03/05/2025
যাদের বাসায় কোনো শান্তি নেই, সিহরের কারণে হোক বা অন্য যেকোনো কারণে হোক,তাদের কিছু আমলের কথা বলি।
১) প্রতিটা কাজ শুরু করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলবেন। ছোট-বড় সব ভালো কাজ আল্লাহর নামে শুরু করলে ইনশাআল্লাহ্ বারাকাহ্ আসবে।
২) বাসায় প্রতিদিন সূরা বাকারাহ চালু করে রাখবেন। যে ঘরে সূরা বাকারাহ তিলওয়াত করা হয়,সে ঘরে শয়তান বসত গড়তে পারে না। আর যে ঘরে শয়তান থাকে না,সে ঘরে সহজেই রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে। আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষণ হয়।
৩) গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা থেকে ১ হাজার হাত দূরে থাকুন। বাসায় যেন কোনো ভাবেই গান-বাজনা না হয়। গান-বাজনা শান্তি কেড়ে নেয়। বাসাকে শয়তানের আবাস বানিয়ে দেয়। অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়। আপনার পরিবারের কেউ যদি গান চালায়,তাকে কঠোর ভাবে নিষেধ করুন। গেস্ট আসলেও তাদের এটা বুঝিয়ে দিবেন যে আপনার বাসায় বাজনা এলাউ না৷ দরকার হলে হেডফোন ইউস করুক। নিজের ব্যক্তিত্বকে এমন স্থানে উন্নীত করুন যেন আপনি ভালোবাসলে মানুষ গলে যাবে আর কঠোর হলে থেমে যাবে৷
৪) প্রচুর পরিমাণে ইস্তেগফার করুন। আল্লাহ নিজেই ওয়াদা করেছেন যে,আদম সন্তান ইস্তেগফার করলে তিনি আদম সন্তানের গুনাহগুলো মাফ করবেন। সমস্যাগুলো দূর করে দিবেন। দুআ কবুল করবেন।
৫) নিজের হায়াতে,রিজিকে,সবকিছুতে বারাকাহ্ পেতে দুরুদ পড়ুন। অনেকে পরিবারের জন্য দুআ করতে চান৷ কি দুআ করবেন বুঝতে পারেন না৷ দুরুদে ইবরাহীমে একই সাথে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং তাদের পরিবারের উপর শান্তি ও রহমতের জন্য দুআ করা হয়। আপনি যদি দুরুদে ইবরাহীম পড়তে পারেন,তাহলে ফেরেশতারা আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য শান্তি-রহমতের দুআ করবে। দুরুদে ইবরাহীম বুঝে বুঝে, দরদের সাথে পড়লে পেরেশানি দূর হয়, দুআ কবুল হয়। দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত প্রয়োজন আল্লাহ পূরণ করে দেন।
৬) বাসায় ঢোকার সময় সালাম দিন। এক রুম থেকে অন্য রুমে যাওয়ার সময় সালাম দিন। পরিবারের মানুষগুলোকে বেশি বেশি সালাম দিন। সালামের মাধ্যমে আমরা একে অপরের জন্য দুআ করি। অন্যের জন্য দুআ করার মাধ্যমে ফেরেশতারা আমাদের জন্য দুআ করে। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে মোহাব্বত বৃদ্ধি পায়। অনেক স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মধ্যে খুব একটা মোহাব্বত অনুভব করেন না। তারা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটান। ইনশাআল্লাহ্ মোহাব্বত বাড়বে।
৭) পরিবারকে সময় দিন। যেকোনো খুশির সংবাদ বা সমস্যা আল্লাহকে বলার পর পরিবারকে বলুন। তাদের সমস্যাগুলোও শোনার চেষ্টা করুন। একে অন্যের কাজে সাহায্য করুন।
৮) সাধ্যানুযায়ী পরিবারের সদস্যদের হাদিয়া দিন। ধরুন বাইরে গেলেন! তাদের জন্য কয়েকটা চকলেট নিয়ে আসুন। আপনার কাছে একটা মাত্র চিপস থাকলে সেটাও ভাগ করে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৯)অন্তত যেকোনো একবেলার খাবার একসাথে খাওয়ার চেষ্টা করুন। কিংবা বিকেলের নাস্তাটা! একসাথে খাবার খেলে বারাকাহ্ আসে। মোহাব্বত বাড়ে।
১০) পরিবারের শান্তির নিয়্যাতে,সকল বিপদ থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত অল্প হলেও সদকাহ্ করুন।
১১) আমল নিয়ে প্রতিযোগিতা করুন। তাদেরকে বারবার আমলের রিমাইন্ডার দিন। 'সবাই রাতে সূরা মূলক পড়ে নাও। সকালের মাসনুন আমলগুলো কি তোমাদের করা শেষ? চলো, আধঘন্টা দুরুদ পড়ি! আজকে অল্প একটু সিরাহ পড়ি। আজকে জুমআ, সবাই দুরুদ পড়ো। দুআ কবুলের সময় চলছে,সময়টা হেলা না করে দুআ করো।' এভাবে বারবার রিমাইন্ডার দিবেন। আজ না করলে কাল করবে৷ কাল না হলে পরশু। রিমাইন্ডার দিতে থাকলে একদিন অবশ্যই করবে। না করলেও আমাদের দাওয়াহ্ দিতে যেতে হবে। কারণ এটাই আল্লাহর হুকুম।
১২) আল্লাহর কাছে প্রচুর দুআ করবেন। নিজের ভাষায় দুআ করবেন। পরিবারের সদস্যদের হিদায়ত, সফলতা ও পারিবারিক শান্তির জন্য সূরা ইবরাহীমের ৩৫ ও ৪০ নং আয়াত, সূরা ফুরকানের ৭৪ নং আয়াত, সূরা আহকাফ ২৫ নং আয়াত পড়বেন। আয়াতগুলো সম্পর্কে আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ্-র বই 'রাহে বেলায়াতে' জেনেছিলাম।