
04/05/2025
📰 বাংলাদেশ সীমান্তে আরকাইন আর্মির তৎপরতা ও করিডোর প্রশ্নে উদ্বেগ
ঢাকা, ৪ মে ২০২৫:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সক্রিয় বিদ্রোহী সংগঠন আরকাইন আর্মি (AA) সম্প্রতি দেশটির সেনাবাহিনীর (তাতমাদাও) বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক সাফল্য অর্জন করেছে। এর ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চল থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং কিছু এলাকায় আরকাইন আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর ব্যবহারের প্রস্তাব বা চর্চা নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
🔴 আরকাইন আর্মির অগ্রগতি ও বাংলাদেশ সীমান্ত:
সাম্প্রতিক খবরে জানা গেছে, রাখাইন রাজ্যের পালেটওয়া ও মংডু এলাকায় আরকাইন আর্মি বেশ কিছু ঘাঁটি দখল করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। এর প্রেক্ষিতে বিজিবি (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছে।
🟠 বাংলাদেশ দিয়ে করিডোর – ঝুঁকি ও সংকট:
রাখাইন অঞ্চলে চীনের অর্থায়নে যে চীন-মিয়ানমার ইকনোমিক করিডোর (CMEC) তৈরি হচ্ছে, তা বঙ্গোপসাগরের দিকে যেতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে চায় এমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিছু সম্ভাব্য সমস্যা:
⚠️ করিডোর ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য সমস্যা:
সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে:
বিদেশি শক্তি বা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে করিডোর পরিচালনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
নিরাপত্তা ঝুঁকি:
করিডোর ব্যবহারের মাধ্যমে অস্ত্র, মাদক, বা জঙ্গি চলাচল বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে আরকাইন আর্মি যেহেতু একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
আঞ্চলিক কূটনৈতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া:
ভারত, চীন, এবং মিয়ানমার—এই তিন দেশের মধ্যে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে। বাংলাদেশ করিডোরে যুক্ত হলে কূটনৈতিক চাপ ও টানাপোড়েন বাড়তে পারে।
রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল হতে পারে:
রাখাইন অঞ্চলের অস্থিরতা বাড়লে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বা মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে।
স্থানীয় বিরোধ এবং সহিংসতার আশঙ্কা:
করিডোর অঞ্চল দিয়ে স্থলপথ ব্যবহারের ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ভূমি অধিকার, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বঞ্চনা নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।
🟢 সরকারি অবস্থান:
বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো করিডোর ইস্যুতে কোনো চুক্তি বা মতামত প্রকাশ করেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা "আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।"
📌 উপসংহার:
বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত স্পর্শকাতর। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, বিশেষ করে আরকাইন আর্মির উত্থান, এবং করিডোর ব্যবহারের প্রশ্ন—উভয়ই দেশের নিরাপত্তা, কূটনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
সাবধানতা, কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা, এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এ ধরনের প্রস্তাব বিবেচনা করা জরুরি।