The Great Bangladesh

The Great Bangladesh We share positive vibes and the latest good news to help people start the day informed and inspired. Stay connected with us!
(2)

Content comes from newspapers, books, and magazines, with sources always cited.

12/12/2025

গবেষণাপত্র পড়বেন যেভাবে
• আজিজুল হক সহকারী অধ্যাপক ইয়েংনাম ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়া
যেকোনো বিষয়ে গবেষণার শুরুতে প্রায় সব নতুন গবেষকরা একটি সাধারণ সমস্যায় পড়েন । কীভাবে একটি Scientific Paper পড়তে হবে বা পর্যালোচনা করতে হবে, কোন অংশে বেশি মনোযোগ দিতে হবে, সেটি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেন না। এক্ষেত্রে কিছু দিক মাথায় রাখা যেতে পারে ।
চলুন এক নজরে দেখে নিই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো—
কেন আপনি গবেষণাপত্রটি পড়ছেন তা নির্ধারণ করুন—গবেষণাপত্র পড়া শুধু তথ্য জানার জন্য নয়, বরং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে শেখার একটি প্রক্রিয়া । আপনি একটি গবেষণাপত্র থেকে কী জানতে বা শিখতে চান, সেটিই নির্ধারণ করবে আপনি কীভাবে সেটি পড়বেন। উদ্দেশ্য স্পষ্ট না থাকলে পড়া শুধু সময়ের অপচয় হবে । তাই প্রথমেই নিজের লক্ষ্য স্পষ্ট করুন।
লেখকের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করুন- প্রত্যেক গবেষণাপত্রের পেছনে একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট
প্রতিটি ফিগার ও টেবিল ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন—গবেষণাপত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ডেটা, যা সাধারণত ফিগার ও টেবিলের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়। প্রতিটি ফিগার দেখার সময় x-axis, y-axis, legend, scale, color use statistical analysis খেয়াল করুন। টেবিল পড়ার সময় variable, unit, sample size, I summary information শনাক্ত করুন। প্রয়োজনে Methods section-এ ফিরে গিয়ে data collection I analysis-এর প্রক্রিয়া যাচাই করুন। সবশেষে ভাবুন প্রতিটি ফিগার বা টেবিলের take-home message কী। ফরম্যাটিংয়ের উদ্দেশ্য বোঝা — গবেষণাপত্রের প্রতিটি অংশের আলাদা উদ্দেশ্য থাকে । Results অংশে তথ্য উপস্থাপন করা হয়, আর Discussion অংশে লেখকের বিশ্লেষণ থাকে। তাই প্রতিটি সেকশনের উদ্দেশ্য বোঝার জন্য জার্নালের ‘For Authors' নির্দেশনা ভালোভাবে পড়া প্রয়োজন ।
সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়ুন — গবেষণাপত্র পড়ার সময় কেবল তথ্য গ্রহণ নয়, তা বিশ্লেষণও করুন। লেখকের যুক্তি কতটা যথার্থ, কোনো
THE GREAT BANGLADESH
FOLLOW US
গবেষণাপত্র সত্যিকারভাবে বুঝতে হলে কেবল একবার পড়ে থেমে যাওয়া যথেষ্ট নয়। অনেক সময় আপনাকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। অপরিচিত পরিভাষা খুঁজে দেখা, প্রাসঙ্গিক ব্যাকগ্রাউন্ড পড়া বা লেখকের রেফারেন্স গবেষণাপত্রলো পর্যবেক্ষণ। অনেকে বলেন একটি গবেষণাপত্র তিনবার পড়া উচিত : প্রথমবার শুধু বোঝার চেষ্টা ছাড়াই পড়ুন, দ্বিতীয়বার বুঝতে চেষ্টা করুন, আর তৃতীয়বার নোট নিন। আপনি যেভাবেই পড়ুন না কেন, নিজের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়টি অনুসরণ
করুন।
আলোচনা করুন—গবেষণাপত্র নিয়ে আলোচনা করলে বোঝার গভীরতা বাড়ে। Journal Club, ল্যাব মিটিং বা সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিন। গবেষণাপত্র নিয়ে কথা বললে নিজের চিন্তাভাবনা পরিষ্কার হয় এবং অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও শেখা যায় । ‘To teach is to learn twice' কথাটি এখান থেকেই এসেছে।
শিখে পড়া এবং পড়তে পড়তে শেখা— গবেষণাপত্র পড়ার আসল উদ্দেশ্য শুধু বোঝা নয়, বরং শেখা বিষয়গুলোকে নিজের
থাকে। লেখক কেন এই গবেষণাটি করেছেন, কোন সমস্যাটি সমাধান করতে চেয়েছেন এবং এটি পূর্ববর্তী গবেষণার সাথে কীভাবে সম্পর্কিত এই বিষয়গুলো বোঝা অত্যন্ত জরুরি । গবেষণাপত্র পড়ার সময় নিজেকে ছয়টি মৌলিক প্রশ্ন করুন
১. লেখক কী জানতে চেয়েছেন? ২. তারা কীভাবে তা করেছেন? ৩. কেন এই পদ্ধতিতেই কাজটি করা হয়েছে? ৪. ফলাফল কী দেখাচ্ছে?
৫. লেখক কীভাবে ফলাফল ব্যাখ্যা করেছেন? ৬. এরপর কী করা যেতে পারে? (গবেষণার ভবিষ্যৎ দিক বা সম্ভাব্য পরবর্তী ধাপ) এই ছয়টি প্রশ্ন শুধু পুরো গবেষণাপত্রের জন্য নয়, বরং প্রতিটি টেবিল, ফিগার ও পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ।
বিকল্প ব্যাখ্যা সম্ভব কি না, তা ভেবে দেখুন । তবে সমালোচনায় ভদ্রতা বজায় রাখুন এবং তা যেন সবসময় গঠনমূলক হয় । গবেষণাপত্র পড়া মানে যুক্তিনির্ভরভাবে চিন্তা করা, প্রশ্ন তোলা এবং প্রয়োজনে নিজের ধারণাকেও নতুনভাবে ভাবা ।
সদয় হোন—গবেষণাপত্রের লেখকরাও মানুষ । তাই যতটা সম্ভব তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকুন । কোনো বাক্য বা ধারণা বুঝতে না পারলে ধৈর্য ধরে পড়ুন । ছোটখাটো ভুলে হতাশ না হয়ে মূল কাজের মানে মনোযোগ দিন । সমালোচনা করতে হলে ভদ্রভাবে করুন, কারণ একটি গবেষণাপত্রের পেছনে বছরের পর বছর পরিশ্রম থাকে। সদয় ও গঠনমূলক মন্তব্যই গবেষণার ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তোলে। একটু বাড়তি পরিশ্রম করুন—একটি
গবেষণায় প্রয়োগ করা। প্রতিটি গবেষণাপত্র একেকটি জ্ঞানের ইটের মতো, যা একত্রে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলে। আপনি যখন কোনো গবেষণাপত্র পড়ছেন, তখন চেষ্টা করুন এটি কীভাবে অন্য গবেষণার ধারণা, পদ্ধতি বা ফলাফলের সঙ্গে সম্পর্কিত তা বোঝার যত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করবেন, তত নতুন প্রশ্ন, নতুন আগ্রহ এবং নতুন গবেষণার দিক উন্মোচিত হবে। এভাবেই গড়ে ওঠে 'active reading' যেখানে পড়া মানে শুধু তথ্য গ্রহণ নয়, বরং সেই জ্ঞান থেকে নতুন চিন্তা ও গবেষণার পথ তৈরি করা।
গবেষণাপত্র পড়তে পারার অভ্যাস নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয়। নিয়মিত চর্চা করলে আপনি শুধু ভালো পাঠকই হবেন না, বরং দক্ষ ও সৃজনশীল গবেষকও হয়ে উঠবেন।

12/12/2025

আজকের সব জরুরি আপডেট একসাথে 📢
👉১২ ডিসেম্বরের খবর দেখে নিন!
#আজকেরসংবাদ #আজকেরখবর #বাংলাদেশসংবাদ #বাংলাদেশনিউজ #ব্রেকিংনিউজ #বাংলাখবর #আজকেরবিশেষ #আজকেরশিরোনাম #বাংলাদেশ #খবরআজকের #সাম্প্রতিকখবর #আজকেরবাংলাদেশ

12/12/2025
12/12/2025

'না' বলতে শিখুন!

• মো. আশিকুর রহমান
ব্যস্ত জীবনে অনেক মানুষই অন্যের অনুরোধ, দায়িত্ব বা কাজকে না বলতে পারেন না। ফলে নিজের কাজের চাপ বাড়ে, সময় কমে যায় এবং মানসিক চাপ দ্বিগুণ হয় । অথচ অপ্রয়োজনীয় বা অগ্রাধিকার-বহির্ভূত কাজগুলোতে 'না' বলাই উৎপাদনশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঠিক এ কারণেই বিশ্বজুড়ে The Art of Saying No Technique-একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশাগত ও ব্যক্তিগত দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কী এই টেকনিক
এটি এমন এক পদ্ধতি যেখানে আপনি সচেতনভাবে শিখে নিতে পারবেন : কোন অনুরোধ গ্রহণ করবেন
কোনগুলো বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করবেন • এবং কীভাবে 'না' বলবেন যাতে সম্পর্ক নষ্ট না হয়
এই টেকনিকের মূল লক্ষ্য হলো—নিজের সময় ও শক্তিকে সবচেয়ে জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করা। স্টিভ জবস বলেছিলেন, “ফোকাস মানে শুধু “হ্যা” বলা নয়; বরং শত শত বিষয়ে “না” বলা।'
এই পদ্ধতিটি কয়েকটি ধাপে ব্যবহার করা হয় আপনার অগ্রাধিকার পরিষ্কার করুন : প্রথমে ঠিক করুন—এই সপ্তাহ বা এই মাসে আপনার প্রধান লক্ষ্য কী ।
প্রতিটি অনুরোধকে মূল্যায়ন করুন : নিজেকে প্রশ্ন করুন—এই কাজটি কি আমার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিচ্ছে? আমাকে করতেই হবে? নাকি অন্য কেউ করলেও একই ফল পাওয়া যাবে? বিনীত কিন্তু দৃঢ়ভাবে 'না' বলুন : ‘সময় নেই'—এটা না বলে বরং বলুন- ‘এ মুহূর্তে আমার অগ্রাধিকার অন্য কাজ।' 'আমি এখন অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে পারছি না ।'
বিকল্প প্রস্তাব দিন (যদি চান)
‘আমি না পারলেও, অমুককে বলতে পারেন ।’ ‘পরের সপ্তাহে সময় দিতে পারব।'
!
নিজেকে অপরাধবোধ থেকে মুক্ত রাখুন : মনে রাখুন—আপনার সময় ও শক্তি সীমিত; অপ্রয়োজনীয় ‘হ্যাঁ’ মানে নিজের লক্ষ্যকে ‘না’
বলা ।
কেন এটি কার্যকর
'না বলতে শেখা' সরাসরি উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, কারণ—
সময় অপচয় হওয়া কমে মানসিক চাপ কমে
• অগ্রাধিকার-ভিত্তিক কাজ সম্পন্ন হয় নিজের সীমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে • আত্মবিশ্বাস ও সংযম-দুটিই উন্নত হয় অনেক সময় আমরা যেসব কাজকে 'ছোট অনুরোধ' মনে করি, সেগুলো জমতে জমতে বড় সময় নষ্ট করে—এই টেকনিক সেই সমস্যাকে প্রতিরোধ করে। ক্যারিয়ারে প্রয়োগ
করপোরেট জীবনে সহকর্মীর অনুরোধ, শেষ মুহূর্তের অপ্রয়োজনীয় মিটিং, কিংবা নিজের কাজের বাইরে দায়িত্ব—সব কিছুতেই 'না বলার দক্ষতা' গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে কম বাজেটের বা সময় অপচয়কারী ক্লায়েন্টকে বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করা দীর্ঘমেয়াদে বেশি লাভজনক হয় । শিক্ষার্থীদের জন্যও অপ্রয়োজনীয় আড্ডা, অনুরোধ বা অতিরিক্ত দায়িত্বকে 'না' বললে পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ে । সহায়ক টুলস The Great Bangladesh
Boundaries Checklist - কোন পরিস্থিতিতে 'না' বলবেন, আগে থেকেই ঠিক করা যায়
• Polite No Templates—প্রস্তুত ছোট বাক্য যা ব্যবহার করে সহজে প্রত্যাখ্যান করা যায়
• Eisenhower Matrix অনুরোধটির গুরুত্ব যাচাই করতে সহায়ক
Notion Personal Priority System নিজের অগ্রাধিকার লিষ্ট চোখের সামনে থাকলে 'না' বলা সহজ হয়

সোর্স ইত্তেফাক

12/12/2025

অর্থ শাস্ত্রের দৃষ্টিতে ৫৪ বছরের অর্থনীতি

ড. মো. আইনুল ইসলাম
১১ ডিসেম্বর ২০২৫
২০২৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ তার অভ্যুদয়ের ৫৪ বছর পূর্ণ করবে। দীর্ঘ এই সময়ের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসকে আধুনিক উন্নয়ন অর্থনীতির একটি ক্ল্যাসিক প্যারাডক্সিক্যাল কেস স্টাডি বললে অতুক্তি হবে না। অর্থাৎ, আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব বা স্ববিরোধী; কিন্তু সত্য হতে পারে এমন অবস্থা। ১৯৭১ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় দরিদ্রতম রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রার শুরুতেই হেনরি কিসিঞ্জারের কুখ্যাত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ উপাধি পাওয়া দেশটি আজ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সকল শর্ত পূরণ করেছে। অন্তত একটি শিল্পে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আরও অনেক আর্থ-সামাজিক সূচকে নজরকারা নৈপুণ্য দেখিয়েছে। এই যাত্রাপথে এ দেশের অর্থনীতি আর্থার লুইসের ‘দ্বৈত-অর্থনীতি মডেল’-এর একটি বাস্তব অভিব্যক্তি হয়ে উঠেছে, যেখানে কৃষি থেকে উদ্বৃত্ত শ্রম শিল্প ও সেবা খাতে স্থানান্তরিত হয়ে প্রবৃদ্ধির চাকা সচল করেছে। তবে এই রূপান্তরের গতি ও প্রকৃতি মূল্যায়ন করতে গেলে কার্ল মার্কস, সাইমন কুজ্নেৎস, রবার্ট সোলো, অমর্ত্য সেন, ডগলাস নর্থ, অ্যাঙ্গাস ডিটন, ড্যারেন অ্যাসম্বগলু, আর্থার পিগু, যোসেফ স্টিগল্টিজ-এর মতো প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদের তত্ত্বের আলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণের প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশ বর্তমানে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে রাষ্ট্রীয় উন্নতির নানা সূচকে নৈপুণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি বৈষম্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতারও এক বিপজ্জনক উদাহরণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। যেখানে শুধু আয় বৈষম্য নয়, সম্পদসহ বহুমাত্রিক বৈষম্যের অন্তর্গত অন্ধকার যত দিক আছে, তার সবই আছে। একইসঙ্গে এখানে সামরিক, আধা-সামরিক, ছদ্মসামরিক. তত্ত্বাবধায়ক, গণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারীসহ এমনকি অন্তর্বর্তী শাসনব্যবস্থারও উপস্থিতি দেখা গেছে। সমাজ-অর্থনীতি ও রাষ্ট্রের এই গতিপথে এসব ‘প্যারাডক্স’ কি ৫৪ বছরের আর্থিক নীতি ও কুশাসনের ফল, নাকি অন্য কিছু?
অর্থনীতি বিজ্ঞান বা শাস্ত্রের কাঠামোগত বিন্যাস ও রূপান্তর এবং মানব উন্নয়ন, বৈষম্য ও রাজনৈতিক তত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, রাজনৈতিক অর্থনীতির অপব্যাখ্যা করে রাষ্ট্র সচেতনভাবে এমন অর্থনৈতিক পথে হেঁটেছে, যা উন্নয়নকে সামান্যদের দিকে কেন্দ্রীভূত করেছে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করেছে, যা অর্থনীতি শাস্ত্রের প্রমাণিত তত্ত্বসমূহের আলোকে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়। এসব বুঝতে হলে বার্ষিক বাজেট বা আর্থিক বিবরণীই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং ধারাবাহিক নীতি-দর্পণ.। কারণ, অর্থনীতি শাস্ত্রমতে বাজেট হলো ‘রাষ্ট্রের নৈতিকতা, অগ্রাধিকার ও ক্ষমতার বণ্টনের ব্যারোমিটার’, যার মাধ্যমে প্রতিটি বরাদ্দ ও করকাঠামো সরাসরি বলে দেয়, রাষ্ট্র কোনো শ্রেণিকে কতটা সুযোগ দিচ্ছে, কোন খাতকে ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসেবে দেখছে, আর কোন অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীকে প্রান্তিক রেখে দিচ্ছে। ৫৪ বছরের অর্থনীতি মূল্যায়নে বাজেট বিশ্লেষণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে তিনটি কেন্দ্রীয় বিষয় পরিষ্কারভাবে ধরা যায়- প্রথমত, কাঠামোগত রূপান্তর: কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্প- সেবা খাতে অগ্রগতি হয়েছে কি না এবং তা কতটা সুসমন্বিতভাবে। দ্বিতীয়ত, আয়ের উৎস ও ব্যয়ের অগ্রাধিকার: রাজস্ব কাঠামো কতটা সরাসরি করভিত্তিক নাকি পরোক্ষ করের বোঝা আরোপভিত্তিক, যা বৈষম্য সৃষ্টি-পুনঃসৃষ্টি এবং ব্যয় বিন্যাসে সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোর মধ্যে ভারসাম্য ধ্বংস করে। তৃতীয়ত, বৈষম্য, দারিদ্র্য ও অঞ্চলগত ব্যবধান: বাজেটে কারা লাভবান ও কারা বাদ পড়ছে, সে তথ্যই রাষ্ট্রের উন্নয়ন চরিত্রকে সবচেয়ে স্পষ্ট করে। অর্থাৎ, বাজেট বিশ্লেষণ ছাড়া ৫৪ বছরের বাংলাদেশের অর্থনীতি আসলে অর্ধেকটাই অজানা থেকে যায়। রাষ্ট্রের নীতি-দর্শন, ক্ষমতা ও রাজনীতি এবং উন্নয়ন বাস্তবতার পূর্ণ বিবর্তনকে বুঝতে বাজেটই সবচেয়ে নির্ভুল ঐতিহাসিক নথি।
কাঠামোগত রূপান্তরের ব্যর্থতা- লুইস-সোলো-গারশেনক্রনের দৃষ্টিতে লুইস মডেল বলেছে, একটি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি তখনই রূপান্তরিত হয় যখন অতিরিক্ত শ্রম কৃষি থেকে শিল্পে স্থানান্তরিত হয়, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং শিল্প খাত মূলধন সঞ্চয় করে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে। সোলো মডেল এটিকে আরও গভীর করে বলে, মূলধন সঞ্চয়ের সীমা আছে, দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির একমাত্র টেকসই চালিকাশক্তি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। আর গারশেনক্রনের তত্ত্ব বলে. দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও বিলম্বিত উন্নয়নের দেশগুলোকে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব, বৃহৎ বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি আয়ত্ত করা। বাংলাদেশ ৫৪ বছরে এসবের কোনোটিই ধারাবাহিকভাবে করতে পারেনি। শিল্পায়ন হয়েছে, কিন্তু তা শ্রম স্থানান্তরভিত্তিক লুইসীয় রূপান্তরের মাধ্যমে নয়, বরং সস্তা শ্রম ও শোষণের ওপর ভিত্তি করে পোশাকখাতনির্ভর একমুখী প্রবৃদ্ধির ওপর দাঁড়িয়ে। প্রযুক্তিচালিত আধুনিক শিল্পের প্রসার সীমিত, কৃষি উৎপাদনশীলতার রূপান্তর অসম্পূর্ণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও প্রায় শূন্য। রাষ্ট্রীয় নীতির কাঠামো ছিল গারশেনক্রনের বিপরীত, যেখানে রাষ্ট্র নেতৃত্ব দেয় শ্রম-প্রযুক্তি-মূলধন-বিনিয়োগের সমন্বিত রূপান্তরে, সেখানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র বেছে নিয়েছে কালোটাকা বৈধকরণ, স্বজনপ্রীতি, করফাঁকি দেওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষা এবং বড় ব্যবসায়ী ও অবৈধ অর্থে ধনী হওয়াদের অনুকূল বাজেট নীতিমালা। এখানে আধুনিক শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের সঞ্চয়ন হয়নি; হয়েছে কেবল সম্পদ ওপরের দিকে কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া। ফলে দেশের সম্পদ বৈষম্য ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই সুবিধাবাদীদের হিসেবে গিনি সহগ ০.৪৯, যা প্রকৃত অর্থে ০.৮৪। গবেষণা বলছে, শীর্ষ ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মোট আয়ের ৪১ শতাংশ ভোগ করে, যেখানে নিম্ন ১০ শতাংশ পায় মাত্র ১.৩ শতাংশ। এই চিত্র লুইসীয় রূপান্তরের বিপরীত পথ নির্দেশ করে, যেখানে শিল্প খাত অধিকাংশ কর্মীকে পেছনে ফেলে অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীদের মুনাফায় পরিণত হয়েছে। এ জন্যই গত একদশকে শিল্প খাতে গড় উৎপাদন বৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ হলেও একই সময়ে মোট কর্মসংস্থান কমেছে ১৪ লাখ, যা প্রবৃদ্ধির শ্রমের পরিবর্তে পুঁজিনির্ভরতার স্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছে।

উন্নয়ন মানেই স্বাধীনতা: অমর্ত্য সেনের তত্ত্বে বাংলাদেশের ব্যর্থতা

অমর্ত্য সেনের মতে, উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে মানুষের সক্ষমতা অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, অধিকার, মর্যাদা ও সামাজিক অংশগ্রহণের স্বাধীনতা। প্রবৃদ্ধি নয়, মানুষের ‘স্বাধীন হওয়া’ মানেই উন্নয়ন। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির সংখ্যা বেড়েছে, মানুষের উন্নয়ন হয়নি। কারণ, বাজেটের বড় অংশ গেছে সেতু-ফ্লাইওভার-বিদ্যুৎ প্রকল্পে, যা আবার ধনীরা লুটেপুটে খেয়ে বাকিটুকু দিয়ে করে দিয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পুষ্টি-আবাসন খাত পেয়েছে বরাবরই কম; সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাস্তব উপকারভোগী দরিদ্ররা নয়, বরং পেনশন, সঞ্চয়পত্র, কৃষি ভর্তুকির মতো খাতগুলো বরাদ্দের বড় অংশ গ্রাস করেছে। দরিদ্রদের জন্য ভাতা আছে, কিন্তু তাদের সক্ষমতা বিস্তারের জন্য কাঠামোগত বিনিয়োগ নেই। অধ্যাপক সেনের দৃষ্টিতে, দুর্বল মানব উন্নয়ন অর্থনীতির রূপান্তর থামিয়ে দেয়। যখন একটি সমাজে শিক্ষা দুর্বল, স্বাস্থ্য অপ্রতুল, অধিকার সীমিত এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত; তখন প্রবৃদ্ধির সুফল স্বল্পসংখ্যক লোকের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়। বাংলাদেশের সমাজ আজ সেই অবস্থার প্রতিচ্ছবি।

বৈষম্য কি অবশ্যম্ভাবী? কুজনেৎস-মার্কস-পিকেটি

কুজনেৎস বলেন, উন্নয়নের শুরুতে বৈষম্য বাড়ে, পরে তা কমে। কারণ, শিল্পায়ন থেকে আসা সুফল ধীরে ধীরে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছায়। বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে, কিন্তু কমছে না-অর্থাৎ আমরা কুজনেৎস কার্ভের ‘ট্রানজিশন পয়েন্টে’ পৌঁছাইনি বা পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় শর্ত তৈরি হয়নি। আসলে তা হবেও না। কারণ, মার্কস অনেক আগেই উপসংহার টেনে বলেছেন, ‘পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মূলধন সর্বদা স্বভাবগতভাবেই জমা হয় অল্পসংখ্যক মালিকের হাতে।’ বাংলাদেশের বাজেটনীতি খেয়াল করলে দেখা যায়, কালো টাকা বৈধকরণ, অস্বচ্ছ ব্যাংকিং ব্যবস্থা, কর-ফাঁকির আইনি সুযোগ, রাজস্ব সংগ্রহের দুর্বলতা, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা মূলধনকে কাঠামোগতভাবে উচ্চবিত্তের হাতে কেন্দ্রীভূত করেছে। এটি মার্কসীয় ‘ক্যাপিটাল অ্যাকুমুলেশশন’-এর টেক্সটবুক উদাহরণ। অন্যদিকে পিকেটির সমীকরণ বলছে, মূলধনের আয় হার যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে যায়, তবে সম্পদ বৈষম্য অবধারিতভাবে বাড়তে থাকে। বাংলাদেশে ঠিক তা-ই হয়েছে। ব্যাংক সুদ, স্থাবর সম্পদের মূল্যবৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্রের সুদ, জমির দাম বৃদ্ধি সবই মূলধনের আয়ের হারকে শ্রম আয়ের তুলনায় বহুগুণ বাড়িয়েছে। বাজেটনীতির কারণেই সর্বদা তার সুফল নিম্নবিত্তের কাছে পৌঁছায় না। ফলে বছর বছর সম্পদ বৈষম্য নতুন জ্বালানি পায় এবং সমাজ ক্ষুদ্র ধনী জগৎ ও বৃহত্তর দরিদ্র-নিম্নমধ্যবিত্তের জগৎ নামে ভাগ হয়ে আরও দূরে সরে যায়। এই প্রবণতা বাংলাদেশে ৫৪ বছর পরে এসে স্পষ্ট রূপ পেয়েছে। ফলে কয়েকদিনের ব্যবধানে শত শত শিশু-কিশোর-তরুণ এ দেশেরই মানুষের হাতে গুলি খেয়ে প্রাণ দিয়েও দেশের সমাজব্যবস্থাকে বিন্দুমাত্র পরমতসহিষ্ণু করতে পারেনি।
৫৪ বছরে ধরে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করা বাংলাদেশকে এখনই বুঝতে হবে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর কৈশর, তারুণ্য, মধ্যবয়স্ক কাল পেরিয়ে এখন বার্ধক্যযাত্রার সময় এসেছে। এখন অন্তত ‘বুঝতে’ হবে যে, নব নব উন্নয়ন মানে শুধু জিডিপি বা মাথাপিছু আয় নয়; নব উন্নয়ন মানে হচ্ছে সেই অর্জন যেখানে প্রতিটি মানুষের সক্ষমতা, নিরাপত্তা, মর্যাদা, স্থিতিশীল ও নিশ্চিত এক জীবন পাওয়া যায়। যদি অর্থ ও শাসনের নীতি কেবল সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে সমাজের বড় অংশ হয় ভিক্ষুক, না-হয় মধ্যবিত্তের পতনশীল শাখায় পড়ে। এ জন্যেই বাংলাদেশের উন্নয়ন এখনো সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়; বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিপরীতমুখী, রাজনৈতিকভাবে আত্মধ্বংসী। এ অবস্থায় মাথাপিছু আয় বাড়লেও, সম্পদ ও সুযোগের বৈষম্য সমাজের গোড়াকে শক্ত হতে দেবে না। যা অবধারিতভাবেই এই ভূখণ্ডে বারংবার ঐশ্বরিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো মানবসৃষ্ট সংঘাত-বিক্ষোভ-অভ্যুত্থানেরও জন্ম দেবে।
লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সোর্স জনকন্ঠ

১২ ডিসেম্বর, ২০২৫
12/12/2025

১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে তফসিল ঘোষণা করার পর ৩০০ সংসদীয় আসনে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়ো...
12/12/2025

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে তফসিল ঘোষণা করার পর ৩০০ সংসদীয় আসনে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

 #লিখিতপ্রস্তুতি
12/12/2025

#লিখিতপ্রস্তুতি

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when The Great Bangladesh posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to The Great Bangladesh:

Share