21/06/2025
প্রেস ব্রিফিং
তারিখ: ২০ জুন, ২০২৫
বিষয়: UIU কর্তৃক অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত ২৬ শিক্ষার্থীর পক্ষে আন্দোলন ও ২১শে জুনের কর্মসূচি ঘোষণা
গত ২৬ এপ্রিল ২০২৫-এ ঘটে যাওয়া এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ভিত্তিতে UIU কর্তৃপক্ষ ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে। কিন্তু বহিষ্কারাদেশের আপিলে আমরা জানতে পারি, এই ঘটনার পক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। বরং ১৬ই জুন আমাদের ডেকে তারা যেসব “প্রমাণ” দেখায়, তা শুধুমাত্র আন্দোলনের পক্ষে সামাজিক মাধ্যমে করা পোস্ট, কমেন্ট এবং ছবি—যা সরাসরি বাক-স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।
সেই ঘটনায় কোনো গ্রাউন্ড বা যথাযথ তদন্ত ছাড়াই এই বহিষ্কার আদেশ জারি করা হয়েছে, যার ভিত্তি একান্তই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অন্যায়। আরও বিস্ময়কর হলো, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা সবাই UIU-র জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় ও পরিচিত মুখ এবং আগে থেকেই অথোরিটির নানা অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব ছিলো।
বারবার চেষ্টা করেও আমরা কোনো প্রকার প্রশাসনিক সহায়তা পাইনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (UGC) বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
এই প্রেক্ষাপটে আমরা UIU এর শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করছি—
আগামী ২১শে জুন ২০২৫, শনিবার, সকাল ৮ টা থেকে নতুনবাজার এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে।
আমরা চাই, এই দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী, বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, আমাদের এই ন্যায্য লড়াইয়ে পাশে দাঁড়ান।
এই আন্দোলন শুধুই UIU-র নয়—এটা সকল ছাত্রের বাক-স্বাধীনতা ও সম্মানের জন্য।
উক্ত কর্মসূচিতে সরকারের প্রতি আমাদের ৫ দফা দাবি থাকবে:
১। UIU কর্তৃক অন্যায়ভাবে সকল বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত বহিষ্কার প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
যেসব শিক্ষার্থীরা শোকজ পেয়েছে ও বহিষ্কৃত হয়েছে তারা বিগত ২ মাস যাবত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে নি। এছাড়াও নানা মানসিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অন্যায় সিদ্ধান্তের জন্য। সেজন্য, বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ বিনা শর্তে তুলে নিতে হবে এবং যেসব একাডেমিক ও অন্যান্য ক্ষতি হয়েছে সেসবের ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।
২। বহিষ্কারের সাথে জড়িত সকল ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা।
যেসব কর্তৃপক্ষ সদস্য, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, শিক্ষক, স্টাফ ও শিক্ষার্থীদের প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা অভিযোগের কারণে ও কুট-কৌশলে শিক্ষার্থীরা অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের অন্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। UIU-তে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-অসুবিধা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রিফর্ম দাবিসমূহ বাস্তবায়ন।
UIU রিফর্মের যেসকল দাবি পূরণ করা হয় নি সেসকল দাবি পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি যেসকল কর্তৃপক্ষ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে সেসকল সদস্যদের বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবসাকরণ ও মান অবনতির জন্য দায়ী।
৪। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন UIU এর সাম্প্রতিক অস্থিরতা সহ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যা সমাধানে উদাসীন। শত দৌড়াদৌড়ি করেও UIU এর ক্রিটিক্যাল সমস্যার সমাধান তারা করতে পারে নি এবং তারা নিজেরাই তাদের অপারগতা স্বীকার করেছে। তারা মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যাগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এজন্য কেবল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিষয় তদারকির জন্য একটি আলাদা ও স্বতন্ত্র মঞ্জুরি কমিশন গঠন করতে হবে।
৫। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫% কর বাতিল করতে হবে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের আরোপিত ১৫% কর মওকুফ করতে হবে এবং সরকারি তদারকিতে এই বাঁচানো অর্থ শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই আন্দোলন থেকে আমরা পিছু হটবো না—আর এই দেশ আবারও দেখবে, ছাত্র সমাজ চুপ করে থাকে না।
আমরা ফিরবো, সম্মানের সাথে। ইনশা আল্লাহ।