16/08/2025
চিন্তা করতে পারেন একটা জিনিষ?
একজন মানুষরে আপনারা মৃত্যুর ৫০ বছর পরেও মারতে পারেন নাই।
কী করেন নাই আপনারা? ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশ দুয়ারে থাকা কোটি টাকার সুবিশাল ভাস্কর্য থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার চিপায় কাঁচা হাতে বানানো উনার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ভাস্কর্য গুলা ভাঙ্গলেন।
প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, কলেজ, ডিগ্রি কলেজ থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তাঁর যতগুলা ছবি আছে, যত ম্যুরাল আছে সব ভাঙ্গলেন। উনার নামে যতগুলা হল, ডাইনিং হল, লাইব্রেরী আছে সব ভাঙ্গলেন। যত বই আছে উনার নামে যা পাইলেন সব পুড়াইলেন। রকমারিতে ব্যান করলেন। প্রকাশকদের হুমকি দিয়া প্রিন্টিং বন্ধ করাইলেন।
রাস্তাঘাট, মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার চিপা গল্লির নাম সব পরিবর্তন করলেন। উনার নামকে অপমানিত করার জন্য পাবলিক টয়লেট পর্যন্ত বানাইলেন। পতিতালয়ের প্রবেশপথে নাম লেখলেন।
উনার রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিস তো দখল করলেনই, সেটা মানলাম। উনার ব্যক্তিগত বাসভবনটাও বুলডোজার দিয়া গুরাইলেন, আগুন লাগাইলেন। যদিও সেটা আর তাঁর কিংবা তাঁর বংশধরদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নাই। সেটা সরকারী সম্পত্তি। তাও ভাঙ্গলেন।
কিন্তু কী লাভ হইলো? মুছতে পেড়েছেন সেই মানুষটাকে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মন থেকে? মুছতে পেড়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে? বিশ্ব ইতিহাস থেকে? কোনদিনও পারবেন না! ৫০ বছরে যেই জিনিষ পারেন নাই, সেটা আগামী ৫০০০ বছরেও সম্ভব না! বরং তিনি এখন আরও বেশী প্রাসঙ্গিক। মানুষ এখন আরও বেশী অনুসন্ধান করছে তাঁর ব্যাপারে।
বিশ্বাস হয় না? গুগল ট্রেন্ডস-এ গিয়া চেক করেন। মেটা অ্যানালিটিক্সে গিয়ে চেক করেন। খেয়াল করে দেখেন, আমি কিন্তু মানুষটার নামও নেই নাই। কিন্তু আপনি চিনে গেছেন উনি কে। আপনি উনার বন্ধু হলেও চিনে গেছেন, উনার শত্রু হলেও চিনে গেছেন। হ্যাঁ, এটাই উনার শক্তি! যেই শক্তি আগামী হাজার বছরেও কোন বাঙ্গালি অর্জন করতে পারবে বলে মনে হয় না।
নাম নিলাম না, নাম নিবো না। আপনি উনাকে ভালোবাসলে নাম ছাড়াই ভালোবাসবেন। আপনি উনাকে ঘৃণা করলেও নামবিহীন এই পোস্ট দেখে অন্তরজ্বালায় জ্বলেপুড়ে মরবেন।
এমনই আরও নাম-ধাম না জানা ১০ কোটি মানুষ আছে বাংলাদেশে। আপনি এদের চিনেন না, জানেন না। এদের রাস্তায় দেখলে আপনি মনে করেন রিকশাওয়ালা, কুলি, মিন্তি, দোকানদার, সিগারেট বিক্রেতা, টং দোকানের মামা, বাজারের সবজি বিক্রেতা, ফল বিক্রেতা, হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী, ফার্মেসীর দোকানদার, মেকানিক, ইলেকট্রিশিয়ান, সাধারণ চাকুরীজীবী, সরকারি চাকুরীজীবী, বিশাল কর্পোরেট চাকুরীজীবী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মডেল, সংগীতশিল্পী, ব্যান্ড সংগীত শিল্পী, লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ... আরও কত কত নাম না জানা পেশা! এদের বেশিরভাগ মানুষরে আপনারা একবার দেখার পরেই ভুলে যান।
এই নাম-ধাম অজানা ১০ কোটি মানুষের সাথে "সেই মানুষটার" একটা সম্পর্ক আছে। এই সব নাম-ধাম অজানা মানুষরা সেই মানুষটাকে অনেক ভালোবাসে! অনেকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু কোনদিন বলে নাই! বলার দরকার হয় নাই। এখন আবার অনেকে ভয়ে বলে না। ভয়ের সঙ্গত কারণও আছে।
কিন্তু সেই দিনকে ভয় পাও হে জালিম! যেদিন এরা বলা শুরু করবে! এরা শুধু বলবেই না, বরং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে এরা শত্রুর মোকাবিলা করবে! খুব দ্রুত এরা প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলবে! সেইদিন হবে আখেরি বোঝাপড়ার দিন!
সেই আখেরি বোঝাপড়ার দিনের অপেক্ষায় রইলাম। ৫৪ বছরের প্রতিশোধের অপেক্ষায় রইলাম। সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা যাতে শরীরে কিঞ্চিৎ শক্তি অবশিষ্ট রাখে।
আর সেই নাম না নেয়া মানুষটার প্রতি রইলো আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। সেই কিঞ্চিৎ বেঁচে থাকা শক্তি দিয়ে যাতে কাঁচা হাতে গড়া সেই মানুষটির একটা ছোট ভাস্কর্য যাতে আমি পুনঃপ্রতিস্থাপন করে যেতে পারি।