29/06/2025
আয়ারল্যান্ড কেন ফিলিস্তিনের পক্ষে?
চলুন জেনে আসি অজানা এক অধ্যায়।
_
উসমানি খিলাফত ও আয়ারল্যান্ড: দুর্ভিক্ষকালে এক মানবিক সম্পর্কের ইতিহাস
১৮৪০-এর দশকে আয়ারল্যান্ড যখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে পড়েছিল, তখন হাজার মাইল দূরের মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু উসমানি খিলাফত এগিয়ে এসেছিল তাদের সাহায্যে।
★ আয়ারল্যান্ডের দুর্ভিক্ষ: The Great Irish Famine
১৮৪৫ সাল থেকে ১৮৫২ সাল পর্যন্ত সময়কালকে আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসে "The Great Famine" নামে চিহ্নিত করা হয়। এই দুর্ভিক্ষের মূল কারণ ছিল potato blight নামক একটি ফসল-ধ্বংসকারী রোগ। পটেটো ছিল সে সময় আয়ারল্যান্ডের প্রধান খাদ্য; প্রায় ৩০-৪০% মানুষ শুধু এটিকেই খাদ্য হিসেবে নির্ভর করত।
এই দুর্ভিক্ষে প্রায় ১০ লাখ মানুষ মারা যায়, এবং ২০ লাখেরও বেশি মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হন।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এই দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি।
★ উসমানী খিলাফতের সুলতান আব্দুল মাজিদ
উসমানি খিলাফতের তখনকার খলীফা ছিলেন সুলতান আব্দুল মাজিদ (১৮৩৯–১৮৬১)।
তিনি আয়ারল্যান্ডের দুর্ভিক্ষের খবর শুনে অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং মুসলিম উম্মাহর বাইরে গিয়েও মানবতার প্রতি তাঁর দায়িত্ব পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন।
প্রথমে তিনি আয়ারল্যান্ডের জন্য ১০,০০০ পাউন্ড দানের ঘোষণা দেন।
কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয় ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে।
তারা জানান যে, রানী ভিক্টোরিয়া নিজেই মাত্র ২,০০০ পাউন্ড সাহায্য করেছেন, কাজেই খিলাফতের সহায়তা যেন সে অঙ্কের বেশি না হয়।
তাই বাধ্য হয়ে সুলতান আব্দুল মাজিদ কূটনৈতিক সম্মান রক্ষা করে ১,০০০ পাউন্ড আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠান, কিন্তু এর বাইরেও:
তিনি গোপনে তিনটি খাদ্যবাহী জাহাজ আয়ারল্যান্ডের Drogheda বন্দরে পাঠান।
এই জাহাজগুলো স্থানীয় লোকদের হাতে খাদ্য সরবরাহ করে এবং বহু মানুষের প্রাণ বাঁচায়।
এটি ছিল সেই সময়ের জন্য একটি বিশাল মানবিক উদারতার নিদর্শন, যখন একটি মুসলিম বিশ্বশক্তি খ্রিস্টান জনপদের পাশে দাঁড়িয়েছিল শুধুমাত্র মানবিকতার জন্য।
এরপর থেকেই আইরিশরা প্রতিবছর এই সময়টিকে স্মরণ করে। শুধু তাই নয়, মুসলিমদের, উসমানীয়দের এবং তুর্কিদের যেকোনো বিষয়ে সমর্থন দিয়েও পাশে থাকে।