04/07/2025
যদি ফেল করা পরীক্ষার্থীদের পাস করানো হয়, তাহলে মনে রাখতে হবে—
১. ১৬তম, ১৭তম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যেসব প্রার্থী ভাইভা দিয়েছে এবং ফেল করেছে, তারা প্রশ্ন তুলবে—“আমরা কেন সনদ পেলাম না?” তারা এ বিষয়টি নিয়ে রাস্তায় নামবে এবং আন্দোলন গড়ে তুলবে।
২. যদি ভাইভার কোনো মূল্য না থাকবে, তাহলে ৮ মাস সময় ধরে প্রায় ৮৩ হাজার পরীক্ষার্থীর ভাইভা নেওয়ার প্রয়োজন কী ছিল? তখন তো সরাসরি সবার সনদ দিয়েই দেওয়া যেত। এখন ৮ মাস সময়ক্ষেপণের ফলে অনেকের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হয়ে গেছে। তারা প্রশ্ন করবে—“এই সনদ দিয়ে আমরা এখন কী করব?” ফলে তারাও রাস্তায় নামবে।
৩. প্রতি বছর যদি ভাইভার মূল্যায়ন বাদ দেওয়া হয় বা এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা না থাকে, তাহলে যারা ফেল করবে তারাই প্রতিবাদ করবে, আন্দোলন গড়ে তুলবে।
৪. যদি দেখা যায়, কোনো বোর্ডে মাত্র একজন পাস করেছে, আর অন্য বোর্ডে ২৮ জন পাস করেছে, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এই বৈষম্য কেন? উদাহরণস্বরূপ, কোনো স্কুলে ৩০ জন ছাত্রের মধ্যে ২৯ জন ফেল করেছে, অথচ অন্য কোনো স্কুলে ৩০ জনই পাস করেছে। তাহলে বোর্ডের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক। কেউ বলবে, বোর্ড ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়েছে।
৫. যদি কোনো ফেল করা পরীক্ষার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়, তাহলে সে শিক্ষার্থীদের কী শেখাবে? সে হয়তো বলবে—“টেনশন করো না, ফেল করলেও পাস হওয়া যায়! বোর্ড ঘেরাও করলেই সনদ মেলে।” এ ধরনের মানসিকতা যদি শিক্ষকতার জায়গায় যায়, তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তিই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাহলে আমরা এই ধরনের শিক্ষা দিচ্ছি কীভাবে?
৬. যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে যখন ২০–৩০টি পদের জন্য ৩০০–৫০০ জনকে ভাইভার জন্য ডাকা হয়, তখন ভাইভায় অনেকে বাদ পড়ে। তারা তখন প্রশ্ন করবে—“আমরা তো প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি, ভাইভাও দিয়েছি, তাহলে আমাদের চাকরি দেওয়া হলো না কেন?” তারাও রাস্তায় নামবে এবং আন্দোলনে যুক্ত হবে।
৭. যদি বাংলাদেশে ভাইভার গুরুত্ব কমে যায় বা বাতিলের পর্যায়ে যায়, তাহলে সকল চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি ও রিটেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা রাস্তায় নামবে, সরকারি কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করবে এবং দাবি করবে—“ভাইভা অর্থহীন, আমাদের সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে।”
৮. এই ধরনের অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ, তখন আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিখাচ্ছি—“কীভাবে ফেল করেও পাস হতে হয়।” এটি একটি ভয়ংকর শিক্ষা।
৯. এভাবে চলতে থাকলে NTRCA-এর নীতিমালার কোনো মূল্য থাকবে না। কেউ আর নীতিমালা মেনে চলবে না, এবং এটি এক সময় কেবল কাগুজে নিয়মে পরিণত হবে।
১০. BCS বা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভাইভা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানে কেউ যদি ভাইভায় ফেল করে, তাহলে তাকে অযোগ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এখন যদি কেউ বলে—“আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, অথচ আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছে”—তাহলে প্রমাণ কী? ভাইভা তো ভিডিও রেকর্ড হয় না। তাই সে রাস্তায় নামবে এবং বলবে, “ভাইভায় অনিয়ম হয়েছে।” অথচ প্রকৃত সত্য হতে পারে—সে হয়তো একটি প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
১১. যদি ফেল করা পরীক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তারা বলবে—“NTRCA আমাদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়েছিল। আমাদের রিটেন ও ভাইভা নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” তারা এই অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনের চেষ্টা করবে। ফলে NTRCA-এর গৌরব, সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
১২. যদি “কারিগরি ত্রুটি” নামে একজন ফেল করা প্রার্থীকে পাস করানো হয়, তাহলে বাকি ৬০ হাজার পাস করা পরীক্ষার্থী ঘরে বসে থাকবে না। তারা ১৮তম নিবন্ধনের মতো আবারও রাস্তায় নেমে আসবে।
১৩. ভাইভা বোর্ডে কখনো কখনো প্রার্থীর পোশাক-আশাক, কথাবার্তার ভঙ্গি, আত্মবিশ্বাস, শারীরিক ভাষা, বিষয়বস্তু বোঝার দক্ষতা ইত্যাদি পর্যালোচনা করা হয়। কেউ কেউ ভাইভা প্রশ্ন ঠিকমতো ধরতে পারে না, কেউ কেউ উত্তরের সময় থরথর করে কাঁপে। যারা ভাইভা নিয়েছেন, তারা যদি মনে করেন—প্রার্থী শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নয়, তবে তাকে ফেল করান। সেই প্রার্থী যদি শিক্ষক হয়, তাহলে সে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কী শেখাবে?
১৪. প্রতিবারেই অল্প সংখ্যক পরীক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ করা হয়। এতে দেখা যায়, অধিকাংশ ট্যালেন্টেড প্রার্থীরাই নিয়োগ পায়, কেবল অল্প কিছু বাদ পড়ে। কিন্তু এবার বেশি সংখ্যক প্রার্থী ভাইভা পর্যন্ত গিয়েছিল, যার ফলে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের সংখ্যা বেশি ছিল। ফলে এবার ফেল করার হার স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তাই অনেকে পাশ না করাটাকে পক্ষপাতিত্ব মনে করলেও এটি বাস্তবচিত্র।