
30/03/2025
রক্তঝরা ঈদের চাঁদ
আজ আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে।
আমাদের আকাশে এই চাঁদ আনন্দের প্রতীক হলেও ভুমসাগরের পূর্ব তীরের পবিত্র ভূমিতে তা শোকের সাক্ষী। আমরা নতুন পোশাক কিনে উৎসবের প্রস্তুতি নেই, আর মসজিদুল আকসার প্রাঙ্গনে আমাদেরই মত শিশুরা নিঃশব্দে দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কাঁদে—কারণ তার ছোট্ট ভাইটি আর কখনো নতুন জামা পরবে না, তার মা আর ঈদের রান্নায় ব্যস্ত হবে না, তার বাবা আর হাত ধরে নামাজে নিয়ে যাবে না।
ঈদের চাঁদ মানে খুশির বার্তা, অথচ সেই চাঁদ আজ রক্তে রাঙা। উপত্যকার শিশুগুলো আর হাসে না, তাদের চোখে আর ঈদের রঙিন আলো জ্বলে না। তারা শুধু দেখে ধ্বংসস্তূপ, শুনতে পায় চাপা কান্না, অনুভব করে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার শূন্যতা।
যেখানে অন্য শিশুরা নতুন খেলনা পায়, ওরা সেখানে খেলার সাথী হারায়। যেখানে অন্য শিশুরা মিষ্টির স্বাদ নেয়, ওরা সেখানে বেঁচে থাকার জন্য এক টুকরো রুটির জন্য লড়াই করে। ঈদের দিনে বাবা-মাকে হারানো শিশুরা আর কার হাত ধরে ঈদের নামাজে যাবে?
এই চাঁদ তাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে না, বরং মনে করিয়ে দেয় কত প্রিয় মুখ চিরতরে হারিয়ে গেছে। ঈদের চাঁদ আজ শোকগাঁথা হয়ে আকাশে ঝুলে থাকে, নীরব সাক্ষী হয়ে রয়ে যায় এক অব্যক্ত যন্ত্রণার।
তবুও শিশুরা চেয়ে থাকে আকাশের দিকে। হয়তো তারা খুঁজে ফেরে সেই মানুষগুলোর ছায়া, যারা তাদের ছেড়ে চলে গেছে। হয়তো তারা ভাবে, এই চাঁদ কি সত্যিই সবার জন্য সমান আলো ছড়ায়? নাকি কেউ কেউ শুধুই অন্ধকারের জন্য তৈরি?
ওই যে চাঁদ! দেখো, কীভাবে রক্তমাখা এক কাপড়ে বাঁধা! যেন এক নিষ্পাপ দেহ, যাকে দুই প্রান্তে বেঁধে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে এক অনন্ত শূন্যতায়। অগণিত শিশুর দেহ আজ এমনই নিথর পড়ে থাকে ধুলোমাখা ধ্বংসস্তূপের নিচে, ভেঙে পড়া স্বপ্নের ধ্বংসাবশেষে। তাদের ছোট ছোট হাতগুলো খুঁজে ফেরে এক ফোঁটা শান্তি, খুঁজে ফেরে মায়ের কোমল স্পর্শ, বাবার উষ্ণ হাত।
ইতিহাস কি মনে রাখবে এই শিশুদের নাম? নাকি তাদের আর্তনাদ কেবল বাতাসে মিলিয়ে যাবে?
Faatiha Aayat