20/08/2025
একটা মধ্যবিত্ত ছেলের অপুর্ণ স্বপ্নের গল্প
আমার এই ছোট্ট জীবনের কিছু গল্প আছে কিছু না বলা কষ্ট আছে কিছু ত্যাগ আছে কিছু স্বপ্ন আছে।
আমি একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে, সাথে একটা ছোট বোন। ছোট থেকেই দেখেছি সংসারের অবস্থা তেমন ভালো না। যত বড় হচ্ছিলাম, তত বুঝতাম আমাদের পরিবারের সুখটা হয়তো কপালে লেখা ছিল না।
বাবাকে দেখেছি দিনের পর দিন পরিশ্রম করতে, মায়ের চোখে দেখেছি লুকানো অশ্রু।
পড়াশোনা করছিলাম, কিন্তু এক সময় বুঝলাম, শুধুই বইয়ের পাতায় ডুবে থেকে সংসারের এই দুঃখ ঘুচবে না। তাই বাবাকে বললাম,
বাবা, আমি বিদেশে যেতে চাই… আমাদেরও একটু ভালো থাকা দরকার।
কিন্তু যাওয়ার পথে ছিল একের পর এক কাঁটা, একের পর এক আঘাত।
আমার বাবা চার ভাইয়ের মধ্যে বড়। অথচ এই পরিবারে কখনোই মিল ছিল না।
যে গল্পটা এখনো বুকের ভেতর পাথরের মতো জমে আছে, সেটার শুরু আমার ফুফুর বিয়ে থেকে।
আমার ফুফুর বিয়ে হয়েছিল অন্য জায়গায়। জামাইয়ের একটু মানসিক সমস্যা ছিল। তখন আমার দাদী জোর করছিলেন ফুফুকে ডিভোর্স করাতে। কিন্তু বাবা বলেছিলেন,
মানুষ কি বলবে, মা? ডিভোর্স না দিলেও চলবে।
কিন্তু বাবার কথা শোনেননি দাদী। ডিভোর্স হলো।
সেই দিন থেকে বাবার প্রতি দাদীর ঘৃণা শুরু।
তারপর থেকে সংসারের প্রতিটা সমস্যার দায় বাবার ঘাড়ে।
তারপর বড় হতে হতে দেখলাম, আমার দুই চাচ্চু বিদেশ চলে গেল। তখন ভেবেছিলাম, একদিন হয়তো আমাকেও নিয়ে যাবে। কিন্তু না
যখন তারা দাদীর কাছে আমার কথা বললো, তখন দাদী সরাসরি বলে দিলেন,
রফিককে বিদেশ নিতে হবে না, নিলে তো তোমাদের থেকে উঁচু পর্যায়ে চলে যাবে।
ভাবুন একবার। নিজের দাদীর মুখে এই কথা।
তারপর এক চাচ্চু সরাসরি বলে দিলেন,
যেতে চাইলে রফিকের মায়ের বংশের মাধ্যমে যা, আমরা নিয়ে যাব না!
সেই দিন বুকটা যেন হিম হয়ে গিয়েছিল।
বাবাকে বললাম,
আমি তাদের কাছে কিছু চাই না। আপনি যেভাবেই পারেন, আমাকে বিদেশে পাঠান।
তারপর বাবার এক সম্পর্কে মামার সাথে যোগাযোগ হলো।
পাসপোর্ট করলাম, মেডিকেল করলাম, কলিং লেটার এলো, ভিসাও হয়ে গেল।
মনে হচ্ছিল, স্বপ্নটা হয়তো সত্যি হতে চলেছে।
বিদেশ যাওয়ার আগে কিছু কেনাকাটা করতে হবে। দাদীর কাছে গেলাম, বললাম,
দাদী, আমি বিদেশ যাচ্ছি। কয়েকদিন পর ফ্লাইট, কিছু টাকা দিলে মার্কেট করতে পারি।
কিন্তু দাদী সাহায্য তো করলেনই না, উল্টো আমার ফুফুর জামাইকে নিয়ে টিপ্পনী কাটলেন,
আমার মেয়ের জামাই বিদেশ যাচ্ছে, তার টাকা নেই।
কথাগুলো আজও কানে বাজে।
শেষ পর্যন্ত আমার পাশে একমাত্র দাঁড়িয়েছিল আমার নানী।
সেই নানীই টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। তার দোয়া আর পরিশ্রমের জোরে একদিন প্লেনে চড়লাম।
এখন দুই বছর হয়ে গেছে এই পরবাসে।
কঠোর পরিশ্রম করেছি, লোন শোধ করেছি।
এই সময়ের মধ্যে আমার ছোট বোনের বিয়ে দিয়েছি, ভালো ঘর দেখে।
কিন্তু নিজের জন্য?
না এখনো নিজের জন্য কিছুই করতে পারিনি।
প্রতিটা রাত কাটে বুকের ভেতর হাজারো স্বপ্ন নিয়ে।
সবচেয়ে কষ্টটা হয় তখন, যখন সেই একই আত্মীয়রা,
যারা আমার বিদেশ যাওয়ার সময় এক গ্লাস পানি পর্যন্ত দেয়নি,
আজ আমার কাছে টাকা ধার চাইতে আসে।
তখন মনে হয়,
রক্তের সম্পর্ক শুধু কাগজে লেখা থাকে, বাস্তব জীবনে তার প্রমাণ মেলে না!
আজও বেঁচে আছি শুধু মায়ের দোয়ার বরকতে,
আজও লড়াই করছি শুধু পরিবারের জন্য,
আজও ঘুম ভাঙে শুধু একটা স্বপ্ন নিয়ে
একদিন হয়তো সব ঠিক হবে।
কিন্তু তার আগ পর্যন্ত
এই ভাঙা বুক, এই পরবাসের রাত,
এই নিঃশব্দ কষ্টই আমার সঙ্গী। 💔🙂