
29/07/2025
Abdullah Al Rabbi
Dhaka City College
Section M
20-21
১৭ জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা কয়েকজন। আগের দিন রাত থেকেই নিউজফিডে ভেসে আসছিলো "নেট ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলা চলছে।" এই দৃশ্য উপেক্ষা করতে পারিনি। আমরা রাস্তায় নামি। গন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু গেইটে পৌঁছেই আটকে যাই। ব্যারিকেড পেরুতে না পেরে চারপাশে দৌড়াদৌড়ি, আতঙ্ক, চিৎকার। হঠাৎ ৩০-৪০ জন পুলিশ এসে আমাকে ও এক বন্ধুকে ধরে ফেলে। একে একে আরও চারজনকে ধরে নিয়ে যায়। ফোন নিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। আমার ফোনে পাওয়া যায় আন্দোলনের ছবি, ভিডিও, পোস্ট আমার সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রমাণ। আর এটাই হয়ে দাঁড়ায় আমার ‘অপরাধ’।
আমাদের বিরুদ্ধে আনা হয় মিথ্যা অভিযোগ ভাঙচুর, চুরি, অগ্নিসংযোগ। কোর্টে তোলা হয় বিশাল চার্জশিটসহ। প্রথমে একদিন, পরে আবার তিনদিনের রিমান্ড। আর মাঝে ১৩ দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সেল, যেখানে আলো-হাওয়া কিছুই ছিল না। আমরা ছয়জন একসাথে ধরা পড়লেও আমাকে আলাদা রাখা হয়, যেন আমি 'বিপজ্জনক'। আমাকে বলা হয় কারো সঙ্গে কথা বলা যাবে না, এক কোণে বসে থাকতে হবে।
রিমান্ডে আমাকে ফিজিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল টর্চার করা হয়। আমার আঙুলে কলম ঢুকিয়ে দেয়া হয়, চুল ধরে টানা, ঘুষি, থাপ্পড় সবই ছিল। আমার ফেসবুক ও ইমেইল হ্যাক করে নানা প্রশ্ন করা হয়। বলা হয় "তোকে নারীকেলেঙ্কারিতে ফাঁসাবো, মার্ডার কেসে ঢুকাবো, যদি ছাড়াস তো আমার নাম বদলে ফেলবো।"
জেলখানায় কাটানো প্রতিটি দিন ছিলো একেকটা বছরের মতো। খাবার মুখে তোলা যায় না, ঘুম নেই, আলো নেই তবুও বেঁচে থাকার লড়াই থামেনি।
শেষ পর্যন্ত ৪ আগস্ট জামিন পাই। বেরিয়ে পরদিনই আবার আন্দোলনে ফিরি। বাড়ি ফিরে মা-বাবাকে বলি, "আমি ন্যায়ের পক্ষে ছিলাম। কান্না করো না, বরং গর্ব করো।"
এই ১৭ দিনে আমি যা শিখেছি, তা ২১ বছরেও শিখতে পারতাম না। অপরাধী-নিরপরাধী, ধনী-গরিব, পরিচিত-অপরিচিত সবার সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যারা অপরাধ করেননি তারা বের হয়ে এসেছেন এবং বের হবেন ইনশাআল্লাহ।
শেষে শুধু এটুকু বলি জেলখানা আমার শরীর আটকে রাখতে পেরেছিল, মনকে নয়।
আমার বিশ্বাস, এই দেশের মানুষ জেগে উঠবে। অন্যায় যতই গলা চেপে ধরুক, ন্যায়ের কণ্ঠরোধ করা যাবে না।
আল্লাহ আমাদের ন্যায়ের পথে অটল রাখুন। যারা পাশে ছিলেন, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
জেলের দেয়ালের ভেতর থেকেও অনেক রকম প্রলোভন এসেছিল। বেরিয়েই হয়তো আমি পারতাম দলের ব্যানারে ঢুকে সুবিধা নিতে, ক্ষমতার ছায়ায় দাঁড়াতে। রিমান্ডে যাতে একটু কম মার খাই, সে চেষ্টায় আমার মা-বাবা চোখের পানি আর টাকাও ব্যয় করেছেন। তবুও থেমে থাকেনি চড়-ঘুষি ভেঙে পড়েনি বিবেক।হাত বাড়ালেই পেতাম স্বার্থের সিঁড়ি। কিন্তু আমি জানিওসব সিঁড়ির গায়ে রক্ত লেগে থাকে।
জেলের দেয়ালের ভেতর থেকেও অনেক রকম প্রলোভন এসেছিল। বেরিয়েই হয়তো আমি পারতাম দলের ব্যানারে ঢুকে সুবিধা নিতে, ক্ষমতার ছায়ায় দাঁড়াতে। রিমান্ডে যাতে একটু কম মার খাই, সে চেষ্টায় আমার মা-বাবা চোখের পানি আর টাকাও ব্যয় করেছেন। তবুও থেমে থাকেনি চড়-ঘুষি ভেঙে পড়েনি বিবেক।হাত বাড়ালেই পেতাম স্বার্থের সিঁড়ি। কিন্তু আমি জানিওসব সিঁড়ির গায়ে রক্ত লেগে থাকে।
আমি পারতাম টাকার হিসাব উশুল করতে। এক মিনিটের কাজ ছিল, কিন্তু আমি তা করিনি। কারণ,
আমার কাছে জীবন মানে আত্মমর্যাদা। আর জীবিকা মানে পা চেটে নয়, খেটে খাওয়া।