
26/06/2025
আজ সারাটা দিন এই বিষয়টা মাথা থেকে যাচ্ছেই না আমার!
বাবা নেই! "মা হাসপাতালের বেডে, আর মেয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকতেই দেয়া হলো না—এ কোন বিচার!?"
এইচএসসি পরীক্ষার্থী একটি মেয়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। বাবাহীন সংসারে এই মেয়েটি ছিল একমাত্র আশার আলো। জীবনের প্রতিটি ধাপে সংগ্রাম করে বড় হয়েছে। আর সেই জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার দিন—যে দিন তার পাশে থেকে দো'আ করার কথা ছিল মায়ের, ঠিক সেই দিনই মা স্ট্রোক করে হাসপাতালে!
পরিবারে আর কেউ নেই। মেয়েটিই নিজের হাতে মাকে নিয়ে গেছে হাসপাতালে। চোখে অশ্রু, বুকে ভয়, মাথায় চিন্তার পাহাড়। তবু সে হেরে যায়নি। মাকে নিরাপদ স্থানে রেখে ছুটে এসেছে মীরপুর বাংলা কলেজে, তার স্বপ্নের পরীক্ষাকেন্দ্রে।
কিন্তু, কী নিষ্ঠুর নিয়তি! মাত্র কিছুক্ষণ দেরি—আর তাই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে হাজারো মানুষের সামনে নিজের ভাগ্যকে প্রশ্ন করছিল মেয়েটি।
তবু, কোনো করুণা দেখায়নি সরকারি বাংলা কলেজের ডাইনি অধ্যক্ষ।
একটা মেয়ের চোখের জল, তার কান্না—সবকিছুই বুঝেও বোঝেননি তারা।
হয়তো নিয়ম আছে। হয়তো সময়ের নিয়ম কঠোর।
কিন্তু, কিসের জন্য এই নিয়ম? এই নিয়ম কি মানুষের জীবনের ঊর্ধ্বে? এই নিয়ম কি কোরআন হাদীস যা পরিবর্তন যোগ্য নয়? এই নিয়ম তো মানুষের ই তৈরী! তাহলে কেন মেয়েটির এই বিষয়টি বিবেচনা করলো না কলেজ কতৃপক্ষ?
একজন শিক্ষার্থী, যার মা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, যে দেরি করলেও এসেছিল... তার জন্য কি মানবিকতা বলে কিছু নেই?
এই দেশেই তো দেখা গেছে— 👉 বছরের পর বছর অটোপাশ,
👉 প্রশ্ন ফাঁস,
👉 ভর্তি বাণিজ্য,
👉 প্রভাবশালীদের সন্তানের জন্য আলাদা সুযোগ...
কিন্তু একটি অসহায় মেয়ের জন্য নেই একটুকু সহানুভূতি?
এক ঘণ্টা দেরি করায় তার পুরো একটি বছর নষ্ট হয়ে যাবে!
কে দেবে এর জবাব?
কোন নিয়ম তাকে এতো বড় শাস্তি দিতে পারে?
এই দেশে গরীবের চোখের জল কেউ দেখে না।
এই দেশে মায়েরা হাসপাতালের বেডে, মেয়েরা পরীক্ষার গেটের বাইরে...
আর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার, নিয়মের আড়ালে মুখ লুকিয়ে হাসছে!
এটা কি আমরা চাই?
এটাই কি আমাদের মানবতা?
আমি প্রশ্ন রাখি—
এই একটি পরীক্ষার সুযোগ দিলে দেশটা কি ভেঙে পড়তো?
এই একটি সুযোগ কি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারতো না?
আজ সেই মেয়েটির চোখের জল এই দেশের বিবেককে নাড়া দিক।
মানবতা হেরে না যাক, হৃদয় জিতে যাক।