12/12/2025
গবেষণাপত্র পড়বেন যেভাবে
• আজিজুল হক সহকারী অধ্যাপক ইয়েংনাম ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়া
যেকোনো বিষয়ে গবেষণার শুরুতে প্রায় সব নতুন গবেষকরা একটি সাধারণ সমস্যায় পড়েন । কীভাবে একটি Scientific Paper পড়তে হবে বা পর্যালোচনা করতে হবে, কোন অংশে বেশি মনোযোগ দিতে হবে, সেটি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেন না। এক্ষেত্রে কিছু দিক মাথায় রাখা যেতে পারে ।
চলুন এক নজরে দেখে নিই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো—
কেন আপনি গবেষণাপত্রটি পড়ছেন তা নির্ধারণ করুন—গবেষণাপত্র পড়া শুধু তথ্য জানার জন্য নয়, বরং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে শেখার একটি প্রক্রিয়া । আপনি একটি গবেষণাপত্র থেকে কী জানতে বা শিখতে চান, সেটিই নির্ধারণ করবে আপনি কীভাবে সেটি পড়বেন। উদ্দেশ্য স্পষ্ট না থাকলে পড়া শুধু সময়ের অপচয় হবে । তাই প্রথমেই নিজের লক্ষ্য স্পষ্ট করুন।
লেখকের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করুন- প্রত্যেক গবেষণাপত্রের পেছনে একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট
প্রতিটি ফিগার ও টেবিল ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন—গবেষণাপত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ডেটা, যা সাধারণত ফিগার ও টেবিলের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়। প্রতিটি ফিগার দেখার সময় x-axis, y-axis, legend, scale, color use statistical analysis খেয়াল করুন। টেবিল পড়ার সময় variable, unit, sample size, I summary information শনাক্ত করুন। প্রয়োজনে Methods section-এ ফিরে গিয়ে data collection I analysis-এর প্রক্রিয়া যাচাই করুন। সবশেষে ভাবুন প্রতিটি ফিগার বা টেবিলের take-home message কী। ফরম্যাটিংয়ের উদ্দেশ্য বোঝা — গবেষণাপত্রের প্রতিটি অংশের আলাদা উদ্দেশ্য থাকে । Results অংশে তথ্য উপস্থাপন করা হয়, আর Discussion অংশে লেখকের বিশ্লেষণ থাকে। তাই প্রতিটি সেকশনের উদ্দেশ্য বোঝার জন্য জার্নালের ‘For Authors' নির্দেশনা ভালোভাবে পড়া প্রয়োজন ।
সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়ুন — গবেষণাপত্র পড়ার সময় কেবল তথ্য গ্রহণ নয়, তা বিশ্লেষণও করুন। লেখকের যুক্তি কতটা যথার্থ, কোনো
THE GREAT BANGLADESH
FOLLOW US
গবেষণাপত্র সত্যিকারভাবে বুঝতে হলে কেবল একবার পড়ে থেমে যাওয়া যথেষ্ট নয়। অনেক সময় আপনাকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। অপরিচিত পরিভাষা খুঁজে দেখা, প্রাসঙ্গিক ব্যাকগ্রাউন্ড পড়া বা লেখকের রেফারেন্স গবেষণাপত্রলো পর্যবেক্ষণ। অনেকে বলেন একটি গবেষণাপত্র তিনবার পড়া উচিত : প্রথমবার শুধু বোঝার চেষ্টা ছাড়াই পড়ুন, দ্বিতীয়বার বুঝতে চেষ্টা করুন, আর তৃতীয়বার নোট নিন। আপনি যেভাবেই পড়ুন না কেন, নিজের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়টি অনুসরণ
করুন।
আলোচনা করুন—গবেষণাপত্র নিয়ে আলোচনা করলে বোঝার গভীরতা বাড়ে। Journal Club, ল্যাব মিটিং বা সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিন। গবেষণাপত্র নিয়ে কথা বললে নিজের চিন্তাভাবনা পরিষ্কার হয় এবং অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও শেখা যায় । ‘To teach is to learn twice' কথাটি এখান থেকেই এসেছে।
শিখে পড়া এবং পড়তে পড়তে শেখা— গবেষণাপত্র পড়ার আসল উদ্দেশ্য শুধু বোঝা নয়, বরং শেখা বিষয়গুলোকে নিজের
থাকে। লেখক কেন এই গবেষণাটি করেছেন, কোন সমস্যাটি সমাধান করতে চেয়েছেন এবং এটি পূর্ববর্তী গবেষণার সাথে কীভাবে সম্পর্কিত এই বিষয়গুলো বোঝা অত্যন্ত জরুরি । গবেষণাপত্র পড়ার সময় নিজেকে ছয়টি মৌলিক প্রশ্ন করুন
১. লেখক কী জানতে চেয়েছেন? ২. তারা কীভাবে তা করেছেন? ৩. কেন এই পদ্ধতিতেই কাজটি করা হয়েছে? ৪. ফলাফল কী দেখাচ্ছে?
৫. লেখক কীভাবে ফলাফল ব্যাখ্যা করেছেন? ৬. এরপর কী করা যেতে পারে? (গবেষণার ভবিষ্যৎ দিক বা সম্ভাব্য পরবর্তী ধাপ) এই ছয়টি প্রশ্ন শুধু পুরো গবেষণাপত্রের জন্য নয়, বরং প্রতিটি টেবিল, ফিগার ও পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ।
বিকল্প ব্যাখ্যা সম্ভব কি না, তা ভেবে দেখুন । তবে সমালোচনায় ভদ্রতা বজায় রাখুন এবং তা যেন সবসময় গঠনমূলক হয় । গবেষণাপত্র পড়া মানে যুক্তিনির্ভরভাবে চিন্তা করা, প্রশ্ন তোলা এবং প্রয়োজনে নিজের ধারণাকেও নতুনভাবে ভাবা ।
সদয় হোন—গবেষণাপত্রের লেখকরাও মানুষ । তাই যতটা সম্ভব তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকুন । কোনো বাক্য বা ধারণা বুঝতে না পারলে ধৈর্য ধরে পড়ুন । ছোটখাটো ভুলে হতাশ না হয়ে মূল কাজের মানে মনোযোগ দিন । সমালোচনা করতে হলে ভদ্রভাবে করুন, কারণ একটি গবেষণাপত্রের পেছনে বছরের পর বছর পরিশ্রম থাকে। সদয় ও গঠনমূলক মন্তব্যই গবেষণার ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তোলে। একটু বাড়তি পরিশ্রম করুন—একটি
গবেষণায় প্রয়োগ করা। প্রতিটি গবেষণাপত্র একেকটি জ্ঞানের ইটের মতো, যা একত্রে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলে। আপনি যখন কোনো গবেষণাপত্র পড়ছেন, তখন চেষ্টা করুন এটি কীভাবে অন্য গবেষণার ধারণা, পদ্ধতি বা ফলাফলের সঙ্গে সম্পর্কিত তা বোঝার যত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করবেন, তত নতুন প্রশ্ন, নতুন আগ্রহ এবং নতুন গবেষণার দিক উন্মোচিত হবে। এভাবেই গড়ে ওঠে 'active reading' যেখানে পড়া মানে শুধু তথ্য গ্রহণ নয়, বরং সেই জ্ঞান থেকে নতুন চিন্তা ও গবেষণার পথ তৈরি করা।
গবেষণাপত্র পড়তে পারার অভ্যাস নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয়। নিয়মিত চর্চা করলে আপনি শুধু ভালো পাঠকই হবেন না, বরং দক্ষ ও সৃজনশীল গবেষকও হয়ে উঠবেন।