15/10/2025
অফিশিয়াল বিবৃতি:
তারিখ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫
বিষয়: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর ও অপব্যখ্যামূলক তথ্য সম্পর্কে।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ও বারাকাতুহু।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনৈক হিতাকাঙ্ক্ষী উস্তাযা কর্তৃক তার ব্যক্তিগত বক্তব্যের মাধ্যমে ত্ব-হা যিন নূরাঈন ইসলামিক সেন্টার ও ফাউন্ডেশনের সম্মানিত পরিচালক, মুহতারাম আবু ত্ব হা আদনান (হাফি)'র বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হচ্ছে:
আমাদের ইসলামিক সেন্টার নিরেট মাদ্রাসা আদলের কোন প্রতিষ্ঠান নয়।এটি মূলত জানারেল শিক্ষিত মানুষদের নিয়ে, যাদের মাঝে আছেন ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, প্রশাসন, কর্পারেট জগৎ সহ বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই ও বোনেরা। যাদের অনেকেই (বেশিরভাগই) আমাদের কাছে আসেন দ্বীন সম্পর্কে জানতে, শিখতে ও বুঝতে। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় যে তাদের মাঝে অনেকেই (বেশিরভাগই) শতভাগ দ্বীনের বুঝ, পোষাক বা হিজাব শুরু থেকেই পালন করেন না। যেহেতু তারা ভিন্ন মেজাজ পরিবেশ থেকে উঠে আসেন সেহেতু আমরা প্রথমদিন বা শুরুর দিকেই তাদের উপর শতভাগ দ্বীনি আদব, আখলাক কিংবা পর্দা চাপিয়ে দিতে পারিনা।
আমরা তাদের পরামর্শ, বই, পত্রিকা, সিলেবাস ইত্যাদি হাদিয়া দেই, কাউন্সিলিং করি, বিভিন্ন কোর্সে এডমিশন নেই, তালিম, ফ্রি ক্লাস ও সেমিনারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখি।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানে শত শত মানুষ প্রতিনিয়ত আদনান সাহেবের সাথে দেখা করতে আসেন বিভিন্ন প্রফেশন ও হাই প্রফাইল সোসাইটি থেকে।। তাদের অনেকেই হয়তো শতভাগ দ্বীন ও হিজাব মেইনটেইন করেননা, আর এটাই স্বাভাবিক!
এরপরেও প্রতিষ্ঠান সাধ্যমত যাবতীয় দ্বীনি নীতিমালা ও পরিবেশ, পর্দা, শালীনতা ও ইসলামী আদর্শ বজায় রেখে দাওয়াহ, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেই আসছে আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনক হলেও সত্য যে সম্প্রতি আদনান সাহেবের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডার অংশ হিসেবে একটি মহল জনৈক সুযোগ্য উস্তাযার একপাক্ষিক বক্তব্যকে সামনে এনে মুহতারাম, প্রতিষ্ঠান,
,সম্মানিত অতিথি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণীতভাবে চরম অপবাদ ও মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন। এতে আমরা মারাত্মক বিব্রত!
তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বক্তব্যে “একজন নারী শিক্ষার্থী ও উস্তাদ”-এর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ, ফোনালাপ, এমনকি অফিসে অবস্থান–সংক্রান্ত কিছু বিকৃত অপবাদ ছড়িয়েছেন হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও অসুস্থ মানসিকতার সাজানো গল্প মাত্র।।।।।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত “ছবি ও ভিডিও” সংক্রান্ত কিছু বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই—
উক্ত ছবিতে যে নারীকে দেখা যাচ্ছে, তিনি ত্ব-হা যিন নূরাঈন ইসলামিক সেন্টার-এর কোনো কর্মকর্তা, কর্মী বা উস্তাদের ব্যক্তিগত পূর্ব পরিচিত ১৫ বছর আগের কোন কলেজ পড়ুয়া বান্ধবী নন। সম্ভবত অভিযোগকারী এখানে অতীতের বাস্তবতার সাথে বর্তমানের কল্পিত সন্দেহের অসুস্থ সেতুবন্ধন রচনা করেছেন, যা স্রেফ তার একপাক্ষিক অভিযোগ মাত্র!
হয়তো তিনি শত শত মানুষের ন্যায় দ্বীনি কোন বিষয়ে, অথবা গাযা প্রজেক্টে দান করতে কিংবা সাপ্তাহিক তালিমে সেন্টারে এসেও থাকতে পারেন, যা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। তার ব্যাকগ্রাউন্ড পেশা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের বিন্দুমাত্র আগ্রহ বা মাথাব্যথার কোন প্রশ্নই আসে না। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানে কেউ সিরাত, কুরআন ইত্যাদি শিখতে এলেই আমরা প্রত্যেক স্টুডেন্টকেই চলমান ট্রায়াল ক্লাসে বসতে, শুনতে আমন্ত্রণ জানিয়েই থাকি, যা খুবই বেসিক ও সুস্থ স্বাভাবিক একটি বিষয়।।
অতপর সম্ভবত সেদিনের চলমান একটি সিরাত ক্লাসে অংশগ্রহণ করে তিনি পূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করতে পারেননি — যা উক্ত ক্লাসে উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও লক্ষ্য করেছেন।
তাই কারও প্রথম আগমন ও দ্বীনে ফেরার প্রাথমিক ধাপে তাৎক্ষণিকভাবে পরিপূর্ণ পর্দা রক্ষা করা সম্ভব না হওয়াটা কস্মিনকালেও কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কাছে অনুচিত আচরণ বা কোন বিশেষ সম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত করেনা! স্রেফ সন্দেহ ও অসুস্থ মানসিকতার বসবর্তী হয়ে কাওকে অন্যায়ভাবে সাসপেক্ট করে তার পেশা ও উস্তাদের ১৫ বছর আগের অতীতকে টেনে এনে শুধু নামের কল্পিত মিলের অসুস্থ সেতুবন্ধন সাজিয়ে অনলাইনে উস্তাদকে যাচ্ছেতাই অপবাদ দেয়ার পেছনে ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য আছে তা স্পষ্ট। শুধু তাই নয় এতে অভিযোগদাতার উপর ভিক্টিমদের মানহানীর চরম গুনাহ ও শারিয়াতের বিধানও কার্যকর হয়।
ফ্রি মিক্সিং আসলে কি?
এটা কি নিয়মিত ক্লাস ছিল? উত্তর না!
ক্লাসটিকে সামাজিক মাধ্যমে “ফ্রিমিক্সিং” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা কোনো নিয়মিত ক্লাস নয়। বিগত এক বছরে মাত্র দুবার মাসিক ভিত্তিতে সিরাতের মাসিক রিভিউ ক্লাসটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে উস্তাদ ও ছাত্র-ছাত্রী একত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক এবং দূরত্ব মেইনটেইন করে সিরাত সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করেন। যদিও ছাত্রীরা সবার পিছনে ও দূরত্বে অবস্থান করেছেন, যা ভিডিওতে স্পষ্ট।
অসুস্থ মানসিকতায় তাকালে হারামাইনের নামাজ, দেশের অনেক বরেণ্য আলেমদের সেমিনার ইত্যাদির মাঝেও তারা কথিত ফ্রি মিক্সিং এর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবে
কোন সন্দেহ নেই।
স্রেফ একটি ফুটেজের উপর ভিত্তি করে
এহেন ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ, ফোনালাপ, ছবি আদান-প্রদান বা একান্ত অবস্থানের যে অভিযোগ প্রচার করা হয়েছে, তার কোনো বাস্তবতা বা প্রমাণিত ভিত্তি নেই।
কেউ “সেন্টারে বসে মোবাইল ব্যবহার” বা “চ্যাটিং” বা কোনো ব্যক্তি ফোনে ব্যস্ত থাকলেই তা সংশ্লিষ্ট উস্তাদদের দিকে সম্বন্ধ করাটাই বা কতটা সুস্থ মানসিকতার পরিচয় এটাও ভেবে দেখা উচিৎ।
উল্লেখ্য যে সেন্টারে প্রশাসনিক নীতিমালা অনুযায়ী অফিসে প্রতিনিয়ত শিক্ষক ও কর্মীরা উপস্থিত থাকেন। পুরো প্রতিষ্ঠান জুড়ে সিসি ক্যামেরা, শারঈ শালীনতা ও পর্দার নীতি বজায় রাখা হয়। এখানে ফ্রি মিক্সিং এর স্বাভাবিক সুযোগই বা কোথায়?
এই অপবাদ ছড়ানোর মাধ্যমে একজন দ্বায়ী ও প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার যে প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, তা শারঈ আইনগতভাবেও মানহানিকর অপরাধের শামিল।
আরও উল্লেখ যে, আমাদের সেন্টারে বিভিন্ন সময়ে সিরাত প্রতিযোগিতা, শিক্ষক নিয়োগ, দাওয়াতি প্রোগ্রাম ও দান–সংক্রান্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এসব প্রয়োজনে নারী অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে সীমিত পরিসরে যোগাযোগ হতেই পারে, তবে সেসব যোগাযোগ সর্বোচ্চ পর্দা বজায় রেখে, পেশাদার ও সতর্কভাবে সম্পন্ন করা হয়।
এছাড়াও আমাদের সেন্টারে বিভিন্ন বোনেরা ইসলামী মাসআলা জানতে, দান (donation) দিতে বা সামাজিক সেবা কার্যক্রমে যুক্ত হতে আসেন। ইসলামী শিষ্টাচারের সীমার ভেতরে প্রয়োজনীয় কথা বলা শরীয়তসম্মত ও নৈতিকভাবে বৈধ। ইসলামী পরিপ্রেক্ষিতে পরামর্শ দেওয়া বা যোগাযোগ করা — এটা কোনোভাবেই “প্রেম” বা “অনৈতিক সম্পর্ক” হিসেবে গণ্য হতে পারে না।
উল্লেখ্য সিরাত সিজন ৩ প্রতিযোগিতায় যে শিক্ষার্থী বিজয়ী হয়েছেন, তাঁকে সম্পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বশীলদের পরামর্শক্রমে যোগ্যতা যাচাই করে উস্তাযা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এটা ছিলো একটি শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ, এতে কোনো প্রকার ব্যক্তিগত স্বার্থ বা অনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত নয়।
প্রশাসনিক অনুমতি ব্যতীত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সিকিউরিটি ফুটেজ সংগ্রহ, সন্দেহবসত প্রকাশ করা একটি গুরুতর অনৈতিক ও আইনবিরুদ্ধ কাজ। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও সম্মানিত অতিথিসহ শিক্ষকবৃন্দকে মিথ্যা প্রমাণের প্রচেষ্টা করা জঘন্য মানহানিকর আচরণের শামিল।
এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠান উক্ত সম্মানিত অতিথি র প্রতি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। তিনি (ভিক্টিম) যদি
এ বিষয়ে অপবাদ আরোপকারী চক্রের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ বা মানহানির মামলা করতে চান সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করবে ইনশাআল্লাহ।
সেন্টার প্রশাসন এই ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছে এবং ইতিমধ্যেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ইসলামী দাওয়াতি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক বা নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভিত্তিহীন প্রচারণা চালাতে সাহস না পায়।
ভিত্তিহীন, একপাক্ষিক ও মানহানিকর বক্তব্যের মাধ্যমে কোনো মুসলমানের সম্মানহানি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই আমরা সবাইকে গুজব, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট প্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান আইনগত ও নৈতিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ইনশাআল্লাহ।
বার্তা প্রেরক
জাকারিয়া মেহরাব
সহকারী পরিচালক
ত্ব-হা যিন নূরাঈন ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা।