08/07/2025
গত ১/২ মাসে জাপান,জার্মানি মিলিয়ে ৩ জন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আত্নহত্যা করে জীবন বিসর্জন দিয়ে দিল। আহারে জীবন! হাজার মাইল দূর দেশে বসে এমন আত্নাহুতি ভুক্তভুগি পরিবার এর জন্য যেমন কষ্টদায়ক তেমনই সেইসব দেশের কমিউনিটির জন্যও একটা বিব্রত অবস্থার কারণ!
যারা বিদেশ আসে সেটা হোক student কিংবা work purpose যেভাবেই আসুক বিদেশ কখনোই অতিসুখের জায়গা না।
যে লোক বলবে বিদেশ অনেক সুখে শান্তিতে থাকার দেশ, ielts দিয়ে আপনারা চলে আসেন। সেইসব বাটপার দের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবেন। কারণ দিন শেষে তারাও হায় হুতাশ করে কিন্তু সহজে কাউকে প্রকাশ করে না।
বিদেশ আসলেই আপনি প্রথমে কালচারাল শক খাবেন, ড্রাগস এলকোহল সহজলভ্য হওয়াতে সহজেই এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে হবেনই, ইংলিশ স্পিকিং কান্ত্রী না হলে যুক্ত হবে ভাষাগত সমস্যা, ভিন্নধারার পড়াশুনার ব্যবস্থার সাথে এডজাস্ট করতে না পারা, আর স্কলারশিপ ছাড়া আসলে টিউশন ফি-এর প্রেসার, বন্ধু পরিজন ছাড়া একাকিত্ব, সাথে যুক্ত হয় নিজের ফ্যামিলির আর্থিক চাপ!
আমাদের বাঙ্গু সমাজ বিদেশ মানেই বুঝে টাকার পাহাড়! কারণ হিসাব করেই ১ ডলার/ইউরো মানে ১৫০ টাকা,
এটাতে আসলে আপনি কাউকে দোষারোপ করতে পারবেন না। তাছাড়া আমাদের আসে পাশের এমন অনেক বাপ মা আছে তারা এসে আপনার বাবা মা কে অহংকার এর সুরে, বড়াই করার জন্য বলবে “আমার ছেলে/মেয়ে মাসে ৫/৬ লাখ টাকা কমায়” এর পর এই কথায় বাবা মা সহজে প্রভাবিত হয় আর মনে করে বিদেশ মানেই টাকা আর টাকা।
এখন আমাকে অনেকেই গালমন্দ করতে পারেন যে “আপনি বিদেশ গেছেন দেখে বড় বড় কথা বলতেছেন”
সত্যি বলতে আমাকে গালমন্দ করলেও আমি বলব বিদেশ সুখ শান্তির জায়গা না। আর ইহুদি খ্রিস্টানদের দেশে তো আরও নয়!
আমি কখনোই কাউকে বিদেশে আসার জন্য উদ্ভুদ্ব করি না। অনেক ভুইফোড় so called Content creator আছে যারা সস্তা ভিউ ব্যবসার জন্য যা না তাই ভিডিওর মাধ্যমে পাবলিক কে গেলানোর চেষ্ঠা করে।
নাম মেনশন করব না তবে কেউ কেউ তো বলে ielts দাও আর দেশ ছাড়ো, বিদেশ আসলে ভাতের অভাব হবে না, আজকে দেশে না খেয়ে থাকলে কেউ খোজ নিবে না, বিদেশ এসে ইউরো ডলার কামাও আর নিজের জীবন সাজাও! এগুলা ডাহা মিথ্যা কথা!
বরঞ্চ বিদেশ আসলে আপনার ভাতের অভাব হবে, এক বেলা খেয়ে দুই বেলা না খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে, আপনি এক বেলা না খেয়ে থাকলে কেউ ফিরেও দেখবে না আপনি খেয়েছেন কিনা, টিউশন ফি এর চিন্তায় রাতে ঘুম হবে না এমনকি বাধ্য হয়ে কেউ কেউ সেমিস্টার ড্রপ করে! এটাই মেক্সিমাম বিদেশ আসা মানুষের চিত্র! কেউ প্রকাশ করে কেউ করে না!
অথচ আপনি দেশে আর যাই হোক ভাতের অভাবে আপনি মরবেন না! কিছু না করতে পারলেও আপনার পাশে দাঁড়ানোর মানুষের অভাব হবে না। একটা না একটা গতি আপনার হবেই। অন্তত আপনি আত্নহত্যা করতে গেলেও আপনাকে বাধা দেয়ার মতো একজন হলেও পাবেন।
কিন্তু বিদেশে আসলে কেউ করো না। প্রত্যেকে যার যার জীবনে স্ট্রাগল করতেছে। চাইলেও আপনাকে দেখার মতো সময় করো হবে না। এমনকি আপনার নিজেরও হবে না কাউকে দেখার সময়। কারণ আজকে আপনি করো জন্য একটা দিন ব্যয় করা মানে আপনার পরের সপ্তাহের উপর্জনের হিসাব খাতায় ধার দেনা যুক্ত হবে।
হ্যাঁ বিদেশে আসলেই অনেক টাকা। কিন্তু সেটা বাংলাদেশের টাকায়। কিন্তু সেই দেশের তুলনায় ওই টাকা কিছুই না।
মোস্ট অফ দ্য ইউরোপিয়ান দেশে আপনি ৭০০/৯০০ ইউরো ইনকাম করতে পারবেন এতে কোন সন্দেহ নাই। টাকার হিসেবে লাখ টাকা! শুনতে অনেক মুখরোচক লাগে কিন্তু সেই দেশের তুলনায় এই টাকা কিছুই না। কারণ যে দেশে আপনি ১ লক্ষ টাকা ইনকাম করবেন সে দেশে আপনার বাসা ভাড়া, খাওয়ার খরচ, যাতায়াত খরচ, ইনসুরেন্স খরচ, মোবাইল বিল ৬০/৭০ হাজার টাকা! তো পকেটের বাকি ২০/৩০ হাজার টাকা আপনি দেশে পাঠাবেন নাকি টিউশন এর জন্য জমাবেন। সেই কুল কিনারা করতে পারবেন না।এত কিছুর পরেও আপনি সারভাইভ করে যাবেন হয়তো কিন্তু সব শেষে আপনার ঘাড়ে চেপে বসবে একাকিত্ব! এটার কোন অল্টারনেটিভ আপনি পাবেন না।
অনেকে এডজাস্ট করতে না পেরে দেশেও ফিরতে পারে না। কারণ আমাদের নোংরা সমাজ! সমাজ বলবে “বিদেশ এর সুন্দর জীবন ছেড়ে চলে আসছো এত বড় গর্ধব আর কেউ হয় না”
সবার কথা বাদ দিলেও নিজের পরিবার মানতে চাইবে না। ঠিক এই কারণে অনেকেই নীরবে সব সয়ে যায়, কেউ টিকে যায় কেউ টিকে না।
এগুলো নিয়ে কেউ কখনোই খোলাখুলি ভাবে কথা বলে না। কারণ পাছে লোকে না আবার বলে বসে বিদেশ গিয়ে এমনে ফকিন্নির মতো থাকো কেন। তাই সব সময় দেখবেন বিদেশ আসা মানুষেরা মেক্সিমাম সময় লাক্সারিস একটা লাইফ লিড করার ভাব ধরে সোস্যাল মিডিয়াতে। জাস্ট ফর সোস্যাল স্ট্যাটাস ধরে রাখার জন্য ।
আপনি বিদেশ আসলে আপনাকে অবশ্যই বাবা দাদার টাকার ব্যাকআপ নিয়ে আসতেই হবে নয়তো বিদেশ আসলে টাকা ঠিকই কামাবেন কিন্তু পেটে ভাতে চলতে হবে আর পড়াশুনা তো কবেই স্থফা দিতে হবে সেটা বলার অবকাশ নাই।
এর পর কি করে সবাই?
বছর চারেক রেস্টুরেন্টের থালা বাসন মেজে আর নয়তো ফ্যাক্টরিতে গায়ে গতরে খেটে কিছু টাকা পয়সা জমাবে।
এটা আপনি বিদেশ আসা আপনার কোন কাছের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন আমার সাথে দ্বিমত করবে না। আমি লিখে দিতে পারি! হ্যাঁ হাতে গোনা ভাগ্য গুনে কেউ কেউ ভালো অবস্থান বানায় নেয় তবে সেটাও তার একান্ত ব্যক্তিগত স্ট্রাগল এর কারণে। সবাই সেটা পারে না!
হ্যাঁ বিদেশ তাদের জন্য সুন্দর যাদের পারিবারিক আর্থিক সামর্থ্য ভাল, স্কলারশিপ নিয়ে আসছে, ভালো কোন প্রফেশনাল জব নিয়ে আসছে।
কিন্তু আমাদের দেশের মেক্সিমাম মানুষ ধার-দেনা, লোন করে বিদেশ এসে জীবন কে জাহান্নাম বানায় ফেলে।
জীবন তো একটাই, নিজ হাতে নষ্ট কইরেন না, বিদেশ এ টিকতে না পারলে দেশে চলে জান। দেশের মাটিতে মরলেও মাটি দেয়ার লোকের অভাব হবে না, বিদেশ বাড়িতে মরলে আপনার মৃত দেহ মর্গে পড়ে থাকবে দিনের পর দিন, দেখারও কেউ থাকবে না!