16/04/2025
আজ ১৭ই এপ্রিল শায়েখুল আকবার জামানার ইমাম ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল-মাহবুবী (মাঃ আঃ) হুজুরের শ্রদ্ধেয় পিতা বিশিষ্ট সূফী সাধক হযরত সৈয়দ আব্দুর রহমান সরকার (রহঃ)-এর ৪০তম ওফাত দিবস। ১৯৮৬ সালের ১৭ই এপ্রিল মাত্র ৫১বছর বয়সে তিনি ওফাত লাভ করেন। এই দিনটি উদযাপন উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব রাজধানী ঢাকার মিরপুর দরবার শরীফে "মিলাদ ও দোয়ার মাহফিল" অনুষ্ঠিত হবে। এতে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও আশেকে রাসূল ভাই-বোনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
হযরত সৈয়দ আব্দুর রহমান সরকার (রহঃ) ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের ত্রিপুরা জেলা পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে রূপান্তরিত কুমিল্লা জেলা, যা বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন খ্যাতিমান হযরত সৈয়দ আব্দুর রফিক মোল্লা (রহঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত সৈয়দ আব্দুর রশিদ সরকার (রহঃ)-এর ছয় পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে প্রথম সন্তান।
হযরত সৈয়দ আব্দুর রহমান সরকার (রহঃ) শৈশবে পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী ইসলামী শিক্ষা লাভ করেন। তারপর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাল শহর হাই স্কুল হতে মেট্রিক পাস করে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ হতে আইএস-সি ও বি এস-সি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) হতে "কষ্ট একাউন্টিং"-এ উচ্চতর কোর্স সম্পন্ন করেন।
হযরত সৈয়দ আব্দুর রহমান সরকার (রহঃ)-এর কর্মজীবন খুলনা নিউজ প্রিন্ট পেপার মিলের ম্যানেজার হিসেবে শুরু হয়। এরপর তিনি খুলনার ষ্টার জুট মিল, চাঁদপুরের ডব্লিউ রহমান জুট মিল ও ঢাকার নবাব আসকারী জুট মিলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের অধীনস্থ করিম জুট মিলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (একাউন্টস এন্ড ফাইন্যান্স)-এর দায়িত্ব পালন করেন।
হযরত সৈয়দ আব্দুর রহমান সরকার (রহঃ) ইসলামী সূফীবাদের প্রতি প্রবল ভাবে আকৃষ্ট ছিলেন। এই জন্য তিনি বিভিন্ন সূফী দরবেশ ও অলী-আল্লাহর সাহচর্যে গমন করে সূফীবাদের জ্ঞান আহরণ করেন। ১৯৬৯ সালে ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়া পাক দরবার শরীফের পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ সুলতানিয়া- মোজাদ্দেদিয়া তরীকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহঃ) রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি থানাধীন কাঁঠালবাগানে এক মাহফিলে তশরিফ নিলে তিনি তাঁকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তরিকতের সবক গ্রহণ করেন এবং নিজের ছেলে-মেয়ে, পরিবার-পরিজনকে তরিকার অন্তর্ভুক্ত করেন।
তখন থেকেই হযরত সৈয়দ আব্দুর রহমান সরকার (রহঃ) নিরলস ভাবে তরিকতের আমল করে আধ্যাত্মিক জগতের উচ্চতর মোকামে উন্নীত হন। তিনি তাঁর পিতা-মাতা ও ছোট-ভাইবোনদের মানব জীবনে তরিকতের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বুঝিয়ে ইমাম শাহ চন্দ্রপুরী (রহঃ)-এর তরিকায় শামিল করেন।
হযরত আব্দুর রহমান সরকার (রহঃ) ওফাতের সময় তাঁর স্ত্রী, ছয় পুত্র ও চার কন্যাসহ মাতা, ভাই-বোন ও বহুগুণগ্ৰাহী রেখে যান। তিনি একজন উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন অলী-আল্লাহ ছিলেন। ওফাতের সাড়ে চার মাস পরও রওজা শরীফে তাঁর দেহ মোবারক অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।
প্রতিবছর ১৭ই এপ্রিল উপলক্ষে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শায়েখুল আকবার জামানার ইমাম ডক্টর সৈয়দ এম.সাঈদুর রহমান আল- মাহবুবী (মাঃ আঃ) হুজুর তাঁদের নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত মিরপুর দরবার শরীফে বিশেষ মিলাদ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করেন। এছাড়া দেশে ও বিদেশে অবস্থিত আশেকে রাসূল সেন্টারেও মিলাদ মাহফিল ও কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করা হয়। অধিকন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী হযরত আব্দুর রহমান সরকার (রহঃ)-এর তাঁর চার পুত্র-পুত্রবধু, তিন কন্যা-জামাতা,নাতি-নাতনিরা
তাঁদের আমেরিকার বাড়িতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন।
উল্লেখ্য যে, শায়েখুল আকবার জামানার ইমাম ডক্টর সৈয়দ এম. সাঈদুর রহমান আল-মাহবুবী ( মাঃ আঃ ) হুজুরের মাতা আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট সূফী সাধক হযরত আনোয়ারা বেগম ( রহঃ ) ২০২৪ সালের ১২ই অক্টোবর ৮৪ বছর বয়সে লস এঞ্জেলসের "শামারিতান হাসপাতালে" চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তাঁকে নর্থ হলিউড " ভালহাল্লা মেমোরিয়াল পার্ক ও গ্রেভিয়ার্ডে " সমাহিত করা হয়।