14/06/2025
যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকের ফযীলত
সংকলনে— মুহাম্মদ রমজান মিয়া
[সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ জেলা শুব্বান। সদস্য, মাজলিসে আম, কেন্দ্রীয় শুব্বান।]
আসমান-যমীনের সৃষ্টি অবধি আল্লাহ তা‘আলা বছরকে বার মাসে বিভক্ত করেছেন। এটি আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে এটিই মহান আল্লাহর নিয়ম। এর মধ্য থেকে আল্লাহ তা‘আলা চারটি মাসকে করেছেন সম্মানিত ও মহিমান্বিত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন—
﴿اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِيْ كِتٰبِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ مِنْهَاۤ اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ﴾
“আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহর নিকট তাঁর বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।” (সূরা আত্ তাওবাহ্ : ৩৬)
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে—
إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلَاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ : ذُوْ القَعْدَةِ، وَذُوْ الحِجَّةِ، وَالمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِيْ بَيْنَ جُمَادَى، وَشَعْبَانَ.
নিশ্চয় সময়ের হিসাব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-যমীনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল (কারণ, আরবরা মাস-বছরের হিসাব কম-বেশি ও আগপিছ করে ফেলেছিল); বার মাসে এক বছর। এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক— যিলক্বদ, যিলহাজ্জ, মুর্হারম। আরেকটি হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শা’বানের মাঝের মাস। (সহীহুল বুখারী- হা. ৪৬৬২)
যিলহাজ্জ— সম্মানিত চার মাসের শ্রেষ্ঠ মাস : এ চার মাসের মধ্যে যিলহাজ্জ মাসের ফযীলত সবচেয়ে বেশি। কারণ, এ মাসেই আদায় করা হয় ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন ও নিদর্শন হজ্জ এবং অপর নিদর্শন ও মহান ‘আমল কুরবানী।
এ মাস মহান আল্লাহর কাছে সম্মানিত। এতে রয়েছে এমন দশক, আল্লাহ তা‘আলা যার কসম করেছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে নবীজী ( ) যিলহাজ্জ মাসকে শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন—
أَلَا وَإِنَّ أَحْرَمَ الشُّهُوْرِ شَهْرُكُمْ هَذَا.
জেনে রাখো! সবচেয়ে সম্মানিত মাস হলো তোমাদের এ মাস (যিলহাজ্জ)। (সুনান ইবনু মাজাহ্- হা. ৩৯৩১; মুসনাদে আহমাদ- হা. ১১৭৬২)
নেক ‘আমলে অগ্রগামী হওয়ার মাস : আল্লাহ তা‘আলা নিজ অনুগ্রহে বান্দাদের দান করেছেন ফযীলতপূর্ণ বিভিন্ন দিবস-রজনী। বছরের কোনো কোনো মাস, দিন বা রাতকে করেছেন ফযীলতপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। যাতে এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বান্দা ক্ষমা লাভ করতে পারে, নেক ‘আমলে সমৃদ্ধ হতে পারে এবং মহান আল্লাহর প্রিয় হতে পারে। এর মধ্যে যিলহাজ্জ মাস অন্যতম প্রধান ফযীলতপূর্ণ মাস।
এ মাসের প্রথম দশককে আল্লাহ তা‘আলা করেছেন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এ দিনগুলোতেই হজ্জের মৌলিক ‘আমল সম্পাদিত হয়। দশ যিলহাজ্জ সারা বিশ্বের মুসলিমগণ কুরবানী করেন। এ দিনগুলোর নেক ‘আমল আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিক প্রিয়। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে—
مَا مِنْ أَيّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهَا أَحَبّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيّامِ يَعْنِيْ أَيّامَ الْعَشْرِ، قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَلَا الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ؟ قَالَ : وَلَا الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذٰلِكَ بِشَيْءٍ.
অর্থাৎ- মহান আল্লাহর নিকট যিলহাজ্জের দশ দিনের নেক ‘আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের ‘আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মহান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয়? তিনি বললেন, না, মহান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এর চেয়ে উত্তম, যে নিজের জান-মাল নিয়ে মহান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতঃপর কোনো কিছু নিয়ে ঘরে ফিরে আসেনি। (সুনান আবূ দাঊদ- হা. ২৪৩৮; সহীহুল বুখারী- হা. ৯৬৯)
আশারায়ে যিলহাজ্জ— আল্লাহ তা‘আলা কসম করেছেন যে দশ রাতের : আমরা জেনেছি, যিলহাজ্জ মাস আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত চার মাসের অন্যতম প্রধান মাস। আবার এ মাসের মধ্যে প্রথম দশক হলো প্রধান। এ দশক এতটাই ফযীলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত যে, আল্লাহ তা‘আলা এ দশ রাতের কসম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে—
﴿وَ الْفَجْرِ وَ لَيَالٍ عَشْرٍ﴾
“শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির।” (সূরা আল ফাজর : ১-২)
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস ( ) ও মুজাহিদ ( )-সহ অনেক সাহাবী, তাবেঈ ও মুফাস্সির বলেন, এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা যিলহাজ্জের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে ইবনু কাসীর- ৪/৫৩৫)
এ দশককে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে। জাবির ( ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ( ) ইরশাদ করেছেন—
أَفْضَلُ أَيَّامِ الدَّنْيَا أَيّامُ الْعَشْرِ، عَشْر ذِي الْحِجّةِ، قَالَ : وَلَا مِثْلُهُنَّ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ؟ قَالَ : لَا مِثْلُهُنَّ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، إِلَّا رَجُلٌ عَفَّرَ وَجْهَهُ فِيْ التَّرَابِ.
দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হলো, যিলহাজ্জের দশ দিন। জিজ্ঞাসা করা হলো— মহান আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, মহান আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই। তবে ঐ ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ- শাহাদাত লাভ করেছে। (মুসনাদে বাযযার- হা. ১১২৮; মুসনাদে আবূ ইয়া’লা- হা. ২০১০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ- ৪/৮)
সম্মানিত মাস সম্মানিত দশক— গুনাহের মাধ্যমে এর সম্মান বিনষ্ট না করি : মু’মিন তো মহান আল্লাহর দেওয়া বিভিন্ন সুযোগকে গনীমত মনে করে কাজে লাগায়। এসকল ফযীলতপূর্ণ মওসুমে নেক ‘আমলের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে তার ‘আমলের খাতা। কিন্তু কখনো কখনো কারও দ্বারা এমন হয়ে যেতে পারে যে, নেক ‘আমলের তো তাওফীক্ব হলো না; কিন্তু গুনাহে কলুষিত হলো ‘আমলনামা। এমনটি কখনোই কাম্য নয়। এক কবি বড় সুন্দর বলেছেন—
قوت نيکي نداري بد مکن.
নেক ‘আমল করতে যদি না-ও পার, গুনাহে লিপ্ত হয়ো না।
নেক ‘আমল যতটুকু করতে পারি-না পারি; গুনাহের মাধ্যমে যেন এ সম্মানিত দিনগুলোর অসম্মান না করি। এর মাধ্যমে তো আমি নিজেকেই অসম্মানিত করছি।
ইবনু রজব হাম্বলী ( ) ‘লাতাইফুল মাআরিফ’-এ যিলহাজ্জের আলোচনায় বলেন—
احذروا المعاصي، فإنها تحرم المغفرة في مواسم الرحمة.
রহমতের মওসুমসমূহে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করে। (লাতায়েফুল মাআরেফ- পৃ. ৩৭৯)
আর যে আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা চারটি মাসকে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন সে আয়াতের শেষে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন—
﴿فَلَا تَظْلِمُوْا فِيْهِنَّ اَنْفُسَكُمْ﴾
“(...তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত) ...সুতরাং এ মাসসমূহে তোমরা নিজেদের প্রতি যুল্ম করো না।” (সূরা আত্ তাওবাহ্ : ৩৬)
মহান আল্লাহর নাফরমানী নিজের উপর সবচেয়ে বড় যুল্ম। কারণ, এর ক্ষতি তো নিজের উপরই আপতিত হবে। সুতরাং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এ মাসের প্রথম কাজ, সাথে সাথে নেক ‘আমলেও যত্নবান হওয়া দরকার।
যিক্র-তাসবীহে প্রাণবন্ত করি যিলহাজ্জের প্রথম দশক : যিক্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে অনেক প্রিয় ‘আমল। এ দশকের ‘আমল হিসেবে বিশেষভাবে যিক্রের কথা এসেছে। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার ( ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ( ) ইরশাদ করেন—
مَا مِنْ أَيَّامٍ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ وَلَا أَحَبّ إِلَيْهِ الْعَمَلُ فِيْهِنَّ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ الْعَشْرِ، فَأَكْثِرُوْا فِيْهِنَّ مِنَ التَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ وَالتَّحْمِيْدِ.
আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশারায়ে যিলহাজ্জের ‘আমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের ‘আমল নেই। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদু লিল্লাহ পড়ো। (মুসনাদে আহমাদ- হা. ৫৪৪৬; আদ্ দাআওয়াতুল কাবীর; তবারানী- হা. ৫৩৪)
এছাড়া যিলহাজ্জের এ দশকের বিভিন্ন ‘আমলও প্রাণবন্ত থাকে মহান আল্লাহর যিক্রে। হাজীগণ ইহরাম বাঁধার পর থেকে উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে তালবিয়ার মাধ্যমে স্মরণ করতে থাকেন মহান আল্লাহকে। জামরায় কংকর নিক্ষেপের সময়ও বলেন— আল্লাহু আকবার। সারা বিশ্বের মুসলিমগণ আইয়ামে তাশরীকে র্ফয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীকের মাধ্যমে মহান আল্লাহর যিক্র করেন। কুরবানীর দিন কুরবানী করার সময় বলেন— বিস্মিল্লা-হি আল্লাহু আকবার। এমনকি হজ্জের ‘আমলসমূহের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ( ) ইরশাদ করেছেন—
إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللهِ.
নিশ্চয়ই বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সায়ী এবং জামারাতে কংকর নিক্ষেপের ‘আমল বিধিবদ্ধ করাই হয়েছে মহান আল্লাহর যিক্রের জন্য। (সুনান আবূ দাঊদ- হা. ১৮৮৮; জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ৯০২)
মোটকথা, যিলহাজ্জের এ দিনগুলো যেন প্রাণবন্ত থাকে মহান আল্লাহর যিক্রে।
যিলহাজ্জ শুরু হলে নখ-চুল না কাটি— আমারও সাদৃশ্য হোক হাজীদের সাথে : ইহরাম করার পর হাজী সাহেবদের জন্য নখ-চুল কাটাসহ আরও কিছু বিষয় নিষেধ। কিন্তু যারা হজ্জে যাননি তাদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে যিলহাজ্জের প্রথম দশকে নখ-চুল না কাটার মাধ্যমে অন্যরাও সাদৃশ্য অবলম্বন করতে পারে হাজী সাহেবদের সাথে এবং লাভ করতে পারে বিশেষ ফযীলত। হাদীসে এ ‘আমলের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে—
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيِّ (ﷺ) قَالَ : إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِيْ الْحِجَّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ.
উম্মু সালামাহ্ ( ) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম ( ) বলেছেন, যখন যিলহাজ্জের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। (সহীহ মুসলিম- হা. ১৯৭৭; জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ১৫২৩)
এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ কুরবানীকারীর জন্য নখ-চুল না কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাই যিলক্বদ মাসেই চুল-নখ কেটে যিলহাজ্জের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা চাই। যাতে তা বেশি লম্বা হয়ে না যায়, যা সুন্নাতের খেলাফ।
আর যে ব্যক্তি কুরবানী করবে না তার জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না— এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন, এ হুকুম কেবলমাত্র কুরবানীকারীদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের দলিল পূর্বোক্ত হাদীস। আর কেউ কেউ বলেন, কুরবানী যারা করবে না তাদের জন্যও এ ‘আমল রয়েছে। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্র ইবনুল আস ( ) থেকে বর্ণিত—
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ (ﷺ) قَالَ لِرَجُلٍ : أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيْدًا جَعَلَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ، فَقَالَ الرَّجُلُ : أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا مَنِيْحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّيْ بِهَا؟ قَالَ : لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصَّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذٰلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ.
নবী কারীম ( ) বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা থাকে (অর্থাৎ- যা শুধু দুধপানের জন্য কাউকে দেওয়া হয়েছে) আমি কি তা কুরবানী করব? নবী কারীম ( ) বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই মহান আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। (সুনান আবূ দাঊদ- হা. ২৭৮৯; সুনান আন্ নাসায়ী- হা. ৪৩৬৫)
এই হাদীসে যেহেতু কুরবানীর দিন চুল-নখ কাটার কথা আছে তাহলে এর আগে না কাটার দিকে ইঙ্গিত বুঝা যায়।
২. ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহাজ্জের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে ( ) বলেছেন—
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، مَرَّ بِامْرَأَةٍ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِ ابْنِهَا فِيْ أَيَّامِ الْعَشْرِ فَقَالَ : لَوْ أَخَّرْتِيْهِ إِلَى يَوْمِ النَّحْرِ كَانَ أَحْسَنَ.
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার ( ) এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহাজ্জের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভালো হত। (মুস্তাদরাকে হাকিম- হা. ৭৫২০)
৩. এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা হলো—
قال مسدد وحدثنا المعتمر بن سليمان التيمي سمعت أبي يقول: كان ابن سيرين يكره إذا دخل العشر أن يأخذ الرجل من شعره، حتى يكره أن يحلق الصبيان في العشر.
মু’তামির ইবনু সুলাইমান আত্ তাইমী বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, ইবনু সীরীন ( ) যিলহাজ্জের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুণ্ডন করাকেও অপছন্দ করতেন। (আল মুহাল্লা- ইবনু হাযম, ৬/২৮)
এসব দলিলের কারণে কারও কারও মতে সকলের জন্যই যিলহাজ্জে প্রথম দশকে নখ, গোঁফ ও চুল না-কাটা উত্তম। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, এ বিধানটি কুরবানীদাতার জন্য তাকিদপূর্ণ।
যিলহাজ্জের প্রথম নয় দিন রোযা রাখি : অধিকাংশ ফকীহগণ এই নয় দিন রোযা রাখা উত্তম বলেছেন। কারও পক্ষে সম্ভব হলে সে পুরো নয় দিনই রোযা রাখল। কারণ, যিলহাজ্জের পুরো দশকের ‘আমলই মহান আল্লাহর কাছে প্রিয়। এ দশককে ‘আমলে প্রাণবন্ত রাখার জন্য রোযার বিকল্প কোনো ‘আমল নেই। কারণ, রোযা মহান আল্লাহর কাছে অত্যধিক প্রিয় ‘আমল। সুতরাং আমাদের যাদের পক্ষে সম্ভব যিলহাজ্জের প্রথম দশক তথা নয় যিলহাজ্জ পর্যন্ত রোযা রাখতে চেষ্টা করি। হাদীসে এসেছে—
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ (ﷺ) يَصُوْمُ تِسْعَ ذِيْ الْحِجَّةِ.
রাসূলুল্লাহ ( ) যিলহাজ্জের নয়টি দিবস রোযা রাখতেন। (সুনান আবূ দাঊদ- হা. ২৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ- হা. ২২৩৩৪; সুনান কুবরা- বায়হাক্বী, হা. ৮৩৯৩)
হাফসাহ্ ( ) থেকে বর্ণিত আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন—
أَرْبَعٌ لَمْ يَكُنْ يَدَعُهُنَّ النَّبِيِّ (ﷺ) : صِيَامَ عَاشُوْرَاءَ، وَالْعَشْرَ، وَثَلَاثَةَ أَيّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ.
চারটি ‘আমল নবী কারীম ( ) কখনো ছাড়তেন না। আশুরার রোযা, যিলহাজ্জের প্রথম দশকের রোযা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোযা, ফজরের আগে দুই রাকআত সুন্নত নামায। (সুনান আন্ নাসায়ী- হা. ২৪১৫; সহীহ ইবনু হিব্বান- হা. ৬৪২২; মুসনাদে আবূ ইয়া’লা- হা. ৭০৪২; মুসনাদে আহমাদ- হা. ২৬৩৩৯)
নয় যিলহাজ্জে রোযা রাখি : কারো পক্ষে যদি পুরো নয় দিনই রোযা রাখা সম্ভব হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কিন্তু পুরো নয় দিন যদি সম্ভব না হয়, নয় যিলহাজ্জের রোযার ফযীলত থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। কারণ, এ দিনের রোযার ফযীলত সম্পর্কে আবূ ক্বাতাদাহ্ ( ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ( ) ইরশাদ করেন—
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِيْ قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِيْ بَعْدَهُ.
আরাফার দিনের (নয় যিলহাজ্জের) রোযার বিষয়ে আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, (এর দ্বারা) আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহীহ মুসলিম- হা. ১১৬২)
প্রকাশ থাকে যে, উক্ত হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমে আরাফা দ্বারা যিলহাজ্জের নয় তারিখ উদ্দেশ্য। এই তারিখের পারিভাষিক নাম হচ্ছে ‘ইয়াওমে আরাফা’। কেননা এই রোযা আরাফার ময়দানের ‘আমল নয়; বরং আরাফার দিন তো হাজীদের জন্য রোযা না রাখাই মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে—
عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ،أَنَّ نَاسًا تَمَارَوْا عِنْدَهَا يَوْمَ عَرَفَةَ، فِيْ صِيَامِ رَسُوْلِ اللهِ (ﷺ)، فَقَالَ بَعْضُهُمْ : هُوَ صَائِمٌ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ : لَيْسَ بِصَائِمٍ، فَأَرْسَلْتُ إِلَيْهِ بِقَدَحِ لَبَنٍ، وَهُوَ وَاقِفٌ عَلٰى بَعِيْرِهِ بِعَرَفَةَ، فَشَرِبَهُ.
উম্মুল ফযল বিনতু হারেস বলেন, তার নিকট কতক লোক ইয়াওমে আরাফায় রাসূল ( )-এর রোযার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছিল। কেউ কেউ বলছিল, তিনি রোযা আছেন। আর কেউ কেউ বলছিল, তিনি রোযা নেই। উম্মুল ফযল একটি পেয়ালাতে দুধ পাঠালেন। নবীজী তখন উটের উপর ছিলেন। তিনি দুধ পান করলেন। (সহীহ মুসলিম- হা. ১১২৩)
আরাফার দিন মহান আল্লাহর রাসূল রোযা রাখেননি। এ কারণে ফকীহগণ হাজীদের জন্য আরাফার দিন রোযা না রাখা উত্তম বলেছেন। আবূ ক্বাতাদাহ্ ( )-এর হাদীস দ্বারা ইয়াওমে আরাফায় রোযা রাখা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। সুতরাং বুঝা গেল, আবূ ক্বাতাদাহ্ ( )-এর হাদীসে ‘ইয়াওমে আরাফা’ দ্বারা ৯ যিলহাজ্জ অর্থাৎ- ঈদের আগের দিনই উদ্দেশ্য। সুতরাং আমাদের দেশের চাঁদের হিসেবে যেদিন নয় তারিখ হয় সেদিনই রোযা রাখা হবে; সৌদির হিসাবে আরাফার দিন অনুযায়ী নয়। উল্লেখ্য, তাকবীরে তাশরীক সংক্রান্ত হাদীসেও ইয়াওমে আরাফা দ্বারা ৯ যিলহাজ্জই উদ্দেশ্য। কেননা এ ‘আমলও আরাফার সাথে নির্দিষ্ট কোনো ‘আমল নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, মাসিক আল কাওসার- জানুয়ারি-২০১৩ ঈ. (দু’টি প্রশ্ন ও তার উত্তর : ইয়াওমে আরাফার রোযা ও কুরবানীর সাথে ‘আক্বীক্বাহ্)।
ইয়াওমে আরাফা— গুরুত্ব ও ফযীলত : এ দিন মহান আল্লাহর কাছে অনেক মহিমান্বিত। এদিনেই আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দ্বীনকে পূর্ণতাদানের ঘোষণা দিয়েছেন এবং বান্দাদের প্রতি তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণ করেছেন। এদিনেই হজ্জের মূল ‘আমল উকূফে আরাফা। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা‘আলা এ দিনের কসম করেছেন। এ দিনের দু‘আ মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ দু‘আ। এ দিনের রোযার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ করেন। এদিন আল্লাহ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।
ইয়াওমে আরাফায় বান্দাকে মুক্তি দেওয়া হয় জাহান্নাম থেকে : ‘আয়িশাহ্ ( ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ( ) ইরশাদ করেন—
مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيْهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ، مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَإِنَّهُ لَيَدْنُوْ، ثُمَّ يُبَاهِيْ بِهِمِ الْمَلَائِكَةَ، فَيَقُوْلُ : مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ؟
আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশ্তাদের সাথে গর্ব করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কী চায় তারা? (সহীহ মুসলিম- হা. ১৩৪৮)
জাবির ( ) থেকে বর্ণিত আরেক বর্ণনায় রয়েছে—
يَنْزِلُ اللهُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيُبَاهِيْ بِأَهْلِ الْأَرْضِ أَهْلَ السّمَاءِ، فَيَقُوْلُ : انْظُرُوْا إِلَى عِبَادِيْ شُعْثًا غُبْرًا ضَاحِيْن، جَاؤُوْا مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ يَرْجُوْنَ رَحْمَتِيْ، وَلَمْ يَرَوْا عَذَابِيْ، فَلَمْ يُرَ يَوْمٌ أَكْثَرُ عِتْقًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ.
আল্লাহ তা‘আলা নিকটতম আসমানে আসেন এবং পৃথিবীবাসীকে নিয়ে আসামেনর অধিবাসী অর্থাৎ- ফেরেশ্তাদের সাথে গর্ব করেন। বলেন, দেখো তোমরা— আমার বান্দারা উস্কোখুস্কো চুলে, ধুলোয় মলিন বদনে, রোদে পুড়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে সমবেত হয়েছে। তারা আমার রহমতের প্রত্যাশী। অথচ তারা আমার ‘আযাব দেখেনি। ফলে আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। (সহীহ ইবনু হিব্বান- হা. ৩৮৫৩)
আরাফার দু‘আ শ্রেষ্ঠ দু‘আ— ইয়াওমে আরাফায় যে দু‘আ-যিক্র করেছেন নবীগণ : যিলহাজ্জের দশকের মধ্যে ইয়াওমে আরাফা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনে দু‘আ-যিক্রের গুরুত্ব আরও বেশি। নবীজী ( ) ও নবীগণ এ দিনে যে দু‘আ-যিক্র করেছেন তা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ( ) ইরশাদ করেন—
خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ قَبْلِيْ : لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ.
শ্রেষ্ঠ দু‘আ (-যিক্র) আরাফার দু‘আ। এ দিনের দু‘আ (-যিক্র) হিসেবে সর্বোত্তম হলো ঐ দু‘আ, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হলো—
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ.
(জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান- বায়হাক্বী, হা. ৩৭৭৮)
আইয়ামে তাশরীক— এ দিনগুলো পানাহার ও তাকবীর-যিক্রের জন্য : যিলহাজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে পরিভাষায় আইয়ামে তাশরীক বলে। আইয়ামে তাশরীক-এর অন্যতম প্রধান ‘আমল হলো— মহান আল্লাহর যিক্র-তাকবীর।
হাজীগণ জামারাতে কংকর নিক্ষেপের সময় বলেন— আল্লাহু আকবার। কুরবানীদাতাগণ কুরবানী করার সময় বলেন— বিস্মিল্লা-হি, আল্লাহু আকবার। প্রতি র্ফয নামাযের পর হাজীগণসহ সারা বিশ্বের মুসলিম তাকবীরে তাশরীক বলে। এভাবে যিক্র— তাকবীরে জীবন্ত থাকে আইয়ামে তাশরীক। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন—
﴿وَ اذْكُرُوْا اللهَ فِيْۤ اَيَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ﴾
“তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করো।” (সূরা আল বাক্বারাহ্ : ২০৩)
ইবনু ‘আব্বাস ( ) বলেন, এখানে اَيَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ দ্বারা উদ্দেশ্য— আইয়ামে তাশরীক। (দ্র. সহীহুল বুখারী- বাবু ফাদলিল আমাল ফী আইয়ামিত তাশরীক; মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আসার- হা. ১০৮৭২)
রাসূলুল্লাহ ( ) ইরশাদ করেন—
أَيَّامُ التَّشْرِيْقِ أَيَّامُ أَكْلٍ، وَشُرْبٍ، وَذِكْرِ اللهِ.
আইয়ামে তাশরীক পানাহার ও মহান আল্লাহর যিক্রের জন্য। (মুসনাদে আহমাদ- হা. ২০৭২২)
তাকবীরে তাশরীক— যে যিক্র গুঞ্জরিত হয় পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে : তালবিয়া উচ্চারিত হচ্ছে হাজীগণের মুখে, শুধু মক্কায়। কুরবানীদাতার মুখে— বিস্মিল্লা-হি, আল্লাহু আকবার। কিন্তু তাকবীরে তাশরীক এমন এক যিক্র, যা দ্বারা গুঞ্জরিত হয় মক্কাসহ পৃথিবীর প্রতিটি জনপদ। এ যিক্র উচ্চারিত হয়, প্রতিটি মসজিদে, প্রতিটি মুসলিমের ঘরে; প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর, নারী-পুরুষ সকলের মুখে। তাকবীরে তাশরীকের পুরো বাক্যজুড়ে রয়েছে তাওহীদ, মহান আল্লাহর বড়ত্ব ও প্রশংসা—
اَللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وََلِلّٰهِ الْحَمْدُ.
৯ যিলহাজ্জ ফজর হতে ১৩ যিলহাজ্জ আসর পর্যন্ত মোট তেইশ ওয়াক্তের নামাযের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। জামা‘আতে নামায পড়া হোক বা একাকী, পুরুষ বানারী, মুকীম বা মুসাফির সকলের উপর ওয়াজিব। এমনকি ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত কোনো নামায কাযা হয়ে গেলে এবং ঐ কাযা এই দিনগুলোর ভেতরেই আদায় করলে সে কাযা নামাযের পরও তাকবীরে তাশরীক পড়বে। পুরুষগণ তাকবীর বলবে উচ্চ আওয়াজে আর নারীগণ নিম্নস্বরে।
আসুন, গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে এ মাসের সম্মান রক্ষা করি। নেক ‘আমলের মাধ্যমে এ মাসের যথাযথ কদর করি। তাকবীর-তাসবীহ-যিক্রে প্রাণবন্ত করি এ মাসকে। তাওবাহ্-ইস্তিগফারের মাধ্যমে ধন্য হই ক্ষমা লাভে। একমাত্র মহান আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য হজ্জ-কুরবানীসহ অন্যান্য ‘আমল করি। যিলহাজ্জের রোযার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করি নেক ‘আমলের ভাণ্ডার। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওফীক্ব দান করুন —আমীন।