
28/01/2025
#আমার_কাঠগোলাপ 🌸
#কলমে : #রাকিবা_আক্তার_রিনা
#পর্বঃ ১০
ফজরের আজানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে চারদিকে। এখনো বেশ অন্ধকার চারিপাশ। রাস্তার ধারের কুকুর গুলোর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
আবরার ম্যানশন এখন ঘুমন্তপুরীর ন্যায় নিস্তব্ধ। যেখানে কিছু ঘন্টা আগেই হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজে শান্তিতে বসার জো ছিলনা সেথায় এখন একটুও কোলাহল নেই।
এখনও ঘুম নেই কারো চোঁখে। ঘুম আসারও কথা নয়। কি থেকে কি হয়ে গেল! আর একটু হলেই মৃ*ত্যুর স্বাদ পেতো দুটো মানুষ । কিন্তু ভাগ্যের জোর! কথায় আছে না উপর ওয়ালা মৃ*ত্যু না দিলে কার কি করার আছে।
প্রায় ৬ ঘন্টা আগে,
পুরূ চঁন্দ্রের রাত। জ্যোৎস্নার আলোয় আলোকিত চারিপাশ।এখন প্রায় রাতের তিন ভাগের এক ভাগ শেষ হয়েছে।
--" আচ্ছা আহি এখনো আসছে না কেনো বল তো?"
কপালে থাকা বেবি হেয়ার গুলো সরিয়ে দিয়ে বলল, ইভানা।
--" বোন তো আন্টিদের রাতের খাবার বানাতে সাহায্য করছিলো দেখলাম। "
--" কি করবি বল আব্বু আর ছোট আব্বু তো বাইরের কারো হাতের বানানো খাবার খাবে না বলেছে। ক্যাটারার্স দের হাতের রান্না তো আরও চলবে না। তাই আহিকে ডেকেছে আম্মুরা। "
একটু মন খারাপ করে কথাটা বলল, ইভানা।
--" কোনো ব্যাপার না। তুই একটু দাঁড়া আমি আহিকে ডেঁকে আনি।
কথাটা বলেই নিচের যাওয়ার প্রস্তুতি নিল হিয়া।
ছাদ থেকে আহিয়াকে ডাকার জন্য নামল হিয়া। কিন্তু প্রায়
আধাঘন্টা হওয়ার পরেও কারো আসার নাম-গন্ধ না দেখে ইভানা নিজেই নিচে নামল ।
রান্নাঘরের একপাশে বসে আছে আহিয়া। ওর দেখা মিলতেই ইভানা জোরে চেঁচিয়ে উঠলো,
--" এই আহি শুন। "
আহিয়া আম্বিয়া বেগম ও হামিদা বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইভানার কাছে আসলো।
--" সরি রে! আন্টিদের হেল্প করছিলাম তাই লেট হয়ে গেল।"
আলতো হাসি দিয়ে বলল, আহিয়া।
--" আমি তো জানি তুই একটা লেট লতিফ। "
একটু হাসি দিয়ে বলল, ইভানা। আহিয়া মুখ ভেঁঙালো।
--" তোর টুইনস তা কই? তোকে ডাঁকতে এসে নিজে উধাও হয়ে গেল কোথায়?"
আবার বলল, ইভানা।
--" দেখ তোর ভাইয়ের সাথে কোথাও চিপকে আছে। "
--" না তো! ভাইয়ারা তো সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে। হিয়া তো নেই। "
কিছুটা চিন্তিত গলায় বলল, ইভানা।
--" চিন্তা করিস না তো আছে কোথাও। চল ছাদে যাই। "
--" হুম চল। "
আহিয়ার যে চিন্তা হচ্ছে না তা না। তার শরীর ব্যথায় কাতর হয়ে যাচ্ছে। ও ভাবল আজকে বেশি কাজের চাপ থাকায় এমন টা হচ্ছে। এ নিয়ে বেশি কিছু না ভেবে ইভানার সাথে উপরে চলে গেল।
***
--" আ--আ--আ"
মাত্রই ছাদে এসে পৌঁছাল আহিয়া ও ইভানা। তার মাঝেই হিয়ার গগনবিদারী আওয়াজে থমকে দাঁড়ালো ওরা। মিউজিক সিস্টেম টাও মুহূর্তে অফ হয়ে গেল। আহিয়ার পায়ের নিচের মাটি সরতে লাগলো। কি হলো তার বোনের?
আহিয়া আর এক মুহূর্ত দেরি করল না। ছুটে গেল নিচের দিকে। নিচে এসে দেখে হামিদা বেগম ও বাকি সবাই বাগানের দিকে ছুটছে। আহিয়াও তাদের অনুসরণ করে দৌঁড়ে গেল বাগানের দিকে।
বাগানের দিক টাও পর্যাপ্ত আলোক রোশনিতে সাজানো ছিল কিন্তু এখন তার ছিটে ফোটাও নেই। জোৎস্নার আলোতেও সামান্য মলিনতা এসেছে। তাই ভালোই ভাবে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।
কেউই নিজেদের সাথে টর্চলাইট বা মোবাইল নিয়ে আসেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদ্র, হিমেল সহ বাকিরা চলে আসলো। হিমেলকে বেশ চিন্তিত লাগছে।
--" এডি এদিকের লাইটের কি হলো? "
আদ্রের দিকে তাকিয়ে তার এক বন্ধু বলে উঠল।
--" আসিফ গিয়ে দেখ তো লাইটের কি হয়েছে?"
আসিফকে উদ্দেশ্যে করে বলল, আদ্র।
এদিকে ইভানা,আহিয়া,হিমেল সহ বাকি সবাই হিয়ার নাম ধরে ডাকছে। কিন্তু হিয়ার আওয়াজ মিলছে না। আহিয়ার প্রায় পাগল পাগল অবস্থা।
হঠাৎই আহিয়া কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে একটু সামনে পড়ে গেল। অনেক বড় কোনো বস্তু। ও সামান্য কিছু ভেবে উঠে পড়ল। কিন্তু ওর মনে হলো, এক হাত দিয়ে পানির স্রোতের মতো কিছু গড়িয়ে পড়ছে। ও ভাবল, ' হয়তো এখানে পানি জাতীয় কিছু ছিল। '
আহিয়া সামনের দিকে এগিয়ে গেল। বাগানের সমস্ত লাইট জ্বলজ্বল করছে আগের মতো।
--" র-র-ক্ত"
আহিয়া নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে জোরে চেঁচিয়ে উঠলো।
ইভানা ওর কিছুটা পাশে থাকায় তারাতাড়ি ছুটে আসে আহিয়ার কাছে।
--" কি হয়েছে আহি। কিসের রক্ত?"
ইভানা আহিয়াকে আলতো করে আগলে ধরে কথাটা বলল।
আহিয়া কিছু না বলে ইভানাকে ওর হাত দেখালো।
আহিয়ার হাতে এতো রক্ত দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল ইভানা। ইভানার চিৎকারের আওয়াজে সবাই তাদের কাছে আসলো।
--" কি হয়েছে ইভাপি? চিৎকার করলে কেনো?"
ইভানার পাশে দাঁড়িয়ে স্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করল, আয়ান।
ইভানা আহিয়ার হাত টা সামনের দিকে উঠিয়ে রক্ত গড়ানো স্থান টা দেখালো।
অজানা আতঙ্ক সকলের মনে বাসা বাঁধলো। আহিয়ার সমস্ত শরীর কাঁপছে। বোনকে হারানোর আতঙ্ক বেঁধেছে মনে।
--" হুর তুমি এই রক্ত কোথায় পেলে?"
কম্পিত কন্ঠে বলল, আদ্র।
আহিয়া যেন নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আবারও মুখে কিছু না বলে বাগানের দক্ষিণ দিক টায় ইশারা করল। হিমেল এক সেকেন্ড সময় নস্ট না করে দৌড়ে গেল। তার পিছনে সবাই। আরু আহিয়াকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। সাইফ, আসিফ ও আদ্রের কিছু বন্ধু পার্কিং এরিয়ার দিকে হিয়া কে খুঁজতে গেছে। আফিয়া খান কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন আম্বিয়া বেগম সহ অনেকে।
বাগানের এই দিক টা এখনো বেশ অন্ধকার। চারদিকে লাইটের পর্যাপ্ত আলো থাকলেও এখানে অনেকটা কম। আদ্র টর্চ লাইটের আলো ফেলল। সামনে যা দেখল তা ভীতিকর। তাদের বাড়ির বিশ্বস্ত কর্মচারী তাহের আলী রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানে পড়ে আছে। রাজ্জাক আবরার ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে। হিমেল এসবে তোয়াক্কা না করে ছুটে গেল আরেক দিকে।
প্রায় ২০ মিনিট পর,
--" পু-চু। "
সাইফের চিৎকারে সবাই ছুটে গেল পার্কিং এরিয়ার দিকে। সামনের দৃশ্য দেখে সবার পায়ের নিচের মাটি সরে যেতে লাগল। সাইফের কোলে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় নিথর হয়ে পড়ে আছে হিয়া। সমস্ত শরীরে কামড় ও আঁচড়ের অনেক দাগ। বা হাতের বাহুর নিচে অনেক বড় কাটার দাগ। শরীরের শাড়ি টার অবস্থা বেহাল। নাক মুখ দিয়ে অনবরত রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
আহিয়া নিজেকে শক্ত রাখতে পারলো না। আরুকে ধাক্কা দিয়ে হিয়ার দিকে এগিয়ে গেল।
--" বো-ন"
বলে চিৎকার দিয়ে উঠল।
***
বর্তমান_
ফজররের নামাজ শেষ করে আবার হিয়ার কেবিনের দিকে পা বাড়ালো হিমেল ও আদ্র। দু'জনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে অনেক ক্লান্ত তারা। আফিয়া খান ও আরু কেবিনের সোফায় বসে চোখের পানি ফেলছেন। আজাদ খান ও সাইফ তাদের সামলানোর চেষ্টা করছে। হিয়ার জ্ঞান এখানো ফেরেনি। বেড এর পাশে থাকা একটা চেয়ারে পাথরের মতো বসে আছে আহিয়া। হিয়ার ডান হাত তার দু'হাতের মাঝে। অনবরত নিরবে চোখের নোনা পানি বিসর্জন দিচ্ছে বোনের অবস্থায়।
--" হুর পানি টা খাও। "
এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, আদ্র।
--" আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।"
দুর্বল গলায় বলল, আহিয়া।
--" হুর খাও বলছি। "
আহিয়া আর কথা না বাড়িয়ে পানির গ্লাস টা নিয়ে একবারে সমস্ত পানি খেয়ে নিয়ে আদ্রকে গ্লাস টা ফিরিয়ে দিল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায় ও । আদ্র পানির সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে এনেছিল। আহিয়া ও হিয়া জমজ হওয়ায় আহিয়ার শরীরের যে বেশ ব্যথা তা সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে। কিন্তু আহিয়া যে এখন কিছু খাবে না তা সবাই বেশ ভালো জানে। তাই আদ্র বুদ্ধি করে পানির সাথে ঘুমের ওষুধ টা মিশিয়ে এনেছিল। সাইফ আলতো করে আহিয়াকে পাশের বেডে শুইয়ে দিয়ে একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল।
***
সকাল ১১ টা
#চলবে?
ভুল-ভ্রান্তি গুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী পর্ব পেতে কাঠগোলাপ- 𝑹𝒂𝒌𝒊𝒃𝒂 𝑹𝒊𝒏𝒂 পেইজটি ফলো করুন। রিয়েক্ট ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।❤️🌼
ধন্যবাদ। 💛🌸