23/08/2025
সৌদি আরবের মক্কায় প্রবাসী আওয়ামী লীগের শোক দিবস পালিত
সৌদি আরবের মক্কা শহরে শোকার্ত হৃদয়ের শ্রদ্ধা আর যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে রক্তঝরা শোকাবহ আগষ্টে আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়ানোর দীপ্ত শপথ নিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (২২ আগষ্ট) স্থানীয় সময় রাত ০৮ টায় পবিত্র মক্কা শহরে প্রবাসী আওয়ামী লীগ, মক্কা, সৌদি আরব শাখার উদ্যোগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদাত বার্ষিকী শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
প্রবাসী আওয়ামী লীগ, মক্কা, সৌদি আরব শাখার সভাপতি সামসুল আলমের সভাপতিত্বে ও জালালাবাদ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ কামালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ, প্রবাসী আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা নূর মোহাম্মদ, সহ সভাপতি আমিন শাহ, পোকখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) দেলোয়ার হোসেন, কক্সবাজার সদর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মিজানুল হক, জালালাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মোফাজ্জেল ফরাজী প্রমুখ।
আলোচনা সভার শুরুতে মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬২ সালের শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা, ৬৯ এর গনঅভ্যুত্থান, আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৫ই আগষ্ট, ৩রা নভেম্বর, ২১শে আগষ্টের নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড এবং স্বৈরাচার বিরোধী সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সম্ভ্রমহারা ২ লক্ষাধিক মা-বোনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাড়িয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে প্রবাসী আওয়ামী লীগ, মক্কা, সৌদি আরব শাখার সভাপতি সামসুল আলম বলেন, নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাত, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে জোর করে দেশত্যাগে বাধ্য করার পর সারাদেশে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, একাত্তরের দু:সময়ে ছিলো আওয়ামী লীগ, ৭৫ পরবর্তীতেও আওয়ামী লীগ জেগে ওঠে ছিলো, এক এগারো তে দাঁড়িয়েছে, ইনশাআল্লাহ ২০২৪’র এই সংকটে ও শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে আবারও আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
সামসুল আলম আরো বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, জাতীয় চেতনার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, নারী জাগরণের প্রতীক বেগম রোকেয়া শাখাওয়াতের ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলা, সেনা নিবাসের ভেতরে সাত বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল ভাঙ্গা, অরক্ষিত রাখা গণভবন ও জাতীয় সংসদ ভবন লুট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভষ্মীভূত করা, শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ার কারণে হত্যা, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি কিসের আলামত? এগুলো কোনো সরকার, দল বা ব্যক্তির সম্পদ নয়; রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও জাতির শৌর্যবীর্র্যের প্রতীক।
মাতৃভূমির সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, জাতীয় বীর ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারকসমূহের ওপর যেসব হামলা হচ্ছে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আজ শকুনের খামচিতে চিহ্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে! আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ। কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না, এই ঘটনা জাতি কখনো ভুলে যাবে না। যা ঘটছে তা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ধ্বংসের শামিল। বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা যারা করেন, তারা কেন বুঝতে চান না যে ইতিহাস কখনও মোছা যায় না। ইতিহাস তৈরির কারিগরদের নিজের প্রয়োজনেই ইতিহাস তার বুকে আগলে রাখে। বঙ্গবন্ধু এমনই এক ইতিহাস, বাঙালির অস্থিমজ্জায় যিনি মিশে আছেন।
মক্কা প্রবাসী আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিন শাহ সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে বাঙালির দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের স্মৃতি ভাণ্ডার বঙ্গবন্ধুর ৩২ ধানমন্ডির বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে বলেন, কেউ চাইলেই ইতিহাস নিশ্চিহ্ন বা মুছে ফেলতে পারে না, যতবার মুছে ফেলার চেষ্টা হয়, ততবারই ইতিহাস তার আপন মহিমা নিয়ে আবার ফিরে আসে।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা প্রথম উঠেছিল এই বাড়িতেই; এই বাড়ি থেকেই এসেছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। বাঙালি জাতি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন মানুষের হৃদয়ে চীর অম্লান হয়ে থাকবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ বলেন, বাঙালি এমন এক অভাগা জাতি, যাদের জাতির পিতাকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে বারবার অপচেষ্টা হয়। জাদুঘরে রূপান্তরিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাবেক বাসভবনটি আমাদের ইতিহাস ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। বাড়িটি কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের নয়। এটি এখন বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর একটি জাতীয় সম্পত্তি। সবাইকে মনে রাখতে হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ও ঐতিহাসিক ৩২নং এর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে সঠিক ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না।
প্রবাসী আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা নূর মোহাম্মদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন , বর্তমান সময়ে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হচ্ছে এবং দেশের কিছু মানুষ জাতির জনকের স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। তবে সারা বিশ্বের বঙ্গবন্ধু অনুসারীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর স্মৃতিকে সম্মান জানাচ্ছেন।
আলোচনা শেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে শাহাদাৎবরণকারী জাতির পিতা, বঙ্গমাতা ও পরিবারের সদস্যসহ নিহত সকল শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।