21/08/2025
শিশুদের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স
আসলানের যে ব্যাপারটা আমাকে চমৎকৃত করে সেটা হলো তার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, মাত্র চার বছর বয়সে।
আমার মন খুব খারাপ ছিল, তার মধ্যে চিংড়ি মাছ কাটার কাঁচি খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই বসে বসে বলছি, কাঁচি না পেলে আজকে রান্নাই করবো না, জাস্ট এইটুকুই। আসলান, দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, Mummy it’s good to have feelings, তারপর সে আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেদিন ওর বাবা একটা ধমক দিয়েছিল ঘুমানোর সময় বেশি লাফাচ্ছিল তাই, বাবাকেও রাগ নিবারনের ফুল সার্কেল বুঝিয়ে দিয়েছে নিজে একটুও কষ্ট না পেয়ে যে বাবা বকা দিল কেন। এই যে শুধু নিজের না সাথে অন্যের আবেগও বুঝতে পারা এটা একটা বিশাল গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা যা আমরা বড়রাই করতে হিমশিম খাই।
লিখছি শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখাবার ৬টি উপায়।
১. আবেগ সম্পর্কে ধারনা দিয়েছি
আমি আমার বাচ্চাদের শিখিয়েছি, আবেগের নাম যেমনঃ দুঃখ, রাগ, হতাশা। সেই সাথে ধারনা দিয়েছি এগুলো স্বাভাবিক অনুভূতি, এগুলো "খারাপ" আবেগ নয় এগুলি হল সংকেত। বাচ্চাদের সবসময় কোন অনুভূতি কি কারনে হচ্ছে তার কারন বুঝিয়ে বলেছি যে “তুমি দুঃখ পাচ্ছ কারন তোমার প্রিয় গাড়ি টা হারিয়ে গেছে । “
২. বাচ্চার আবেগকে স্বীকৃতি দেওয়াঃ
যে কোন কারনে আমার বাচ্চারা রাগ, জেদ, হতাশা, কান্না করলে আমি সবার আগে বলেছি, আমি বুঝতে পারছি তোমার রাগ লাগছে। এবং তাদের ভরসা দিয়েছি যে যে কোন আবেগ প্রকাশ করার জন্য মা একটা নিরাপদ স্থান। যে বাচ্চা বলতে পারে “আমার রাগ লাগছে”, তার চিৎকার করার সম্ভাবনা কম।
৩. আপনার রিয়াকশন বাচ্চার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করেঃ আবেগকে প্রকাশ করার নিরাপদ মাধ্যম আপনাকে শেখাতে হবে, বাচ্চা জেদ করলে যদি আপনিও রিয়াক্ট করেন তাহলে বাচ্চা আপনার সাথে কিছু শেয়ার করবে না, তখনই ট্যানট্র্যাম বাচ্চারা আরো বেশি করে। আপনি যদি তাদের তীব্র আবেগের জবাবে হতাশা বা আতঙ্ক দেখান, তাদের মস্তিষ্ক শেখে যে আবেগ নিরাপদ নয়। আপনার শান্তভাব তাদের শেখায় যে আবেগ খারাপ কিছু না, এর মোকাবেলা করা যায়।
৫. আবেগ নিয়ন্ত্রন একটা স্কিল যা শেখাতে হয়ঃ
আপনার বাচ্চা যখন বড় বড় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খায়, যেমন রাগ, জেদ, দুঃখ তখন “শান্ত হও, কান্না বন্ধ করো, সিনক্রিয়েট করো না”, এগুলি কাজ করে না। তখন আপনাকে বলে দিতে হবে কি করলে ওর ভাল লাগবে। যেমন তাদের বলি: "তোমার শরীর এখন অনেক শক্তি অনুভব করছে। গভীব শ্বাস নেবে নাকি বালিশে ঘুষি মেরে নাকি লাফিয়ে শক্তি বের করবে?"
৬. আবেগের নিয়ন্ত্রণ চর্চা করা খারাপ আচরন ঠিক করার চেয়ে সহজঃ
আমার বাচ্চাদের আমি ধ্বংসাত্মক আচরণের আগেই মন শান্ত করার কৌশল শেখাই। মোমবাতি নিভানো (গভীর শ্বাস), শক্তি ঝেড়ে ফেলা, বা নিরিবিলি জায়গায় বসে শান্ত হওয়া যেগুলি আসলান দারুন ভাবে রপ্ত করেছে।
আবেগ এড়ানো নয়, বোঝা প্রয়োজন। শিশুরা যদি মনে করে আবেগ থেকে পালাতে হবে বা লুকাতে হবে তাহলে তারা তা শিখবে না। বিশেষ করে আমাদের দেশে ছেলে বাচ্চাদের আবেগ প্রকাশে দারুন নিরুৎসাহিত করা হয় যার কারনে ছেলেদের নানান মানসিক সমস্যা দেখা দেয় বড় হয়ে। আমি আমার বাচ্চাদের ভরসা দেই যে নিজের আবেগ সামলানোর জন্য সে যথেষ্ট শক্তিশালী।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ আপনি শেখাতে পারবেন নিজে উদাহরণ হয়ে, তাই শিশুর আগে নিজের আবেগ সামলানো জরুরী।