
10/05/2025
বিয়ের পর একটি নারীর জীবনে অনেক কিছু বদলে যায়—পরিবেশ, দায়িত্ব, সম্পর্ক এবং সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে কর্তব্যবোধে। একজন মেয়ে তার বাবার বাড়িতে যতই প্রিয় থাকুক, বিয়ের পর স্বামীর ঘরেই তার মূল আবাস। আর এই পরিবর্তন শুধু সামাজিক না, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও গভীরভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
একজন মেয়ে যখন স্ত্রী হন, তখন তার জীবনের প্রথম অভিভাবক হয়ে যান তার স্বামী। স্বামী যেমন স্ত্রীর রিজিক, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেন, তেমনি স্ত্রীও স্বামীর সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানানো এবং অনুসরণ করাকে নিজের কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করেন।
প্রশ্ন হলো, যদি একজন মেয়ে তার মাকে কিছু বলে ফেলে—যেমন, "আজই বাবার বাড়ি যাবো"—কিন্তু পরে স্বামী যদি যৌক্তিক কারণে বলে, "২ দিন পরে যাই, আমি সাথেই যাবো", তখন কী করা উচিৎ? কীটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ—একটি আবেগবশত প্রতিশ্রুতি, নাকি সংসারের ভারসাম্য ও স্বামীর সম্মান?
ইসলামী শিক্ষা কী বলে?
রাসূল (সা.) বলেছেন:
"যদি আমি কাউকে কাউকে সিজদা করতে আদেশ করতাম, তাহলে আমি স্ত্রীকে তার স্বামীকে সিজদা করতে বলতাম, কারণ স্বামীর স্ত্রীর উপর অনেক বড় হক রয়েছে।"
(তিরমিজি, হাদীস ১১৫৯)
এই হাদীস কোনো ব্যক্তিকে অন্যজনের উপর অত্যাচার করার অনুমতি দেয় না, বরং বোঝাতে চায়—স্বামী স্ত্রীর জীবনে কতটা গুরুত্ব রাখে। স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা, তার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান—এইগুলো হলো একটি শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি।
প্রেম মানে শুধু কথা নয়, শ্রদ্ধাও বটে
প্রেমের গভীরতা কেবল "ভালোবাসি" বলাতেই না, সেটা প্রকাশ পায় যখন একজন স্ত্রী স্বামীর কথাকে গুরুত্ব দেয়, এমনকি ছোটখাটো ত্যাগ করে হলেও। মা-কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিকে সামান্য সামঞ্জস্য করে স্বামীর সিদ্ধান্তে চলা—এটাই হলো পরিবারে ভারসাম্য বজায় রাখার আসল চাবিকাঠি।
একটি আবেগী প্রতিশ্রুতি কখনো কখনো সংসারের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিতে পারে, যদি না আমরা সেটাকে বিবেক দিয়ে সামলে নেই। স্বামী যদি বলে, "দুদিন পরে যাই, আমি সাথেই যাবো", তাহলে সেটি যে ভালোবাসার, নিরাপত্তার ও একসাথে চলারই আরেক রূপ—তা বোঝা জরুরি।
শেষ কথায় বলি,
মা আমাদের জানের চেয়েও প্রিয়, কিন্তু বিয়ের পর একজন নারীর প্রথম দায়িত্ব তার স্বামীর প্রতি। মা'কে সম্মান করা যায় স্বামীকে সম্মান রেখে, কিন্তু স্বামীকে অগ্রাহ্য করে মা'কে খুশি করা—সে খুশির কোনো স্থায়িত্ব নেই।
সমঝোতা, ভালোবাসা, আর পারস্পরিক সম্মান—এই তিনটি রত্ন না থাকলে কোনো সম্পর্কই স্থায়ী হয় না।