26/02/2024
ব্রণ কি কি কারনে হতে পারে ও এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনার চেষ্টা করছি...
পরিণত বয়সেও নিয়মিত ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন?
যে কোনো ঋতুতেই পিছু ছাড়ছে না ব্রণ?
আবার এমনও হচ্ছে, ব্রণ চলে গেলেও রয়ে যাচ্ছে কালচে দাগ!!!
তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে– পরিণত বয়সেও ব্রণ হয় কেন? প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় খাওয়া-দাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, দূষণ সব কিছুর ওপরই নির্ভর করে ত্বকের স্বাস্থ্য। তাই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আপনার প্রতিদিনের জীবনযাত্রার প্রতি নজর দিতে হবে।
আসুন জেনে নিই ব্রণের সমস্যা থেকে বাঁচতে কী করবেন আর কি করবেন না...
১. অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও ত্বকে ব্রণ হতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে।
২. কাজের প্রয়োজনে হয়তো ফোন দিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফোনে কথা বলার সময় ত্বকে চাপ পড়ে। ফোনে ও হাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এদের কারণেও ত্বকে ব্রণ হয়ে থাকে। তাই ফোনে কথা বলার সময় ব্যবহার করুন হেডফোন।
৩. নিয়মিত মেকআপ করলে ব্রাশ ও স্পঞ্জ পরিষ্কার করুন। মেকআপ সামগ্রী বারবার ব্যবহারের ফলে এতে জন্মায় প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া। এসব ব্যাকটেরিয়া থেকেও হতে পারে ব্রণ। তাই মেকআপ সামগ্রী সব সময়ে পরিষ্কার রাখুন।
৪. ঘন ঘন মুখ ধোয়ার কারণে ত্বকে ব্রণ হতে পারে। এতে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাতেও কিন্তু বাড়তে পারে অ্যাকনের সমস্যা।
৫. মেনোপজ, মাসিক ঋতুচক্রের আগে ও পরেও অনেকের ব্রণ হয়। যারা নিয়মিত জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খান, তাদেরও এ সমস্যা হতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
৬. ত্বক ভালো রাখার জন্য ডায়েটে বাদ দিন প্রসেসড সুগারযুক্ত খাবার। প্রসেসড সুগার রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ডিপ সিস্টিক অ্যাকনে দেখা দেয় মুখের ত্বকে, যা বেশ যন্ত্রণাদায়ক, তেমনই দাগ রেখে যায় অনেক সময়।
৭. দুধের মতো ডিমও অনেক সময় ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে। ডিম থেকে অ্যাকনে, অ্যাকজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো সমস্যা দেখা যায়।
৮. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানি পান ত্বক ভালো রাখে। এছাড়াও আরও অনেক উপায়ে ত্বক ভালো রাখা যায়।
এবার আসুন জেনে নেই ব্রনের সমস্যায় কিছু হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের ব্যবহার...
ব্রণের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও ঔষধ সম্পর্কে আলোচনা করবো ও জানবো...
যুবক, যুবতী সহ সকল বয়সী মানুষের ব্রণ দূর করার হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সম্পর্কে...
♦♦♦
Calceria picreta
১৩ থেকে ২০ বছরের ছেলে মেয়েদের মুখের ব্রণ দূর করার একটি কমন হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হল ক্যালকেরিয়া পিক্রেটা (Calceria Picreta).
Kali Brom
কেলি ব্রোম (Kali Brom): যাদের মুখে, বুকে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ব্রণ হয় কেলি ব্রোম তাদের ক্ষেত্রে (Kali Brom) খুব ভালো কাজ করে। ব্রণ থেকে যদি ভাতের মতো পদার্থ বের হয় তাহলে (Kali Brom) কার্যকরী। এছাড়াও মুখে, বুকে, কাধে এবং ঘাড়ের ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে (Kali Brom) সর্বোৎকৃষ্ট হোমিওপ্যাথিক ঔষধ । ব্রিটিশ হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ ক্লার্কের মতে, ”খুব কম ব্রণই আছে যা (Kali Brom) নিরাময় হয় না।” সাধারণ মুখের ব্রণ ও চর্মস্ফীতিযুক্ত বয়ঃব্রণের ক্ষেত্রে (Kali Brom) একটি উত্তম ঔষধ। অতিরিক্ত কামচর্চা ও হস্তমৈথুনকারী ব্যাক্তিদের বয়ঃব্রণ দূর করার চিকিৎসায় কার্যকরি একটি শ্রেষ্ঠ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
Pulsatilla
পালসেটিলা (Pulsatilla) যদি ব্রণ রিচ ফুড/সমৃদ্ধ খাবার (সমৃদ্ধ খাদ্য যা ক্যালরিতে ভরা হওয়ার কারণে অল্পেই পেট ভরে যায়) বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর থেকে খারাপ হয় এবং গরমে বা উত্তাপে বৃদ্ধি হয় তখন আসবে পালসেটিলা (Pulsatilla)। এটি বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে বা ঋতুস্রাবের কাছাকাছি সময়ে ব্রণ ফেটে যায়, রোগীর গরম পছন্দ নয়, তাজা খোলা বাতাস রোগির খুবই পছন্দ থাকে ।
Calcarea Sulph
মুখে পুঁজযুক্ত বা রক্তের ছিটযুক্ত ফুস্কুড়ি জন্মাতে থাকলে ক্যালকেরিয়া সালফ (Calcarea Sulphurica) ভাল কাজ করে থাকে।
Calcarea Phos
ক্যালকেরিয়া ফস (Calcarea Phos): মেয়েদের মুখের ব্রণে এটি একটি কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
Sanguinaria Canadensis
স্যাঙ্গুইনেরিয়া (Sanguinaria Can) যে সকল নারীদের অল্প ঋতুস্রাব হয় এবং যাদের রক্ত সঞ্চালন ক্ষীণ
(লো প্রেসার) তাদের ব্রণে (Sanguinaria Can) ওষুধটি উপকারী।
Sulphur Iod
সালফার আয়োড (Sulphur Iod) তরুন-তরুনীদের মুখে ব্রণ, ব্রণে পুঁজ সহ প্রচন্ড ব্যথা হলে সালফার আয়োড (Sulphur Iod) বেশ উপকারী।
Bovista
অতিরিক্ত কসমেটিক বা প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করার ফলে ব্রণ হলে বোভিষ্টা (Bovista) বেশ উপকারী।
Thuja occidentalis
থুজা অক্সিডেন্টালিস (Thuja occi) মুখের ব্রণের জন্য থুজা একটি ভাল হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। ব্রণের ভেতর থেকে যদি চালের মত বের হয় তাহলে Thuja প্রয়োগে তা আরোগ্য লাভ করতে সহায়তা করে ।
Berberis Aquifolium
বার্বেরিস একুইফোলিয়াম Q (Berberis Aquifolium): দীর্ঘদিনের বয়ঃব্রণে “বার্বেরিস একুইফোলিয়াম” বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিকভাবে প্রয়োগে বিশেষ উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। Dr. Dewey এর মতে “চামড়া রূক্ষ, খসখসে এবং বয়ঃব্রণ কিছুতেই আরোগ্য হতে চায় না, সেখানে বার্বেরিস একুইফোলিয়াম উপযোগী (Berberis Aquifolium is useful where the skin is rough and the acne persistent.)’’। ডাঃ বোরিকও ঔষধটির বিশেষ প্রশংসা করেছেন। ঔষধটির মূল অরিস্ট ১ থেকে ২ বিন্দু মাত্রায় দিনে ২ বার খেতে হবে। এবং বাহ্যিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে তুলায় করে অলিভ অয়েলের সাথে মুখের ত্বকে আলতো করে লাগাতে হবে।
এটি ব্যবহারে অনেকের মুখের কালো দাগ ও ত্বক উজ্জ্বল হতেও দেখা গিয়েছে।
Sulphur
সালফার (Sulphur) পুরাতন ব্রণের রোগীদের জন্য উপযোগী। অত্যন্ত ফাটা ব্রণের জন্য এটি খুব দরকারী হোমিওপ্যাথিক ওষুধ।
Calcarea Carb
ক্যালকেরিয়া কার্ব (Calcarea Carb) শীতকাতর ও অতি মাত্রায় ঘামে এমন রমনীদের যৌন সম্ভোগপ্রবৃত্তি দমন করে রাখার কারণে বয়ঃব্রণ হলে ক্যালকেরিয়া কার্ব ভাল কাজ করে।
Acid Phos
এসিড ফস (Acid Phosphoricum): হস্তমৈথুন বা অতিরিক্ত শুক্রানুক্ষয় জনিত কারনে মুখে ব্রণ উঠলে এসিড ফস (Acid Phosphoricum) অত্যন্ত কার্যকরী একটি ঔষধ।
Antim Crud
এন্টিম ক্রুড (Antim Crud) মুখমন্ডলের উপরেই বিশেষভাবে প্রকাশ পাওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, লাল বর্নের বয়ঃব্রণ, হজমজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি, মাতালদের ও যাদের জিহ্বায় ঠিক দুধের মত সাদা প্রলেপ থাকে তাদের মুখের ব্রণ চিকিৎসায় এন্টিম ক্রুড অধিক কার্যকারিতার সাথে ব্যবহার হয়ে থাকে।
Aurum Mur Nat
অরাম মিউর নেট্রোনেটাম (Aurum Muriaticum Natronatum) বাত-ব্যথা ও জরায়ুপীড়া গ্রস্থ মহিলাদের চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে।
Arsenicum Brom
আর্সেনিক ব্রোমেটাম (Arsenicum Bromatum) ব্রণের উপর ইহা একটি অত্যুৎকৃষ্ট হোমিও ঔষধ হতে পারে।
Psorinum
সোরিনাম (Psorinum): সব ধরনের সাধারণ ব্রন, গোলাপী রঙের ব্রন ঋতুকালে বাড়ে, কফি, চর্বিযুক্ত, চিনিযুক্ত খাদ্যে, মাংস খেলে বেড়ে যায় যখন অন্য কোন সুনির্বাচিত ওষুধ প্রয়োগে সঠিক আরোগ্য হয়না তখন সোরিনাম (Psorinum) প্রয়োগের দরকার পড়ে।
Natrum Mur
নেট্রাম মিউর (Natrum Mur): শুষ্ক চেহারা, কাঁচা লবণ খেতে ভালবাসে এবং গোসলে রোগের উপশম এরুপ ব্যক্তির ব্রণে নেট্রাম মিউর উপকারী।
বিঃ দ্রঃ-
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি একটি সাদৃশ্য বিধানের চিকিৎসা পদ্ধতি, তাই এগুলো লক্ষণের সাথে কারো কোন লক্ষণ মিলে গেলে নিজে নিজে ওষুধ কিনে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার ব্রণের সমস্যা পরিলক্ষিত হলে নিকটস্থ হোমিওপ্যাথিক রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের নিকটে শরণাপন্ন হোন।
ধন্যবাদ।