11/11/2025
ঠগ সবচেয়ে বেশি ঠকে
কেউ যদি আপনাকে অতি গোপনেও ঠকায়, পৃথিবীর কেউ যদি তা না জানে—এমনকি আপনিও না জানেন—তবুও সেই অন্যায় বিনিময়হীন যায় না। কাউকে ঠকানো, হৃদয় খুঁড়ে ব্যথা দেওয়া, কিংবা কারো অধিকার কেড়ে নেওয়া—সবকিছুরই প্রতিদান এই আলোর দুনিয়াতেই দিতে হয়। আপনি হয়তো দেখবেন না, কিন্তু প্রকৃতির বিচার ন্যায্যতার নীতির বাইরে যায় না। কোথাও ঠকালে, কোথাও না কোথাও ঠকতেই হবে। অন্তত এমন অনুশোচনা আসবে যা হৃদয়ের প্রশান্তি কেড়ে নেবে—তবুও প্রায়শ্চিত্তের পথ মিলবে না। এই অনন্ত দহনের মর্মজ্বালা সাংঘাতিক; যে পুড়েছে, সে-ই জানে!
আপনি যদি কারো দীর্ঘশ্বাসের অংশ হয়ে যান, তবে আপনার পতন ঠেকাতে পারবে কে? ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে কষ্ট দেওয়া, প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা—এসব আপনার বিরুদ্ধে জমে থাকা পুঁজির মতো। আপনি পৃথিবীর বদ্ধতম কুঠুরিতেও বসে কারো ক্ষতি ভাবলে, আপনার ক্ষতির জন্য আরও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার আয়োজন শুরু হয়। এই দুনিয়ায় ঠগ সবচেয়ে বেশি ঠকে! সরাসরি শাস্তি না পেলেও ভাবার সুযোগ নেই যে কিছুই হবে না—বহুকিছু হবে, বহুপথে পাবেন। একসময় দেখবেন, সম্ভাবনা ফুরিয়ে গেছে, পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, মানসিক শান্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
"এটা না পেয়ে যদি ওটা পেতাম..."—এই অস্থির চিন্তাটাই কখনও কখনও আমাদের ভুলের প্রতিশোধ। মানসিক প্রশান্তির অনুপস্থিতির চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে? সর্বদা দুশ্চিন্তায় থাকা, হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া, কারো হাসির কারণ না হতে পারা—এসবই ভেতরের আগুন। আপনি যাকে কষ্ট দিয়েছেন, তার কান্নার ঢেউ একদিন উল্টোদিক থেকে আপনাকেই ভেজাবে। যতোটা ভেজাবেন, অন্তত ততোটাই ভেজার প্রস্তুতি রাখুন—হয়তো আরও বেশি, হয়তো ডুবেও যাবেন।
ক্ষমতা, শক্তি কিংবা সুযোগ আছে বলে যা খুশি করা যায় না। অন্যের অধিকার গিলে খাওয়া মানে নিজের জন্য পাপের বৃক্ষ রোপণ করা। আর সে বৃক্ষের পতনেই একদিন আপনাকে চাপা পড়তে হবে। এমন অনেক অপরাধ আছে, যার পরিতাপেরও সুযোগ থাকে না। কারো মনে প্রচণ্ড আঘাত দিলে সেই ক্ষতিপূরণ কী দিয়ে মেটে? তাই জিহ্বাস্ত্র বা হস্তাস্ত্র ব্যবহারের সময় সাবধান থাকতে হবে; মনের গোপন অস্ত্র দমন করে রাখুন—শুধু ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, স্নেহ আর সম্মানটুকু প্রকাশ করুন।
কারো উপকার করতে না পারাটা অপরাধ নয়; কিন্তু কারো ক্ষতি করা নিঃসন্দেহে অপরাধ। এমন কিছু বলা বা করা উচিত নয় যা কাউকে ব্যথা দেয়। নীরবতার মধ্যেও মঙ্গল আছে, সুচিন্তার মধ্যেও কল্যাণ! আপনার পা এই মাটিতে চিরস্থায়ী নয়—তবু এমন কিছু পদচিহ্ন রেখে যান, যা আলোয় পৃথিবী ভরিয়ে দেবে। আপনাকে স্মরণ করাবে।
পৃথিবী ঠিক ততোটাই সুন্দর, যতোটুকু সুন্দর আপনি নিজে। তাই ক্ষতির নয়, ভালো রাখার মানসিকতা গড়ুন। কারণ ভালো রাখার সঙ্গেই ভালো থাকা জড়িয়ে।