05/05/2025
‘বৈবাহিক ধর্ষণ’, এই শব্দ দুটোকে পাশাপাশি রাখাটাই কি সমস্যা? মানে ‘বিবাহ’ আর ‘ধর্ষণ’ এই দুইটা শব্দকে কোন ভাবেই মিলানো যাবে না তাই তো? আচ্ছা, তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম এই দুই শব্দকে পাশাপাশি বসানর কোন ভিত্তি নাই!
তাহলে এবার কিছু সত্যি ঘটনা বলি
ঘটনা ১
মনে আছে, খুব সম্ভব ২০২১, ত্রিশোর্ধ এক প্রবাসী শ্রমিকের সাথে বিয়ে হয়েছিলো ১৫ বা ১৬ বছরের একটা মেয়ের। বিয়ের এক মাসও সম্ভবত গড়ায়নি, মেয়েটির যৌনাজ্ঞে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে বিনাচিকিৎসায় শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে পৃথিবী থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে।
একজন ডাক্তারের পোস্টে পড়লাম, ১৬ বছরের সদ্য বিয়ে হওয়া এক কিশোরীকে এমন অবস্থায় পেয়েছিলেন যার যৌনাজ্ঞে স্টীচ দিতে হয়েছিলো, তার পরেও এমন রক্তক্ষরণ হয়েছে যে তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়েছিলো, তাও আবার ব্লাড গ্রুপ ‘ও’ নেগেটিভ।
ঘটনা ২
২০১৮-র কথা। আমার এক ছাত্রী তার ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলতে বলতে একদিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মেয়েটির স্বামী, মেয়েটির সাথে বিকৃত যৌনআঁচার করে। ব্রাশ, চিরুনি, আরও অনেক উদ্ভট জিনিষপত্র মেয়েটির যৌনাজ্ঞে প্রবেশ করান হতো। মেয়েটির স্বামী মেয়েটিকে বলত স্বামীর সন্তোষটির জন্য স্বামী যা বলে সেভাবে সব করা উচিৎ। মেয়েটিকে বলেছিলাম তুমি এখনও ওর সাথে কেন আছ? মেয়েটি বলেছিল, তার পরিবারের অবস্থা খুব নাজুক, ডিভোর্সের বিষয়টাকে কেউ মেনে নিতে পারবে না।
ঘটনা ৩
মেয়েটি খুব কাছের এক বান্ধবীর আত্মীয়। বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায়, মেয়েটি তার স্বামীর অসম্ভব বিকৃত স্যাডিস্ট আচরণ সহ্য করতে না পেরে ফিরে এসেছে। মেয়েটার মুখে কাপড় গুঁজে বা মুখ বেঁধে পেনিট্রেট করা হত।
আরও একজনের কথা শুনলাম, বিয়ের দিন থেকে মেয়েটিকে প্রতিনিয়ত জোরপূর্বক এতো বেশি পেনিট্রেট করা হয়েছে যে মেয়েটি পালিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে।
ঘটনা ৪
পরিচিত এক আপুর লেখায় পেশেন্ট দেখার কিছু অভিজ্ঞতা পড়লাম, তার মধ্যে একটা কেস এমন, স্বামী পর্ণ এডিক্ট, মেয়েটার পায়ুপথ এমন ভাবে ব্যাবহার করেছে যে, পায়খানার রাস্তা এবং প্রস্রাবের রাস্তা এক হয়ে গেছে।
এই ঘটনাগুলোর নাম যদি ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ না হয়, তাহলে কি নাম দেওয়া যায় সেটা তো বলেন নাই। নাকি এই ঘটনাগুলোর কোন স্বীকৃতির প্রয়োজন নাই? এতগুলো নারীর জীবন বিপন্ন হওয়া এই গল্পগুলো কি নিছক স্বামী-স্ত্রীর খুনসুটি আর স্বামীকে জোর করে শপিং-এ নিয়ে যাওয়ার শামিল? যেই ‘বিজ্ঞ’ লোকেরা এই জাতিয় কথা বলেন তারা সমাজকে কতটুকু চেনেন বা তা নিয়ে ভাবেন আমার সত্যি সন্দেহ আছে, সম্ভবত উনারা উনাদের গণ্ডিটাকেই সমাজ ভাবেন। যার কথার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, আল্লাহ্র কাছে তার জবাবদিহিতাও বেশি, এই ভয় তাদের মধ্যে কতটুকু আছে আমার জানা নাই। উক্ত ব্যক্তিকে একবার একজন নারী লিখিত প্রশ্নে জানিয়েছিলেন, তার স্বামী সমকামী, এমতাবস্থায় তার কি করা উচিৎ? ‘বিজ্ঞ’ সেই মানুষ উত্তর দিয়েছেন, সেই নারী যেন ধৈর্য ধারণ করেন, এবং স্বামীকে বুঝিয়ে এই কু-পথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন, প্রয়োজনে স্বামী যেন বাসার বাহিরে যেতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করেন, যেন স্বামী একটি গেদা বাচ্চা, তাই তাকে জোর করে বাসায় আটকায় রেখে এই কু-অভ্যাস ছাড়াবেন। তারপরেও, উনি মুখে উচ্চারণ করতে পারেন নাই, যে আপনি প্রাথমিক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তা না হলে তালাকের ব্যবস্থা করেন, কারণ আপনার স্বামী একটি জঘন্য হারাম কাজে লিপ্ত। আমি যখন ইয়াসির কাদ্দি, নোমান আলী খান-দের বক্তব্য শুনি আমার সত্যি এই জাতিয় ‘বিজ্ঞ’ লোকদের প্রতি করুণা হয়। তাদের একটা কথার আঁচরে কত নারীর জীবন বিপন্ন হয়, এই হিসাব তারা কীভাবে দিবেন, সেটা ভেবেও শিউড়ে উঠি।
অনেকেই বলেছেন বৈবাহিক ধর্ষণ বিরোধী আইন হলে ছেলেরা বিয়ে করতে ভয় পাবে, কারণ এই ক্ষেত্রে অনেক মিথ্যা মামলা হয়ে থাকে। বুঝলাম, আপনারা ছেলেদের বিবাহ করার ভয় নিয়ে বড়ই উদ্বিগ্ন, কিন্তু আমরা যখন বিয়ে পরবর্তী ভয়াবহ যৌন মিলনের গল্পগুলো শুনি, আমাদেরও আমাদের পরিবারের মেয়েদের বিয়ে দিতে ভয় হয়। মিথ্যা মামলা হয় না সেটা বলছিনা, কিন্তু এই জন্য যেই নারীদের সাথে এই অন্যায় হচ্ছে সেটার কোন বিচার হবে না? জমি-সম্পত্তি নিয়ে তো কত মিথ্যা মামলা হয়, ভাইয়ে-ভাইয়ে বা বোনের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়, খুনাখুনি পর্যন্ত হয়ে যায়, তাহলে এখন কি বলবেন জমি-সম্পত্তি সংক্রান্ত সব আইন দেশ থেকে বাতিল হয়ে যাক?
আরেক প্রশ্ন, প্রমাণ কীভাবে হবে?
ধর্ষণের প্রমাণ কীভাবে হয়? ধর্ষণ কি জনসম্মুখে হয়? বৈবাহিক ধর্ষণের অসংখ্য কেস প্রমাণ সহ গাইনি ডাক্তারদের কাছে পাবেন, ছোট-ছোট গ্রাম উপজেলা ক্লিনিক গুলোতেও পাবেন। অন্যান্য মুসলিম দেশ যেমন, তুরস্ক, তিউনিসিয়া, লেবানন, মরক্কো ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, এই দেশগুলোতে এই জাতিয় কেস কীভাবে প্রসেস করা হয় সেভাবেও জানা যেতে পারে। মিথ্যা মামলার জন্য পালটা বড় অংকের জরিমানা বা অনাদায়ে কারাদণ্ডের আইন হতে পারে।
যে কোন বিষয়কে বাতিল বলা সহজ, মানে মাথা নাই মাথা ব্যথাও নাই। আর বিষয়টা যদি হয় নারী তাহলে তো হইল…
Nuren Nirvana Brishti