12/06/2025
বইঃ কেতাদুরস্ত
লেখকঃ তানভীর অনয়
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫৮
প্রকাশনীঃ পেণ্ডলাম
এই লেখকের পড়া এটাই আমার প্রথম বই। কেতাদুরস্ত তানভীর অনয়ের লেখা একটি ভিন্নধারার উপন্যাস। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রে রেখে রাজনীতি, ক্ষমতার লড়াই, ছাত্রদের চিন্তাধারা এবং মানসিক দ্বন্দ্ব, এবং আত্মসংকট , এসব কেন্দ্র করে কাহিনী সাজানো হয়েছে।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র এক তরুণ- অরিত্র, যে একজিসটেনশিয়াল ক্রাইসিসে ভুগছে। তার ব্যক্তিগত কিছু মূল্যবোধ বা বলা ভাল আদর্শ আছে, সে মনে করে একটা সমাজে থাকা সবাইকে ইক্যুয়াল এবং ফেয়ার ট্রিটমেন্ট দেয়া উচিৎ এবং সেটা দিতে হলে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। সে অনেক ইস্যু নিয়ে চিন্তিত এবং মোটামুটি অনেক ইস্যুতেই তার কিছু মতামত আছে যা যার সমসাময়িক পিয়ার গ্রুপের বেশিরভাগ লোকজনের তুলনায় আলাদা। সে তার আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য তার কলেজকে একটা গ্রান্ড হিসেবে চিন্তা করে এবং সে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করতে চায় নিজের মত করে সিস্টেমকে গোছানোর জন্য। মূলত এই নির্বাচন এবং নির্বাচনের আগে পরের বিভিন্ন ঘটনার আড়ালে লেখক স্টুডেন্ট পলিটিক্স, জেন্ডার ইস্যু, বুলিং, মাসকুলিনিটির প্রশ্ন—সব মিলিয়ে একটা সাহসী ও চিন্তাশীল প্লট গোছানোর চেষ্টা করেছেন। লেখক উল্লিখিত কিছু অস্বস্তিকর (?) / সাহসী বিষয়ে কলম ধরেছেন—যেসব বিষয়ে আমাদের দেশি লেখকরা তাদের সৃষ্টিকর্মে সহজে উল্লেখ করেন না।
গল্পে অনেক ছোট ছোট ঘটনা ও চরিত্র এসেছে, যারা সমাজের বিতর্কিত ইস্যুগুলো নিয়ে কথা বলেছে। তবে চরিত্রগুলো গল্পের মূল চালিকা শক্তি নয়; বরং লেখকের তোলা প্রশ্ন, দর্শন এবং মেসেজ আসল বিষয়।
তবে একসাথে বেশি কিছু বিষয় তুলে ধরার ফলে কোনোটা পুরোপুরি এড্রেস করা হয়নি, একটা অসম্পূর্ণ ভাব রয়ে গেছে। ফাউস্ট, সুইফটসহ নানা সাহিত্যিক রেফারেন্স গল্পে যুক্ত করে কাহিনীকে ভারী করেছেন, যদিও কখনো কখনো সংলাপ ও লেখার ধরণ একটু দুর্বল লেগেছে।কিছু প্রসঙ্গ যেন ঠিকমতো শেষ না করেই অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছে। এছাড়া এটি কলেজ কেন্দ্রিক না হয়ে যদি বিষ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক হত তবে ম্যাচুরড আলোচনা এবং চরিত্রের সংলাপগুলো আরো বিশ্বাসযোগ্য হত।
সব মিলিয়ে, “কেতাদুরস্ত”সহজ কোনো গল্প নয়। এটা ভাবায়, প্রশ্ন তোলে। যারা গতানুগতিক উপন্যাসে অভ্যস্ত, তাদের কাছে বইটা একটু কঠিন লাগতে পারে। তবে নতুন কিছু পড়তে চাইলে, অন্যভাবে সমাজকে দেখতে চাইলে, বইটি একবার পড়া উচিত। লেখকের প্রচেষ্টা এবং সাহসী চিন্তার জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, সেসাথে মোটা দাগে বলতে চাই- ভবিষ্যতে লেখক যদি একটু কম বিষয় নিয়ে আরও গভীরে যান, তবে তিনি নিঃসন্দেহে আমাদের মননে আরেকটু ভালভাবে রেখা ফেলতে সক্ষম হবেন। পড়ার জন্য রেকমেন্ডেড।
রেটিংঃ ৩/৫