23/08/2025
স্ত্রীকে ইদানিং অসহ্য মনে হচ্ছে — সবসময় কথা কাটাকাটি করে, শান্তি নেই সংসারে।
আজ অফিস থেকে ফিরেই আবার ছোটখাটো ঝগড়া।
রাগে গরম মাথা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে।
পথে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে ঢুকলাম একটা পার্কে।
বেঞ্চে বসে আছি— চারপাশে কোলাহল, কিন্তু মনে কেবলই গুমোট অন্ধকার।
মন বলছিল, “এভাবে আর চলতে পারে না। একসাথে থাকা মানেই যদি প্রতিদিন ঝগড়া হয়, তবে কি আর টিকে থাকা সম্ভব?”
এমন সময় পাশের বেঞ্চে বসে থাকা এক মহিলা হঠাৎ বললেন,
“ভাই, এত রাতে একা বসে আছেন? বাড়ি যাবেন না?”
মুখ তুলে দেখি, সাদা শাড়ি পরা একজন বয়স্কা মহিলা, চোখে ক্লান্তি, মুখে অদ্ভুত এক শূন্যতা।
আমি বললাম, “বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না। প্রতিদিন শুধু ঝগড়া, কথা কাটাকাটি। আর সহ্য হচ্ছে না।”
মহিলা মৃদু হেসে বললেন,
“আমারও তো একদিন সংসার ছিল। স্বামী ছিলেন, দুই ছেলে। প্রতিদিন ছোট ছোট অভিমান, কথা কাটাকাটি— সেগুলো তখন বড় সমস্যা মনে হতো।
কিন্তু আজ স্বামী নেই, ছেলেরা বিদেশে ব্যস্ত নিজের জীবনে।
ফাঁকা ঘরে দিনের পর দিন একা বসে থাকি।
এখন মনে হয়, যদি সেই ঝগড়াগুলোও ফিরে পেতাম, যদি কেউ আমার উপর রাগ করত, যদি কারও সাথে একটুখানি কথা কাটাকাটি হতো—
তাহলেই হয়তো জীবনটা এত ফাঁকা লাগত না।”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
হঠাৎ মনে হলো, যে মানুষটার সাথে আমি প্রতিদিন রাগ করি, সে-ই তো আমার জীবনের আসল সঙ্গী।
সে না থাকলে হয়তো এই শহর, এই সংসার, এই সবকিছুই ফাঁকা লাগবে।
চুপচাপ উঠে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করলাম।
ফিরে এসে দেখি, স্ত্রী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে অভিমান, কণ্ঠে চিন্তার ছোঁয়া—
“এতক্ষণ কোথায় ছিলে? ফোনও ধরছিলে না।”
আমি কিছু বললাম না।
শুধু আস্তে গিয়ে তার হাতটা ধরলাম।
চোখের ভেতর চোখ রাখতেই বুঝলাম—
ঝগড়ার চেয়ে সম্পর্ক বড়, অভিমানের চেয়ে ভালোবাসা গভীর।
জীবনে যতই রাগ হোক,
শেষমেষ ফিরে আসতে জানতে হয়।
কারণ একটি জীবন বড় নয়,
কিন্তু একটি মানুষকে হারালে সেই শূন্যতা কোনোদিন পূর্ণ হয় না।