
20/05/2025
মনু মিয়ার ঘোড়াকে হত্যা করলো কে?
আমরা এতটা অমানবিক কীভাবে হলাম?
পঞ্চাশ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে মানুষের কবর খুঁড়ে আসা একজন মানুষ—মনু মিয়া। যিনি কখনো পায়নি দামি পোশাক, আলো ঝলমলে মঞ্চ কিংবা সম্মাননা ক্রেস্ট, কিন্তু তাঁর হাতে খোঁড়া প্রতিটি কবরই একেকটি মানুষের শেষ ঘর।
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের এই মানুষটি জীবনের পাঁচটি দশক কাটিয়েছেন একটুও ক্লান্ত না হয়ে। নিজের সাধ্যমতো কেবল মানুষের উপকার করেই গেছেন। বিনিময়ে কিছু চাননি। তাঁর জীবনের সংখ্যা বইয়ে লেখা আছে—৩ হাজার ৫৭টি কবর তিনি নিজ হাতে খুঁড়েছেন।
শেষ বয়সে শরীর আর আগের মতো সাড়া দেয় না। কিন্তু মানুষের শেষ যাত্রায় সঙ্গী হওয়ার দায়িত্ব তিনি ভুলে যাননি। নিজের জমি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন, যেন দ্রুত যেতে পারেন মৃতের বাড়ি বা কবরস্থানে। সেই ঘোড়া, যার সঙ্গে তাঁর ছিল আত্মার সম্পর্ক, যেটি ছিল তাঁর নিঃস্ব জীবনের ছায়াসঙ্গী—সেই ঘোড়াটিকেই হত্যা করা হলো!
গত শুক্রবার ঘোড়াটিকে পাওয়া গেল মাদ্রাসার পাশে পানিতে পড়ে থাকতে, বুকের মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। কে এমন বর্বরতা করলো? কেন?
মনু মিয়া এখন শয্যাশায়ী, হাসপাতালে। ঘোড়াটির মৃত্যুর খবর তাঁকে এখনো জানানো হয়নি। স্ত্রী রহিমা বেগম জানালেন, "উনি সহ্য করতে পারবেন না। ঘোড়াটা ছিল উনার ছায়ার মতো।"
এই ঘটনা কি শুধু একটি প্রাণের মৃত্যু? না, এটা একটি নিঃস্বার্থ জীবনের প্রতি আমাদের সমাজের নির্মম অবহেলার প্রতিচ্ছবি। একজন মানুষ, যিনি জীবনের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না করে শুধু মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন, তাঁর শেষ সঙ্গীটিকে এভাবে হারাতে হলো!
আমরা কতটা নীচুতে নেমে এসেছি?
মনু মিয়ার মতো মানুষরা আমাদের সমাজের আয়না। কিন্তু সেই আয়নায় এখন দেখা যাচ্ছে লজ্জা, অবজ্ঞা আর হৃদয়হীনতার ছাপ।
এই পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে মনু মিয়ার গল্প হারিয়ে না যায়।
যদি কোনো সিসিটিভি ফুটেজ থাকে, কেউ কিছু দেখে থাকে, তাহলে জানান।
একটি প্রাণের ন্যায়বিচার নয়, এটা আমাদের মানবতা ফিরিয়ে আনার লড়াই।
#মনু_মিয়া #মানবতা #ঘোড়ারহত্যা