07/10/2025
ইসলামী রাজনীতি: পথ ও পন্থা
--মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ
মুসলমান সমাজের উপর কোনো কাফেরের শাসক হবার অধিকার নেই। তেমনি যে ব্যক্তি শরিয়া বাস্তবায়ন করে না, তারও শাসক হিসাবে বহাল থাকার অধিকার নেই। কোথাও দ্বীনী দাওয়াত, তালিম, তাযকিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে এই পরিমাণ মানুষ যদি দ্বীন-শরিয়ত মেনে চলতে রাজি হয়ে যায়, যাদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনা সম্ভব, তাহলে তাদের বসবাসের সেই ভূখণ্ড মুসলমানদের এবং সেই সংখ্যক মুসলামানের জন্য কোনো কাফেরের উপর নিজেদের রাজনীতি সোপর্দ করা বা তাকে সাগ্রহে মেনে চলা বৈধ নয়।
তাই মুসলমান সমাজ যেখানেই থাকবে, সামর্থ অনুসারে শরিয়ত মোতাবেক শাসিত হবার আশায় নিজস্ব ধর্ম-রাজনৈতিক আহলুল হল্লি ওয়াল আকদ চয়ন করবে, তানজিম-সংস্থা গড়ে তুলবে। (এর মাধ্যমে কাফের শাসকের সঙ্গে দেনদরবার করবে।) কারণ মুসলমানদের জন্য সরাসরি কোনো কাফের বেদ্বীনের শাসকত্ব আপন করে নেওয়া জায়েজ নয়। মুসলমান সমাজ অবশ্যই নিজস্ব পঞ্চায়েত-প্লাটফরম কায়েম করবে। সেই ফ্লাটফরম যত দুর্বলই হোক, সিয়াসতের ক্ষেত্রে সাধারণ মুসলমান তারই আনুগত্য করবে। যথাসম্ভব সরাসরি কাফেরদের আনুগত্য এড়িয়ে চলবে।
এভাবে সবখানে নিজস্ব আহলুল হল্লি ওয়াল আকদ ঠিক করবে। আহলুল হল্লি ওয়াল আকদ বা স্থানীয় মুসলিম নেতা অনেক হয়েগেলে তারা সবাই পরামর্শক্রমে একজনকে অপেক্ষাকৃত কেন্দ্রীয় নেতা বানাবে। তার যদি শামাল দেয়ার সামর্থ থাকে তাহলে মুসলিম পারিবারিক আইনসহ অন্যান্য সামাজিক বিধান বাস্তবায়ন শুরু করবে। আস্তে আস্তে ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
এমতঅবস্থায় কয়েকটি সুরত হতে পারে,
১. কোনো অঞ্চলে সুসংহত শাসক নেই, অরাজক পরিস্থিতি, ক্ষমতা দখলের লড়াই মোগালাবা চলছে। ইসলামপন্থীরা যুদ্ধ করে ক্ষমতা না নিলে নেফাজে শরিয়ত (শরিয়া আইন বাস্তবায়ন) হবে না, তাহলে মুমিনদের উপর যুদ্ধ রাজনীতি ফরজে কেফায়া। যাদের সামরিক সামর্থ আছে, তারা আমীর ঠিক করে কোনো অঞ্চলে আলাদা কেন্দ্র ঘোষণা করে যথাসম্ভব পার্শ্ববর্তী মুসলিম রাষ্ট্রের সাহায্য নিয়ে -জি@হাদ করবে। সশস্ত্র যুদ্ধই তখন রাজনীতি। যেমনটা রাশিয়া পরাস্ত হবার পর আফগান তালেবদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। ইমামুল হারামাইন বলেন,
وَلَوْ سَعَى عِنْدَ شُغُورِ الزَّمَانِ طَوَائِفُ مِنْ ذَوِي النَّجْدَةِ وَالْبَأْسِ فِي نَفْضِ الطُّرُقِ عَنِ السُّعَاةِ فِي الْأَرْضِ بِالْفَسَادِ، [فَهُوَ] مِنْ أَهَمِّ أَبْوَابِ الْأَمْرِ بِالْمَعْرُوفِ، وَالنَّهْيِ عَنِ الْمُنْكَرِ
যখন কোনো সুসংহত শাসক নেই, তখন সামরিক সক্ষমতা ও সচ্ছলতা সম্পন্ন কোনো গোষ্ঠী যদি অন্যায়-অনাচার দমনে এগিয়ে আসে, তবে এটা আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারের অনেক বড় আমল সাব্যস্ত হবে। --গায়াছী ৩৮৬
وَإِذَا لَمْ يُصَادِفِ النَّاسُ قَوَّامًا بِأُمُورِهِمْ يَلُوذُونَ بِهِ فَيَسْتَحِيلُ أَنْ يُؤْمَرُوا بِالْقُعُودِ عَمَّا يَقْتَدِرُونَ عَلَيْهِ مِنْ دَفْعِ الْفَسَادِ، فَإِنَّهُمْ لَوْ تَقَاعَدُوا عَنِ الْمُمْكِنِ، عَمَّ الْفَسَادُ الْبِلَادَ وَالْعِبَادَ.
যখন মানুষ আশ্রয় নেওয়ার মতো শাসক না পায়, তখন ফাসাদ বিদূরণের যতটুকু সামর্থ আছে, তা থেকেও বিরত থাকার কথা বলা অসম্ভব। যদি তারা সম্ভবপর কাজও না করে, তাহলে দেশ ও জাতি চরম ফাসাদের শিকার হয়ে যাবে। --গায়াছী ৩৮৭
২. দ্বিতীয় হলো সুসংহত ক্ষমতার অধিকারী শাসক আছে, বাকি সে সুষ্পষ্টভাবে মুর্তাদ-কাফের হয়েগেছে, বা দেশীয় কোনো কাফের ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। তাকে শান্তিপূর্ণভাবে সরানো না গেলে ভিন্ন আমীর ঠিক করে, যথাসম্ভব পার্শ্ববর্তী মুসলিম শাসকের সাহায্য নিয়ে কোনো অঞ্চলে আলাদা কেন্দ্র গড়ে সশস্ত্র আন্দোলনের আয়োজন করবে, যাতে সামরিক বেসামরিক মানুষ আলাদা করা যায়, পক্ষ-বিপক্ষ তমিজ করা যায়। সামর্থসাপেক্ষে বিদ্রোহই তখন রাজনীতি। যেমন কাছাকাছি উদাহরণ হলো-- ১৪১৪ থেকে ১৪১৮ ঈসায়ী সনে বাংলার মুসলিম শাসনাধীন একজন হিন্দু অমাত্য-জমিদার রাজা গণেশ অবৈধভাবে শাসন-ক্ষমতা দখল করে নেয়। তখন সূফি শায়খ নূর কতুবে আমল রহ. বিদ্রোহ করেন এবং পার্শবর্তী জৌনপুরের স্থানীয় শাসক ইবরাহীম শাহ শর্কীকে নিয়মতান্ত্রিক জি৳হা+দের জন্য আহ্বান করেন এবং রাজা গণেশকে পদচ্যুত করে জালালুদ্দীন মুহাম্মাদ শাহকে শাসক নিয়োগ করেন। -বাংলাপিডিয়া
৩. তৃতীয় সুরত হলো, কোনো ভিনদেশী কাফের হামলা করেছে বা মুসলিম দেশ দখল করে ফেলেছে। তার বিরুদ্ধেও ভিন্ন আমীর ঠিক করে, যথসম্ভব পার্শ্ববর্তী মুসলিম শাসকের সাহায্য নিয়ে কোনো অঞ্চলে আলাদা কেন্দ্র গড়ে যুদ্ধ করা ফরজ। বৃটিশ আমলে সৈয়দ আহমদ শহীদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যেমনটা করেছিলেন। শাইখুল হিন্দ রহ. উসমানী শাসক ও আফগান শাসকদের সাহায্য নিয়ে সীমান্ত প্রদেশকে কেন্দ্র করে রেশমি রুমাল $জি&হা÷দের ছক তৈরি করে ছিলেন।
তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সুরতে যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, লড়াইয়ে লিপ্ত থাকলে অন্যান্য ফারায়েজ বিলুপ্তির আশংকা হয়, কাংক্ষিত ফল লাভের আসা সুদূরপরাহত হয়ে যায়, তাহলে কার্যত যুদ্ধ কত কাল অব্যাহত থাকবে, তা নির্ধারণ করবে উলুল আমর মুরুব্বিগণ। যেমন তায়েফ অবরোধ যখন দীর্ঘ হয়ে যায়, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবরোধ উঠিয়ে ফিরে আসেন।
মূতার যুদ্ধে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ রা. অসহনীয় ক্ষয়ক্ষতি থেকে সাহাবায়ে কেরামকে বাঁচানোর জন্য শত্রæবাহিনীর পশ্চাদ্ধাবন না করে বাহিনী ফিরিয়ে আনেন। একই কারণে শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ. মাল্টা থেকে ফেরার পর সশস্ত্র সংগ্রামের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-মোজাহাদার পথ অবলম্বন করেন।
৪. চতুর্থ সুরত হলো, মুসলমানের দেশ আছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা মুসলমানের হাতে, সুসংহত শাসক আছে, আইন-শৃঙ্খলা ঠিক আছে। পৃথিবীর অন্য সকল জাতি এই দেশকে মুসলিম দেশ হিসাবে বিবেচনা করে। সে দেশ আন্তর্জাতিক মুসলিম সংঘের সদস্য। ফতুয়া অনুসারে দেশটি দারুল ইসলাম বলে গণ্য। সে দেশে কিছু শাআয়ের দ্বীন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিপালন হয়। অন্যান্য শাআয়ের মুসলমানদের মাঝে চালু আছে। কিন্তু মোটের উপর দেশের আইনে ইসলামকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। শরিয়া আইন নেই বা খুবই কম। কিন্তু ব্যক্তি শাসক বা ক্ষমতাসীন অধিকাংশ লোকজনকে অকাট্ট কাফেরও বলা যাচ্ছে না, তাদের তা√কফী∆রের বিষয়টি জমহুর আলেম-উলামার নিকট সুষ্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়নি। --এই সুরতে নেফাজে শরিয়তের লক্ষ্যে নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অস্ত্র ধারণ করা বৈধ নয়। কারণ জি #হাদ হয় সুষ্পষ্ট কাফেরের বিরুদ্ধে, ‘মূজিবে কিতাল’ (জি@হাদ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত) ও ‘শুরুতে কিতাল’ (জি€হাদ শুরু করার শর্ত)) পাওয়গেলে। শুধু ‘সিয়াদতে শরিয়ত’ (শরিয়া আইনের সুপ্রিমিসি) না থাকা মূজিবে কিতাল নয়।
এ অবস্থায় দরকার শুধু নেফাজে শরিয়ত। এর জন্য শাসককে বোঝানো, দাওয়াত দেওয়া, জনমত তৈরি করে চাপ সৃষ্টি করা কর্তব্য। তাতেও কাজ না হলে ক্ষমতা পরিবর্তনের শান্তিপূর্ণ পথ এখতিয়ার করা। ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাজ করা। এমন দেশ আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকারের ক্ষেত্র। এখানে নেফাজে শরিয়তের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও রাজনীতিই কাম্য।
বর্তমান পৃথিবীতে অনেক মুসলিম রাষ্ট্রে এই চতুর্থ সুরত বিরাজ করছে। এমতঅবস্থায় নেফাজে শরিয়তের জন্য যোগ্য লোক তৈরী করা এবং জনমত গঠন করা জরুরি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান যদি এ কাজে অংশ গ্রহণ করে তাহলে বাকিরা ফরযে কেফায়ার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবে। আর সামর্থ সত্তে¡ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান এ দায়িত্ব পালন না করলে সকলে গোনাহগার হবে।
প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্রে উত্তরণের কর্মকৌশল
কোনো সামাজিক দর্শনই রাজনীতি-নিরপেক্ষ নয়। একটি বড়সড় সমাজ কোনো দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হবে, আর ঐ দর্শনে বিশ্বাসী ব্যতীত অন্য কেউ সে সমাজের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে, এটা প্রায় অসম্ভব। আর ইসলামের মতো সর্বব্যাপী সামাজিক দর্শনের রাজনীতি-নিরপেক্ষতা কল্পনাই করা যায় না।
ইসলামের দাওয়াত, তালিম, তাযকিয়া ইত্যাদির সাথে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি জড়িত। এজন্যই মুসা আলাইহিস সালামের নিরীহ দাওয়াতকেও ফেরআউন তার রাজনীতির জন্য হুমকি হিসাবে নিয়ে ছিলো। ফেরআউন ও তার সভাসদ বলে ছিলো,
أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا وَتَكُونَ لَكُمَا الْكِبْرِيَاءُ فِي الْأَرْضِ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِينَ
আমরা আমাদের পৃতৃপুরুষদের যে জীবনরীতির উপর পেয়েছি, তা থেকে তুমি আমাদের সরাতে এসেছো এবং এদেশে তোমাদের দুজনের দাপট প্রতিষ্ঠা করতে চাও। আমরা তোমদের মোটেও বিশ্বাস করি না। Ñসূরা ইউনুস ৭৮
তাই দ্বীনী দাওয়াত, ধর্মীয় শিক্ষা, আত্মশুদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো ভূখণ্ড যদি এই পরিমাণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায় যে, তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ আলাদা রাষ্ট্র গড়তে পারে, রাষ্ট্র হলে সে রাষ্ট্র টিকতে পারবে, তাহলে তাদের জন্য কাফেরদের অধীনে থাকা শোভনীয় নয়। তারা স্বাধীনতা অর্জনের কোশেশ শুরু করবে এবং মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে বিশেষ ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলবে। তারা ভিন্ন একটি জাতি। আর যে কোনো জাতির জন্য স্বাধীন সত্তায় বিকশিত হবার অধিকার সর্বজন স্বীকৃত।
বর্তমানে বিভিন্ন মতবাদের লোকজন ক্ষমতা দখল করে তাদের মতবাদ জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়, মানুষ রাজি থাকুক আর না থাকুক। অর্থাৎ তাদের মতবাদ জবরিÑ জবরদস্তিমূলক। কিন্তু ইসলাম اقناعي স্বতঃস্ফূর্ততাকামী। সুতরাং যে জিনিস জোর পূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হবে, সমাজে ঐ জিনিস সরিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো না কোনো সময় বিরোধী শক্তি সক্রিয় হয়। কিন্তু اقناعي স্বতঃস্ফূর্ততার তরিকা গ্রহণ করা হলে সরানোর মতো বিরোধী শক্তি থাকে না।
ইসলাম প্রথমে অন্তরে আসতে হয়। মানুষের দিলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুফল হিসাবে ইসলামে শাসন ক্ষমতা লাভের প্রক্রিয়া শুরু হয়। শাসন ক্ষমতার নতিজা ইসলাম নয়, ইসলাম অন্তরে কবুল হওয়ার নতিজা রাষ্ট্র। শাসনক্ষমতা এসেগেলো, কিন্তু মানুষের দিলে দ্বীন নেই, তাহলে এই শাসন টেকানো মুশকিল। প্রথমে মানুষের দিলে দ্বীন এলো, এর পর রাষ্ট্রক্ষমতা এলো, তবে এই ক্ষমতা স্থায়ী হবে।
মদিনায় রাষ্ট্রগঠনের নববি তরিকা থেকে নিয়ে আধুনিক পৃথিবীর বাস্তবতা সামনে রাখলে ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের যে সম্ভাব্য কর্মকৌশল হতে পারে তা এমন--
প্রথমে দ্বীনী দাওয়াত ও তালিমের মাধ্যমে একটি অঞ্চলের বড় সড় এক মানবগোষ্ঠিকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসবে। সুনির্দিষ্ট অঞ্চল টার্গেট করবে। সাথে সাথে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাদেরকে দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামী ইমারত/রিয়াসত মান্য করার জন্য প্রস্তুত করবে। প্রথমে যথাসম্ভব কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে শাসিত হবার আশায় সিয়াসি আহলুল হল্লি ওয়াল আকদ ঠিক করবে। ইমারতে শরইয়্যাহ, স্থানীয় পঞ্চায়েত, মুসলিম কাউন্সিল ইত্যাদি গঠন করবে। নিজেরা যথাসম্ভব ইমারত ও কাউন্সিলের ফায়সালা মেনে চলবে। ইমারত ও কাউন্সিল এমনভাবে কাজ করবে যেন রাষ্ট্রের সাথে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি তৈরি না হয়। সুতরাং একান্ত জরুরত না হলে ঐ সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ বা কুফুরি আদালতে মামলা রুজু করবে না।
ঐ অঞ্চলের প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষা ও মিডিয়াকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে আনার সর্বাত্মক কোশেশ করবে।
এভাবে যখন উলুল আমর শক্তিশালী হয়ে যাবে, তখন সবাই উলুল আমরের নেতৃত্বে প্রচলিত রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতেও অংশন নেবে এবং ইসলাম ও মুসলমানদের অধিকার সংরক্ষণ ও নেফাজে শরিয়তের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে থাকবে।
এরপর ঐ অঞ্চল যদি ভৌগোলিকভাবে কোনো প্রদেশের সমান হয়ে যায়, তাহলে প্রথমে সেখানে নেফাজে শরিয়তের দাবি তুলবে।
এভাবে আরও অগ্রসর হয়ে মুসলিম অঞ্চলে সুষ্পষ্ট প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী হতে পারলে স্বায়ত্ব শাসনের উপযোগী অঞ্চলে স্বায়ত্ব শাসন লাভের চেষ্টা করবে। আর পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ আলোচ্য প্রদেশের রাজনীতির সাথে যুক্ত করে তাদের সমর্থন সাহায্য লাভের চেষ্টা করবে। এভাবে যদি ঐ প্রদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বিজয়ী হওয়ার বাস্তবসম্মত সম্ভনা তৈরি হয় আর বাস্তবেই ঐ প্রদেশ স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হওয়ার মতো প্রাকৃতিক সুবিধা সম্বলিত হয়, তবে স্বাধীনতা ঘোষণা করবে এবং বাধা আসলে সামর্থ হলে জি&হাদে দিফাঈ (আত্মরক্ষমূলক ধর্মযুদ্ধ) শুরু করবে।
ধৈর্যের সাথে মেহনত চালিয়ে যেতে হবে। কারণ এই পুরো কর্মকৌশলের কোনো ধাপই বেকার নয় বরং ইসলাম ও মুসলমানের জন্য প্রভূত কল্যাণকর। পুরো প্রসেস বাস্তবায়নে লম্বা সময় লাগতে পারে। নেফাজে শরিয়ত ও খেলাফত অনেক বড় নেয়ামত। এর জন্য শত বছরের চেষ্টাও বেশি নয়।
+জি*হাদে দিফাঈ কামিয়াব হলে রাষ্ট্র সংরক্ষণ, অবিচার বিদূরণ এবং এলায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্য সামর্থ সাপেক্ষে প্রতিযোগিতামূলক সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও ইকদামি ^জি=হাদ (সুরক্ষামূলক যুদ্ধ) এর আয়োজন করবে।
(উৎকলন: কোরআন সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি/ ঈষৎ পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত)