01/08/2025
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ধন্য ভিসি এবং প্রক্টরের কু কর্ম
একটি মাসুদ তুমি আমাকে ক্ষমা করিও
আজ শুভ্র তুমি মাসুদের ক্রসফায়ার থেকে বেচে ফেরার ছবিটি শেয়ার করেছো । আমি তোমার এবং আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া সেইদিনগুলোর যতটুকু মনে আছে সেগুলো লিখতে বসেছি।
আমি যেইদিন বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি শপথ গ্রহন করি। সেইদিন রাতেই সিপির সাথে ঢাকায় চলে আসি। আর ঐ দিন রাতেই বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুব আমার রুমে তালা লাগিয়ে দেয়। আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না যে, তারা আমাদের সাথে কি আচরন করবে। আমি ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী অঞ্চলের শিবিরের সভাপতি। এটি তাদের জন্য একটু হুমকিস্বরূপ ছিল। যাহোক আমরা প্লান করেই নিরাপদে সবাই ধীরেধীরে বিশ্বিবদ্যালয়ের হল ত্যাগ করেছিলাম এক বছর পরে। সেটিও প্রক্টর মাহবুবের জাওরামির কারনে। যত নষ্টের গোড়া ছিল এই কুলাঙ্গার মাহবুব।
মাসুদ ফেসবুকে জানতে পারে রাতে গাড়াগঞ্জের দিকে ভিসি আশকারীর উপরে হামলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মাসুদ আমাদের জানাবে। মাসুদ তৎকালীন এসএম হল সভাপতি ছিল। ফজরের আগ মুহূর্তে মাসুদ তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারী শাহজালাল ভাই কে জানান এই ঘটনা। আর এই একটি ফোন কলের উপরে নির্ভর করেই তারা মাসুদ কে ঐ রাতেই তুলে নিয়ে যায়। এবং তাকে গুম করার প্লান করে। আমরা কোন এক মাধ্যমে জানতে পারি মাসুদ কে শৈলকূপা থানায় রাখা হয়েছে। আমি জানতে পারি শিবির সভাপতি হাদী ও শাহজালাল ভাই কে ভিসি হত্যাচেষ্টার মামলায় জড়ানোর মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে। এবং এই প্লানের সাথে জড়িত হচ্ছে তারাই যারা হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। শাহজালাল ভাই ফজর নামাজ পড়েই তাড়াহুড়ো করে আমার রুমে আসলেন, রুম থেকে বের করে একটি নিরাপদ স্থানে গিয়ে আমাকে তখন পর্যন্তকার ঘটনা বললেন, আমার আর বুঝতে বাকি নাই যে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে যাচ্ছে। আমরা দুজন সিদ্ধান্ত নিলাম এবং আমাদের অন্য নেতাদের সাথে প্লান সাজিয়ে আমরা ঝিনাইদহ ও ইবি অঞ্চল ত্যাগ করলাম।শাহজালাল ভাই বেশি রিস্কিতে ছিল সেই জন্য তাকে পাবনা চলে যেতে বললাম। আর আমি চলে গেলাম চুয়াডাঙ্গা। আমরা পুরো সাতদিন একটা অমানুষিক চাপের মাঝে ছিলাম।
আমি চুয়াডাঙ্গায় পৌছে ৮টি মোবাইল এবং ৩০ টি সিম তুলে নিলাম। একটি দশ তলা ভবনের আটতলায় অবস্থান নিয়ে নিলাম। আমাকে শুধু খাবার দিতে আসবে একজনই আর কেউ আমার এখানে আসবে না মর্মে সিদ্ধান্ত হল। আমি বিশ্বিবদ্যালয়ের সাংবাদিক সমাজ কে খোলা চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলাম মাসুদের জীবন বাঁচাত সহযোগিতা চেয়ে। তারা সাড়া দিয়েছিল সেই আহবানে। আমাদের ওয়ালী মুকাদ্দাসের মত আর কোন মায়ের বুক খালি না হোক এটাই ছিল প্রত্যাশা।
আমি শুভ্র এবং হিমেলের সাথে টাইম টু টাইম যোগাযোগ রেখে চললাম। অনেক কথায় আমি সরাসরি শুভ্র এবং হিমেল কে বলতে পারতাম না। তাই আমার কথাগুলো সরাসরি পৌছানোর জন্য বার্তাবাহক ঠিক করে দিলাম। আমার কথা যেনো হুবহু শুভ্র এবং হিমেল জানতে পারে। কাজ ও কথা একই রকম এফেক্ট করেছিল।
আমি মাসুদ কে জানালাম তোমার বড় ভাই দেখা করতে আসবে। তার সাথে দেখা হলে ভাই তোমাকে কিছু নির্দেশনা দিবেন যেটা হাদী ভাই দিয়েছে। আমি মাসুদ কে জানালাম তোমাকে সেইফ করার সকল প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, কিন্তু তোমাকে কিছুটা কৌশলগত মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। আমি নিজে মাসুদের বড় ভাই কে বলেছিলাম ভাই, মাসুদ একজন হাফেজ মানুষ, আমি ওকে মিথ্যা বলাতে সাহস পাচ্ছি না, আপনি মাসুদ কে বলবেন যে, তোমার সভাপতি যেটা যেভাবে করতে বলবে সেটা সেইভাবেই করবে।
মাসুদের পরিক্ষা চলমান ছিল এবং সম্ভবত আর একটি পরিক্ষায় বাকি ছিল। যেইদিন মাসুদ কে তুলে নিলো তার মে বি চারদিন বা ৫ দিন পর পরিক্ষা ছিল। আমি ওর বন্ধু হেদায়েত এর মাধ্যমে জানতে পারলাম ওর পরিক্ষা চলমান। আমি এই কথা শুনেই আমার পরিকল্পনা পরিবর্তন করে নিলাম। সেইদিন ই মাসুদের নিকট খবর পাঠালাম যে, মাসুদ তুমি পুলিশ কে বল, আমাকে পরিক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেন, আমি আপনাদের চাহিদামত শিকারক্তি দিবো। আপনারা যেভাবে বলবেন সেইভাবেই শিকারক্তি দিবো। আপনারা যাকে যাকে মামলায় জড়াতে চান তাদের নাম শিকার করব। পুশিশ তো মহাখুশি হয়েছিল মাসুদের এই কথা শুনার পর,মাসুদ বের হওয়ার পর মাসুদ আমাকে এই কথা বলেছিল। তারা একটি বিশাল কিছু অর্জন করতে যাচ্ছে ভাবখানা এমন ছিল।
দিন যত যাচ্ছে আমাদের টেনশান এবং প্লান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এখন মাসুদ তো রাজসাক্ষী হয়ে গেছে, পুরো পুলিশ বাহিনী তাকে শেল্টার দিচ্ছে, রাতে মাসুদ সহ মেসে চলে আসছে পুলিশ , মাসুদের প্রয়োজনীয় নোট বই খাতা নিতে। রাজসাক্ষীর পরিক্ষা বলে কথা। তবে মাসুদের সাহস আর সরলতা আমাদের পরিকল্পনায় বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। আমি মাসুদের বড় ভাইয়ের সাথে দীর্ঘ আলাপ করলাম। ভাই কে আমি বুঝাতে সক্ষম হলাম যেকোনভাবে তাকে পরিক্ষার হল পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারলেই আমরা আমাদের ২য় প্লানে চলে যেতে পারব। তাকে ২য় প্লান খুলে বললাম। তিনি খুশি হলেন এবং কিছুটা চিন্তামুক্ত হলেন। পরের দিন আমি ভাই কে মাসুদের সাথে দেখা করতে বললাম। আমি যা যা বলেছিলাম তা যেনো মাসুদ কে বুঝিয়ে বলেন এই অনুরোধ করেছিলাম। তিনি আমার কথাগুলো মাসুদ কে বলে তাকে সাহস দিয়ে এসেছিল। পুলিশের সবকথা কৌশলগত কারনে মাসুদকে মেনে চলতে হবে। একটু মিথ্যা বলার দরকার হলে সেটিও বলতে হবে। এর মাঝে প্রক্টর মাহবুব এবং এসপি শৈলকূপা থানায় এসে নিশ্চিত হয়েছে যে,মাসুদ শিকারোক্তি দিবে পরিক্ষা দিয়ে এসে। কুলাঙ্গার মাহবুব সেই দিন বিভৎস হাসি দিয়েছিল। ওর চোখে মুখে ষড়যন্ত্রে বিজয়ী হওয়ার ছাপ পড়েছিল সেইদিন।
মাসুদ যেইদিন পরিক্ষা দিতে আসবে তার আগের দিন শুভ্র এবং হিমেলের সাথে প্লান ২ নিয়ে কথা শেষ করলাম। তিনজন শিক্ষক যারা আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষক। আমি মাসুদের বিষয় টি তাদের কে জানালাম। এবং একটি হেল্প চাইলাম। তারা বলল তোমার প্লান বল, আমি বললাম স্যার, কাল মাসুদ পরিক্ষার হলে ঢুকলে দুইজন পুলিশ আসবে তাদের কে চেয়ারম্যান স্যারের রুমে ততোক্ষণ রাখবেন, নাস্তা করাবেন, গল্প করবেন যতক্ষণ না মাসুদের পরিক্ষা শেষ হচ্ছে। আর মাসুদ যায় লেখুক তার কাছে কোন স্যার যাবেন নাহ, পরিক্ষার হলে পুলিশ কে বসতে দিবেন নাহ। আমার শিক্ষকেরা সেইদিন হুবহু এইভাবেই আমার অনুরোধ রেখেছিল। হিমেল এবং শুভ্র পুরো মিডিয়া বিভাগ দেখছিল। আর আমি টেকনিক্যাল সাইট গুলো নিয়ে কাজ করছিলাম। হিমেলকে আমি আগেই পরামর্শ দিয়েছিলাম কি মর্মে মাসুদ ভয়েস রেকর্ড করবে। আবার মাসুদের কাছেও আগে থেকে স্কৃপ্ট পাঠানো ছিল। হিমেল মাসুদ কে আমার দেওয়া কথাগুলো আগে ই বুঝিয়ে বলেছিল। মাসুদ ঠিক সেইভাবেই কথাগুলো রেকর্ড দিয়ে গেছে। যা সত্য মাসুদ সেটাই তুলে ধরেছে। মাহবুব এবং এসপির চক্রান্ত ফাঁস করেছিল মাসুদ। আমি একটি জিনিস বুঝে ছিলাম মাহবুব গং একটি অসৎ নিয়তে এই কাজটি হাতে নিয়েছে। একদিকে হত্যাচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে সুতরাং এটা নিয়ে অনেক তদন্ত হতে পারে, সেই জন্য আগেই তার বিকল্প প্লান খেলা শুরু করেছিল। মাসুদ খুব দৃড়তার সাথে সেইদিন মাহবুব এবং এসপির মুখোশ উন্মোচন করেছিল ভয়েস রেকর্ড করে। মাসুদ বলেছিল, এই পুরো ঘটনার সাথে প্রক্টর মাহবুব এবং এসপি জড়িত। এখন আমাকে ক্রসফায়ার করবে এই মর্মে ভয় ভীতি দেখিয়ে বিশ্বিবদ্যালয়ের তৎকালীন শিবির সভাপতি হাদী এবং সেক্রেটারি শাহজালাল ভাই কে ফাঁসিয়ে দিতেই এই জঘন্য প্লান করেছে। এখন তাদের একটিই প্লান সেটি হল আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য আদায় করা এবং হাদী আর শাহজালাল কে জড়িয়ে দেওয়া। মাসুদ বলেছিল আমি যদি তাদের কে জড়িয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য না দেই তাহলে আমাকে তারা আজ রাতেই ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলবে। কিন্তু আমি গণমাধ্যমের কাছে সাক্ষী দিচ্ছি এই হত্যাচেষ্টার সাথে হাদী ভাই এবং শাহজালাল ভাই জড়িত না। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
আমি শুভ্র কে বলেছিলাম মাসুদ ক্যাম্পাসের গেইট দিয়ে যখন ঢুকবে তখন থেকে ভিডিও এবং ফটো সংগ্রহ শুরু করবে। পুলিশ তো অনেক কেই তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে হত্যা করেছে । পুলিশ কে সেই সুযোগ দেওয়া হবে না আর যদি আজ মাসুদ কে নিয়ে কোন নাটক সাজানোর চেষ্টা করে তাহলে পুরো ডকুমেন্টস প্রকাশ করে পুলিশের ভিত কাপিয়ে দেওয়া হবে। প্লানমাফিক সকল ফুটেজ ও ভিডিও ধারন শেষ হল। মাসুদ পরিক্ষার হল থেকে বের হল পুলিশের সাথে। আর এই দিকে মাসুদের সেই ভয়েস রেকর্ড ফাঁস করে দেওয়া হল। ফাঁস হওয়া সেই ভয়েস রেকর্ড নিয়ে ভিসির কার্যালয়ে সাংবাদিক নেতারা ভিড় জমালো, মাসুদের ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক রা এমন জঘন্য ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়লো, মাসুদের বন্ধুরা প্রতিবাদ শুরু হল।
ভিসির কার্যালয়ে হিমেল যখন এই রেকর্ড শুনাচ্ছিল তখন নাকি আশকারি চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে মাসুদ কে দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে দিতে এসপি কে চাপ দিচ্ছিলেন। আর মাহবুব তখন এসপি কে গালাগালি করছিল, এবং বলেছিল এই অকর্মা এসপি ভিসিকে হত্যা পরিকল্পনার মুল আসামী কে ধরতে পারছে না এজন্য শিবিরের উপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। এই কথাগুলো সাংবাদিক রা যখন এসপি কে হুবহু বলেছিল তখন এসপি বলেছিল এই প্রক্টর কোন মানুষ জাত ই না। সেই সকল নাটের মুল, সেই শিবির কে জড়িয়ে এই মামলায় হাদী এবং শাহজালাল কে জড়ানোর কাজ করছে। আর এই প্রক্টর মাসুদ কে এই মামলায় ফাঁসিয়ে দিতেই এই পরিকল্পনা করেছে। যা হোক সবাই তখন সবাই কে দোষ দিতে ব্যস্ত। আর এই দিকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ভিসি বরাবর যে, এখন মাসুদের সেইফটি নিশ্চিত করা ভিসির দায়িত্ব। কারন সে এসপির নিশানা হতে পারে কারন এসপি ফেঁসে গেছে। আবার মাসুদ কে কুচক্রী কুলাঙ্গার মাহবুব হত্যা করতে পারে কারন সেও ফেঁসে গেছে। আবার তৃতীয় পক্ষও মাসুদ কে হত্যা করতে পারে অন্যদের ফাঁসানোর জন্য। ভিসি কে তারা বলেছিল যত দ্রুত সম্ভব তাকে সেইফলি ক্যাম্পাসে নিয়ে আসুন। না হলে আপনি মাসুদ হত্যার অন্যতম আসামী হবেন।আশকারি তখন নিজে বাঁচার জন্য মাসুদ কে নিরাপত্তার সাথে সন্ধ্যাই ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এনেছিল।
এই প্রক্টর মাহবুব নাকি এখনো ইবি তে চাকুরি করে, সে ক্লাস নিচ্ছে, বিশ্বিবদ্যালয় পরিবহনে ক্যাম্পাসে আসছে,ঘুরছে ফুরফুরে মেজাজে। এই কুলাঙ্গার কোন মানুষ জাত না। ওর জন্মও মানুষের শুক্রানু থেকে হয়নি। ওর ক্যাম্পাসেই শাস্তি দেখতে পারলে খুশি হইতাম।
আজও মাসুদের সাথে ঘটে যাওয়া সেই স্মৃতি মনে পড়লে ভয় লাগে। মাহবুব,পরেশ,এসপি,জাকারিয়া, বাকি বিল্লাহ,আরো কয়েকজন কর্মকর্তা এই ঘটনার সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। তবে মাহবুব ছিল মাস্টারমাইন্ড।।
শুভ্র,হিমেল,মাসুদ, কোন তথ্য ভুল লিখা হলে সংশোধন করে কমেন্ট করিও। তোমরা সবাই ছিলে অনেক সাহসী।
আমি খুব দুর্বল একজন ছাত্রনেতা ছিলাম। আমার তোমাদের মত ছাত্রদের নেতা হওয়ার কোন যোগ্যতা ছিল না।
সংগৃহীত