24/06/2025
“তোমরা যারা আইফেল টাওয়ারের নিচে তোলা সেলফি দেখে রাতজেগে স্বপ্ন বুনো…”
তোমাদের বলছি—
এই ছবিগুলো কেবল বাইরের ঝলক দেখায়, ভেতরের অন্ধকার কেউ দেখে না, কেউ বুঝতেও চায় না।
ফ্রান্সে থাকা মানে বিলাসিতা, স্বাধীনতা, ক্যাফেতে বসে কফি খাওয়া, রোমান্টিক রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া—
এইরকম একটা ছবি তোমরা দেখে এসেছো ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামে।
কিন্তু বাস্তবতা?
তা অনেক বিষাক্ত।
এখানে এমন এক এক কামরা আছে, যেখানে ১০-১২ জন মানুষ একটা ভাঙা রুমের ভেতর গাদাগাদি করে থাকে।
ঘরের কোনায় কোনায় ঝুলে থাকে ভ্যাজভ্যাজে রান্নার গন্ধ,
একজনের নিঃশ্বাসে আরেকজন দম বন্ধ হয়ে যায়।
একটা বাথরুম, একটা চুলা, তাও ভাগ করে নেওয়া।
কারোর নাইট শিফট, কারোর ডে শিফট—সারাক্ষণ চলতে থাকে একটা নিঃশব্দ যুদ্ধ।
কেউ কথা বলেনা কারো সাথে মন খুলে,
কারণ সবারই মনে জমে থাকা দুঃখগুলো এত ভারি যে, আরেকজনের কাঁধে চাপাতে লজ্জা লাগে।
দিনে ১০-১২ ঘণ্টা কাজ—কেউ রেস্টুরেন্টে থালা মাজার মানুষ,
কেউ নির্মাণসাইটে দাঁড়িয়ে হাড় ভাঙে,
কেউবা পেপার ডেলিভারি করে ভোররাতে।
বেতন ঠিকঠাক মেলে না,
আর প্রবাসী বাঙালি মালিকেরা সুযোগ পেলে বঞ্চনাই করে বেশি।
ঘরে ফিরেও শান্তি নেই।
জায়গা নেই ঠিকমতো শোয়ার, নেই একটুখানি নির্জনতা।
ঘুমের ভেতরেও কেউ কেউ চিৎকার করে উঠে বসে—
স্বপ্নে দেখে মা মারা গেছেন, আর তার শেষ মুখটাও দেখা হলো না!
আর তবুও তারা হাসে।
সেলফি তোলে।
আইফেল টাওয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে বলে, “ভালই আছি ভাই!”
কারণ দেশে থাকা মা যেন না কাঁদে,
ভাই যেন ভাবে—“আমার ভাইটা বড় কিছু হয়েছে”,
বন্ধুরা যেন ঈর্ষা করে।
এই মিথ্যে ভালো থাকা, এই অভিনয়ের ভার এত বেশি যে,
অনেকেই রাতে চুপিচুপি কাঁদে, কেউ কেউ বিষণ্নতায় হারিয়ে যায়,
আর কেউ কেউ নিজের মধ্যে নিজেই গুমরে মরে।
তাই বলছি—
সেলফির হাসিমুখ দেখে জীবনকে বিচার করো না।
এই শহরের আলো যতটা ঝলমলে, তার চেয়েও বেশি অন্ধকার বাস করে অভিবাসীদের চোখের নিচে জমে থাকা সেই কালো ছায়ায়।
“ফ্রান্সে আছি” বলার পেছনে থাকে—
ঘুম না হওয়া অনেক রাত,
বেতন না পাওয়া অনেক মাস,
ভালো না থেকেও বলার অভ্যাস:
“ভালোই আছি ভাই, আলহামদুলিল্লাহ।”©