15/10/2025
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সাত কলেজ ইউনিটের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানবেন। আপনি অবগত আছেন যে, ২০১৭ সালে ঢাকা মহানগরের সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সংকট নিয়ে আন্দোলন চলাকালীন কোনরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের স্লোগান তুলে এই কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর সংকট আরো তীব্র হলে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে আন্দোলন চলতে থাকে। শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক, ল্যাব, লাইব্রেরি, সেমিনার, আবাসন ও পরিবহন সংকট দূর করা এবং সর্বোপরি শিক্ষার মান উন্নয়ন ও গবেষণাধর্মী শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে সাতটি কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার দাবিতে এই আন্দোলন সংঘটিত হয়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষার্থীদের এই দাবিকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহায়তায় ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজ নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় (প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়) স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং সর্বশেষ গত ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি খসড়া রূপরেখা অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি এই অধ্যাদেশের উপর সমস্ত অংশীজনের মতামত দেওয়ার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে আমরা তারও প্রশংসা করছি।
প্রথমেই আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খসড়া অধ্যাদেশ সম্পর্কে আমাদের মতামত আমরা জমা দিতে পারিনি। আবার এও ঠিক যে- এত এত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদের মতামত নেয়ার জন্য কেবল সাতদিন খুবই অল্প সময়। আমরা সংক্ষিপ্তভাবে আমাদের মতামত রাখছি। পরবর্তীতে বিস্তারিতভাবে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।
অধ্যাদেশ সম্পর্কে আমাদের মতামত
১. ধারা ৩ এ 'বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন' অংশের '১' নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সাতটি কলেজের অবকাঠামো ও ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে দিনের নির্দিষ্ট সময় (দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা) পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহৃত হবে। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য অবাধ জ্ঞান চর্চার স্থান। বিশ্ববিদ্যালয় একটি সার্বক্ষণিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটা নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করে কিংবা শিফ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলে না।
একই ধারার '৭' নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পাসের পরীক্ষাগারসহ সমজাতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজনে শর্তসাপেক্ষে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কোন কোন শর্তসাপেক্ষে সমজাতীয় সুযোগ সুবিধা তারা ব্যবহার করতে পারবে তার সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একই সঙ্গে কাজ করতে পারে না। এটা বিবিধ জটিলতা সৃষ্টি করবে। উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় একই অবকাঠামো ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে সেটা আরেকটা সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক চালু রাখার জন্য আলাদা প্রশাসন ও একাডেমিক ভবন নির্মাণ করাই একমাত্র সমাধান।
২. ধারা ৫-এ 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা ও দায়িত্ব' অংশের 'ণ' নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে দেশি/বিদেশি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান ও বৃত্তি গ্রহণ করতে পারবে। আমরা মনে করি এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের দিকে ঠেলে দেয়া হবে। শিক্ষার ব্যয় বাড়বে এবং এই জায়গা থেকে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ কমাবে।
এই ধারার 'দ' অংশে বলা হয়েছে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্প কারখানার যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিশ বছর মেয়াদী কৌশলপত্রেও এই ধরনের বিষয় উল্লেখ ছিল। এটা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) নীতি, এটা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের প্রেসক্রিপশন। এটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণাকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেয়া হবে।
একই ধারার 'ন' অনুচ্ছেদে শিক্ষা ও গবেষণাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের শর্তাবলী প্রতিপালন ও সমজাতীয় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ফলপ্রসু যোগাযোগ স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। IQAC এবং অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের নীতি নিয়ে পূর্বে আমাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় বক্তব্য রেখেছি। এই কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক কোর্স ছাড়া কিছু রাখতে চায় না। জ্ঞান অর্জন নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে জীবিকা অর্জনের লক্ষ্যে- ফলে বাজারমুখী বিভাগগুলো ছাড়া বাকি বিভাগগুলো তারা তুলে দিতে চান। এদের পরামর্শে বিষয় ঠিক করলে বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফসহ নানান বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাব তৈরি হবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ব্যয় বাড়বে।
৩. ধারা ৭ এ 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান' অংশের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে হাইব্রিড পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের কথা হয়েছে। যেখানে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে নেয়া হবে। আমরা মনে করি, এই ব্লেন্ডেড লার্নিং পদ্ধতিতে পাঠদানের ওয়ান টু ওয়ান চ্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ছাত্র-শিক্ষকের সরাসরি সংযোগ ও সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভার্চুয়াল শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলন করা হলে পাঠদানে যে গভীরতা ও কার্যকারিতা থাকে তা বিনষ্ট হবে। সহপাঠী ও শিক্ষকদের সাথে মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়ার অভাবে সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান ক্লাসরুম ও শিক্ষক সংকটের সমস্যা কাটানোর উদ্যোগ না নিয়ে হাইব্রিড পদ্ধতি খুব খারাপ ফলাফল বয়ে আনেবে।
৪. ধারা ১১-এ 'উপাচার্য নিয়োগ', ধারা ১৩-এ 'উপ-উপাচার্য' এবং ধারা ১৪ এ 'ট্রেজারার' এই তিনটি ধারারই ২ নাম্বার অংশে বলা হয়েছে সার্চ কমিটির সুপারিশে যা কিছুই থাকুক না কেন আচার্য চাইলে যে কোন সময় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের নিয়োগ বাতিল করতে পারেন। অথচ ১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেটে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের প্যানেল নির্বাচনের বিধান আছে। তা সত্ত্বেও এই নিয়োগ পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।
৫. ধারা ১২-এ 'উপাচার্যের ক্ষমতা ও দায়িত্ব' অংশের ২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে 'উপাচার্য তার দায়িত্ব পালনে আচার্যের নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন'। অথচ উপাচার্যের দায়বদ্ধ থাকা উচিত সিনেটের কাছে, আচার্যের কাছে নয়।
একই ধারার ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্যের হাতে একক ক্ষমতা থাকা, ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকা এবং ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে সিন্ডিকেট ব্যতীত অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের সাথে উপাচার্য একমত না হলে এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন স্থগিত রাখতে পারার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যেগুলো নিঃসন্দেহে অগণতান্ত্রিক এবং এর মাধ্যমে উপাচার্যের স্বৈরাচারী হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করবে।
৬. অধ্যাদেশে সিনেটের কোন বিধান নেই। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোন বিধান নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণ ও পরিচালনায় ছাত্র প্রতিনিধিদের যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকছে না। সিনেট না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের যুক্ত হওয়ার কোন উপায় থাকছে না। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে না। এটি প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত একটি অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিন্তারই বিরুদ্ধে যায়।
৭. ধারা ১৯-এর 'সিন্ডিকেট' অংশের 'ছ' নাম্বারে সিন্ডিকেট বৈঠকে সদস্য হিসাবে সরকার কর্তৃক মনোনীত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের উপস্থিতি এবং ধারা ৩১ এ 'পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি' অংশের 'ছ' নম্বর অনুচ্ছেদে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির বৈঠকে সদস্য হিসাবে সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন প্রকৌশলী ও একজন স্থপতির উপস্থিতি-বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এবং উন্নয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপকে নিশ্চিত করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে খর্ব করবে। আমরা বিশ্বাস করি দেশ ও সমাজের উন্নয়নের জন্য জ্ঞান উৎপাদন ও বিতরণের উদ্দেশ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করবে। সরকার কেবল সেখানে বরাদ্দ দিবে কিন্তু সেখানকার নীতিমালা প্রণয়নে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৮. ধারা ২৬-এ 'বিজনেস ইনকিউবেটর' অংশে বলা হয়েছে বিজনেস ইনকিউবেটর চালুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ বাড়াতেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেই আমাদের ধারণা। সরকার যে শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের চাকরি নিশ্চিত করতে পারছে না- এই নির্মম সত্য আড়াল করার উদ্দেশ্য থেকেই শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা বানানোর ব্যর্থ আয়োজন করা। এসকল বিষয় অধ্যাদেশে যুক্ত করার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমাদের মনে হয় না।
৯. ধারা ২৭-এ 'বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল' অংশের 'ছ' ও 'জ' নম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি ও অন্যান্য উৎস হতে আয়ের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ, পুকুর, অডিটোরিয়াম ও অন্যান্য উৎস বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভাড়া দিয়ে আয় করার কথা বলা হয়েছে। আবার এই ধারার 'ঝ' অংশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে আয়ের কথা বলা হয়েছে।
উপরোক্ত দুইটি ক্ষেত্রেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি বরাদ্দ কমানোর উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। উচ্চশিক্ষায় সরকার বরাদ্দ করলে এটাকে ভর্তুকি বা লোকসান বলা যায় না। কারণ এর মাধ্যমে দেশে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি হয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উন্নত করা ও পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেই বরাদ্দ দেয়া উচিত। এটাকে একটা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা চলে না।
১০. ধারা ২৮-এ 'বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ব্যয় ও শিক্ষার্থীদের বেতনাদি' অংশে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বার্ষিক ব্যয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেমিস্টার ও মাসিক বেতনের ফি নির্ধারণের মাধ্যমে আদায় করার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি বাড়ানোর সম্মতি আগে থেকেই দিয়ে দেয়া হলো। বছর বছর রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ বাড়ানোর কথা না বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ব্যয়ভার শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ শিক্ষার আর্থিক দায় থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করে দেওয়া। আমার মনে এই দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেয়া উচিত।
১১. ধারা ৪৫-এ 'কর্তৃপক্ষের সদস্য হইবার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ' অংশে বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি যদি অপ্রকৃতিস্থ বা অন্য কোনো অসুস্থতাজনিত কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ বা আর্থিক কেলেঙ্কারি বা যৌন নিপীড়ন বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয় এরূপ ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদে অধিষ্ঠিত থাকার যোগ্য হবেন না।' আরো বলা হয়েছে, 'এই ধারায় উল্লেখিত বিষয়ে সংশয় বা বিরোধের ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি এই ধারা অনুযায়ী অযোগ্য কিনা, তা আচার্য সাব্যস্ত করবেন এবং এই বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।' অথচ কোনো ব্যক্তি যদি উপরোক্ত কোনো বিষয়ে আদালত থেকে দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে ঐ বিষয়গুলোতে সংশয় প্রকাশ করার কোনো সুযোগই থাকে না। আবার সংশয় থাকলেও সেটা কোন যৌথ বডি বা সিনেট চূড়ান্ত করতে পারে, আচার্য নয়।
১২. সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। সেমিস্টার পদ্ধতি একটি অখন্ড ও সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রমকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে। পুরো পাঠ্যক্রম ছয় মাসে খন্ডিত হয়। আমরা জানি কোন একটা বিষয় সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞান অর্জনের জন্য সর্বব্যাপক অধ্যায়ন প্রয়োজন। সেমিস্টার পদ্ধতিতে সময় অল্প থাকায় এই সর্বব্যাপক ও গভীর অধ্যয়নের সুযোগ সংকুচিত হয়। এর মধ্যে ল্যাব, ইনকোর্স, ক্লাস টেস্ট, মিড টার্ম এসব যুক্ত হয়ে সংকট আরো ঘনীভূত হয়। আবার এই পদ্ধতিতে এক সেমিস্টারের পাঠ্যসূচি পরের সেমিস্টারে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ার ফলে একটা বিষয়ের কোর্সগুলো আলাদা আলাদা অধ্যয়ন করে আবার সবগুলো কোর্স পুনঃঅধ্যায়নের মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জনের একটি সুসংহত পথ তৈরি হয় তা হুমকির মুখে পড়ছে।
১৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা সংকোচনের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের স্লোগান তুলে আসন সংখ্যা সংকোচন করা মূলত উচ্চশিক্ষাকে সংকোচন করা। আবাসন ক্লাসরুম ও শিক্ষক সংকটের অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানো হচ্ছে। অথচ প্রয়োজন অনুসারে অবকাঠামো নির্মাণ, সেকশন ভাগ করে পাঠদান এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার মত সহজ সমাধান না করে যখন প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী ছাঁটাই করা হয়, তখন বাস্তবে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। শিক্ষার আর্থিক দায় রাষ্ট্র অস্বীকার করতে চায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ দিন দিন কমাচ্ছে। ফলে হচ্ছে না অবকাঠামোগত উন্নয়ন। আর এই অজুহাতে দেখিয়েই কমানো হচ্ছে আসন সংখ্যা। অথচ এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষ্যাধিক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসন কামানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। এভাবে শিক্ষা ব্যবসায়ীদের হাত শক্ত করতে এবং কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার্থেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা কমানো হচ্ছে।
১৪. অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের মতামতে বিষয় নির্ধারণ করা হলে মৌলিক ও তত্ত্বীয় বিষয় সংকোচন ঘটবে। মৌলিক বিজ্ঞান, ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, সমাজবিজ্ঞানের মত মৌলিক বিষয়গুলো বাদ দিয়ে বাজারমুখী বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ মানুষ গড়ে উঠার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। বাস্তবে যে প্রয়োজন ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে তা কোনো সামাজিক প্রয়োজন নয়, বরং এই বিশ্বব্যাপী চলমান বৈষম্যমূলক অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন। ফলে আজকের রাষ্ট্রের শিক্ষানীতির লক্ষ 'বাজারের উপযোগী মানুষ তৈরি করা'। ফলে 'কর্মমুখী শিক্ষা', 'জীবন সম্পর্কিত শিক্ষা', 'এই শিক্ষা গ্রহণে কেউ বেকার থাকবে না', 'নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে' ইত্যাদি চটকদার মোড়কের আড়ালে মূলত মৌলিক ও তত্ত্বীয় বিষয়গুলোকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। মৌলিক জ্ঞানকে বাদ দিয়ে ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে জানলেই কোনো বস্তু বা ঘটনাকে পূর্ণাঙ্গভাবে জানা যায় না, খণ্ডিত ধারনা তৈরি হয়। খণ্ডিত জ্ঞান নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বিকশিত মানুষ হিসাবে গড়ে উঠা যায় না।
আমরা সংক্ষেপে আমাদের পয়েন্টগুলো রাখলাম। পরবর্তীতে বিস্তারিত মতামত লিখিতভাবে আপনাদের কাছে পৌঁছে দেব। আপনারা আমাদের বক্তব্যকে বিবেচনা করবেন এই প্রত্যাশা রইল।
শুভেচ্ছাসহ-
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে
নাহিয়ান রেহমান রাহাত
১৮-১৯, প্রাণিবিদ্যা, ঢাকা কলেজ
সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা কলেজ শাখা
মোবাইল: +৮৮০১৬১৬০১৩৩৮১
সুমাইয়া আক্তার
১৯-২০, সমাজকর্ম, ইডেন মহিলা কলেজ
সাংগঠনিক সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ইডেন মহিলা কলেজ শাখা
মোবাইল: +৮৮০১৮৮৬৬০৯৯৫৩