03/10/2025
রেগে গেলে বা মন খারাপ হলেই আম্মুর ডায়লগ ছিল—
“আজ যদি আমি একটা চাকরি করতাম, তোমাদের এই সংসারটা ফেলে দিয়ে নিজের মতো চলে যেতাম।”
আজকাল আপনারা আমার রান্নার ভিডিও দেখে খুব খুশি হন। অথচ বিয়ের আগে আমি রান্নাঘরে ১৫ মিনিটও টিকে থাকতে পারতাম না।
ভাত রাঁধতে পারি কি না, রুটি গোল হয় কি না—এসব নিয়ে আমার মায়ের এক ফোঁটা মাথাব্যথা ছিল না।
তার প্রথম মাথাব্যথা ছিল—
মেয়েটা যেন নিজের পায়ে দাঁড়ায়, নিজের আয় করে, নিজের শখ-চাহিদার জন্য কাউকে মুখাপেক্ষী না হয়।
আম্মু সবসময় বলতেন—
“এমন চাকরি করবি যেন রান্নার জন্য আলাদা লোক থাকে, ঘরের কাজের জন্য আলাদা লোক থাকে। তুই খালি নিজের চেয়ারে বসে রাজকন্যার মতো খাবি। স্বামীর কাছে কিছু চাইতে হবে না।”
এখন বুঝি—এই জেদটা আম্মুর নিজের ট্রমা থেকে আসত।
মেয়েদের বলা হয়—“এটা তোমার সংসার, স্বামী তোমার, সন্তান তোমার—কাজ করবে না তো কে করবে?”
কিন্তু সেই সংসারে মেয়েদের ভ্যালু দেওয়া হয় শূন্যেরও নিচে।
শখের কিছু চাইলে একশো জেরা পেরোতে হয়। এত প্রশ্ন পার হয়ে কিছু পেলে সেই শখও আর শখ থাকে না।
প্রশ্ন হলো—
যে সংসারটা মেয়েরও সমান, সেখানে মেয়েটার মতামত কেন ‘ইনভ্যালিড’ হয়ে যায়, শুধু সে টাকা রোজগার করে না বলে?
ছেলেরা যে ঘরে ফিরে গরম ভাত, পরিপাটি কাপড়, ফ্রেশ বিছানা পায়—এসব ছাড়া কি শুধু টাকা দিয়ে জীবন চলে?
তাহলে যদি টাকা-ই সম্মানের মাপকাঠি হয়, মেয়েরা কেন অসম্মান নিয়ে সংসার করবে?
তারা নিজেরাই আয় করবে, নিজের টাকায় নিজের সম্মান বজায় রাখবে।
আমার সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লাগে যখন কোনো ছেলে গর্ব করে বলে—
“আমার মা/খালা এসব নিয়ে কখনো ঝামেলা করেনি।”
কিন্তু চুপ করে কষ্ট সহ্য করা মানেই কষ্টটা ছিল না—এমনটা কি সত্যি?
আর এখনকার কনসেপ্ট তো আরও মজার—
“আমরা ঘরে থাকব, রাজরানীর মতো থাকব, বাইরে গিয়ে কষ্ট করে কাজ করব কেন?”
প্রিয় রানীরা, বাইরে না গিয়ে বসে থাকতে চাইলে কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু মনে রেখো—যে কষ্টটা এখন এড়িয়ে যাচ্ছ, তার দ্বিগুণ কষ্ট একদিন ঘরে হেঁটে ঢুকবে।
২৪ ঘণ্টা খেটে খুটে শুনতে হবে—“থাকো তো ঘরে খালি, কাজের কাজই বা কী করো?”
ভাবতেই কেমন লাগে তাই না? 🙂