27/05/2024
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের "রহস্যময় মেয়ে"।
।
।
বুধবারের রাত,
ডিপার্টমেন্টের সবাই মিলে সেন্ট্রাল ফিল্ডে ফুটবল খেলতে গিয়েছিলাম।
খেলা শেষ করতে করতে প্রায় ২:৩০ এর মতো বেজে গেল।
এতো রাত পর্যন্ত খেলায় প্রায় প্রত্যেকেরই খিদে লেগে গিয়েছিল।
সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই হালকা খেয়ে-দেয়ে তারপর বাসায় ফিরবো।
খেলতে গিয়ে বন্ধু নিয়াজের পায়ের নখ উপড়ে যাওয়ায় ওকে বাইক নিয়ে যেতে দিয়ে বাকি সবাই সেন্ট্রাল ফিল্ড থেকে টিএসসি হয়ে একসাথে হেঁটে হেঁটে বটে আসলাম।
মাঝে টিএসসি থেকে সবাই হাত-পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
সবার মধ্যে শুধু সাগর একা মীর মশাররফ হলে থাকে, বাসায় চলে যেতে চাইলে জোরাজুরি করে ওকেও খেতে নিয়ে আসলাম।
বটে এসে সবাই হালকা খাওয়া-দাওয়া করলাম।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করতে করতে প্রায় ৩টার উপরে বেজে গেল।
সাগর বললো আমাকে একটু হলে দিয়ে আয়।
অন্যসময় ও তেমন বলে না, আর এতো রাতে কোন রিক্সা ও নাই, তাই বাইকে তেল তেমন না থাকা সত্বেও ওকে উঠতে বললাম বাইকে।
অন্যেরা যার যার হলে চলে গেল, আকাশ আর আবরার কে বললাম এখানে বস ওকে দিয়ে আসি।
ওদের মধ্যে আবরার আমার রুমমেট আর আকাশ গেরুয়াতেই আমার বাসার একটু পাশে থাকে।
সাগর কে পিছনে উঠতে বলে নিয়াজ কেও উঠতে বললাম। নিয়াজের হল বঙ্গবন্ধু, অল্প পথ হবার পরেও অসুস্থতার কারণে ওকে নিয়েও রওনা দিলাম।
বঙ্গবন্ধু হলের কাছে গিয়ে নিয়াজকে নামিয়ে দিতে গিয়ে নিয়াজ বললো, "আমিও যাবো নাকি রে?"
বললাম "থাক, তুই যা।"
এমনিতেও ওর শরীর খারাপ, তার উপরে পথ তো এতোটুকু।
আমি আর সাগর বাইকে করে ধীরে ধীরে যাচ্ছি, দেখি বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটু পরে অনেকে রাস্তার উপর গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
আবার দেখি একটা শিয়াল সাথে অনেকগুলো বাচ্চা নিয়ে রাস্তার পাশে ঘুরঘুর করছে।
হলের সামনে নামিয়ে দিয়ে ফেরত আসতেও একই দৃশ্য দেখলাম।
কিন্তু যখন মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি পৌঁছালাম, দেখি একটা হলুদ শাড়ি পড়া মেয়ে ডিপার্টমেন্টের রাস্তার একটু ভেতরের দিকে একা দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়ছে, আর হয়তো বলার চেষ্টা করছে আমাকে থামতে।
অন্ধকারে অতটা বোঝা যাচ্ছিলো না।
বাইক ধীরে ধীরেই চালাচ্ছিলাম।
এতো রাতে একা মেয়ে, তারপর আবার আমাকে দাঁড়াতে বলছে দেখে একটু অবাকই হলাম।
ভাবলাম হয়তো কোন বিপদে পড়েছে বা এতো রাতে গাড়ি পাচ্ছে না।
ভাবতে ভাবতে বাইক থামাতে গিয়ে ডিপার্টমেন্টের রাস্তা হালকা একটু ক্রস করে সামনে গিয়ে ব্রেক করলাম।
পিছনে তাকিয়ে দেখতে চাইলাম আসলে কে, আর কোন ঝামেলা কিনা।
চিনতে পারলাম না, তবে হালকা অন্ধকারের মধ্যেই খেয়াল করলাম অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ে হেঁটে আসছে, হলুদ শাড়ি আর আপাদমস্তক হলুদে যেন পুরো হলুদ পরীর মতো লাগছে।
উনি হেঁটে এগুচ্ছেন আর হালকা আলো গায়ে পড়তেই সৌন্দর্যও যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে।
চারপাশের অন্ধকার মুহুর্তেই যেন সব যেন হলুদ আভায় পরিণত হয়ে গেল।
দেখতে চোখেমুখে ধাঁধা লেগে যাচ্ছিলো।
এতোক্ষণ আমি বাম দিকে ঘুরে দেখছিলাম আর বুঝতে চেষ্টা করছিলাম কে বা উনি কি চান।
একটুপর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সোজা হলাম, মুহুর্তে আবার ঘুরে জিজ্ঞেস করতে উদ্ধত হলাম কোন সমস্যা, কোথায় যাবেন?
ফিরে দেখি কেউ নাই!
আমি ডানহাতের ব্রেক ছেড়ে হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে আবার তাকালাম দেখি আসলেই কেউ নাই।
কী করবো বুঝে না উঠতেই বাইক টান দিলাম, একটানে বটে এসে আকাশ আর আবরার বলে ডাক দিলাম।
ওরা কাছে আসলো, বাইকে উঠিয়ে গেরুয়াতে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
ওদেরকে বললাম একটা ভৌতিক ঘটনা ঘটেছে, আবরার কী হইছে জানতে চাইলো কিন্তু আমি কেমন যেন ঘোরের মধ্যে ছিলাম।
ভয় ও একটু করছিলো, বললাম বাসায় গিয়ে জানাবো।
বাসায় এসে গল্পটা লিখতে বসলাম আর আবরার কে বললাম তুই আগে গোসল করে আয় আমি পরে গোসল করতেছি।
লেখা প্রায় শেষ, আমি গোসলে গিয়ে আবরার কে গল্পটা পড়তে বললাম।
গোসল শেষ করতে করতে ওর ততক্ষনে এটা পড়া শেষ।
বের হতেই আবরার বললো, "ঘটনা কি সত্যি?"
Written by: Junayid (Dept. Of Philosophy, Batch: 52, Jahangirnagar University)
(এই লেখাটি যে লিখেছেন তার লেখার নিচে ক্যাম্পাসের অনেক ছাত্ররাই মন্তব্য করেছেন যে সত্যিই এমন কাউকে তারাও অমন রাতে জাহাঙ্গীরনগরের রাস্তায় দেখতে পেয়েছিলো বিভিন্ন সময়ে।)