
14/04/2025
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল যুদ্ধ একটি জটিল, দীর্ঘদিনের সংঘাত, যার শিকড় প্রায় এক শতাব্দী পুরনো। এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে ইতিহাস, ধর্ম, ভূ-রাজনীতি এবং জাতিগত পরিচয়ের বিষয়গুলো। নিচে বিস্তারিতভাবে বিষয়টি তুলে ধরা হলো:
সংঘাতের সূচনা ও ইতিহাস:
১. ঔপনিবেশিক যুগ ও ইহুদি অভিবাসন:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশরা প্যালেস্টাইন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা-তে ব্রিটেন ইহুদি জাতির জন্য “জাতীয় আবাসভূমি” প্রতিষ্ঠার কথা জানায়।
১৯২০-১৯৪০ সালের মধ্যে ইউরোপ থেকে প্রচুর ইহুদি প্যালেস্টাইনে অভিবাসন করে, যা স্থানীয় আরবদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে।
২. ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম:
ব্রিটিশরা ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইন ছেড়ে চলে যায়।
১৪ মে ১৯৪৮: ইহুদিরা “ইসরায়েল” নামের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে।
পরদিনই আরব দেশগুলো (মিশর, সিরিয়া, জর্ডান, ইরাক) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে — প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ।
ফলাফল: ইসরায়েল অনেক বেশি ভূমি অধিকার করে নেয়, এবং প্রায় ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে যায় (“নাকবা” বলা হয়)।
মূল দ্বন্দ্বের বিষয়:
১. ভূমির মালিকানা:
ফিলিস্তিনিরা চায় পশ্চিম তীর (West Bank), গাজা উপত্যকা (Gaza Strip), ও পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।
ইসরায়েল পশ্চিম তীরের অনেক অংশে বসতি গড়ে তুলেছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ বিবেচিত হয়।
২. জেরুজালেম:
উভয় পক্ষই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে।
ইসরায়েল পুরো জেরুজালেমকে তাদের “অবিভাজ্য রাজধানী” বলে ঘোষণা দিয়েছে।
৩. উদ্বাস্তু সমস্যা:
লাখো ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে।
তারা তাদের পূর্বপুরুষদের বাড়িতে ফেরার অধিকার দাবি করে।
বড় বড় যুদ্ধ ও সংঘর্ষ:
১. ১৯৬7 সালের ছয় দিনের যুদ্ধ:
ইসরায়েল মিশর, সিরিয়া ও জর্ডানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পশ্চিম তীর, গাজা, গোলান মালভূমি, সিনাই উপত্যকা দখল করে।
২. ইন্তিফাদা (Intifada):
ফিলিস্তিনিদের দু’টি বড় গণবিদ্রোহ হয়েছে — প্রথমটি ১৯৮৭-১৯৯৩ ও দ্বিতীয়টি ২০০০-২০০৫।
৩. হামাস ও গাজা সংঘর্ষ:
২০০৭ সালে হামাস গাজা দখল করে।
এরপর থেকে গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে বহুবার রকেট হামলা ও বোমাবর্ষণ হয়েছে (২০০৮, ২০১2, ২০১৪, ২০২১, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে)।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি (২০২৩-২০২৫):
৭ অক্টোবর ২০২৩: হামাস ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা চালায়, প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়।
এর পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়, যাতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়, বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
যুদ্ধ চলতে থাকে মাসের পর মাস, অনেকবার যুদ্ধবিরতির চেষ্টা হলেও স্থায়ী শান্তি হয়নি।
মানবিক সংকট:
গাজায় পানীয় জল, খাবার, ওষুধের সংকট চরমে।
হাজার হাজার শিশু, নারী ও নিরীহ নাগরিক আহত বা নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন সংস্থা এই যুদ্ধকে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সমাধানের চেষ্টা:
বহুবার শান্তি আলোচনা হয়েছে — যেমন অসলো চুক্তি (১৯৯৩), কিন্তু স্থায়ী সমাধান আসেনি।
দুটি রাষ্ট্র (Two-State Solution) গঠনের কথা বলা হয়, কিন্তু ইসরায়েলি বসতি ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তা থেমে আছে।