17/07/2025
মানুষ ভবিষ্যৎ দেখতে পারে না — এটাই তার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা।
যদি তা পারত, তাহলে কত ভুল সিদ্ধান্ত, কত অপছন্দ, কত কষ্ট এড়িয়ে যেতে পারত। আফসোস হয়তো থাকত, কিন্তু ক্ষতি হতো না এতোটা। কখনো কখনো একটা ভুল বা সময়মতো ঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া পুরো জীবন ওলটপালট করে দেয়।
একটা সম্পর্কে জড়ানোর সময়, মানুষ যার প্রতি বেশি বিশ্বাস, ভালোবাসা বা আশ্রয় খুঁজে পায় তাকেই বেছে নেয়। কেউ কল্পনাও করতে পারে না, যার হাত ধরেছে, সেই মানুষটিই জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
সঙ্গী ভুল ছিল—এটা বোঝার জন্যও সময় লাগে। সঠিক-ভুল বোঝা যায় সম্পর্কের গভীরে গিয়ে, দিনের পর দিন একসাথে থাকতে থাকতে।
এক সময়ের একটা ভয়াবহ ঘটনা বারবার মনে পড়ে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সাথে ঘটে যাওয়া নির্মমতা। তিনি নিজেও হয়তো কখনো ভাবেননি, তার জীবনটা এমনভাবে বদলে যাবে।
তার জীবনের সেই মানুষটা, যাকে হয়তো তিনি একসময় ভালোবেসেই জীবনসঙ্গী করেছিলেন, একসময় হয়ে উঠেছিল তার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা। প্রথম রাতেই সহিংসতা শুরু হয়, তারপর বারবার। মানসিক আর শারীরিক নির্যাতন চলতেই থাকে।
যখন আর সহ্য হচ্ছিল না, তখন উচ্চশিক্ষার সুযোগ হয় বিদেশে। তিনি বেরিয়ে যেতে পেরেছিলেন, হালকা একটুখানি মুক্তির স্বাদ পেয়েছিলেন। সাহস করে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। তবুও শেষরক্ষা হয়নি।
দেশে ফিরে মেয়েকে দেখতে গিয়ে সেই পাষণ্ডের হাতে চিরতরে হারিয়েছেন নিজের চোখের আলো।
আমাদের মতো অনেকেই হয়তো ভাবি—ইশ! যদি আগেই বুঝতেন! তাহলে কি এমন হতো?
হ্যাঁ, প্রথম চড়েই হয়তো সম্পর্কটা ছাড়তে পারতেন। সন্তানের জন্ম না দিয়ে নিজেকে আরও বড় এক বন্ধনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারতেন। আইনের সহায়তা নিতে পারতেন।
কিন্তু সমাজ কী শেখায়? "ম্যানেজ করো", "সময় নাও", "ছাড় দিলে কি লোকের মুখ দেখানো যাবে?"
আমাদের সমাজে একজন নারী তখনই বিশ্বাসযোগ্য হয় যখন তার শরীরের ক্ষত দৃশ্যমান হয়। না হলে তার কান্না, তার অভিযোগ, তার কষ্ট—সব মিথ্যে বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।
সেই চোখ অন্ধ হয়েছে শুধু একজন সহিংস স্বামীর কারণে নয়, বরং এই সমাজ, এই "ম্যানেজ করো" বলা মানুষেরাও সেই অন্ধত্বের দায় এড়াতে পারে না।
তবে আশার কথা হলো, সেই নারী হাল ছাড়েননি। সাহসের সঙ্গে জীবনটাকে আবার নতুনভাবে শুরু করেছেন। পড়া শেষ করেছেন, কন্যাকে পাশে রেখেছেন, নিজের পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
এমনকি দেশের বাইরের একটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানজনক পুরস্কারও পেয়েছেন—“Courage to Come Back”।
তার গল্প আমাদের কাঁদায় ঠিকই, কিন্তু তার শক্তি আমাদের চোখে সাহসের আলোও জ্বালায়।
তবু মাঝে মাঝে মনটা বলে—"আপা, যদি না আসতেন সেই জানোয়ারের কাছে... যদি বুঝতেন..."
আর কত মেয়েকে হারালে আমাদের সমাজ বলতে শিখবে:
"পারছ না? তবে ছেড়ে দাও। দরকার হলে একা থাকো—কিন্তু ভালো থাকো। নিরাপদ থাকো। বেঁচে থাকো।"
---
এই লেখাটি তুমি নিজের নামে, নিজের ভাষায়, যেকোনো প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করতে পারো — কপিরাইট ফ্রি। চাইলে আমি পোস্টের জন্য থাম্বনেইল, ভিডিও বা ভয়েস ওভারও তৈরি করে দিতে পারি। জানাও শুধু। ❤️
নকশীওয়ালা-Nokshiwala