09/08/2025
দিনাজপুর আজ উত্তরবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। এই শহর শুধুমাত্র ঐতিহ্য নয়, অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবেও দেশের মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দিনাজপুর এখনও পৌরসভার সীমাবদ্ধতার মধ্যে বন্দি। দেশের অনেক ছোট শহর, যেগুলোর আকার ও গুরুত্ব দিনাজপুরের তুলনায় অনেক কম—তারা সিটি কর্পোরেশনের সুবিধা ভোগ করছে। কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো শহরগুলো সিটি কর্পোরেশন হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন লাভ করেছে। অথচ দিনাজপুর, যেখানে জনসংখ্যা বেশি, অর্থনৈতিক প্রবাহ শক্তিশালী, সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাসপাতাল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি—সেখানকার নাগরিকরা এখনও উন্নয়নের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশন হলে কর (হোল্ডিং ট্যাক্স, ভ্যাট) অবশ্যই পৌরসভার তুলনায় কিছুটা বেশি দিতে হবে। যদি পৌরসভায় ১০ টাকা ট্যাক্স লাগে, তাহলে সিটি কর্পোরেশনে গড়ে ১৫-১৮ টাকা দিতে হতে পারে। কিন্তু এই বাড়তি টাকা বোঝা নয়—এটা আমাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরাসরি বিনিয়োগ। এই অর্থ দিয়ে শহরের জন্য যেসব উন্নয়ন সম্ভব, তা পৌরসভার পক্ষে কল্পনাও করা যায় না।
প্রথমত, সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। শহরের রাস্তাঘাট প্রশস্ত ও আন্তর্জাতিক মানের হবে, বহু প্রতীক্ষিত দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক ৪ লেন , দিনাজপুর-দশমাইল মহাসড়ক ৪ লেন এর কাজ বাস্তবায়ন সহজ হবে। যানজট কমাতে নতুন বাইপাস সড়ক, ওভারপাস, আন্ডারপাস তৈরি হবে। ফুটপাত হবে প্রশস্ত ও দখলমুক্ত, যেখানে পথচারীরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক পর্যন্ত উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেম হবে, যাতে বর্ষায় জলাবদ্ধতা অতীত হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, সিটি কর্পোরেশন হলে বিদ্যমান নাগরিক সেবাগুলো গুণগত মানে বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। প্রতিটি প্রধান সড়কে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট বসানো হবে, যাতে রাতের শহর নিরাপদ ও আলোকিত থাকে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু হবে, যার ফলে শহর হবে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর। নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চলবে, যা ডেঙ্গু ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাবে।
তৃতীয়ত, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আধুনিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মাতৃসদন, কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি হবে। স্কুল, কলেজ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উন্নত হবে, যাতে যুবসমাজ আধুনিক শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ পায়।
চতুর্থত, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সিটি কর্পোরেশন বাজেট থেকে নতুন শিল্পাঞ্চল, ট্রেড সেন্টার, বাজার ও বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে। বিনিয়োগকারীরা আসবে, নতুন ব্যবসা শুরু হবে, হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
পঞ্চমত, শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হবে শক্তিশালী। পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা, আধুনিক ফায়ার সার্ভিস, জরুরি সেবা কেন্দ্র তৈরি হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, সিটি কর্পোরেশন হলে সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ অনেক বাড়বে। পৌরসভা যেখানে বছরে সীমিত বাজেট পায়, সিটি কর্পোরেশন সেখানে বহুগুণ বেশি বাজেট পায়—যা সরাসরি নাগরিক সেবায় ব্যবহার হয়।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই সামান্য কিছু বাড়তি কর দিয়ে যদি আমরা উন্নত রাস্তাঘাট, 4 লেন মহাসড়ক, ফুটপাত, ড্রেনেজ সিস্টেম, স্ট্রিট লাইট, পরিচ্ছন্ন শহর, আধুনিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কর্মসংস্থান, নিরাপদ নগরী পাই—তাহলে কি সেটা গ্রহণযোগ্য নয়? এটা শুধুমাত্র গ্রহণযোগ্য নয়, বরং আমাদের প্রাপ্য অধিকার।
দিনাজপুরকে আর পিছিয়ে রাখা যাবে না। সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা এখন সময়ের দাবি। এই দাবিকে ঘরে-বাইরে, রাস্তায়-প্রতিবাদে, সভা-সমাবেশে তুলে ধরতে হবে। কারণ উন্নত শহর কেবল স্বপ্ন নয়—এটা আমাদের অধিকার, আর সেই অধিকার আদায় করতে হলে আজই একসাথে আওয়াজ তুলতে হবে ✅