসাংবিধানিক করেনি; বরং শান্তির পথকে আরও কঠিন, জটিল এবং বিপদসঙ্কুল করেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তবসম্মত, সংবিধানসম্মত এবং নিরাপত্তানির্ভর কাঠামো প্রয়োজন কাগুজে প্রতিশ্রুতির নয়। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী কোনো অঞ্চলে অপরিহার্য হলে সেটিকে প্রত্যাহারের শর্ত আরোপ করা যুক্তিহীন, দায়িত্বহীন ও জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে এক গভীর ত্রুটি। তাই এই শর্ত সংশোধন ছাড়া পার্বত্য চুক্তি কখনোই প্রকৃত শান্তির ভিত্তি তৈরি করতে পারবে না।
কিন্তু দুই যুগেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। চুক্তির সময় যে পরিমাণ অস্ত্র পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলো জমা দিয়েছিল তার তুলনায় বর্তমানে পাহাড়ি সন্ত্রাসী জনগোষ্ঠীর কাছে কমপক্ষে সাত গুণ বেশি অস্ত্র মজুদ রয়েছে বলে বিভিন্ন নিরাপত্তা সূত্র ও মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত হয়েছে। যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে পরিকল্পিতভাবে পুনরায় সশস্ত্র শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে, এবং অস্ত্রশস্ত্র মজুদের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পুরো পাহাড় অঞ্চলে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। চুক্তির ধারা অনুযায়ী সকল অবৈধ অস্ত্র সমর্পণ ও পাহাড়কে অস্ত্রমুক্ত করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি; বরং চুক্তির আড়ালে শক্তি পুনর্গঠন, চাঁদাবাজি, অপহরণ, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিপক্ষ দমনের মতো কর্মকাণ্ডে অস্ত্র এখন প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
চুক্তির পর যে সামান্য পরিমাণ অস্ত্র প্রতীকীভাবে জমা দেওয়া হয়েছিল তা ছিল মূলত পুরনো, অকার্যকর অথবা অস্ত্রশস্ত্রের খুব ছোট একটি অংশ। অথচ একই সময়ে তাদের প্রকৃত অস্ত্রভাণ্ডার অক্ষত ছিল এবং পরবর্তী সময়ে সেই ভাণ্ডার আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার শান্তির স্বার্থে এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান চেয়েছিল, কিন্তু পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সেই সদিচ্ছাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখেছে। তারা আন্তর্জাতিক সংযোগ, সীমান্ত পারাপার সুবিধা, ভারি অর্থনৈতিক চাঁদাবাজি এবং অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবহার করে আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করেছে, যা শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেই নয় বরং জাতীয় নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। পাহাড়ি এলাকায় সক্রিয় সংগঠনগুলো নিজেদের রাজনৈতিক দলের আড়ালে সামরিক উইং পরিচালনা করছে এবং শান্তির নামে সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছে। বিভিন্ন থানা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ে তারা প্রভাব বিস্তার করে সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
বাঙালি ও পাহাড়ি উভয় জনগোষ্ঠীই তাদের অস্ত্রসন্ত্রাসের কারণে আতঙ্কে বসবাস করছে। অস্ত্রের আধিক্য বাড়ার কারণে এলাকায় খুন, গুম, অপহরণসহ সহিংস ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু ভুক্তভোগীরা অনেক সময় অভিযোগ করতেও সাহস পাচ্ছে না। চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল সন্ত্রাসীদের দমন, অস্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমে শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি করা; কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহারের ভুল সিদ্ধান্তে সন্ত্রাসীরা আরও সংগঠিত হয়েছে। পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলগুলো এখন তাদের নিরাপদ আস্তানা হয়ে গেছে। সেখানে তারা স্বাধীনভাবে ট্রেনিং ক্যাম্প, অস্ত্রাগার ও অপারেশন সেল পরিচালনা করছে। এর ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা, টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি, উন্নয়ন প্রকল্পে নাশকতা এবং সাধারণ মানুষের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে।
সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো এ সব আধুনিক অস্ত্র শুধু আত্মরক্ষা বা রাজনৈতিক দাবি আদায়ের জন্য নয়; বরং অস্ত্র ব্যবসা, মাদক পরিবহন, মানবপাচার এবং সীমান্তবর্তী আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পাহাড়কে একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ জোনে রূপান্তরের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। চুক্তির সময় যে কথিত অস্ত্র সমর্পণ হয়েছিল তা মূলত একটি রাজনৈতিক প্রদর্শনী ছাড়া কিছুই ছিল না এবং আজকের অস্ত্রের পরিমাণ তার স্পষ্ট প্রমাণ। জমাকৃত অস্ত্রের তুলনায় সাত গুণ বেশি অস্ত্র এখন পাহাড়ি সন্ত্রাসী জনগোষ্ঠীর হাতে থাকা শুধু চুক্তি লঙ্ঘন নয়; বরং রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ডের শামিল। এতে চুক্তির বৈধতা, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
শান্তিচুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল অস্ত্রহীন, নিরাপদ ও উন্নয়নমুখী পাহাড় নির্মাণ করা। অথচ বাস্তবে পাহাড় পরিণত হয়েছে অস্ত্রের গুদামে এবং সন্ত্রাসীদের শক্ত ঘাঁটিতে। যে কারণে এখন প্রয়োজন চুক্তির ধারাগুলোর পুনর্গঠন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান, সশস্ত্র সংগঠনের পুনর্মূল্যায়ন এবং পাহাড়ে স্থায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে এই অস্ত্রসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সময় এসেছে চুক্তির আড়ালে চলে আসা প্রতারণা, অস্ত্রবৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার; কারণ অবৈধ অস্ত্রের পাহাড় এখন শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
তৎকালীন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু করে। তারা এ সমস্যা সমাধানের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সময় সল্পতার কারণে শেষ পর্যন্ত জনগণের মতামত এবং বাংলাদেশ সংবিধানকে পাশকাটিয়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সংবিধান পরিপন্থী ধারা চুক্তিতে যুক্ত করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেন নি। এমন কথাও কথিত আছে। কিন্তু তিনি চুক্তির সংবিধান বিরোধী ও বিতর্কিত ধারা যে স্থান পেয়েছে তার দায় এড়ানো সম্ভব নয়। চুক্তিতে অসংখ্য অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক ধারা যুক্ত হয়েছে। এই নিয়ে নানান তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কারণ রাষ্ট্রের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙ্গালী এই চুক্তিতে সাংবিধানিক অধিকার হারিয়েছে। চুক্তির অসাংবিধানিক ধারার কারণে প্রথাগত ভূমি আইন পার্বত্য বাঙ্গালীদের ভূমি অধিকার কেড়ে নিয়েছে৷ এই নিয়ে বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে৷ সরকারের কাছে পার্বত্যবাসীদের প্রাণের দাবি সংবিধান পরিপন্থী চুক্তির ধারাগুলো সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশে বাঙ্গালীদের ভূমি অধিকার ফিরে দেওয়া হোক।
১৯০০ সালের পহেলা মে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পাহাড়ের ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তাগুলোর সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় এবং প্রশাসনিক অন্য পুনর্গঠনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘শাসন বহির্ভূত এলাকা’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। এরপর ১৯২০ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতি’ গঠিত হয় যারা ১৯৪৭ সালের ২০ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের পাকিস্তানি শাসন কায়েমের বিপক্ষে ছিল। অতঃপর র্যাডক্লিফ মিশন পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৬০ সালে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর কাপ্তাই কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি হলে বিপুল সংখ্যক উপজাতীয় পরিবারকে পাহাড়ের অন্যান্য স্থানে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় কিছু সংখ্যক পাহাড়ী জনগোষ্ঠী দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার উপজাতীয়দের মধ্য থেকে রাজাকার, ওসি, এ.এফ, হওয়ার জন্য লোক রিক্রুট করে এবং চাকমা রাজা ত্রিদির রায় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান করে। যার ফলে পাহাড়ীরা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকারকে মেনে নিতে পারেনি। এরপর ১৯৭২ সালে উপজাতীয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসনের জন্য বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কাছে দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হন। এই ব্যর্থতার ফলে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে এম.এন লারমার নেতৃত্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি’ বা জেএসএস নামে উপজাতি জনগণের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন গড়ে ওঠে। কথিত আছে তৎকালীন রাষ্ট্র প্রধান তাদের বাঙালি হয়ে যাবার পরামর্শ দেন। উপজাতিরা এ পরামর্শ গ্রহণ না করে ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি তাদের আর্মড ক্যাডার ফোর্স ‘শান্তিবাহিনী’ গঠন করে। পরবর্তীতে এ বাহিনী প্রথমে স্বাধিকার, পরে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম চালাতে শুরু করলে উপজাতি-বাঙ্গালী মিলিয়ে প্রায় ৩৫ সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়।
শান্তিবাহিনীর গেরিলা কার্যক্রম ও সরকারি পদক্ষেপ:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান-এর হত্যাকান্ডের ফলে জন সংহতি সমিতির সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং সন্তু লারমা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান। ১৯৭৫-১৯৭৭ সালের মধ্যে শান্তিবাহিনী সামরিক দিক দিয়ে অধিকতর সংগঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে সংগঠিত শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন সরকার সামরিক পথেই উপজাতিদের এ দেশদ্রোহী চক্রান্তকে দমন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে দরিদ্র ভূমিহীন কিছু মানুষকে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন করেন। সরকারের এ সিদ্ধান্ত ঘটনা উপজাতিরা মেনে নিতে পারেনি। ৬০, ৭০ ও ৮০-এর দশকে মানবেন্দ্র লারমা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মু উগ্র জাতীয়তাবাদের বিকাশে যারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তারা হলেন বিহারী খাসা, জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা প্রমুখ।
পার্বত্য সশস্ত্র সংঘাত অবসানের জন্য প্রথম জনসংহতি সমিতির সাথে আলোচনা করা হয় ১৯৮৫ সালে জেনারেল এইচএম এরশাদের শাসনামলে। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই শান্তি আলোচনা চলে। এই সময় ১৯৮৯ সালের ২- জুলাই তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনের অধীনে স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করা হয়। এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয় উপজাতীয়দের মধ্য থেকে। নিয়ম করা হয় প্রতি জেলায় ৩০ জন সদস্য রাখা হবে। যার এক-তৃতীয়াংশ বাঙালি এবং দুই তৃতীয়াংশ বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠী। কিন্তু দেশদ্রোহী চক্রান্তে লিপ্ত সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনী এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। ফলে এই পরিষদের হাতে যে ২২ ধরণের ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ার কথা ছিল তা ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত শান্তি বাহিনীর সঙ্গে ১৩ দফা বৈঠক হয়। তারপর ১৯৯৬ সালের ২২ জুন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শান্তিবাহিনীর সাথে আবার নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপন এবং রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা ১৯৯৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান হিসেবে মনোনীত হন তৎকালীন চীফ হুইফ আবুল হাসনাত মুহাম্মদ আবদুল্লাহ।
পাঁচ দফা পেশ:
কমিটির প্রধান শান্তি আলোচনার পাশাপাশি ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র বিরতি শুরু করেন। তখন জনসংহতি সমিতি সরকারের সাথে আলোচনা করে ৫ দফা দাবি পেশ করে। দাবিগুলো নিম্নরূপ-
১. বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি নির্বাচিত আঞ্চলিক পরিষদের কর্তৃত্বাধীন পৃথক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা প্রদান, যার নাম হবে জুম্মুল্যান্ড।
২. পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের জাতিগত সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান।
৩. ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্টের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশকারী বহিরাগতদের প্রত্যাহার। পার্বত্য ভূমির ওপর পাহাড়ি স্বত্ত্বের স্বীকৃতি।
৪. বিডিআর ক্যাম্প ব্যতীত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর সকল ক্যাম্প ও সেনানিবাস তুলে নেয়া।
৫. ১৯৬০ সালের পর থেকে যে সব পাহাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা। জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল আইনি অভিযোগ প্রত্যাহার এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিষয়বস্তু:
পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রধান বিষয়বস্তু হলো দ্বিস্তর বিশিষ্ট পরিষদ। যার প্রথমটি আঞ্চলিক পরিষদ, পৃথক তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। স্থানীয় সরকার পরিষদের পরিবর্তে জেলা পরিষদ গঠিত হবে। আঞ্চলিক পরিষদের সমন্বয় করবে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে এ তিনটি জেলা পরিষদ। যা দুই যুগের বেশি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির দিকসমূহ:
মোট ২৬টি বৈঠক শেষে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অর্থাৎ দীর্ঘদিনের অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ নীতিমালার প্রধান প্রধান দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাক্ষরের পর থেকেই চুক্তি বলবৎ হবে।
বিডিআর ও স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলী কদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সরকারি, আধা সরকারি, পরিষদীয় ও সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে সকল স্তরে নিয়োগে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হবে। একজন উপজাতীয় সম্প্রদায় সুযোগ ভোগী হবেন।
রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনসমূহ পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোকন করা হবে।
পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। যার পদমর্যাদা হবে একজন প্রতিমন্ত্রীর সমান এবং তিনি অবশ্যই উপজাতীয় হবেন।
পরিষদে মহিলাদের জন্য ৩টি আসন সংরক্ষিত রাখা হবে। দুই-তৃতীয়াংশ উপজাতীয় হবে।
পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর হবে।
পরিষদের সাথে আলোচনা ছাড়া কোনো জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চল অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর করা যাবে।
কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমির মূল মালিকদের বন্দোবস্ত দেয়া হবে।
মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালু হবে।
তিন জেলা সমন্বয়ে ২২ সদস্যবিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে ৫ বছর।
সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে চাইলে সরকার পরিষদের সাথে আলাপ করবে।
উপরিউক্ত নীতিমালার ভিত্তিতেই সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ফলাফল :
পার্বত্য চুক্তির ফলে পাহাড়ি এলাকায় বিদ্যমান যে হানাহানি তা মোটেও বন্ধ হয়নি বরং চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে সশস্ত্র সংগঠন ছিল একটি এখন চুক্তির ফলে তা বৃদ্ধি পেয়ে চার-পাঁচ টিতে রুপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে সন্তু লারমা দলের ৭৩৯ জন অকেজো কিছু অস্ত্রসহ কথিত আত্মসমর্পণ করে। প্রায় ৬৪,০০০ জন শরণার্থী দেশে ফিরে আসে। অবশ্য এই পার্বত্য চুক্তির ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ পুরুস্কার পেয়েছে। যেমন,‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকা মন্তব্য করে, ‘এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের একটি বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়েছে।’ ইউনেস্কো বাংলাদেশের এই পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছে। কিন্তু চুক্তির মৌলিক প্রধান শর্ত ছিল, অবৈধ অস্ত্র পরিহার পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। দুঃখজনক যে, চুক্তির ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তু লারমার জেএসএস সম্পূর্ণ অবৈধ অস্ত্র সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করেনি। বরং পূর্বের ন্যায় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, হানাহানি ও খুন-গুম এবং অরাজকতা করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে নরকের পরিণত করেছে। এটা একপ্রকার রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। তাদের প্রতি রাষ্ট্রের সহনশীল নীতিকে তারা যদি রাষ্ট্রের দূর্বলতা মনে করে তাহলে এটা তাদের ভুল চিন্তাধারা।
করণীয়:
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে যেহেতু বাংলাদেশ সংবিধানের সাংঘর্ষিক অবস্থান রয়েছে এবং চুক্তির পরেও উপজাতি সন্ত্রাসীরা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি। সুতরাং এই সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা সংবলিত চুক্তি সংশোধন পূর্বক পাহাড় এবং সমতলের জন্য একই নিয়ম চালু করতে হবে।
এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রব্যবস্থার বাংলাদেশে পাহাড়ের জন্য ভিন্ন আইন অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
কোন প্রকার সহানুভূতি না দেখিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের নির্মূলের জন্য সামরিক অভিযান চালু করতে হবে। ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির নামে শন্তু লারমার সাথে যে চুক্তি হাসিনা করেছিল, আদতে সেটি ছিল দেশ বিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের শক্ত পেরেক। যে চুক্তির শর্তানুসারে দুই যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অসংখ্য সেনা ক্যাাম্প প্রত্যাহার করে নিল। মানে চোরের হাতে ঘর পাহারা।
© পার্বত্য চট্টগ্রাম