06/10/2025
১৯৯৪ সাল। খুলনা সিটি করপোরেশন মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে আব্বু, মিয়া গোলাম পরওয়ারকে জনগণের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তৎকালীন আমিরে জামায়াত, প্রফেসর গোলাম আজম (রহ.)। এক ঐতিহাসিক দৃশ্য।
খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আজম। আব্বু তখন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি। মহানগর জামায়াতের শুরা সদস্য।
খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। শ্রমিক অঙ্গনে নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে যোগ্যতা প্রমাণ করে ওঠা এক তরুণ নেতাকে সামনে নিয়ে আসা- এটাই ছিল জামায়াতের নেতৃত্ব নির্বাচনের অন্যতম সৌন্দর্য।
শ্রমিক কল্যাণের দায়িত্ব থাকাকালেই দুর্বৃত্তদের হামলায় আব্বুর চোখ রক্তাক্ত হয়েছিল। সে গল্প হয়তো আরেকদিন বলবো, ইনশাআল্লাহ।
আমার মনে পড়ে, আমাদের খুলনার বাড়িতে আব্বুর পুরোনো আলমারিতে এই ছবিটা খুব যত্নে রাখা ছিল। বড় করে লেমিনেট করা, যেন ইতিহাসের এক টুকরো। যখনই আব্বুর চোখে পড়তো, তিনি ইমোশনাল হয়ে যেতেন। গল্প শোনাতেন।
এই ছবির একটি বিশেষ গল্প আছে। সেই জনসভায় প্রফেসর সাহেবের সঙ্গে মুসাফাহা করতে গিয়ে আব্বু এক হাত বাড়িয়েছিলেন। প্রফেসর সাহেব তখন বলেছিলেন-
“পরওয়ার, আরেক হাত কই?”
সেই দিন থেকে আব্বু আর কখনো এক হাতে মুসাফাহা করেননি। আমাদেরও শিখিয়েছেন, মুসাফাহা মানে পুরো হৃদয় দিয়ে অভ্যর্থনা, দুই হাতে।
ছবিতে আব্বুর চোখে যেন সেই লাজুক কৃতজ্ঞতা, নম্রতা আর পরম আনুগত্যের ছাপ ফুটে উঠেছে। কি সুন্দর মোয়ামালাত! যেন প্রজ্ঞা ও শ্রদ্ধার অদৃশ্য সেতুবন্ধন।
ওস্তাদদের ওস্তাদ, প্রফেসর গোলাম আজম (রহ.)-কে আল্লাহ তুমি বেহেশতের মেহমান বানাও। তাঁর জানাযা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম জানাযা। তখন আব্বু কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। আব্বুর পক্ষ থেকে আমার সুযোগ হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক জানাযায় অংশ নেওয়ার।
আল্লাহ তুমি জামায়াতে ইসলামীকে সেই প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব দান করো, যারা ইতিহাস গড়ে।
কে জানতো- খুলনার শিরোমণি গ্রামের এক সাধারণ কৃষক পরিবারের সেই সংগ্রামী তরুণ একদিন জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন!
একজন গোলাম পরওয়ারকে, আল্লাহ তুমি এ জাতির মুকাব্বির হিসেবে কবুল করো।