
05/06/2025
আরাফার দিনে এক জীবন বদলে যাওয়ার ঘটনা-
অবশ্যই পড়ুন ⬇️
এক ভাই এই হৃদয়স্পর্শী গল্পটি শেয়ার করেছেন:
ঠিক এক বছর আগে, আমার সুপারমার্কেটে একটি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয় এবং আগুন লেগে যায়। এতে আমার পণ্যের তিন-চতুর্থাংশ ধ্বংস হয়ে যায়।
এই ঘটনাটি ঘটেছিল আরাফার দিনের ঠিক দুই দিন আগে!
আপনি কল্পনা করতে পারেন, আমি কী অবস্থায় ছিলাম — ঈদুল আযহা আসছে, অথচ আমার ব্যবসা, পণ্য, দোকান — সব কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত। কোনো ঈদের উপহার নেই, আনন্দ নেই, শুধু দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, আর প্রচণ্ড ঋণ।
আমি তখন সদ্যবিবাহিত— মাত্র দুই মাস হয়েছে বিয়ে হয়েছে। যে পণ্যগুলো পুড়ে গেছে তার মূল্য ছিল প্রায় $১৫,০০০। তখন আমি ভাবতে থাকি: আমি এখন কী করবো? কীভাবে এটা সামলাবো? আমার স্ত্রীর গয়না বিক্রি করতে বলবো? সে তো এখনো নতুন বউ! কিংবা ঋণ নেবো? কার কাছ থেকে?
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম— বন্ধুবান্ধবদের থেকে ধার করবো। কিন্তু যাদের কাছেই গেলাম, তারা বললো,“ঈদ আসছে ভাই, এখন পারছি না।”
দুই দিন এভাবে কেটে গেল। হতাশ হয়ে কেবল $৮০০ জোগাড় করতে পারলাম। এটি আমার ক্ষতির তুলনায় এক ফোঁটা পানির মতো ছিল।
সেই রাতে বাসায় ফিরছিলাম, তখন পাশের বাসার একজন আমাকে বললেন,“ঈদ মোবারক ভাই! কাল যেন আরাফার রোজা রাখতে ভুলে যেও না!”
আমি মনে মনে বললাম, এখন রোজার কথা বলছো? দয়া করে আমাকে একা থাকতে দাও…
আমার স্ত্রী মন ভালো করার জন্য হাঁটতে যাওয়ার প্রস্তাব দিল। আমরা বের হলাম,কিন্তু আমি এতটাই চিন্তায় ডুবে ছিলাম যে কিছুই উপভোগ করতে পারছিলাম না।
বাসায় ফিরে সে বললো, “চলো সেহেরির জন্য প্রস্তুতি নেই, ভোর হয়ে আসছে।” আমি বললাম, “সেহরি? আমি তো ভুলেই গেছি আগামীকাল আরাফার দিন! তুমি আর আমি যেন দুই ভিন্ন জগতে বাস করছি। এখন সেহরি? এখন রোযা?”
সে মৃদুভাবে বললো, “আল্লাহ আমাদের জন্য এটা নির্ধারণ করেছেন। তিনি আমাদের ছেড়ে দেবেন না। কিন্তু আমাদের রোজা রাখা উচিত।”
তার অনুরোধে রোজার নিয়ত করলাম।
সন্ধ্যার পর সে বললো,“তোমার রবের কাছে দোয়া করো।”
আমি বললাম,“কি দোয়া করবো?”
সে বললো,“যা চাও তাই দোয়া করো।”
আমি বললাম,“১৫,০০০ ডলার চাওয়া কি সম্ভব? আকাশ থেকে টাকা পড়ে আসবে?”
সে বললো,“যিনি আকাশ সৃষ্টি করেছেন, তিনি সবকিছু করতে পারেন।”
সে নামাজে দাঁড়ালো,দোয়া করলো। আমিও দোয়া করলাম, যদিও মনজুড়ে শুধু ১৫,০০০ ডলারই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
মাগরিবের পর এক বন্ধু ফোন করলো, বললো,“ক্যাফেতে আসো, জরুরি কথা আছে।”
গেলাম। সে বললো, “ভাই, একটা সুযোগ আছে, তুমি ছাড়া আমি আর কাউকে ভাবতে পারছি না। আমার এক বন্ধু সম্প্রতি টাকা পেয়েছে, ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। তুমি কি অংশীদার হবে?”
আল্লাহু আকবার! সে ব্যক্তি এল, বললো,“আমার কাছে $৩০,০০০ আছে, বিনিয়োগ করতে চাই।”
আমি বললাম,“আমার দোকানে নতুন মাল আনতে $১৫,০০০ লাগবে। বাকি $১৫,০০০ দোকান সংস্কারে লাগবে। আপনি চাইলে অর্ধেক অংশীদার হতে পারেন।”
সব ঠিক হলো। ঈদের পর সুপারমার্কেট আবার খুলে দিলাম। আনন্দে মন ভরে উঠলো।
ওহ, আর একটা বিষয় বলতে ভুলে গেছি — দোকানে আগুন লাগার এক সপ্তাহ আগে আমার মা'র ক্যান্সারের সন্দেহে টেস্ট হয়েছিল। রিপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল আরাফার দিন।
রিপোর্ট এলো — ক্যান্সার নেই! মা সম্পূর্ণ সুস্থ!
মা আনন্দে সারাদিন কেঁদেছেন — শুকরিয়া জানিয়েছেন আল্লাহর কাছে।
দোকানও খুলে গেল, মা সুস্থ হলেন, এমন সময় আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে জানালো — সে গর্ভবতী!
সে বললো: “এখন বুঝছো আরাফার রোজা ও দোয়ার শক্তি?”
আমি মনে মনে বললাম, সুবহানআল্লাহ… কিছুদিন আগেও মনে হচ্ছিল পৃথিবীটা ভেঙে পড়ছে, আজ সবকিছু বদলে গেছে — একটিমাত্র খাঁটি দোয়ার মাধ্যমে।
সেদিন আমি আল্লাহর সামনে বিনয় শিখলাম— যা কখনো ভুলবো না।
আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। কখনো কখনো তিনি আমাদের কষ্ট দেন যেন আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাই।
ঈদের পর ব্যবসা ভালো চললো, পুরো $৩০,০০০ ফেরত দেওয়ার সময় এল। আমি সেই ব্যক্তিকে টাকা ফেরত দিতে গেলাম— কিন্তু তখন ঘটনা মোড় নিল।
সে বললো, “আসলে এই টাকা আমার না। কারো স্ত্রী ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়েছেন, তিনি এই টাকা কাউকে anonymously সাহায্য করতে চেয়েছিলেন — তাই তোমাকে দেওয়া হয়েছে।”
এই টাকা এখন তোমার। কেউ ফেরত চাইবে না।
আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি বাসায় গিয়ে নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে এক ঘণ্টা কাঁদলাম — শিশুর মতো। আল্লাহর দয়া আর কৃপায় অভিভূত হয়ে পড়লাম।
আজও যখন এই ঘটনা মনে পড়ে, আমি শুধু চোখের জল ফেলি না — মনে হয় রক্তঝরা চোখে কাঁদছি। আল্লাহর কাছ থেকে এতটা দূরে ছিলাম, অথচ তিনি এত কাছে ছিলেন।
এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে আরাফার দিনের রোজা, দোয়া এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখার প্রকৃত অর্থ।
এটাই ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট— যেদিন আমি তওবা করলাম, আল্লাহর দিকে ফিরে এলাম।
( সংগৃহীত )