15/06/2025
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় যে সমস্যাটার মুখোমুখি প্রতিনিয়ত হতে হয়, তা হচ্ছে "বাবার সাথে ফ্রাংকলি কথা না বলতে পারা"।
এই ফ্যামিলির বাবারা হচ্ছেন গডফাদার (ইতিবাচক অর্থে)। এনাদের আজীবন একটা শক্ত পার্সোনালিটির ক্যারেক্টার প্লে করতে দেখা যায়। এই ভাবগম্ভীর, না মচকানো স্বভাবটাই তাদের সাহায্য করে, পরিবারযুদ্ধে টিকে থাকতে।
বাচ্চার সামান্য স্কুলব্যাগ কেনার আকাঙ্ক্ষাটাও, তাদের সামনে উপস্থাপিত হয় মায়ের মাধ্যমে, ডেট ফিক্সড করে, অনেকটা হাইকোর্টের শুনানির মত করে। এবং সবচেয়ে বড় কথা, সেটারও একটা সিচুয়েশন আছে, বাবার মাথা ঠান্ডা থাকতে হবে আর কথাটা বলতে হবে খেতে বসে।
-শোনোনা, খোকন একটা নতুন ব্যাগ কেনার কথা বলছিল অনেকদিন ধরে।
-গত বছরই না ব্যাগ নিল, এক বছরেই ছিড়ে গেল? লবাবের ( শব্দটা নবাবের, কিন্তু লবাবের না বললে ভাবটা আসেনা) বাচ্চা হয়েছে?
-আর তোমার ছোট মেয়ের.... .
মা বুলি আওড়াতে থাকে, বাবার মনোযোগ মসুরের ডালে।
এটার একটা সূক্ষ্ণ স্বাভাবিক কারণ আছে। ছেলেমেয়েদের লায় দেয়া যাবে না। মাথায় উঠে যাবে। অভাব বুঝতে দিলে, জীবনে অভাব পূরণের রাস্তাটাতে হাঁটতে শিখবে।
আজীবন ধরে চলতে থাকা তৃতীয়পক্ষ দ্বারা (মা) একটি অতি স্বাভাবিক প্রস্তাব উত্থাপন, অতঃপর প্রস্তাব সংস্করণ, পুনরায় উত্থাপন, প্রত্যাখান বা যথেষ্ট পরিমার্জিত হয়ে পাশ। মূলত, টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় বিষয়টা, ১০০০ টাকার চাহিদাকে ৭০০ তে রুপান্তর করে চালানো যায় কিনা। ছেলেও একসময় চালাক হয়ে যায়, দুশো বাড়িয়ে বলে, বাবাও চালাক হয়ে যায়, তিনশো কমিয়ে দেয় 😛
তবুও মধ্যবিত্তের এই প্রেডিক্টেবল জীবনাচরণটা ছিড়ে বের হতে পারে না, আমার বাবা, তার বাবা, তার বাবা... ভার্সিটি পাশ করে বের হয়েও একটা যৌক্তিক ইচ্ছা উপস্থাপন করা হয়না, নিজের বিয়েতে পা ছুঁয়ে সালাম করতেও লজ্জ্বা লাগে, ৫ বছরের জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে নেয়া হয়না বুকে, স্যালারির প্রথম টাকাটা অকপটে দেয়া হয়না তুলে, ঈদে একটা পাঞ্জাবি এনেও স্বাচ্ছন্দ্যে প্যাকেটটা বাবার হাতে তুলে দেয়ার ক্ষমতা হয়না একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তানের।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী ভালবাসা এই পুরুষমানুষটাকে মুখ ফুটে কখনো বলা হয়না ভালবাসি। অজানা দ্বিধায় নুয়ে পড়ে চোখ। নাহোক বলা, তবুও পৃথিবীর প্রতিটা সন্তান জানে বাবা কি। হাত ধরে হাঁটতে শেখানো মানুষটা, ঘোড়া সেজে পিঠে উঠানো মানুষটা, পৃথিবীর প্রতিটা বিপদের সামনে চীনের মহাপ্রাচীর হয়ে যাওয়া মানুষটা, মাথার উপর আজীবনের অদৃশ্য ছাতা হয়ে থাকা মানুষটা আর কেউ নয়, আমাদের বাবা। তারাই খুব ভাল করে এর মর্মটা বোঝেন যাদের বাবা নেই।
সবাইকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা...,