07/08/2025
পড়াশোনা করে, শিক্ষা নিয়ে যদি নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে, নিজেদের অধিকার আদায় না করে শিক্ষার্থীরা—তবে এই কাজটা কে করবে? ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সদা আপোষহীন—ই থাকতে হয়। অধিকার আদায়ের বাহিরে কোনোকিছুই সেখানে মুখ্য নয়, হবার কথাও না।
ইতিহাস আমাদের এটাও শেখায়, প্রতিটা সফল বিপ্লবের কিংবা বিদ্রোহের ঠিক পরপরই প্রচুর সমালোচনা তৈরি হয়। বিপ্লবের ঘটনাকে নিয়ে পোস্টমর্টেম করতে বসে অসংখ্য মানুষ। এটা করা উচিত ছিলো, সেটা করা উচিত ছিলো, ঐটা করা ঠিক হয়নাই, ইত্যাদি। তাদেরকে কখনোই, কোনোকিছু দিয়েই বোঝানো সম্ভব নয় যে—বিপ্লবের সময়, বিপ্লবই মূখ্য। বিপ্লবই প্রধান। অধিকারই মূল, অধিকারই সব। হয় অধিকার দিবেন, নয়তো সব শেষ হবে। এটুকুই। ছোটোবেলার পাটিগণিতের মতোই সাধারণ ক্যালকুলেশন।
আগের বিপ্লব কেমন ছিলো, আগে কি করেছি, আগে কি করিনাই—ঐসবের সাথে বর্তমান মেলানোটা সম্পূর্ণভাবেই বোকামি। এটুকুও বুঝতে হবে খুব সাধারণভাবে যে, ২০১৫ সালের শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া এবং ২০২৫ সালের শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া এক হবেনা। প্রতিটা সময়ই প্রতিটা ব্যাচের আলাদা সিচুয়েশন থাকে, যা কখনোই বহু-পূর্ববর্তী ব্যাচ বুঝতে পারবেনা। সুতরাং, বর্তমানে যারা নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেতন হয়েছে, ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এই সময়ের জন্য তারাই সঠিক, তারাই সবচাইতে ভালোটা জানবে, বুঝবে। সো, ওই শ্যুড হেল্প দেম ইন এভরি সিঙ্গেল স্টেপ!
একটা প্রতিষ্ঠানে আপনি অর্থ দিয়ে পড়াশোনা করতে এসেছেন, সুতরাং এই প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি টাকা দিয়ে একটা প্রোডাক্ট/ সার্ভিস পারচেইজ করেছেন। এই প্রতিষ্ঠান পুরো সার্ভিসটা প্রোভাইড করার আগ পর্যন্ত আপনার নিকট দায়বদ্ধ থাকবে। আপনি দায়বদ্ধ থাকবেন না। বিইউএফটি এবং বিইউএফটি এর ম্যানেজমেন্ট—প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর নিকট দায়বদ্ধ যাদের কাছ থেকে তারা একটা সেমিস্টারের ফিও নিয়েছে। সুতরাং বিইউএফটি তার দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছে কী না, কোথাও গ্যাপ আছে কী না—এটা সবচাইতে ভালো বলবে কারা? রানিং স্টুডেন্টস। সুতরাং, রানিং স্টুডেন্টস কোথাও গ্যাপ ফিল করলে, কোথাও প্রতারণা ফিল করলে অবশ্যই দে শ্যুড রেইজ ভয়েস এগেইন্সট ম্যানেজমেন্ট। তাদের দেখা দরকার নেই ম্যানেজমেন্টে কে আছে, কে নেই। কে ভালো কে মন্দ।
'বিইউএফটি ম্যানেজমেন্ট' একটা টিম। এবং এই টিম আপনাকে সার্ভিস দিতে দায়বদ্ধ। কারণ তারা টাকা নিয়েছে। আপনাকে মানসম্মত শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো, লিফট ফ্যাসিলিটি দেয়া, ভালো এনভায়রনমেন্ট দেয়া, ফিল্ড দেয়া, ক্যান্টিন দেয়া, এসি দেয়া, ওয়াইফাই দেয়া, ট্রান্সপোর্ট দেয়া—ঐসকল প্রকার সার্ভিস দেয়া যা একজন শিক্ষার্থীকে মোটিভেট করে, ইন্সপায়ার করে পড়াশোনার জন্য, পড়ার জন্য। দিনশেষে চার বছরে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করতে করতে একজন শিক্ষার্থী যেন ক্যারিয়ারের জন্য রেডি হয়, এই দায়িত্বও বিশ্ববিদ্যালয়ের।
এখন এই বিইউএফটিতে এসে দেখলেন আপনার ক্লাস নিচ্ছে ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞতা নেই, এমন শিক্ষক। দেখলেন সকালে ভালো নাশতা খাওয়ার জায়গা নেই, দেখলেন এসি কাজ করেনা, দেখলেন লিফটে ওঠা মানে লাইফ রিস্ক, দেখলেন ল্যাবে প্রাইভেসি নেই, দেখলেন টিচাররা ক্লাসে টাস্ক দেয় 'যাও নিজেদের মতো করে ফ্যাক্টরি ম্যানেজ করে নেও। কাটিং রুমের লেয়াউট বানাও। এই দেখো সেই দেখো।', অর্থাৎ অনেক কিছুই নিজেরাই ম্যানেজ করে চলতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নিয়ম রক্ষা করে 'Please pay your semester fee..' মেসেজ দিবে এবং অন্যসকল সার্ভিস আপনার চেয়ে নিতে হবে, এইটা কী ঠিক? অনেককিছুই বিইউএফটি করে, করার চেষ্টা করে। তবে অনেক কিছুও তো আছে যা বিইউএফটি থেকে শিক্ষার্থীরা পায়না। তাইনা?
সুতরাং, বিতর্ক করার প্রশ্নই নেই।
শিক্ষার্থীরা যেন নিজ নিজ অধিকার নিয়ে সর্বোচ্চ সচেতন হয়, ভয়েস রেইজ করার ক্ষেত্রে বোল্ড হয়, সেদিকটায় খেয়াল রাখা জরুরি। শিক্ষার্থীরা নিজেরা বোল্ড না হলে দিনের পর দিন অবহেলা পেতে হবে সবার। তাই ইনিয়ে বিনিয়ে, কোনোভাবেই বিপ্লবীদের দোষ ধরবেন না। বিরত থাকুন সমালোচনা থেকে।
যারা বিপ্লব করে, যা বিপ্লবে যায়—তারা অন্য সকলের কল্যাণের জন্যই যায়। অর্থাৎ, এবারের দাবিদাওয়া আদায়ে যারা অন্তত সেখানে উপস্থিতও ছিলো—তাদেরকে ডেকে একটা বড় ধন্যবাদ দিন। অন্তত তাদের এই ভয়েজ রেইজের কারণে একটা ম্যানেজমেন্ট বোর্ড সচেতন হবে এই ভেবে যে, 'শিক্ষার্থীদেরকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবেনা, বিশ্ববিদ্যালয় না, শিক্ষার্থীরাই আমার মূল সম্পদ...'
কৃতজ্ঞতা সকলের প্রতি, যারা আওয়াজ তুলেছিলো 🙏
©️ Nahid Ahsan