22/08/2025
সূরা আল-বাকারাহতে আল্লাহ যে ১০টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন
১. তাওহীদ
কুরআনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তাওহীদের ওপর।
সব নবী-রাসূলের প্রথম দাওয়াত ছিল—
“হে মানুষ, আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না।”
তাওহীদ ছাড়া কোনো আমল কবুল হয় না।
তাওহীদ মানে হলো আল্লাহকে সৃষ্টি, ইবাদত ও গুণাবলীতে একমাত্র হিসেবে মানা, এবং জীবনের প্রতিটি কাজে তাঁর আনুগত্য করা।
আমরা কী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করতে পেরেছি? এর উত্তর দিতে পারবেন কী? হয়ত না।
২. ঈমান ও তাকওয়া
“ঈমান” মানে হলো,,,, আল্লাহতে বিশ্বাস, ফেরেশতাগণে বিশ্বাস, আল্লাহর কিতাবসমূহে বিশ্বাস, নবী-রাসূলগণে বিশ্বাস, আখিরাতে বিশ্বাস ও তাকদিরে বিশ্বাস করা।
কেবল মুখে বলাই ঈমান নয়, বরং হৃদয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা।
অন্যদিকে তাকওয়া হলো,,,,
ধরুন, আপনি কাঁটায় ভরা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন।
আপনি খুব সাবধানে হাঁটছেন, যেন কাঁটা পায়ে না বিঁধে।
ঠিক তেমনি, তাকওয়া মানে হলো—
👉 দুনিয়ার জীবনে চলতে গিয়ে গুনাহের কাঁটা থেকে নিজেকে সাবধানে বাঁচানো।
সংক্ষেপে বললে,
ঈমান হলো ভিত্তি, আর তাকওয়া হলো সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো সুন্দর জীবন।
আমরা কী ঈমানকে দৃঢ় করে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারতেছি? প্রশ্ন থেকেই গেল।
৩. নামাজ ও ইবাদত
নামাজ হলো ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ এবং মুসলমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ হয় ও ঈমান মজবুত হয়।
আপনার ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হচ্ছে তো?
আর ইবাদত হলো—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা প্রতিটি কাজ। এমনকি হালালভাবে খাওয়া-দাওয়া, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করাও ইবাদত হয়ে যায়, যদি তা আল্লাহর জন্য করা হয়।
৪. দান ও সদকা
সূরা বাক্বারায় দান ও সদকা সম্পর্কেও বলা হয়েছে,,,
দান হলো,,,, নিজের সম্পদ, সময় বা সামর্থ্য থেকে কিছু বের করে অন্যকে সাহায্য করা।
দান শুধু টাকাপয়সা নয়, খাবার, কাপড়, জ্ঞান—যা-ই হোক না কেন, অন্যের কল্যাণে ব্যবহার করলে সেটি দান।
দান করলে সম্পদ কমে না, বরং আল্লাহ বরকত বাড়িয়ে দেন।
অন্য দিকে সদকা হলো,,, একজন মানুষ সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসে কি না, তার প্রমাণ দিতে আল্লাহর পথে খরচ করা।
সদকা দুই ধরনের:
1. ফরজ সদকা – যেমন যাকাত। ধনী মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক।
2. নফল সদকা – স্বেচ্ছায় যেকোনো ভালো কাজে খরচ করা।
৫. ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা
সূরা বাক্বারয় ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে,,,
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি ধৈর্যশীলদের সাথেই আছি।”
কষ্ট, দুঃখ, পরীক্ষা—এসব জীবনের অংশ। যে ধৈর্য ধরে, তার জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত আছে। আবার নেয়ামত পেলে কৃতজ্ঞ হওয়াও অত্যন্ত জরুরি।
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা—দুটিই একজন মুমিনের পরিচয় বহন করে।
অথচ আমরা এ বিষয়ে বেশি অবহেলা করি।
৬. বনী ইসরাইলের ইতিহাস ও শিক্ষা
আল্লাহ সূরা বাক্বারায় বনী ইসরাইলের অনেক ঘটনা তুলে ধরেছেন। কীভবে তাঁরা আল্লাহর নেয়ামত পেয়েও অবাধ্য হয়েছিল, নবীদের হত্যা করেছিল, মিথ্যা বলেছিল এবং তারা কীভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিল।
এজন্য আল্লাহ বারবার মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করেছেন যেন আমরা বনী ইসরাইলের মতো অবাধ্য না হই।
৭. কিবলা পরিবর্তন
সূরা বাক্বারাহ থেকে জানা যায় প্রথমে মুসলমানরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তো। পরে আল্লাহর নির্দেশে কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তন করা হলো।
এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য সম্মান ও পরিচয়ের প্রতীক। আল্লাহ চেয়েছেন মুসলিম জাতি আলাদা মর্যাদা পাক। আর সেজন্যই কেবলা পরিবর্তন করা হলো।
৮. আইন-কানুন ও বিধান
সূরা বাকারাহতে জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রের জন্য বিধান দেওয়া হয়েছে:
রোযা ফরজ করা হয়েছে।
হজ্জের নিয়ম শেখানো হয়েছে।
বিবাহ-তালাকের বিধান দেওয়া হয়েছে।
খাদ্যের হালাল-হারাম স্পষ্ট করা হয়েছে।
তাই বলা চলে ইসলাম কেবল ইবাদতের ধর্ম নয়, বরং পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।
৯. আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
সূরা বাক্বারার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মনে করিয়ে দেন, এ জীবনই শেষ নয়। মৃত্যুর পর কিয়ামত আসবে, মানুষকে তার সব কাজের হিসাব দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ধারণ করা হবে।
আল্লাহ বলেন, যে আখিরাতকে ভুলে যায়, সে পথ হারায়। কিন্তু যে আখিরাতকে মনে রাখে সে ন্যায়পথে থাকে।
১০. আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা
সূরা বাক্বারায় সবশেষে আল্লাহ আমাদের এক বড় আশ্বাস দেন— আল্লাহ বলেন,
“আমি কারো ওপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব দেই নি।”
আরো বলেন, তোমরা দোয়া করো—
“হে আমাদের রব, যদি আমরা ভুল করি তবে আমাদের ধরো না। তুমি আমাদের ক্ষমা করো, তুমি আমাদের প্রতি দয়া করো।”
আল্লাহ দয়ালু, তাঁর দরজা সবসময় খোলা। বান্দা যদি আন্তরিকভাবে ফিরে আসে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।
#ইসলাম #ইসলাম_একটি_পূর্নাঙ্গ_সমাধান