04/03/2025
উসমানী খেলাফতের বিলুপ্তি: আজকের এই দিন ইসলামী বিশ্বের জন্য এক মর্মান্তিক শোকের দিন
৩ মার্চ ১৯২৪, ইসলামী ইতিহাসের এক কলঙ্কময় ও বেদনাদায়ক তারিখ। এই দিনে মানবরচিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ৬২৪ বছর ধরে টিকে থাকা ইসলামী খিলাফতের শেষ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ— উসমানী খেলাফত —কে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সম্মান ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই খিলাফতের পতন কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়; এটি ছিল ঈমানদার হৃদয়ের উপর আঘাত, উম্মাহর বিভক্তি ও দুনিয়া জুড়ে ইসলামী শাসনের সুবিশাল ছায়া উধাও হয়ে যাওয়ার শোকগাথা।
খিলাফত: ইসলামী শরিয়তের অঙ্গীকার
খিলাফত হল আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহর পতাকাবাহী নেতৃত্ব, এবং মুসলিম উম্মাহর কর্তৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু। নবীজি সাঃ এরশাদ করেছেন, “খিলাফত আমার উম্মতের মধ্যে ৩০ বছর থাকবে, এরপর রাজতন্ত্র আসবে।” (তিরমিজি)। সাহাবায়ে কেরামের পর উসমানী খেলাফত ছিল সেই ধারার এক অনন্য ধারক—যেখানে কুরআন-সুন্নাহর আইন প্রজ্বলিত ছিল, জিহাদি স্পিরিট জীবন্ত ছিল, এবং মুসলিম ভূমির সীমানা তিন মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত ছিল। কিন্তু ১৯২৪ সালে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক নামক এক ধর্মনিরপেক্ষ নেতার হাত ধরে এই মহান খিলাফত ধ্বংসের খাতায় নাম লেখায়। আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মানবরচিত সংবিধান, শরিয়তের পরিবর্তে ধর্মহীনতা—এভাবেই তুরস্কে চাপিয়ে দেওয়া হয় এক নব্য ব্যবস্থা।
খিলাফতের পতনে উম্মাহর বেদনা
খিলাফতের পতন শুধু তুরস্কের ক্ষতি করেনি; সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে করে তোলে অনাথ। খিলাফত ছিল মুসলিমদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের সেতু, তাদের সম্মানের দুর্গ। এর অবসানের পর উম্মাহ পরিণত হয় ভাগাড়ে পরিণত অঞ্চলসমূহে, যেখানে আজও চলছে সংঘাত, হানাহানি ও পাশ্চাত্যের দাসত্ব। রাসূলুল্লাহ সাঃ সতর্ক করেছিলেন, “যখন মুসলিমরা তাদের নেতাকে হারাবে, তখন তাদের মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু হবে।” (বুখারি)। আজ সেই হাদিসের বাস্তবতা আমরা দেখছি—ইসলামী ভূমি বিভক্ত, শরিয়ত বিস্মৃত, এবং উম্মাহ নেতৃত্বশূন্য।
আমাদের আশার আলো: খিলাফতের পুনরুত্থান
তবে হতাশ হব না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “আবার আসবে খিলাফত রাসূলের নীতি অনুযায়ী।” (মুসনাদে আহমাদ)। উসমানী খেলাফতের পতন আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটেছে, কিন্তু তাঁর ওয়াদা অটল—ইনশাআল্লাহ, আবার আগমন হবে সেই স্বর্ণযুগের। আমাদের দায়িত্ব হলো এই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, ইসলামী জ্ঞান ও তাকওয়া অর্জন করা, এবং খিলাফতের পুনরুদ্ধারে কাজ করা।
ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে আবার খিলাফতের মহিমা দেখাও। উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করো, আমাদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে দাও। আমিন।