04/03/2025
গতকাল দেখলাম অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন তার ছেলের জন্মদিন নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, তার ছেলে নিষাদ হুমায়ূন এর জন্মদিন ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। ছেলের ১৮ বছরের জন্মদিন নিয়ে মা ছেলের উচ্ছ্বাস ছিল কিন্তু জন্মদিনের আগ মুহূর্তে ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তাকে ডিবি পুলিশ তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে যান।
পরদিন মানে ৭ ফেব্রুয়ারি বিকালে বাড়ি ফিরে আসেন শাওন। কয়েক ঘণ্টা তাকে সেখানে থাকতে হয়। ছেলের জন্মদিনের শুরুতে তিনি ছেলের সাথে থাকতে পারেন নাই এবং ছেলের জন্য তা মানসিক ভাবে আঘাত ছিল।
তিনি লিখেছেন সত্য কে সত্য বলাতে তাকে এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সত্যিই দুঃখজনক।
দুঃখজনক এই জন্য যে , হঠাৎ এক সন্ধ্যায় শাওন আপনার মনে হলো সত্যি কথা বলা প্রয়োজন ।
আপনি লাগাতার মিথ্যা আর অত্যাচারের পক্ষে সাফাই গাইতে গাইতে সত্যি মিথ্যার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সত্যি খুঁজে পেলেন হঠাৎ একদিন?
আপনার ছেলের ১৮ বছরের জন্মদিনের কয়েক ঘণ্টা আপনি তার সঙ্গে ছিলেন না অনেক কষ্ট হয়েছে আপনার!
কিন্তু চিন্তা করে দেখবেন কখনো শহীদ ফাইয়াজ ও আপনার ছেলের বয়সী ছিল , যে ১৮ বছর বয়সে পদার্পণই করতে পারল না।
সে তার মায়ের একমাত্র ছেলে ছিল তার মা আর কখনো ছেলের জন্মদিন পালন করতে পারবে না। ছেলের মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে হবে ফাইয়াজের মায়ের। আপনার হাসিনা আপা কিংবা খালা যাই ডাকেন তার পুলিশ ফাইয়াজের মাকে ১৭ বছরের ছেলের লাশ উপহার দিয়েছে এই জুলাই মাসেই।
রিয়া গোপ এর বয়স ছিল ছয় আপনার নিশাদের বয়স তো ১৮ হয়েছে এবং সে বেঁচে আছে , আপনার বুকে আছে। রিয়ার আর কখনো কোনো জন্মদিন হবে না। সে কিন্তু কোনো মিছিলে যায় নাই সে তার বাড়ির ছাদে ছিল যখন আপনার হাসিনা আপা/খালার পুলিশ হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে।
শিশু আহাদের বয়স ছিল পাঁচ কিংবা ছয়। সে-ও বাসার বারান্দায় ছিল তার ও কোনো জন্মদিন করবে না তার মা করবে মৃত্যুবার্ষিকী।
একটি পরিবারের সব জন্মদিন আপনার আপার পুলিশের গুলিতে শেষ।
কয়েক ঘণ্টা আপনাকে ছাড়া আপনার ছেলের অনেক কষ্ট হয়েছে জন্মদিনে ! তাহলে একবার চিন্তা করে দেখবেন কি, ব্যারিস্টার আরমানকে আয়নাঘরে যখন আটকে রেখেছিল আপনার মহান নেত্রী শেখ হাসিনা আটটি বছর, তখন ব্যারিস্টার আরমানের মেয়েদের জন্মদিন গুলো কেমন ছিল?
আপনি তো জীবিত অবস্থায় ছিলেন কয়েক ঘণ্টা ডিবি অফিসে, আপনার পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে পুরো দেশ জানত আপনি কোথায় আছেন। আপনার ছেলেদের কাছে সেই কয়েক ঘণ্টাই অনেক কষ্টের ছিল মানছি, কিন্তু আরমানের মেয়েরা জানত না তাদের বাবা আটটি বছর জীবিত আছে না মারা গেছে। মারা গেলেও বাবার লাশটা কোথায়, কবরটাই বা কোথায় আছে?
আপনি একাকীত্বের কথা বলছেন, আরমানের স্ত্রী সন্তানরাও একা বছরের পর বছর অনিশ্চয়তা, আতংক , হুমকি ধমকি নিয়ে জীবন পার করেছে। কই সেই ঘটনা জানার পর আপনি তো একবারও সত্যি কথা বলে একটি স্ট্যাটাস দেন নাই?
সত্যি বলতে চাইলে আপনার কাছে অনেক সত্য দেখানো যাবে কখনো কি এই সত্যি গুলো শুনতে ইচ্ছা হবে আপনার?
জুলাই মাসে আপনার বাচ্চার বয়সী বাচ্চাদের উপর যখন নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা তখন কি একবারও মনে হয়নি অন্যায় হচ্ছে? তখন একবারও সত্যি কথা বলতে ইচ্ছা হলো না আপনার!
একটি বার বলতেন যা হচ্ছে খুব অন্যায় হচ্ছে! গুলি না চালিয়েও সমাধানের পথ বের করা হোক!
আপনার বুকের ভেতর কি শুধু ইট পাথরের মুর্তি ভাঙচুর হলেই রক্তক্ষরণ হয় ? কোনো মায়ের সন্তান কে হত্যা করা হলে কোনো অনুভূতি হয় না?
বাচ্চাগুলো তো আওয়ামী লীগ বুঝত না, বিএনপি, জামাত শিবির বুঝত না তবুও আপনার মনে হয়নি ওদেরকে গুলি করা চরম অন্যায় হচ্ছে?
একজন বাবা মায়ের কাছে সন্তানের মৃত্যু যে কতটা কষ্টের জিজ্ঞেস করে দেখবেন কখনো কোনো সন্তান হারা বাবা-মা কে। পৃথিবীর গভীরতম শোক কাকে বলে!
যে ব্যক্তির স্ত্রী হিসেবে নিজেকে গর্বিত ভাবেন, সেই হুমায়ূন আহমেদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে অন্তত জুলাই আগস্ট মাসে আপনার স্ট্যাটাস হতে পারত, এই বাচ্চা বাচ্চা ছাত্রদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে।
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একমাত্র সুশীল ব্যক্তি যিনি শাসকের ভুল গুলো চোখে চোখ রেখে বলতেন ভুল হচ্ছে। তিনি কখনো সত্য বলতে দ্বিধা করেন নাই। তাঁর সত্য কখনো দলীয় পক্ষ বিপক্ষ বিবেচনা করে হত না।
হুমায়ূন আহমেদের প্রতি যদি সন্মান রাখতে পারেন তাহলে সব সত্য নিয়ে কথা বলবেন। পক্ষপাতদুষ্ট সত্য নিয়ে কথা বলতে হলে কখনো হুমায়ূন আহমেদকে টানবেন না।
তখন আপনি শুধু মেহের আফরোজ শাওন। একজন ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর।
লেখক: MD Iqbal Ansary