17/08/2025
পাকিস্তানে বিয়ে ভাঙেনা কেন?
"""""""""'""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
এক যুগের বেশী সময় ধরে পাকিস্তান থাকার সুবাদে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি আজ।যদিও আমি পাকিস্তান নিয়ে পোস্ট করিনা সহজে।সত্যি কথা হলো, পাকিস্তানিদের মানবিকতা,অতিথিপরায়ণতা,বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ-ভ্রাতৃত্বপ্রেম এবং তাদের ভালো দিকগুলো নিয়ে লেখালেখি করলে আরো এক যুগেও আমি শেষ করতে পারবোনা। বাংলাদেশে আমরা পাঠ্যপুস্তক,ইতিহাস ও লোকমুখে পাকিস্তানিদের ব্যাপারে যেসব নেতিবাচক কথা পড়ে ও শুনে বড় হয়েছি পাকিস্তান বিদ্বেষ নিয়ে, বাস্তবতা তার সম্পূর্ণ উল্টো।
সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী নারীদেরকে সম্মান করা দেশের তালিকায় পাকিস্তান শীর্ষেই থাকবে।পোস্ট দীর্ঘ করতে চাইনা বলেই উদাহরণ বাদ দিচ্ছি।শুধু এইটুকুই বলবো,বাসে বা ট্রেনে আপনি যত দূরেই যাবেন,মহিলা উঠলেই খালি সীট না থাকলে মহিলার সম্মানার্থে আপনাকে সীট ছেড়ে দিতেই হবে।এটা পাকিস্তানের কোনো সরকারি আইন করা বিধিবিধান নয়,কিন্তু আপনি সীট ছেড়ে দিতে বাধ্য।পরিবারে শিশুকালেই পাকিস্তানিরা এই শিক্ষা পায় নিজের মা থেকে।শুধু তাই নয়,পথেঘাটে কোনো মহিলা বিপদে পড়লে তাকে নিজের বাসায় সহিসালামতে পৌঁছে দেয়ার লোক যে কেউ।পাকিস্তানে সবাই মুসলমান হলেও গোত্র ভাগ আছে অনেক।তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাঁচটি অন্যতমঃ
১| সিন্ধি।
২| পাঞ্জাবী।
৩| বেলুচি।
৪| পাঠান।
৫| হিন্দুস্তানি।
শেষের এই হিন্দুস্থানিদেরকে আবার মহাজীর এবং মেহমানীও বলা হয়।১৯৪৭ সালে ভারত থেকে স্বাধীন হবার পর কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন," পাকিস্তান এখন মুক্ত স্বাধীন দেশ।যারা ভারতীয় তারা ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারেন; আপনাদেরকে যাবার সুব্যবস্থা করে দেয়া হবে।যদি যেতে না চান তবে আপনাদেরকে পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে আজ থেকেই সম মর্যাদায় গ্রহণ করা হবে"।
একথা শুনে দুই/একটি উদাহরণ ছাড়া সবাই পাকিস্তানেই থেকে যায়।এমনকি হিন্দুরাও পাকিস্তান থেকে আর ভারত যেতে চায়নি।
কারণ?
কারণ হলো থাকা,খাওয়া,চলাফেরা,পরিবেশ,পরিচ্ছন্নতা,ফল-ফলারিতে এক উর্বরভূমির নাম পাকিস্তান; যা ভারত থেকে হাজারগুণ উন্নত ও সমৃদ্ধ ছিলো তখন।তাই অনেকেরই আত্মীয়স্বজন ভারতে থাকলেও তারা পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে।তাদেরকে হিন্দুস্থানি,মহাজীর বা মেহমানী বলা হয়।
তো বিয়ে কেন ভাঙেনা?
- আমাদের দেশে যেমন ঢাকার লোকটি চট্টগ্রামে গিয়ে কোনো পরিচিতি ছাড়াই সহজেই বিয়ে করতে পারে, পাকিস্তানে কিন্তু সেটা সহজ নয়। সিন্ধি সিন্ধিদের মধ্যে, বেলুচ বেলুচদের মধ্যে, পাঞ্জাবী পাঞ্জাবীদের মধ্যে, পাঠান পাঠানদের মধ্যে এবং হিন্দুস্থানি হিন্দুস্থানিদের মধ্যেই বিবাহ সম্পর্কে সীমাবদ্ধ।তবে পাঠান বা খাঁন-দের মধ্যে আরো বেশী কড়াকড়ি;খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছাড়া তাদের মধ্যে বিয়ে করার নজীর নেই।খালাতো,মামাতো,ফুপাতো,চাচাতো,জেঠাতো ভাইবোনের মধ্যেই বিয়ে হয় খাঁন বা পাঠানদের।এইক্ষেত্রে আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের বয়েসী উপযুক্ত মেয়ে না থাকলে ছেলেকে অপেক্ষা করতে হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই। ফলে লাখে এক দুইটি ক্ষেত্রে বয়েসের তারতম্য ঘটে যেতে পারে; কিন্তু বিয়ে টেকসই ও স্থায়ী থাকে।তবে একটি ক্ষেত্রে সিন্ধি,বেলুচ,পাঞ্জাবী,পাঠান সহ সব গোত্রেই সমান নীতি দেখা যায়।সেটা হলো, পাকিস্তানে বিয়ে হয় কমিউনিটি সেন্টারে এবং ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষকে মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে হয়। কেবল মোহরানার নগদ অর্থ নয়,ছেলের অভিভাবক মেয়ের অভিভাবকদের কাছে নমনীয় আচরণের দৃষ্টান্ত রাখে।বলা যায়, পাকিস্তানে মেয়ে জন্ম দেয়া পিতামাতারা সোনায়সোহাগা। মেয়ে হলেই তারা বেশী খুশী।
এবার ভাবুন,যে মেয়েকে বিয়ে করতে আপনার জীবনের বিশাল একটা টাকার অংক ব্যয় করতে হয়েছে,তাকে কি ইচ্ছে করলেই সহজেই ছাড়া যায়? ছাড়লে আপনার স্ত্রী আবার সহজেই যে কোনো ছেলেকে বিয়ে করতে পারবে কিন্তু আপনি বিয়ে করতে হলে আবারো লাগবে ৪০|৫০ লাখ টাকা।একেতো স্ত্রী ঘনিষ্ঠ আত্মীয়,দ্বিতীয়ত বলতে গেলে টাকা দিয়ে কেনা,তো ছাড়াছাড়িটা সহজ কিনা?বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা পাকিস্তানে খুব খুবই কম।
(উল্লেখ্য,রাজনৈতিক ব্যক্তি,নায়ক-নায়িকা,গায়ক-গায়িকা,ক্রিকেটার তথা সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে আলাদা চিত্র দেখা যেতেই পারে;এমন লোকদের সংসার পৃথিবীর যে কোনো দেশেই স্থায়িত্বের দৃষ্টান্ত সীমিত।কিন্তু আমার লেখা গোটা পাকিস্তানের সামষ্টিক জনসাধারণের বাস্তবতা নিয়ে)।
ব্যবচ্ছেদ টীকাঃ
আমাদের বাংলাদেশে আমরা আদতে লালন করি হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি।এদেশে নারী প্রধানমন্ত্রী, নারী বিরোধীদলীয় প্রধান, নারী স্পিকার সহ সব উঁচু পর্যায়ে নারীর অবস্থান এবং নারীর অধিকারে আইন পাশ ও নারীদের অধিকারে সবাই সোচ্চার হলেও আদতে মুসলিম বিশ্বের বাস্তবতায় সবচেয়ে বেশী অধিকারহারা ও অবহেলিত নারীর বিশাল একটা অংশের দেশ বাংলাদেশ।দুনিয়াতে হিন্দুদের মধ্যে ছাড়া কোনো দেশের কোনো ধর্মেই মেয়ে পক্ষ ছেলে পক্ষকে যৌতুক দিতে হয়না, শুধু আমরা বাংলাদেশীরা মুসলমান হয়েও হিন্দুদের এই অমানবিক সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছি।যেকারণে টেকনাফের ছেলেটিও তেঁতুলিয়া গিয়ে পরিচিতি ছাড়াই সহজেই বিয়ে করতে পারছে,যৌতুকও পাচ্ছে এবং বাচ্চা দুই/তিনটা জন্ম দেয়ার পর সহজেই স্ত্রীকে ছেড়েও দিতে পারছে। অপরদিকে স্ত্রী বেচারীর ঠিকানা পিত্রালয়ে ভোঝা হওয়া বা গার্মেন্টস ইত্যাদি অথবা ধুকে ধুকে বাকি জীবন সন্তানদের নিয়ে কঠিন সংগ্রামে সংগ্রামী হয়ে কাটাতে হয়।বাংলাদেশে যতো সংসার ভেঙে যাওয়া মেয়ের ভোঝা বহন করতে হচ্ছে পিতামাতাকে, পৃথিবীর অনেক ছোট দেশের মোট জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে সেই সংখ্যাটি।কোথাও প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই চিত্র দেখা যায়।
যে কোনো কিছুই সহজলভ্যতায় কদর কম,গ্রাহ্য কম।
পুনশ্চঃ
তাহলে কী বুঝা গেলো?
বুঝা গেলো পাকিস্তানে সংসার ভাঙলে নারীর লাভ, পুরুষের ক্ষতি।
কিন্তু বাংলাদেশে সংসার ভাঙলে পুরুষের লাভ না হলেও নারীর জীবনটাই ধ্বংস।
তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করতে লেখাটি শেয়ার বা সূত্র উল্লেখে কপি করতে পারেন।
Abdul Quddush Paban
১২ আগষ্ট।
মঙ্গলবার।