24/07/2025
ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ — ইতিহাসের এক নীরব অথচ ঝড়ের মতো অধ্যায় 🇧🇩
২০০৭ সাল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ভয়াবহ সংঘাতে জর্জরিত। নির্বাচন অচল, দুই প্রধান দল একে অপরকে ধ্বংসে লিপ্ত। ঠিক তখনই একজন ‘অরাজনৈতিক’ অথচ উচ্চশিক্ষিত মানুষ এসে দাঁড়ালেন দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী আসনে — নাম ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ।
🎓 শিক্ষা ও কর্মজীবন:
জন্ম: ১ মে ১৯৪০, মুন্সিগঞ্জ
পড়াশোনা:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর
Princeton University, USA থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি
কর্মজীবন:
বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর (২০০১–২০০৫)
পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (PKSF)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক
🏛️ রাজনীতিতে প্রবেশ:
🔸 ১২ জানুয়ারি ২০০৭, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের পর তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।
🔸 সেনা-সমর্থিত সরকারের এই নতুন রূপ জনগণের কাছে আশার প্রতীক হয়ে আসে—একটি “রাজনীতি মুক্ত” শুদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে।
✅ ভালো কাজগুলো (উল্লেখযোগ্য অবদান):
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান:
শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সহ বহু শীর্ষস্থানীয় নেতা ও ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হন।
দেশে একধরনের "দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা" মনোভাব জন্ম নেয়।
নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কার:
✅ ডিজিটাল ভোটার তালিকা
✅ ছবি-সহ ভোটার আইডি চালু
✅ ইসি পুনর্গঠন
— যা ভবিষ্যতের নির্বাচনে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের ভিত্তি তৈরি করে।
দলীয় রাজনীতিতে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা:
রাজনীতিতে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রয়াস ছিল।
❌ সমালোচনা ও বিতর্ক:
১) সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন:
❌ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও, তিনি ক্ষমতায় ছিলেন প্রায় ২ বছর — এটি গণতান্ত্রিক রীতির বিরুদ্ধ বলে সমালোচিত হয়।
২) রাজনীতিবিদদের মানবাধিকার লঙ্ঘন:
❌ বহু গ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভূত আটক, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি এবং মিডিয়ায় অপমানজনক প্রচার—এই সরকার ‘গণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের’ অভিযোগের মুখে পড়ে।
৩) মধ্যবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তনের ব্যর্থতা:
❌ নতুন রাজনৈতিক শক্তি তৈরির চেষ্টা করেও তাতে সফল হননি। “রাজনীতির বাইরে থেকে রাজনীতি করার” ধারণা বাস্তবে টিকতে পারেনি।
🚶 দেশ ছাড়ার গল্প:
২০০৮ সালের নির্বাচন শেষে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ড. ফখরুদ্দিন দায়িত্ব ছাড়েন —
কোনো রাজনৈতিক বিবৃতি, আত্মপক্ষ সমর্থন বা জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ না দিয়ে চুপচাপ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
অনেকে মনে করেন, তিনি হয়ত "অপমান এড়াতেই" প্রকাশ্যে আসেননি, আবার কেউ বলেন, "এটাই ছিল তার স্বভাব—নীরব, কিন্তু দৃঢ়।"
🧭 তাহলে ইতিহাস তাকে কীভাবে দেখবে?
ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ নেতা ছিলেন না, কিন্তু তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি গণতান্ত্রিক নন, কিন্তু তার হাত ধরেই এসেছে ভোটার আইডির মতো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
তিনি কঠোর ছিলেন, আবার সীমা অতিক্রম করতেও দ্বিধা করেননি।
🔹 তিনি কি স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন?
🔹 নাকি সেনাবাহিনীর মুখোশধারী সুশীল প্রতিনিধির নামমাত্র মুখ?
এই প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে।
তবে ইতিহাসে তাঁর নাম লেখা থাকবে — আলো-ছায়ার এক জটিল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে।
🔚 শেষ কথা:
তিনি এসেছিলেন নীরবে। কাজ করেছেন ঝড়ের মতো। চলে গেছেন শব্দহীন।
কিন্তু ইতিহাস চুপ করে থাকে না — সে লিখে রাখে, মনে রাখে।