25/08/2025
শিরোনাম:- "কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যর্থ ব্যবস্থাপনাই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর শিক্ষাকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।"
প্রকৌশল শিক্ষার সর্বপ্রাথমিক পর্যায়ে তথা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট সামলাতেই ব্যর্থ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। যারা এই সাধারণ ইনস্টিটিউট গুলো পরিচালনা করতে গিয়ে, শিক্ষক নিয়োগ দিতে গিয়ে, কারিকুলাম পরিচালনা করতে গিয়েই হিমশিম খায় তাদেরকে যখন দেওয়া হয় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের (ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর) দ্বায়িত্ব তখন তার ভগ্নদশা হওয়ারই কথা ছিল।
প্রতিষ্ঠানগুলোর এতটা বেহাল দশা তারা করে রেখেছে যা হয়তো কেউ কল্পনাতে আনতে পারবে না
যার একটি ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে কলেজগুলো ল্যাব বিষয়ক ব্যবস্থাপনায়।
বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার জন্য সর্ব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে ল্যাব বা ব্যবহারিক বিষয়াবলি।
একটি সুষ্ঠ ল্যাব পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ ল্যাব ইন্সট্রাক্টর, পর্যাপ্ত যন্ত্র যন্ত্রপাতি , যন্ত্রপাতির পরিচর্যা, এবং ওই বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক।
এইগুলো বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্ব কেমন পালন করেছে তা দেখা যাক:-
বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গুলো প্রতিষ্ঠা করার পর তার জন্য ল্যাবের যন্ত্রপাতি এবং সেই যন্ত্রপাতি গুলো যথাযথ স্থাপন এবং পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের উপর দেওয়া হয়।
এরপর বিগত ১৮ বছর ধরে সবগুলো প্রতিষ্ঠানে একজন যথাপযুক্ত ল্যাব এসিস্ট্যান্ট তারা নিয়োগ দিতে পারেনি যে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট প্রত্যেকটি যন্ত্রপাতির সম্পূর্ণ নাম বলতে পারে ব্যবহার করা তো দূরে থাক।
বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের ল্যাবগুলোর যে যন্ত্রাংশ রয়েছে তা অত্যাধুনিক হওয়ার কারণে পলিটেকনিক্যাল বিভিন্ন ইনস্টিটিউট থেকে বদলি হিসেবে আসা ইন্সট্রাক্টর রা এই সকল যন্ত্রের সাথে কখনো পরিচিত ছিলেননা এবং হননি।
শুধুমাত্র একজন দক্ষ ইন্সট্রাক্টর এবং পর্যবেক্ষক এর অভাবে বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের কম্পিউটার ল্যাবের ৪০ টির উপর কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলোর একেকটির মূল্য প্রায় ৫০০০০ টাকার অধিক।
এমনকি এই যন্ত্রপাতির সঠিক পর্যবেক্ষণ কৌশলে দক্ষতা প্রদান করা অথবা এই বিষয়ে নতুন করে কাউকে নিয়োগ দেওয়া ক্ষমতা কারিগরির না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত ইইই, সিই, সিএসই এর মতো ডিপার্টমেন্টের ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা মূল্যের একেকটি যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আর মজার বিষয় হচ্ছে এই একটি যন্ত্রপাতি গুলো নষ্ট হয়ে গেলে পরবর্তীতে নতুন করে যন্ত্রপাতি গুলো ক্যাম্পাসে বিতরণ করা এবং মেরামত করার মত সক্ষমতা কারিগরির খুবই সীমিত।
এছাড়াও এই যন্ত্রপাতি শিখানোর জন্য শিক্ষকদের মধ্যে পর্যাপ্ত ট্রেনিং দেওয়ার মতো দক্ষতা কারিগরির নেই এবং বাহিরের থেকেও ট্রেনিং প্রদানের কোন ব্যবস্থাও এরা এত বছর ধরে করেনি।
এর ফলে যা যা হচ্ছে:-
১. খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলো থেকে উত্তোলিত রাজস্ব একটি বড় অংশ পড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
২. বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যৎ এবং ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ছে।
৩. বাংলাদেশের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির মান ক্রমাগত বিদেশী এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ড থেকে নিম্নগামী অবস্থানে অবনতি হচ্ছে।
৪. দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার তৈরির পথে একটি বিশাল বাধার সৃষ্টি করছে।
তবে এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কারিগরি অধিদপ্তরের ন্যূনতম কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত এই ১৮ বছরেও চোখে পড়েনি
এত অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এরা নতুন নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগী হচ্ছে।