ইসলামের সহীহ আক্বীদা-সালাফী মানহাজ

  • Home
  • Bangladesh
  • Feni
  • ইসলামের সহীহ আক্বীদা-সালাফী মানহাজ

ইসলামের সহীহ আক্বীদা-সালাফী মানহাজ আল্লাহর দ্বীন সঠিকভাবে প্রচার করাই হলো এ পেইজের উদ্দেশ্য

15/06/2025
শেষ জামানা এবং সে সময় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অতুলনীয় মর্যাদা প্রশ্ন: আমরা কি শেষ জামানায় আছি? আমরা কি এখন একটা সুন্নাত পাল...
31/07/2024

শেষ জামানা এবং সে সময় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অতুলনীয় মর্যাদা

প্রশ্ন: আমরা কি শেষ জামানায় আছি? আমরা কি এখন একটা সুন্নাত পালন করলে ৫০ জন সাহাবির সমপরিমাণ সাওয়াব পাব?
উত্তর:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন মানেই শেষ জামানা। তার মানে এর পরে কোন নবী রাসুল আসবে না বা কোন আসমানি গ্রন্থ নাজিল হবে না এবং এরপরে কেয়ামত সংঘটিত হবে। সুতরাং অবশ্যই আমরা শেষ জমানায় রয়েছি।

কিন্তু কখন কিয়ামত সংগঠিত হবে আমরা কেউ জানি না। এর নিশ্চিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
{ يَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ}
"তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (বলে) ‘তা কখন ঘটবে? বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার রবেরই নিকট। শুধু তিনিই যথাসময়ে সেটার প্রকাশ ঘটাবেন।" [Surah Al-A`râf: 187]

এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত হাদিসে জিবরিলও উল্লেখযোগ্য।

🟢 শেষ জামানায় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অপরিসীম মর্যাদা:

নিঃসন্দেহে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা তথা তাঁর নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা, ফরজ ও ওয়াজিবগুলো সঠিকভাবে পালনের পাশাপাশি, সুন্নত ও নফল ইবাদতগুলো যথাসম্ভব সম্পাদন করা এবং হারাম ও বিদাআতি আচার-বিশ্বাস থেকে দূরে থাকা।‌ সেই সাথে তা প্রচার-প্রসার করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হাদিসে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

▪️যেমন:

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الإِسْلامَ بَدَا غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ قِيلَ : وَمَنِ الْغُرَبَاءُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ : الَّذِينَ يُصْلِحُونَ إِذَا فَسَدَ النَّاسُ
সাহল বিন সা’দ সায়েদী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "অল্পসংখ্যক মানুষ সহকারে যেভাবে ইসলামের সূচনা হয়েছে ঠিক সেভাবে অচিরেই অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে তা ফিরে-যেমন শুরুতে হয়েছিল।

সুতরাং শুভ সংবাদ (দুনিয়ায় সফলতা ও আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ ও জান্নাতে প্রবেশ) ঐ অল্প সংখ্যক লোকদের জন্য।’’
জিজ্ঞাসা করা হল, এই সুসংবাদ প্রাপ্ত অল্প সংখ্যক লোক কারা হে আল্লাহর রসূল?
তিনি বললেন, যারা সংস্কার ও সংশোধনী মূলক কাজ করে যখন মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে বা মানুষ খারাপ হয়ে যায়।"
[আহমাদ ১৬৬৯০, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৫৫৪, আওসাত্ব ৩০৫৬-সহিহ]

▪️এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদিস হল, আবু সা’লাবাহ খুশানী কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيَّامَ الصَّبْرِ الصَّبْرُ فِيهِ مِثْلُ قَبْضٍ عَلَى الْجَمْرِ لِلْعَامِلِ فِيهِمْ مِثْلُ أَجْرِ خَمْسِينَ رَجُلاً يَعْمَلُونَ مِثْلَ عَمَلِهِ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْهُمْ قَالَ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْكُمْ
“তোমাদের পরবর্তীতে আছে ধৈর্যের যুগ। সে (যুগে) ধৈর্যশীল হবে মুষ্টিতে অঙ্গার ধারণকারীর মতো। সে যুগের আমলকারীর হবে পঞ্চাশ জন পুরুষের সমান সওয়াব।
জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসূল! পঞ্চাশ জন পুরুষ আমাদের মধ্য হতে, নাকি তাদের মধ্য হতে?
তিনি বললেন, "তোমাদের মধ্য হতে।”
[আবু দাউদ ৪৩৪৩, তিরমিযী ৩০৫৮, ইবনে মাজাহ ৪০১৪, ত্বাবারানী ১৮০৩৩, সহীহুল জামে’ ২২৩৪]

🚫 "উম্মতের বিশৃংখলার সময় সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার মর্যাদা ১০০ শহিদের সমান" সংক্রান্ত হাদিসটি সহিহ নয়:
এ সংক্রান্ত হাদিসটি আমাদের মাঝে বহুল প্রচলিত। বক্তাদের মুখেও আমরা তা অহরহ শুনতে পাই। কিন্তু‌ সম্মানিত মুহাদ্দেসিনের দৃষ্টিতে সনদের বিচারে উক্ত হাদিসটি সহীহ নয়।
নিম্নে উক্ত হাদিস এবং তৎপ্রসঙ্গে মুহাদ্দিসিনে কেরামের গবেষণালব্ধ সনদ বিশ্লেষণ পেশ করা হল:
من تمسك بسنتي عند فساد أمتي له أجر مائة شهيد
“যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিশৃঙ্খলার সময় আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে তার জন্য রয়েছে একশ শহিদের সমপরিমাণ সওয়াব।”
[হাদিসটি যঈফ (দুর্বল)। দ্রষ্টব্য: সিলসিলা যইফা, হা/৩২৭]

সনদ বিশ্লেষণ:

عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال :
( من تمسك بسنتي عند فساد أمتي فله أجر مائة شهيد )
أخرجه ابن عدي في "الكامل" (2/327) وسنده ضعيف جدا ، فيه الحسن بن قتيبة : متروك الحديث ، انظر ترجمته في "لسان الميزان" (2/246) ، وضعفه الألباني في "السلسلة الضعيفة" (326)

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال :
( المتمسك بسنتي عند فساد أمتي له أجر شهيد )
أخرجه الطبراني في "الأوسط" (2/31) وعنه أبو نعيم في "حلية الأولياء" (8/200)
وفي سنده علتان :
1- تفرد عبد المجيد بن عبد العزيز بن أبي رواد ، ومثله لا يحتمل تفرده .
2- جهالة محمد بن صالح العذري : قال الهيثمي في "مجمع الزوائد" (1/172) : لم أر من ترجمه .
ولذلك ضعفه الشيخ الألباني رحمه الله في "السلسلة الضعيفة" (327) .
পরিশেষে আমাদের কর্তব্য, চতুর্মুখী ফিতনা-ফাসাদের সয়লাবের মধ্যেও আল্লাহর দ্বীনকে শক্তভাবে ধারণ করা, চারদিকে অজ্ঞতার গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে জ্ঞানের মশাল জ্বেলে সত্যের পথ ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং বিদআতের জয়জয়কারের মাঝেও রাসুলের সুন্নাহকে জীবনের ব্রত বানিয়ে নেওয়া। পাশাপাশি এই পথে চলতে গিয়ে সকল ঝড়ঝঞ্জা, অগ্নিপরীক্ষা, বিপদ-আপদ এবং অপবাদ ও অপপ্রচারের সামনে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশায় পরম ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া। তবেই মিলবে প্রতিশ্রুত সফলতা এবং জান্নাতের সুসংবাদ‌। সেই সাথে মিলবে সাহাবিদের ৫০ জন ব্যক্তির সমতুল্য সওয়াব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ আমাদেরকে সত্যের পথে অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন।‌ আমিন।
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন
- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

প্রশ্ন: শিয়া সম্প্রদায় যে প্রতি বছর ১০ মুহররমে মাতম করে, তাজিয়া মিছিল করে, নিজেদের শরীরে আঘাত করে-এ সম্পর্কে বিস্তারিত জ...
06/07/2024

প্রশ্ন: শিয়া সম্প্রদায় যে প্রতি বছর ১০ মুহররমে মাতম করে, তাজিয়া মিছিল করে, নিজেদের শরীরে আঘাত করে-এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। এ কাজগুলো কি শরিয়ত সম্মত?

উত্তর:
৬১ হিজরির মুহররম মাসের দশ তারিখে হুসাইন বিন আলী রা. রাজনৈতিক কারণে ফিতনায় পতিত হয়ে ইরাকের কারবালার প্রান্তরে তৎকালীন মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া এর সেনাবাহিনীর হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তার প্রতি সমবেদনার বর্হি:প্রকাশ হিসেবে শিয়া সম্প্রদায় প্রতি বছর ১০ম মুহররমে নিজেদের শরীরকে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে, মাথা মুণ্ডন করে, রাস্তায় রাস্তায় ‘হায় হুসাইন..হাই হুসাইন’ বলে কান্নাকাটি ও মাতম করে, কালো ব্যাচ ধারণ করে, তাজিয়া মিছিল বের করে। ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো সব, বিদআত, জাহেলিয়াত পূর্ণ ও হারাম কাজ। নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে তা প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ।

♻ মৃত্যুশোকে কান্নাকাটি করা, মাতম করা, শরীরে আঘাত করা ইত্যাদির বিধান কি?

মানুষ মারা গেলে নীরবে চোখের পানি ফেলা অথবা নিচু আওয়াজে ক্রন্দন করা বৈধ। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যায় তিনি তাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। আর তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
تَدْمَعُ الْعَيْنُ وَيَحْزَنُ الْقَلْبُ وَلاَ نَقُولُ إِلاَّ مَا يَرْضَى رَبُّنَا وَاللَّهِ يَا إِبْرَاهِيمُ إِنَّا بِكَ لَمَحْزُونُونَ
“চক্ষু অশ্রু সজল হয়,অন্তর ব্যথিত হয়। তবে আমরা কেবল সে কথাই বলব যা আমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করে। আল্লাহর কসম,হে ইবরাহীম,তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত।” [সহীহ বুখারি: অনুচ্ছেদ: সে আমাদের লোক নয় যে, গালে চপেটাঘাত করে। হাদিস নং ১২৯৭,মাকতাবা শামেলা]

তবে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, মাটিতে গড়াগড়ি করা, শরীরে আঘাত করা, চুল ছেড়া, কাপড় ছেড়া ইত্যাদি হারাম। এ সম্পর্কে নিন্মোক্ত হাদিস সমূহ দেখুন:
▪সহীহ বুখারিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
لَيْسَ مِنّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعا بِدَعْوى الْجاهِلِيَّةِ
যে ব্যক্তি গালে চপেটাঘাত করে, পকেট ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের মত আহবান করে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (মজমু ফাতাওয়া শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ২৫/৩০২, ৩০৭)

▪নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَنا بَرِيءٌ مِمَّنْ بَرئَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَرِئَ مِنَ الصَّالِقَةِ وَالْحالِقَةِ وَالشَّاقَّةِ
“যে মহিলা (বিপদ-মুসিবতে) চিৎকার করে, মাথা মুণ্ডন করে, কাপড় ছিঁড়ে তার থেকে আমি সম্পর্ক মুক্ত।” [সহীহ মুসলিম]

▪নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
النَّائِحَةُ إذا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِها، تُقامُ يَومَ القِيامَةِ وعليها سِرْبالٌ مِن قَطِرانٍ، ودِرْعٌ مِن جَرَبٍ
“বিলাপকারীনী মহিলা যদি তওবা করার আগে মৃত্যু বরণ করে তবে সে কিয়ামতের দিন আলকাতরা মাখানো পায়জামা আর ঘা বিশিষ্ট বর্ম পরিহিত অবস্থায় উঠবে।” [সহীহ মুসলিম, জানাইয অধ্যায়]

▪সহীহ বুখারিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
ما مِن عبدٍ تُصيبُه مُصيبةٌ، فيقولُ: إنَّا لله وإنَّا إليه راجعونَ، اللهُمَّ أْجُرْني في مُصِيبتِي، وأَخْلِفْ لي خيرًا منها، إلَّا أَجَرَه اللهُ في مُصِيبته، وأَخْلَفَ له خيرًا منها
“যে আল্লাহর বান্দা বিপদে অপতিত হলে বলে: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইল্লাইহি রাজিঊন, “আল্লা-হুম্মা আজিরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লাহু খাইরান মিনহা” অর্থাৎ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য নিবেদিত এবং তার কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং এর থেকে উত্তম বিকল্প দান কর।”
তাকে আল্লাহ তাকে তার বিপদে উত্তম প্রতিদান দিবেন এবং তারচেয়ে ভালো বিকল্প ব্যবস্থা করবেন।” [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানাইয]

▪ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أَرْبَعٌ في أُمَّتي مِن أمْرِ الجاهِلِيَّةِ، لا يَتْرُكُونَهُنَّ: الفَخْرُ في الأحْسابِ، والطَّعْنُ في الأنْسابِ، والاسْتِسْقاءُ بالنُّجُومِ، والنِّياحَةُ
“আমার উম্মতের মধ্যে চারটি জিনিস জাহেলিয়াতের কাজ যেগুলো তারা ছাড়বে না। বংশ আভিজাত্য নিয়ে গর্ব করা, অন্যের বংশকে দোষারোপ করা, তারকার সাহায্যে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং মানুষের মৃত্যুতে বিলাপ করা। [সহীহ মুসলিম, বিতাবুল জানাইয]
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিয়া সম্প্রদায়ের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

10/05/2024

কোন অমুসলিমকে দান করলে কি নেকি পাওয়া যাবে?

উত্তর: ইসলাম মানবতার ধর্ম। ইসলাম মানুষের কল্যাণে অবদান রাখতে উৎসাহিত করে। সুতরাং কিছু শর্ত সাপেক্ষে গরিব-অসহায় অমুসলিমকে তার চিকিৎসা, আর্থিক অনটন বা তার অন্যান্য প্রয়োজনে দান করলেও সাওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম, অমুসলিম, বনের পশু,পাখি সহ সকল জীবের প্রতি দয়া করা আমাদের কর্তব্য। এতে ইনশাআল্লাহ আমরা অগণিত সওয়াব অর্জন করতে সক্ষম হবো। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فِى كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ
“প্রত্যেক তাজা কলিজার বিনিময়ে নেকি রয়েছে।” [বুখারী হা/৩৩২১; মুসলিম হা/২২৪৪]
– হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক বেশ্যা নারী এক পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে আল্লাহ তাআলা তার জীবনের সকল গুনাহ মোচন করে তাকে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন।
তাছাড়া আপনার এই উদারতা, সহানুভূতি ও আর্থিক সাহায্য পেয়ে হয়ত সেই অমুসলিম ব্যক্তিটি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং হেদায়েতের ছায়াতলে আশ্রয় নেবে। তখন এটি আপনার জন্য আরও বেশি কল্যাণকর হবে ইনশাআল্লাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ
“তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একজন লোককেও হেদায়েত দেন তবে তা তোমার জন্য একটি লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তম।” [সহিহ বুখারী]
◈ তবে কোনও হারবি কাফের বা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত কোন কাফেরকে দান করা বা কোনও ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা করা জায়েজ নেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّـهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
“দ্বীন-ইসলামের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করে নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ কারীদেরকে ভালবাসেন।” [সূরা মুমতাহিনা: ৮]
◈ অনুরূপভাবে কোনও অমুসলিমকে তাদের ধর্মীয় কাজ বা হারাম কাজের উদ্দেশ্য দান করা হারাম।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
“তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা মায়িদা: ২]
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

হানাফি মাযহাবের কুরআন হাদীস বিরোধী ফাতাওয়া:হানাফি মাযহাবের সবচেয়ে বড় কিতাব ‘আল হিদায়া’, ‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী’ এবং অন্যান্য...
21/04/2024

হানাফি মাযহাবের কুরআন হাদীস বিরোধী ফাতাওয়া:

হানাফি মাযহাবের সবচেয়ে বড় কিতাব ‘আল হিদায়া’, ‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী’ এবং অন্যান্য কিতাব সমূহে আছে ইসলাম বিরোধী, কুরআন হাদীস বিরোধী, মানব জাতী বিরোধী, আজব ও গাজাখুরী ফতোয়া সমূহ:--
=======================================

⦁➤ ০১. যাদেরকে বিবাহ করা হারাম তাদের সাথে সহবাস করলে হদ্দ (শাস্তি) জারি হবে না.! [ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১৬৫, আল-হিদায়া ৫১৬ ]
⦁➤ ০২. মা বোন মেয়ে খালা ফুফিদের সাথে সহবাস করলে বা বিবাহ করলে কোনো হদ বা শাস্তি নেই.! [ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী 3/468 ] নাউযুবিল্লাহ!
⦁➤ ০৩. মহিলার বুকের দিকে,পায়ের নলার দিকে, বাহুর ও মাজার দিকে তাকানো জায়েয.! [ আল- হিদায়া,৪র্থ খন্ড, পৃঃ ১৭৪,ইফা ]
⦁➤ ০৪. কেউ যদি নিজ পুরুষাঙ্গকে নিজেরই পায়ুপথে প্রবেশ করায় তাহলে বিনা বীর্যপাতে তার উপর গোসল ওয়াজীব হবে না। ” [ দুররে মুখতার: ১/১৩৬, কিতাবুত ত্বাহারাত]
⦁➤ ০৫. স্ত্রীর যৌনাংগের দিকে তাকানো উত্তম কাজ,! [ আল- হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ১৭৪,ইফা ]
⦁➤ ০৬.:- নিজের স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য মহিলা যদি বলে আমি তোমার স্ত্রী তবে তারসাথে যিনা করলে শাস্তি নাই! [ আল হিদায়া পৃঃ ৩৬৪ ]
⦁➤ ০৭. কোন ব্যক্তি এক মহিলাকে বলল আমি যতবার তোমাকে বিবাহ করব ততবার তুমি তালাক। এ কথা বলার পর সে একই দিনে তাকে তিনবার বিবাহ করল এবং প্রত্যেকবার সহবাস করল। তবে এ মহিলার উপর দু' তালাক পতিহ হবে [ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ২/১৬৬]
⦁➤ ০৮. মৃতদেহ বা নাবালিকা মেয়ের সাথে সহবাস করার উদ্দেশ্যে উভয়ের লিঙ্গ একত্র হয়ে কিছু অংশ প্রবেশ করলেও অযু নষ্ট হবে না [ দুররে মুখতার, অযু অধ্যায় ]
⦁➤ ০৯. ইমাম আবু হানিফার মতে ফারসি বা যে কোন ভাষায় নামাজে সুরা পড়া জায়েজ। [ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইফা, ১৮৬,আল হিদায়া,ইফা ৭৮, ফতোয়ায়ে আলমগীরি বাংলা অনুবাদ ১ম খন্ড ,ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পৃঃ১৮৬]
⦁➤ ১০. ইমাম আবু হানিফার মতে স্বলাতে আল্লাহু আকবর এর পরিবর্তে সুবহানআল্লাহ বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দ্বারা নামাজ শুরু করা জায়েজ। [ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি ১৮২, আল হিদায়া ৭৭, ঐ পৃঃ১৮২ মাসয়ালা ২ ]
⦁➤ ১১. চোখ দিয়ে ডানে বামে তাকানো যাবে, এতে নামাজ নষ্ট হবেনা, [ আল হিদায়া, পৃঃ ১১৪,১ম খন্ড ইফা ]

⦁➤ ১২. সূরা ফাতিহা স্বলাতের রুকন নয়। [ আল হিদায়া ৮০]
⦁➤ ১৩. আরবী জানার পরও কেউ ফার্সিতে নামাজ পড়লে হবে. [ আল হিদায়া, ১ম খন্ড, পৃঃ ৭৮,ইফা
ফাতাওয়ায়ে

©

মাটি না কি নুর? (সত্যানুসন্ধিৎসু হৃদয়ে প্রজ্জ্বলিত হোক সত্যের আলো)আমাদের সমাজে ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাট...
17/04/2024

মাটি না কি নুর? (সত্যানুসন্ধিৎসু হৃদয়ে প্রজ্জ্বলিত হোক সত্যের আলো)

আমাদের সমাজে ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির‌ তৈরি নাকি নুরের তৈরি’ এ বিষয়ে প্রচুর দ্বন্দ্ব, তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়াঝাটি, গালাগালি ও নানা বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ যুগ পরম্পরায় চলে আসছে-যা অদ্যাবধি বিদ্যমান। কিন্তু মূলত: এসব কার্যক্রম নিছক গোঁড়ামি ও মূর্খতা সুলভ আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষও ছিলেন আবার নুর বা আলোও ছিলেন। এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও বাদানুবাদে লিপ্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

▪️আসুন, এ বিষয়টি পরিস্কার করা যাক: وبالله التوفيق

প্রথমত আমাদেরকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে যে, তিনি কি মানুষ ছিলেন, নাকি জিন ছিলেন, নাকি ফেরেশতা ছিলেন। যদি মানুষ জাতির অন্তর্ভুক্ত হন তাহলে মানুষ যে উপাদান থেকে যে পদ্ধতিতে সৃজিত হয়েছে তিনিও সে পদ্ধতিতে সে উপাদান থেকেই সৃজিত হয়েছেন।

তাহলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষ ছিলেন কি না তা কুরআন-হাদিস থেকে জানা যাক:

◆ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষ ছিলেন; ফেরেশতা ছিলেন না। এ বিষয়ে কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

وَقَالُوا مَالِ هَٰذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِي فِي الْأَسْوَاقِ ۙ لَوْلَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُونَ مَعَهُ نَذِيرًا

“তারা (কাফেরেরা) বলে, এ কেমন রসুল যে, খাদ্য আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে? তাঁর কাছে কেন কোন ফেরেশতা নাজিল করা হল না যে, তাঁর সাথে সতর্ক কারী হয়ে থাকত?” [সূরা ফুরকান: ৭]

– এই আয়াতের তাফসিরে ইমাম বাগাভি বলেন,

( وقالوا مال هذا الرسول ) يعنون محمدا – صلى الله عليه وسلم – ، ) ( يأكل الطعام ) كما نأكل نحن ، ( ويمشي في الأسواق ) يلتمس المعاش كما نمشي ، فلا يجوز أن يمتاز عنا بالنبوة ، وكانوا يقولون له : لست أنت بملك ولا بملك ، لأنك تأكل والملك لا يأكل ، ولست بملك لأن الملك لا يتسوق ، وأنت تتسوق وتتبذل .
وما قالوه فاسد; لأن أكله الطعام لكونه آدميا ، ومشيه في الأسواق لتواضعه ، وكان ذلك صفة له ، وشيء من ذلك لا ينافي النبوة

“তারা বলে, এ আবার কেমন রসুল!” অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সে খাবার খায় যেমন আমরা খাই, সে জীবিকা অন্বেষণে বাজারে যায়, যেমন আমরা যাই!
এমনটি হলে নবুওয়তের মাধ্যমে আমাদের থেকে তার আলাদা কিছু হওয়া সিদ্ধ নয়।
তারা আরও বলত, তুমি তো ফেরেশতা নও। কারণ ফেরেশতারা খায় না। আবার তুমি রাজা-বাদশাও নও। কারণ রাজা-বাদশারা বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করে না। কিন্তু তুমি তো বাজারে যাও এবং কেনাকাটা ও খরচাপাতি করো। এরা যে এসব কথাবার্তা বলতো সবই ভ্রান্ত। কারণ তিনি এ জন্য খাবার গ্রহণ করতেন যে, তিনি একজন মানুষ ছিলেন। আর তিনি বাজারে যেতেন। কারণ এটা ছিল তাঁর বিনয়। এটাই তাঁর বৈশিষ্ট্য। এগুলোর কোনও কিছুই নবুওয়ত পরিপন্থী নয়।” [তাফসিরে বাগাভি]

◆ আল্লাহ আরও বলেন,

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ

“হে নবি, আপনি বলে দিন যে, আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়…।” [সূরা কাহফ: ১১০]
এই আয়াতের তাফসিরে ইমাম ত্বাবারি বলেন,

يقول تعالى ذكره قل لهؤلاء المشركين يا محمد: إنما أنا بشر مثلكم من بني آدم لا علم لي إلا ما علمني الله وإن الله يوحي إليّ أن معبودكم الذي يجب عليكم أن تعبدوه ولا تشركوا به شيئا، معبود واحد لا ثاني له، ولا شريك

“আল্লাহ তাআলা (এই আয়াতে) বলেছেন, “হে মুহাম্মদ, আপনি ঐ সকল মুশরিকদেরকে বলে দিন যে, আমি তোমাদের মতই আদম সন্তানদের মধ্য থেকে একজন মানুষ মাত্র। আমার কোনও জ্ঞান নেই আল্লাহ যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া। আর আল্লাহ আমার নিকট এ মর্মে ওহি নাজিল করেন যে, তোমাদের মাবুদ-যার ইবাদত করা এবং তার সাথে কোনও কিছুকে শরিক না করা তোমাদের জন্য আবশ্যক-তিনি হলেন, একমাত্র মাবুদ যার দ্বিতীয় বা অংশীদার কেউ নেই।” [তাফসিরে ত্ববারি]

❑ মানব সৃষ্টির উপাদান:

◆ মা-জননী আয়েশা রা. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

«خُلِقَتِ الْمَلَائِكَةُ مِنْ نُورٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وصف لكم»

“ফেরেশতাদের কে নুর (আলো) দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়া মিশ্রিত অগ্নিশিখা হতে এবং আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছে ঐ বস্তু দ্বারা, যার বর্ণনা (কুরআনে) তোমাদেরকে বলা হয়েছে।” [সহিহ মুসলিম] অর্থাৎ কুরআনে বিভিন্ন স্থানে আদম সৃষ্টির যে উপাদানগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো। যেমন: কাদা-মাটি, বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি, এঁটেল মাটি ইত্যাদি, দেখুন: সুরা আর রহমান-এর ১৪ এবং সূরা স্বদ-এর ৭ নম্বর আয়াত।

◆আদম আলাইহিস সালাম ছাড়া অন্যান্য মানব সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,

‏ وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا

“তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে।” [সূরা ফুরকান: ৫৪]

◆ তিনি আরও বলেন,

خُلِقَ مِن مَّاءٍ دَافِقٍ

“সে (মানুষ) সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি (বীর্য) থেকে।” [সূরা ত্বারিক: ৬]

◆তিনি আরো বলেন,

وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ ‎-‏ ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِن سُلَالَةٍ مِّن مَّاءٍ مَّهِين

“এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন দুর্বল পানির নির্যাস (বীর্য) থেকে।” [সূরা সাজদা: ৭ ও ৮]

উল্লেখ যে, কুরআনে মানব সৃষ্টির উপাদান হিসেবে যেসব স্থানে কাদা-মাটি, বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি, এঁটেল মাটি ইত্যাদি কথা বলা হয়েছে সেগুলো মূলতঃ আদম আলাইহিস সালাম-এর সৃষ্টি প্রসঙ্গে। [দেখুন: সুরা আর রাহমান-এর ১৪, সূরা আনআম-এর ২, সূরা সফফাত-এর ১১ এবং সূরা হিজর-এর ২৬ নম্বর আয়াত]

অতএব বলা যায় যে, মানব সৃষ্টি সূচনা হয়েছে মাটি থেকে। তবে আদম আ. ছাড়া অন্য কাউকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়নি। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সরাসরি ‘মাটি থেকে সৃষ্টি’ বলা সঙ্গত নয়। হ্যাঁ, প্রথম মানুষ আদম আলাইহিস সালামকে যেহেতু মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে সেহেতু মানব সৃষ্টির মূল উপাদান হিসেবে তাঁকেও মাটির তৈরি বললেও অত্যুক্তি হবে না। তবে বিতর্ক এড়াতে না বলাই ভালো।

যাহোক, প্রমাণিত হল যে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষ ছিলেন। অত:এব (আদম আ., হাওয়া আ. এবং ঈসা আ. ছাড়া) পৃথিবীর অন্যান্য সকল মানুষ যে উপাদান থেকে সৃষ্টি এবং স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে মাতৃগর্ভে জন্মগ্রহণ করেছে তিনিও সেভাবেই মাতৃগর্ভে জন্মগ্রহণ করে দুনিয়ার বুকে পদার্পণ করেছেন।

তিনি জিন ছিলেন না যে, বলা হবে তিনি আগুন থেকে সৃষ্ট আর ফেরেশতাও ছিলেন না যে, বলা হবে তিনি নুর বা আলো থেকে সৃষ্ট।

❂ তিনি মানুষ হলেও অন্য সব মানুষের তুলনায় ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী:

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষ হলেও তিনি সাধারণ কোনও মানুষ ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তিনি চরিত্র মাধুরী, সুন্দর আচার-আচরণ, ক্ষমা, উদারতা, বিনয়-নম্রতা, অহংকার মুক্ত জীবন, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা, রাগ নিয়ন্ত্রণ, যৌন কামনা সংবরণ, দয়া ও ক্ষমা প্রদর্শন, সাহসিকতা, ন্যায়-ইনসাফ, লজ্জাশীলতা, দানশীলতা, হাসি-কৌতুক ইত্যাদি মানবিক গুণাবলীর ক্ষেত্রে এক অনন্য-অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন তিনি। তার কথা বলার ধরণ, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, দুনিয়ার সম্পদের প্রতি অনাগ্রহ, শিশুদের সাথে আচরণ, দাম্পত্য জীবন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই তিনি বিশ্ব মানবতার সামনে এক বিশাল প্রেরণার উৎস ও অনুকরণীয় মহান আদর্শ।

▪️তিনি কতটা সহজ-সরল ও সাংসারিক মানুষ ছিলেন তা আয়েশা রা. এর এ কথাটি থেকে প্রতীয়মান হয়:

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كان يَخيطُ ثوبَه ويخصِفُ نعلَه ويعمَلُ ما يعمَلُ الرِّجالُ في بيوتِهم

❝রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, জুতা মেরামত করতেন এবং লোকজন যেভাবে বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ-কর্ম করে থাকে তেমনি তিনিও বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ-কর্ম করতেন।” [সহিহ ইবনে হিব্বান-সহিহ]

তিনি অন্যত্র বলেছেন,

كان بشرًا من البشرِ : يَفْلِي ثوبَه ، و يحلبُ شاتَه ، و يخدم نفسَه

“তিনি মানুষের মধ্য থেকে একজন মানুষ ছিলেন। তিনি কাপড়ে উকুন খুঁজতেন, বকরীর দুধ দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।❞ [মুসনাদে আহমদ, ইবনে হিব্বান, সিলসিলা সহিহা, হা/৬৭১]

সুবহানাল্লাহ!! মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হয়েও কত সহজ-সরল ও সাধারণ জীবন যাপন করতেন আমাদের প্রাণের নবী ভালোবাসার নবি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সত্যি তিনি ছিলেন এক মহান আদর্শ ও অনুকরণীয় জীবনের প্রতিচ্ছবি!

❑ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মানবিক বৈশিষ্ট্য সমূহ:

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে অধিকাংশই মানবিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। তিনি হাসতেন, কাঁদতেন, আনন্দিত হতেন, রাগান্বিত হতেন, কষ্ট পেতেন, ভয় পেতেন (ওহি নাজিলের ঘটনা), ক্ষুধার্ত হতেন, ঘুমাতেন, পরিশ্রান্ত হতেন, তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন হত, তিনি ঘর্মাক্ত হতেন। রাস্তা চলাচলের সময় সূর্যের আলোতে তাঁর ছায়া পড়ত।

তিনি বিয়ে করেছেন। স্ত্রী সহবাস করতেন। তাঁর বীর্য নির্গত হত। তিনি মাঝেমধ্যে কিছু বিষয় ভুলে যেতেন। সালাতেও একাধিক বার তার ভুল হয়েছে (যেমন: যুল ইয়াদাইনের হাদিস)। তিনি ভুলে গেলে সাহাবিদেরকে বলতেন যে, তারা যেন তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি আহত হয়েছেন। তাঁর শরীর থেকে রক্ত নির্গত হয়েছে (তায়েফের ঘটনা)। যুদ্ধে তাঁর দাঁত ভেঙ্গেছে (উহুদের যুদ্ধ)। তিনি যুদ্ধে যাওয়ার আগে আত্মরক্ষার জন্য শিরস্ত্রাণ ব্যবহার করেছেন।

তিনি গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানতেন না আল্লাহ তাকে বিশেষভাবে যা জানিয়েছেন তা ছাড়া। যার প্রমাণ উহুদের যুদ্ধে পরাজয়, ইহুদি মহিলা কর্তৃক বিষ মেশানো গোশত খাওয়ানো, ইফক তথা আয়েশা রা. এর প্রতি অপবাদের ঘটনা, বিরে মাউনায় ৭০ জন সাহাবির মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি।

তবে মানবিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলা তাঁর মধ্যে ব্যতিক্রমী কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়েছিলেন। যেগুলো ছিল তাঁর মুজিযা ও তাঁর প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। যেমন: আল্লাহ তাআলা তাকে ৩০ বা ৪০ জন স্ত্রীর সহবাস করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন, সালাতরত অবস্থায় তাঁর পেছনের অবস্থা দেখতে পেতেন, তিনি একটানা নিরবিচ্ছিন্নভাবে রোজা রাখার শক্তি রাখতেন। কেননা আল্লাহ তাকে পানাহার করাতেন ইত্যাদি। এছাড়াও তাঁর মোজেজা সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা এর প্রমাণ।

ইসলামের কিছু বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে তার জন্য ব্যতিক্রমী বিধান ছিল। তাহাজ্জুদের সালাত তাঁর জন্য ফরজ হওয়া, সওমে বিসাল বা একটানা অবিচ্ছিন্নভাবে রোজা পালনের অনুমতি, চারের অধিক বিয়ে ইত্যাদি। এই জাতীয় আরো কিছু বিষয়ে তার জন্য স্বতন্ত্র বিধান ছিল যেগুলো তার উম্মতের জন্য প্রযোজ্য ছিল না।

❑ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুর বা আলো ছিলেন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দিকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওয়ত ও রিসালাত প্রাপ্তির মাধ্যমে সম্মান ও মর্যাদায় সমগ্র মানব জাতির মধ্যে তুলনাবিহীন এবং জ্ঞান-প্রজ্ঞা, উত্তম চরিত্র এবং অন্যান্য মানবিক বৈশিষ্ট্যে ছিলেন এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত মহামানব। অন্যদিকে তিনি ছিলেন নুর বা আলো। কুরআনে তাঁকে নুর বা আলো বলা হয়েছে। হ্যাঁ, সত্যিই তিনি ছিলেন আলো। আলোকিত মানুষ। আলোর দিশা। তাঁর নিকট থেকে জ্ঞানের আলোয় বিশ্ব-ভুবন আলোকিত হয়েছে। মানুষ জাহেলিয়াত ও গোমরাহির গাঢ় অমানিশায় তাওহিদ ও হেদায়েতের আলো পেয়েছে। তিনি সত্যের আলো ছড়িয়েছেন। মূর্খতার অন্ধকারে তিনি জ্বেলেছেন জ্ঞানের মশাল। কেননা জ্ঞান হল, আলো আর অজ্ঞতা হল, অন্ধকার। তাওহিদ হল, আলো আর শিরক ও ভ্রষ্টতা হল, অন্ধকার। এই অর্থে তিনি অবশ্যই নুর বা আলো ছিলেন।

◆ এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ ۚ قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ

“হে আহলে-কিতাবগণ, তোমাদের কাছে আমার রসুল আগমন করেছেন। কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি নুর বা আলো এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ এসেছে।” [সূরা মায়িদা: ১৫]

এই আয়াতের তাফসিরে ত্বাবারিতে বলা হয়েছে,

يعني بالنور، محمدًا صلى الله عليه وسلم الذي أنار الله به الحقَّ، وأظهر به الإسلام، ومحق به الشرك، فهو نور لمن استنار به يبيِّن الحق. ومن إنارته الحق، تبيينُه لليهود كثيرًا مما كانوا يخفون من الكتاب.

“নুর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যার মাধ্যমে তিনি সত্যকে প্রস্ফুটিত ও ইসলামকে বিকশিত করেছেন এবং শিরককে করেছেন নিশ্চিহ্ন। সুতরাং তিনি তার জন্য আলো যে তার দ্বারা আলোকিত হয়েছে। তিনি সত্যকে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সত্যকে আলোর মত ফুটিয়ে তুলেছেন। এর একটি দিক হল, ইহুদিরা আল্লাহর কিতাব (তাওরাতের) যা কিছু গোপন করেছিলো তিনি তার অনেক কিছুই প্রকাশ করে দিয়েছেন।” [তাফসিরে ত্বাবারি]

আল্লাহ তাআলা আল কুরআনকেও নুর বা আলো বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন:

◆ মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُم بُرْهَانٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُّبِينًا

“হে মানুষেরা, তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট শক্তিশালী প্রমাণ হাজির হয়ে গেছে। আর আমি তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট নুর বা আলো অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা নিসা: ১৭৪]

এখানে নুর বা আলো দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন। যেমন: তাফসিরে কুরতুবিতে বলা হয়েছে,

النور المنزل هو القرآن ؛ عن الحسن ؛ وسماه نورا لأن به تتبين الأحكام ويهتدى به من الضلالة ، فهو نور مبين ، أي واضح بين

“(আল্লাহর পক্ষ থেকে) অবতরণ কৃত নুর বা আলো হচ্ছে, কুরআন। তিনি কুরআনকে নুর বলেছেন এ কারণে যে, এর মাধ্যমে বিধিবিধান প্রস্ফুটিত হয় এবং গোমরাহির মধ্যে হেদায়েত লাভ করা যায়। সুতরাং তা نور مبين তথা সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার আলো।” [তাফসিরে কুরতুবি]

তাফসিরে ইবনে কাসিরে বর্ণিত হয়েছে,

(وأنزلنا إليكم نورا مبين )
أي : ضياء واضحا على الحق ، قال ابن جريج وغيره : وهو القرآن

“আর আমি প্রকৃষ্ট নুর (আলো) অবতীর্ণ করেছি।” অর্থাৎ সত্যের উপর স্পষ্ট জ্যোতি। ইবনে জুরাইজ প্রমুখ বলেছেন, তা হল, কুরআন।”

◆ আল্লাহ তাআলা আল্লাহর কিতাব তাওরাতের ব্যাপারেও বলেছেন যে, তাতে রয়েছে নুর বা আলো:

إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ

“আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি। এতে হেদায়েত তথা সঠিক পথের দিশা ও নুর (আলো) রয়েছে।” [সূরা মায়িদা: ৪৪]

◆ আল্লাহ তাআলা আল্লাহর কিতাব ইঞ্জিলের ব্যাপারেও একই কথা বলেছেন,

وَآتَيْنَاهُ الْإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ

“আমি তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে সঠিক পথের দিশা ও আলো রয়েছে।” [সূরা মায়িদা: ৪৬]

ইমাম ত্ববারি বলেন,

ونور “، يقول: وضياء من عَمَى الجهالة

“নুর অর্থ: অজ্ঞতার অন্ধত্বের মধ্যে আলোর জ্যোতি।” [তাফসিরে ত্বাবারি]

কিন্তু কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা ও কিছু বানোয়াট হাদিস দিয়ে কিছু মানুষ বলতে চাইছে যে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুর বা আলো থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। এটি কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা এবং মূর্খতা। এ বিষয়ে তারা অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি করে। এমনকি যারা এ মত সমর্থন করে না তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে ‘কাফের’ বলতেও তারা দ্বিধা করে না!
এ সকল কার্যক্রম দ্বীনের মধ্যে গুলু বা বাড়াবাড়ি এবং নিছক জাহেলিয়াত ছাড়া কিছু নয়। অথচ ইসলামে বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ।

❑ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রশংসা ও সম্মান প্রদর্শনে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ:

ওমর রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لاَ تُطْرُونِي ، كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ ، فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ ، فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ ، وَرَسُولُهُ

‘‘তোমরা আমার মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করো না যেমনিভাবে প্রশংসা করেছিলো খৃষ্টানরা মরিয়ম তনয় ঈসা আ. এর। আমি আল্লাহ তাআলার বান্দা মাত্র। তাই তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসুল বলবে।’’ [বুখারি ও মুসলিম]

✪ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
“إياكم والغُلُوَّ؛ فإنما أهلك من كان قبلكم
‘‘তোমরা বাড়াবাড়ির ব্যাপারে সতর্ক হও। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগোষ্ঠী এ কারণেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’’ [মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ প্রমুখ-সহিহ]

✪ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«هَلَكَ المُتنَطِّعونَ» قالها ثلاثًا
‘‘সীমালঙ্ঘন কারীরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’’ এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন।” [সহিহ মুসলিম]

পরিশেষে বলব, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল, সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা, সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা, সর্বশ্রেষ্ঠ কমান্ডার, সর্বশ্রেষ্ঠ স্বামী, সর্বশ্রেষ্ঠ পিতা। সর্বোপরি তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। আল্লাহ তাকে সর্বগুণে গুণান্বিত করেছিলেন। জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতায় ছিলেন অতুলনীয়। আল্লাহ তার পূর্বাপর সকল গুনাহ মোচন করে তাকে করেছিলেন পুত-পবিত্র ও নিষ্পাপ।
সুতরাং প্রিয় নবীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া ফরজ। তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ সম্মান ও ভালবাসার প্রমাণ দিতে হবে তাঁর আনুগত্য তথা তাঁর আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন এবং তাঁর আনিত শরিয়ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে। কিন্তু কোনও অবস্থায় তাঁর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনে অতিরঞ্জন করা যাবে না, প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করা যাবে না এবং তাঁর দেখানো পদ্ধতির বাইরে কোন ইবাদত করা যাবে না। অন্যথায় তা হবে, আমাদের ধ্বংসের কারণ-যেমনটি পূর্বোক্ত হাদিসে বলা হয়েছে।

🔸সারাংশ:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিগতভাবে মানুষ ছিলেন। অতএব মানুষ সৃষ্টির যে উপাদান তিনিও সে উপাদান থেকেই সৃষ্ট। কিন্তু ইসলামের জ্ঞান বিতরণ এবং সত্যের পথনির্দেশের ক্ষেত্রে ছিলেন নুর বা আলো। সুতরাং এ দুটি বিষয়ের মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের হৃদয় পটে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা ধারণের পাশাপাশি তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ ও সুন্নতের প্রতি আমল করার এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর নিঃশর্ত আনুগত্য করার তাওফিক দান করুন এবং তাঁর নামে সব ধরনের বাড়াবাড়ি, সীমালংঘন‌ এবং তাঁর নির্দেশনার বাইরে সর্বপ্রকার নব আবিষ্কৃত বিদআতি কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

-যে ৬টি কারণে গীবত বৈধ! জেনে রাখুন যে, সঠিক শরয়ী উদ্দেশ্যে গীবত বৈধ; যখন গীবত ছাড়া সে উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া সম্ভবপর হয় না। ...
29/02/2024

-যে ৬টি কারণে গীবত বৈধ!

জেনে রাখুন যে, সঠিক শরয়ী উদ্দেশ্যে গীবত বৈধ; যখন গীবত ছাড়া সে উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া সম্ভবপর হয় না। এমন কারণ ৬টিঃ-

১। অত্যাচার ও নির্যাতন: নির্যাতিত ও অত্যাচারিত ব্যক্তির পক্ষে বৈধ যে, সে শাসক, বিচারক প্রমুখ [প্রভাবশালী] ব্যক্তি যারা অত্যাচারীকে উচিত সাজা দিয়ে ন্যায় বিচার করার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা রাখেন তাঁদের নিকট নালিশ করবে যে, ‘অমুক ব্যক্তি আমার উপর এই অত্যাচার করেছে।’

২। মন্দ কাজের অপসারণ ও পাপীকে সঠিক পথ ধরানোর কাজে সাহায্য কামনা। বস্ত্ততঃ শরীয়ত বহির্ভূত কর্মকাণ্ড বন্ধ করার ব্যাপারে শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিকে গিয়ে বলবে যে, ‘অমুক ব্যক্তি মন্দ কাজে লিপ্ত। সুতরাং আপনি তাকে তা থেকে বাধা দিন’ ইত্যাদি। তবে এর পিছনে কেবল অন্যায় ও মন্দ কাজ থেকে বাধা দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে; অন্যথা তা হারাম হবে।

৩। ফতোয়া জানা। মুফতি [বা আলেমের] নিকট গিয়ে বলবে, ‘আমার পিতা আমার ভাই বা আমার স্বামী অথবা অমুক ব্যক্তি এই অন্যায় অত্যাচার আমার প্রতি করেছে। তার কি কোন অধিকার আছে? [এমন করার অধিকার যদি না থাকে] তবে তা থেকে মুক্তি পাবার এবং অন্যায়ের প্রতিকার করার ও নিজ অধিকার অর্জন করার উপায় কি?’ অনুরূপ আবেদন পেশ করা। এরূপ বলা প্রয়োজনে বৈধ। তবে সতর্কতামূলক ও উত্তম পন্থা হল, নাম না নিয়ে যদি বলে, ‘এক ব্যক্তি, বা লোক বা স্বামী এই করেছে, সে সম্পর্কে আপনি কি বলেন?’ নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির নাম না নিয়ে এরূপ বললে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে। এ সত্ত্বেও নির্দিষ্ট করে নাম নিয়ে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা বৈধ। যেমন এ মর্মে পরবর্তীতে হিন্দের হাদিস উল্লেখ করব---ইন শাআল্লাহ তা'আলা।

৪। মুসলিমদেরকে মন্দ থেকে সতর্ক করা ও তাদের মঙ্গল কামনা করা। এটা অনেক ধরণের হতে পারে। তার মধ্যে যেমন:-

[ক] হাদিসের দোষযুক্ত রাবী ও [বিচারকার্যে] সাক্ষীর দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করা। সর্বসম্মতিক্রমে এরূপ করা বৈধ; বরং প্রয়োজন বশতঃ ঐরূপ করা অত্যাবশ্যক।

[খ] কোন ব্যক্তির সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক জোড়ার জন্য, কোন ব্যবসায়ে অংশীদারি গ্রহণের উদ্দেশ্যে, কারো কাছে আমানত রাখার জন্য, কারো সাথে আদান-প্রদান করার মানসে অথবা কারো প্রতিবেশী হবার জন্য ইত্যাদি উদ্দেশ্যে পরামর্শ চাওয়া। আর সে ক্ষেত্রে যার নিকট পরামর্শ চাওয়া হয়, তার উচিত প্রকৃত অবস্থা খুলে বলা। বরং হিতাকাঙ্ক্ষী মনোভাব নিয়ে যত দোষ-ত্রুটি থাকবে সব ব্যক্ত করে দেবে। অনুরূপভাবে যখন কোন দ্বীনী জ্ঞান পিপাসুকে দেখবে যে, সে কোন বিদআতী ও মহাপাপী লোকের নিকট জ্ঞানার্জন করতে যাচ্ছে এবং আশংকা বোধ করবে যে, ঐ বিদআতী ও ফাসেক [মহাপাপী] দ্বারা সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাহলে সে আবশ্যিকভাবে তাকে তার অবস্থা ব্যক্ত করে তার মঙ্গল সাধন করবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শর্ত হল যে, এর পিছনে তার উদ্দেশ্য যেন হিতাকাঙ্ক্ষী হয়। এ ব্যাপারটি এমন যে, সাধারণত: এতে ভুল হয়ে থাকে। কখনো বা বক্তা হিংসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐ কথা বলে। কিন্তু শয়তান তার ব্যাপারটা গোলমাল করে দেয় এবং তার মাথায় গজিয়ে দেয় যে, সে হিত উদ্দেশ্যেই ঐ কাজ করছে [অথচ বাস্তব তার বিপরীত]। এ জন্য মানুষের সাবধান থাকা উচিত।

[গ] যখন কোন উচ্চপদস্থ সরকারী অফিসার, গভর্নর বা শাসক, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে---হয় তার অযোগ্যতার কারণে কিংবা পাপাচারী বা উদাসীন থাকার কারণে ইত্যাদি---তাহলে উক্ত ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রনেতার নিকট তার স্বরূপ তুলে ধরা একান্ত কর্তব্য। যাতে সে তার স্থানে অন্য উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ করতে পারে কিংবা কমপক্ষে তার সম্পর্কে তার জানা থাকবে এবং সেই অনুযায়ী তার সাথে আচরণ করবে এবং তার প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকবে, আর সে তাকে সংশোধন হবার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করবে, তারপর তাকে পরিবর্তন করে দেবে।

৫। প্রকাশ্যভাবে কেউ পাপাচরণ বা বিদআতে লিপ্ত হলে তার কথা বলা। যেমন প্রকাশ্যভাবে মদ্য পান করলে, লোকের ধন অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করলে, বলপূর্বক ট্যাক্স বা চাঁদা আদায় করলে, অন্যায়ভাবে যাকাত ইত্যাদি অসূল করলে, অন্যায় কাজের কর্তৃত্ব করলে, তার কেবল সেই প্রকাশ্য অন্যায়ের কথা উল্লেখ করা বৈধ। [যাতে তার অপ-নোদন সম্ভব হয়] পক্ষান্তরে তার অন্যান্য গোপন দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করা বৈধ নয়। তবে যদি উল্লিখিত কারণসমূহের মধ্যে অন্য কোন কারণ থাকে, যেমন আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি, তাহলে তাও ব্যক্ত করা বৈধ হবে।

৬। প্রসিদ্ধ নাম ধরে পরিচয় দেওয়া। সুতরাং যখন কোন মানুষ কোন মন্দ খেতাব দ্বারা সুপরিচিত হয়ে যাবে; যেমন চোখ-ওঠা, খোঁড়া, কালা, অন্ধ, টেরা ইত্যাদি তখন সেই পরিচায়ক খেতাবগুলি উল্লেখ করা সিদ্ধ। তবে অবমাননা বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে সে সব উল্লেখ করা নিষিদ্ধ। পক্ষান্তরে উক্ত পদবী ছাড়া অন্য শব্দ বা নাম দ্বারা যদি পরিচয় দান সম্ভব হয়, তাহলে সেটাই সব চাইতে উত্তম।

এই হল ছয়টি কারণ, যার ভিত্তিতে গীবত করা বৈধ। আর এর অধিকাংশ সর্ববাদিসম্মত। সহীহ হাদিস থেকে এর বিভিন্ন দলীলও প্রসিদ্ধ। যার কিছু নিম্নরূপ:-

১/১৫৩৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, ‘‘ওকে অনুমতি দাও। ও নিজ বংশের অত্যন্ত মন্দ ব্যক্তি।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]

এ হাদিস দ্বারা ইমাম বুখারী [রহঃ] ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ও সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের গীবত করার বৈধতা প্রমাণ করেছেন।

[সহীহুল বুখারী ৬০৩২, ৬০৫৪, ৬১৩১, মুসলিম ২৫৯১, তিরমিযী ১৯৯৬, আবূ দাউদ ৪৭৯১, ৪৭৯২, আহমাদ ২৩৫৮৬, ২৩৯৮৪, ২৪২৭৭, ২৪৭২৬, ২৪৮৭৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৭২]

©

Address

Feni

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when ইসলামের সহীহ আক্বীদা-সালাফী মানহাজ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share