29/06/2025
২০১৯ সালের এক সকালে, নরওয়ের উত্তরের একটি শান্ত উপকূলে হঠাৎ দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য। পানির মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি সাদা রঙের বেলুগা তিমি। সে এতটাই সাহসী যে মানুষের নৌকার একেবারে কাছাকাছি চলে আসছে, এমনকি মাথা তুলে যেন কিছু একটা বলতে চাইছে! দেখতে মিষ্টি, আচরণেও বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার গলায় বাঁধা ছিল একটা কালো রঙের বেল্ট—আর সেখানেই লুকিয়ে ছিল গোটা রহস্য।
বেল্টটির গায়ে লেখা—“Equipment St. Petersburg”।
নাম শুনেই চমকে উঠল সবাই। রাশিয়ার সেই বিখ্যাত শহরের নাম কেন একটি তিমির শরীরে বাঁধা হ্যারনেসে লেখা থাকবে?
লোকজন ভেবেছিল এটা হয়তো সার্কাস থেকে পালানো কোনো প্রাণী। কিন্তু সামুদ্রিক গবেষকরা যখন তিমিটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন, তখন স্পষ্ট হয়ে গেল—এই তিমিটি কোনো বন্য প্রাণী নয়, বরং মানুষ দ্বারা প্রশিক্ষিত। তার হাবভাব, মানুষের প্রতি বিশ্বাস, এমনকি মানুষের নির্দেশে কাজ করার প্রবণতা ছিল একেবারে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণীর মতো।
এই খবর মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে গেল। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে ডাকা হতে লাগল “Hvaldimir”—একদিকে নরওয়েজিয়ান ভাষায় 'হভাল' মানে তিমি, আর অন্যদিকে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নামের ছায়া।
তিমিটি শুধু সাঁতার কাটছে না, সে মানুষকে অনুসরণ করছে, মোবাইল পড়ে গেলে ফিরিয়ে দিচ্ছে, এমনকি ডুবুরিদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। কেউ কেউ তাকে ডাকছে ‘সমুদ্রের বন্ধু’, আবার কেউ বলছে—‘রাশিয়ার গুপ্তচর’।
মূল রহস্যটা হল, এই তিমিটিকে আসলে কোথা থেকে পাঠানো হয়েছে? রাশিয়ার নৌবাহিনী বহু বছর ধরেই সামুদ্রিক প্রাণী যেমন তিমি, ডলফিন ও সীল ব্যবহার করে সাবমেরিন পর্যবেক্ষণ, বোমা শনাক্তকরণ এবং শত্রু জাহাজের গতিবিধি নজরদারির জন্য। আমেরিকাও একই কাজ করে। তবে তফাৎ হলো—এই তিমিটিকে ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কিনা, তা কেউ জানে না।
বর্তমানে হভালদিমির নরওয়ের লোকদের চোখের মণি। সে যেন পুরো দেশের সেলিব্রেটি তিমি। উপকূলে ভিড় জমায় লোকজন, শুধু তাকে এক ঝলক দেখার জন্য। কেউ তার জন্য খাবার আনে, কেউ ভিডিও করে সোশ্যালে দেয়।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিষয়টা এত সরল নয়। হভালদিমির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত। সে একা, তার বন্য পরিবেশে টিকে থাকার অভ্যাস নেই, আর অন্য বেলুগাদের সাথে মিশে যেতে পারছে না। তার নিরাপত্তা, খাবার সংগ্রহ, বা স্বাভাবিক জীবন—সবই প্রশ্নের মুখে।
এটা কি নিছক একটি কৌতূহল
©collected