03/11/2025
ইকবালের মা মারা যাওয়ার পর-বাপ আবার বিয়ে করেন এবং ইকবালকে মাত্র ৮ ডলার বা ৮০০ রুপিতে একটা কার্পেট বয়ন কারখানায় বিক্রি করে দেন। ৮ ডলারে বিক্রি হয়ে যাওয়া ইকবালের বয়স তখন মাত্র ৮ বছর। কারখানায় শুরু হয় ইকবালের অমানবিক পরিশ্রম। প্রতি সপ্তাহে কাজ করতে হতো ১২০ ঘন্টা বা দিনে ১৭ ঘন্টারও বেশী। পালিয়ে যেন যেতে না পারে সেজন্য পায়ে লম্বা শিকল দিয়ে আটকে রাখা হতো ইকবাল সহ তার সমবয়সী অন্যান্য শিশুদের।
ইকবালের বয়স যখন দশ, তখন সে কার্পেট বয়ন নামক এই জেলখানা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু তার দূর্ভাগ্য পালিয়ে যাওয়ার তিন দিনের মাথায় সে আবার ধরা পড়ে এবং পুনরায় বিক্রিত হয়। এবার তার মূল্য আগের চেয়ে একটু বেড়ে হয় দশ ডলার। সপ্তাহে কাজও বাড়ে, হয় ১৪০ ঘন্টা! কিছুদিন পর ইকবাল আবার পালায় ‘স্লাম ডগ মিলিওনীয়ার’ সিনেমার মতো-মানব পুরিষের ভিতর দিয়ে।
ইকবাল এবার একটা এতিম খানায় আশ্রয় পায় এবং ইয়াতীম খানার তত্তাবধায়ক হাফেজ ইব্রাহীম তাকে স্থানীয় এক স্কুলে ভর্তি করে দেন। অসাধারণ মেধাবী ইকবাল পাঁচ বছরের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষা মাত্র দুই বছরেই শেষ করে।
স্কুলে পড়াকালীন সময় ইকবাল Bonded Labour Liberation Front (BLLF) এ যোগ দেয়। যাদের কাজ হলো বিভিন্ন কারখানা থেকে শিশুদের মুক্ত করা। এই সংগঠনের মাধ্যমে ইকবাল প্রায় ৩০০০ শিশুকে বিভিন্ন কারখানাকে মুক্তি বা পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। ১৯৯৪ সালে বোস্টনে ইকবালকে Reebok Human Rights Award-এ ভূষিত করে।
যেখানে ইকবাল বলে- আমেরিকা থেকে আব্রাহাম লিংকন যেমন দাসত্বকে বিলুপ্ত করেছেন, আমারও কাজ হলো পুরো পৃথিবী থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন শিশুদের মুক্তির আন্দোলন করে সব শিশুদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। কোনো শিশু থাকবে স্কুলে আর কোনো শিশু থাকবে কারখানায় সেটা হবে না। প্রতি সপ্তাহে ১৪০ ঘন্টা কাজের যন্ত্রণা। যে করে, সে-ই শুধু বুঝে। অন্য কেউ এই কষ্ট উপলব্ধি করতে পারবে না।
১৬ বছরের সুইডিশ শিশু Greta Thunberg যেমন School strike for climate ম্যুভমেন্টের মাধ্যমে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছে। ইকবালও তেমনি শিশু দাস মুক্তির আন্দোলন সূচনা করে। কিন্তু ইকবালের সেই স্বপ্ন সত্যি হয়নি। শিশু দাসদের মুক্তি আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই বোস্টন থেকে লাহোরে ফিরে আসার কিছুদিন পরই কার্পেট মাফিয়ারা ইকবালকে গু*লি করে মেরে ফেলে। তখন তার বয়স মাত্র বারো বছর।
শিশু ইকবালের এই লিগেসিকে চির স্মরণীয় করে রাখতে United States Labour department ২০০৯ সালে ‘The Iqbal Masih Award’ এর সূচনা করে। মাত্র বারো বছরের অল্প জীবনে প্রায় ৩০০০ শিশু দাসকে মুক্তির ব্যবস্থা করে, গু*লি খেয়ে জীবন দেয়া এসব হিরোদের কেউ চিনে না। এক মিনিটের নাচ-গান, একটা গোল, একটা ছক্কা ভাইরাল হয়। কারণ বিনোদনই আন্তর্জাতিক খাবার। এই খাবারের মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলারের মার্কেট। তাই মানুষ চিনে শুধু খেলার হিরো আর সিনেমার হিরোদের।
১৯৯৫ সালে গু*লি খেয়ে মা*রা যাওয়া ইকবাল বেঁচে থাকলে প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়স হতো। আর এই চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে হয়তো বা ৪০ লক্ষ শিশু বাধ্য শিশু শ্রমের কারাগার থেকে মুক্তি পেতো।
Hats off to you, The Little Hero…
কৃতজ্ঞতা - আরিফ মাহমুদ