21/08/2025
জোহরের সময় বাইরে থাকাতে অন্য একটা মসজিদে নামাজ পড়েছি। ফেরার সময় ভাবলাম অফিসে না ঢুকে অফিসে পাশের মসজিদে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবো।
তখন ঘড়িতে প্রায় সোয়া দুইটা। মসজিদে ঢোকার সময় দেখলাম একটা সাদা রংয়ের ল্যান্ড ক্রুজার V8 মডেলের একটা গাড়ি মসজিদের সামনে থামলো।
পঞ্চাশোর্ধ বেশ হ্যান্ডসাম এক ভদ্রলোককে দুই জন ধরে গাড়ি থেকে নামালো।
ভদ্রলোকের কোমড়ের দিকে ব্যান্ডেজ। সম্ভবত ডাক্তারের কাছ থেকে আসছেন।
যে দুই জন সহকারী ছিল তারা একজন বললো, স্যার আপনার সার্জারি অল্প কয়েকদিন আগে হয়েছে। ডাক্তার মাত্রই বলল, আরো রেস্টে থাকতে। নামাজটা বাসায় যেয়ে পড়লে হত না?
ভদ্রলোক খুব শীতল গলায় বললো, না হত না।
তোমাকে যতটুকু বলা হচ্ছে অতটুকু কর।
আমাকে মসজিদ পর্যন্ত দিয়ে আসো।
একটা ভালো চেয়ার বাছাই কর, যাতে পড়ে না যাই।
দুই জন এসিস্ট্যান্ট মিলে ধরে ধরে তাকে মসজিদে ঢুকালো।
একটা কোনায় নিয়ে চেয়ার সেট করে দিল।
আমি তার থেকে একটু দূরেই টান টান হয়ে শুয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
ভদ্রলোক বসে নামাজ শুরু করলেন।
খুব ঠাণ্ডা ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়ছেন।
যেন কোন তাড়া নেই, কোন অস্থিরতা নেই, চারপাশে কি হচ্ছে, না হচ্ছে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
উনার চোখের দিকে তাকালাম। একদম সিজদার দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিতে কোন নড়চড় নেই। সাধারণত এত ধীরস্থিরভাবে আমি কাউকে নামাজ পড়তে দেখি না।
উনার দিকে কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার চোখ লেগে আসলো। সম্ভবত ঘুমায় গেছিলাম। ঘুম ভাংগলো হেচকির শব্দ শুনে।
দেখি ভদ্রলোক হাত তুলে অঝোরে কাঁদছেন। কিছু একটা বিড় বিড় করছেন।
একটু কাছে যেয়ে শোনার চেস্টা করলাম উনি কি বলছেন।
খুব ভালো করে খেয়াল করার পর শুনলাম ভদ্রলোক বলতেছেন, ইয়া আল্লাহ তুমি আমার উপর এতটা অসন্তুষ্ট হয়ে গেলা যে তোমাকে প্রাণভরে সিজদা করার অধিকার কেড়ে নিলা?
মালিক, আমাকে কি অসুখ দিলা যে, আমি মসজিদে আসতে পারি না, মাটিতে মাথা ঠেকায়ে প্রাণ ভরে তোমাকে সিজদা দিতে পারি না।
এই চেয়ারের নামাজে আমার প্রাণ ভরে না মালিক। মালিক তুমি আমাকে এতটা সুস্থ করে দাও যাতে করে, আমি হেঁটেই মসজিদে আসতে পারি, প্রানটা ভরে যেন তোমার দাসত্ব করতে পারি।
তুমি আমার উপর কোন কারনে অখুশী থাকলে আমাকে মাফ করে দাও কিন্তু তারপরও তোমার ঘরে আসার, তোমাকে সিজদা করার অধিকার কেড়ে নিও না।
উনি কাঁদছেন আর কথাগুলো বলেই যাচ্ছেন।
উনার দুইজন এসিস্ট্যান্ট টের পেয়ে তাড়াতাড়ি উনার কাছে ছুটে আসলেন।
বললেন স্যার, আপনাকে স্ট্রেস নিতে নিষেধ করা হয়েছে। স্যার, কাইন্ডলি চলেন।
আসতে আসতে ধরে উনাকে নিয়ে গেল।
আমি ভাবলাম আমার নিজের ইমানের কথা। আমি কি এই ভদ্রলোকের মত এই প্যাশন নিয়ে, এত দরদ নিয়ে রবের ইবাদত করি, এত ভালোবাসা নিয়ে সিজদা দেই? আমার দোয়াতে কি এত মায়া থাকে?
যারা সিজদার সুযোগ থেকে বঞ্চিত তারা নিজেদের নিয়ে ভাবি।
আমার রব কি আমার প্রতি এতটাই অসন্তুষ্ট যে, আমার পা মসজিদ পর্যন্ত যাচ্ছে না, আমার মাথা রবের সমীপে অবনত হচ্ছে না?
যদি আমার মাথা সিজদা পর্যন্ত না যেয়ে থাকে তাহলে নিশ্চিতভাবেই এটা আমার জন্য চিন্তার বিষয়।
ভাইয়েরা/বোনেরা সময় থাকতে থাকতে রবের কাছে ফিরে আসি।
সে সময় আসার আগে সতর্ক হয়ে যাই যে সময়ে চাইলেও সারা দুনিয়ার সব কিছুর বিনিময়ে একটা সিজদা দেয়া যাবে না।
> সংগৃহিত