
05/07/2025
৯ই মুহররমের দিবাগত রাত্রিকে আশুরার রাত্রি বলা হয়।
সেই আশুরার রাত্রিতে কেহই আহার গ্রহণ করিলেন না। আসন্ন যুদ্ধের পরিণতি হিসেবে সকলেরই মৃত্যু অবধারিত; তাই সকলেই কলেমা শাহাদাত পাঠ করিতে লাগিলেন।
এই রাত্রিতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) ছাহেব হযরত নবী করীম (সাঃ) কে স্বপ্নে দেখিলেন। তদীয় পবিত্র চেহারা মোবারক বিশুষ্ক ও শোক মলিন। তদীয় হস্ত মোবারকে একটি বোতল। বোতলে লাল রং এর জলীয় পদার্থ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) জানিতে চাহিলেন, উক্ত বোতলে কি আছে? হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) ফরমাইলেন, “এইমাত্র আমি কারবালা হইতে হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) এর মর্মান্তিক শাহাদাত বরণ দেখিয়া আসিলাম। এই বোতলে তাহারই পবিত্র রক্ত রক্ষিত আছে।
পরদিন অর্থাৎ ১০-ই মুহাররম ভোর বেলায় ইমাম ছাহেব শিবিরের সকলের সহিত মিলিত হইলেন। বলিলেন, এজিদ বাহিনী শুধু আমাকেই চায়। তোমাদের তাহারা বিনা কারণে বধ করিবে না। সুতরাং তোমরা আমাকে ত্যাগ করিয়া নিজ নিজ গন্তব্য স্থানে যাও। প্রাণ রক্ষা কর। ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেবের এই প্রস্তাবে সকলেই বিলাপ করিয়া উঠিলেন। বলিলেন, ইমাম (রাঃ) ছাহেবকে একা রাখিয়া প্রাণ থাকিতে তাহারা কোথাও যাইবেন না। ইমাম ছাহেব প্রতি উত্তরে বলিলেন, "ভাই ও বন্ধুগণ! তোমাদের এই আত্মত্যাগ যেন আল্লাহতায়ালা কবুল করেন ও তোমাদের যেন পুরষ্কৃত করেন। অতঃপর ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেব সকলকে যুদ্ধ সাজ পরিতে বলিলেন। নিজেও যুদ্ধ সাজ পরিলেন। অতঃপর ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেব ব্যূহ রচনা করিলেন। সেই ব্যূহতে মাত্র ৪০ জন অশ্বারোহী ও ৩৪ জন পদাতিকের একটি ক্ষুদ্র দল, তাহাদের কেহ বা গোলাম, কেহবা গৃহ ভৃত্য; কেহবা উষ্ট্রের রাখাল বা সহিস যোদ্ধা। তাহাদেরকে ডাইনে ও বামে রাখিয়া তিনি নিজের জন্য মাঝখানে স্থান নির্বাচন করিলেন। অতঃপর অশ্ব ছাড়িয়া একটি উষ্ট্রীর পিঠে সওয়ার হইয়া যুদ্ধ বিরতির শেষ চেষ্টা করিতে শত্রু বাহিনীর সম্মুখে হাযির হইলেন। ইমাম হোসেন (রাঃ) ছাহেব তাহাদের উদ্দেশ্যে বলিলেন-“হে নবী (সাঃ) এর উম্মতগণ! তোমরা যাহারা জান এবং জান না, তোমাদের সকলের উদ্দেশ্যে বলিতেছিঃ আমি হযরত রাসূলে করীম (কঃ) এর নাতি, বীর শ্রেষ্ঠ হযরত আলী (কঃ) এবং জগত মাতা হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর পুত্র। আমি সেই হোসেন
যাহার সম্বন্ধে হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বলিয়াছেন, আমি বেহেশতের যুবকগণের সর্দার হইব এবং আমার বেহেশতে দাখিল আল্লাহতায়ালা কর্তৃক অংগীকারকৃত। আমি জীবনে কখনও শরীয়তের বিধি নিষেধ লংঘন করি নাই। তোমরা কি সেই হোসেনকে আজ বধ করিতে আসিয়াছ? তোমাদের কি হইয়াছে যে, তোমরা প্রিয় পয়গম্বরের প্রিয় নাতিকে বধ করিতে চাও? তোমাদের মনে কি আল্লাহ ভীতি নাই?
রাসূলে করীম (সাঃ) এর প্রতি মহব্বত নাই? আমিতো কাহারও কোনো প্রকার ঋণ অপরিশোধিত রাখি নাই। কাহারও ক্ষতি করি নাই। তাহা হইলে তোমরা কেন আমার হত্যাকে হালাল মনে কর। আমিতো দুনিয়ার বাদশাহী ত্যাগ করিয়া মদীনায় আল্লাহতায়ালার ধ্যানে মগ্ন ছিলাম। শত্রুর অত্যাচারে মদীনা ছাড়িয়া মক্কায় আল্লাহর ঘরে আশ্রয় নিলাম। অতঃপর তোমরা কুফা বাসীদের আমন্ত্রণেই আমি কুফায় আসিয়াছি। তোমরাতো হাজার হাজার লোক আমার নিকট বায়াত হইবার জন্য প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলে। তোমরা শুধু বিশ্বাসই ভংগ কর নাই; উপরন্তু আমাকে হত্যা করিতে আসিয়াছ। আজ আমি তোমাদিগকে সেই কথাই বলিব, যাহা বলিয়া হযরত মুসা (আঃ) ফেরাউনকে আহ্বান করিয়াছিলেন। জগত স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার নিকট আমার ও তোমাদের জন্য করুণা ও রহমত ভিক্ষা চাহিতেছি। যদি তোমরা আমাকে সহায়তা করিতে না পার, অন্ততঃ তোমরা আমাকে হত্যা করিও না। আমাকে পথ ছাড়িয়া দাও আমি মক্কা অথবা মদীনায় ফিরিয়া যাই।”
(নসিহত)